ব্লগার রেজওয়ানসহ অনেকেই এবিষয়ে ইতোপূর্বে পোস্ট দিয়েছেন। বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কিত গবেষণাপত্র লিখতে গিয়ে ব্লগসম্পর্কিত প্রাথমিক ও তাত্ত্বিক ধারণাগুলো অধ্যয়ন করতে হয়েছে। তা থেকে কিছু বিষয় ব্লগারদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। আজকের বিষয় ব্লগ কী?
উইকিপিডিয়ার মতে, ব্লগ হলো ব্যক্তি পরিচালিত ওয়েবসাইট যেখানে সাধারণত মতামত, ঘটনার বর্ণনা কিংবা স্থির বা সচল চিত্রের নানা ভুক্তি থাকে। ভুক্তিসমূহ সাধারণত বিপরীত ক্রমে সাজানো থাকে (Click This Link)। অর্থাৎ এটি এমন একটি সাইট যেখানে ব্যক্তি ইচ্ছামতো তার মতামত, দর্শন, বিভিন্ন চলমান বিষয় সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ স্বাধীনভাবে পরিবেশন করেন। টেক্সট ছাড়াও তিনি চিত্র বা ভিডিও সরাসরি বা হাইপারলিঙ্ক আকারে পরিবেশন করতে পারেন। ব্লগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এতে পাঠকদের মতামত প্রদান, তর্ক-বিতর্ক করার সুযোগ থাকে এবং এভাবে এটি একটি মিথস্ক্রিয়ামূলক একটি পাতা হিসেবে গড়ে ওঠে। একেকটি টেক্সট বা চিত্রের ভুক্তিকে ‘পোস্ট’ বলা হয়ে থাকে। তবে টেক্সটনির্ভর ছাড়াও কেবলই স্থিরচিত্রের (ফটোব্লগ), সচলচিত্রের (ভিডিওব্লগ বা ভ্লগ), অডিওর (পডকাস্টিং) ব্লগ থাকতে পারে। ব্লগ সার্চ ইঞ্জিন টেকনোরাতি ২০০৮ সালের ব্লগাবর্ত-পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাচ্ছে যে, ২০০২ সালের পর থেকে তারা এপর্যন্ত ১৩ কোটি ৩০ লক্ষ ব্লগের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে। আর সাইবারপরিসরে প্রতি ঘণ্টায় ৯ লাখ ব্লগ পোস্ট করা হয়ে থাকে। ব্লগারদের দুই-তৃতীয়াংশই পুরুষ আর শতকরা ৫০ ভাগ ব্লগার ১৮-৩৪ বছর বয়সসীমার। (Click This Link/)। ব্লগ শব্দটি এসেছে ‘ওয়েবলগ’ থেকে, যাকে ভাঙ্গলে দাঁড়ায় ‘ওয়েব’(সাইট)-এর ‘লগ’। এক্ষেত্রে ‘লগ’ শব্দটি এসেছে ‘দৈনন্দিন কার্যকলাপ লিপিবদ্ধ করার রেকর্ড বই’-এর ধারণা থেকে, যা এর মূলগত অর্থ ‘সমুদ্রযাত্রার সময় জাহাজের দৈনন্দিন ক্রিয়া-কলাপের রেকর্ড’ থেকে এসেছে। ‘ওয়েবলগ’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন জর্ন বার্জার, ১৯৯৭ সালে, তার অনলাইন জার্নাল ‘রোবোট উইজডম’-এ। প্রথমদিকের ব্লগাররা ছিলেন প্রযুক্তি-জ্ঞানী লোকজন, যেমন আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত প্রোগ্রামার বা ডিজাইনার। কিন্তু ১৯৯৯ সালে বিভিন্ন ব্লগ পোর্টাল যেমন পিটাস, ব্লগার, গ্রোকসুপ-এর আবির্ভাবে ব্লগিং অনেক সহজ হয়ে আসে। ব্লগ-এ পোস্ট করা, লেখা সম্পাদনা করা এখন ইমেইল করার মতোই সহজ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর থেকে সাইবারপরিসরে ব্লগের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। এসব পোর্টালে ব্লগপাতা সৃজন করে ব্লগিং চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়তি অর্থমূল্য দিতে হয়না। অন্যের কাছে নিজেকে প্রকাশ করার এরচেয়ে সুলভ মাধ্যম আর হয়না, এখন সবাই-ই চাইলে লেখক-প্রকাশক হতে পারেন।
ব্লগিংয়ের জন্য মাতৃভাষাকেই পছন্দের ভাষা হিসেবে ব্লগাররা বেছে নিয়েছে। টেকনোরাতির ২০০৬ সালের জুন মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে ইংরেজিভাষী পোস্টের সংখ্যা ছিল ৩৯%। এরপরেই আছে জাপানি (৩১%) ও চীনাভাষী (১২%) পোস্ট (Click This Link)।
টেকনোরাতি ব্লগকে মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করেছে: ব্যক্তিগত, পেশাগত ও কর্পোরেট। পৃথিবীব্যাপী ব্লগ বলতেই প্রধানত ব্যক্তিগত ব্লগ বোঝা হয়ে থাকে। তবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চালু হওয়া ব্লগের সংখ্যা ইদানীং বেড়ে চলেছে, ব্লগের জনপ্রিয়তা দেখে মুনাফামুখী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহ এগিয়ে এসেছে ব্লগিংয়ে। এধরনের ব্লগকে বলা হয় কর্পোরেট ব্লগ। আজকাল অনেক জনপ্রিয় ব্লগার তাদের সাইটে বিজ্ঞাপনও পাচ্ছেন। এসবের বাইরে ব্লগের বিভিন্ন জঁরা হলো মিডিয়াভিত্তিক (ফটোব্লগ, ভ্লগ, আর্টব্লগ ইত্যাদি), বিষয়ভিত্তিক (রাজনীতি, ফ্যাশন, ভ্রমণ, সঙ্গীত সম্পর্কিত ব্লগ)। টেকনোরাতির ২০০৮ সালের জরিপে দেখা যাচ্ছে ব্লগারদের আলাপের বিষয় হিসেবে সবচেয়ে ওপরে আছে ব্যক্তিগত বিষয়াবলী /জীবনযাপন (৫৪%), এরপরে আছে প্রযুক্তি (৪৬%), সংবাদ (৪২%), রাজনীতি (৩৫%), কম্পিউটার (৩৪%), সঙ্গীত (৩১%), চলচ্চিত্র (৩০%) ইত্যাদি।
তবে উইকিপিডিয়ার 'ব্লগ' ভুক্তিতে ব্লগের অনেক ক্যাটাগরির কথা বলা হলেও ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে কিছু বলা নেই। একক কারও ব্লগ নয়, ব্লগ কমিউনিটি বা ব্লগীয় সমাজ-এ অনেক ব্লগার সদস্য হয়ে থাকেন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তারা আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক করে থাকেন। অথচ ব্লগিংয়ের প্রথম দিকে ‘ওপেন ডায়রি’ বা ‘লাইভ জার্নাল’-এর মতো ব্লগ কমিউনিটির অস্তিত্ব ছিল বা এখনও আছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত ব্লগই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। অথচ বাংলাভাষীয়দের কাছে ব্লগ মানেই ব্লগ কমিউনিটি, একটা সমাজ, মতপ্রকাশ ও মিথস্ক্রিয়ার একটা প্ল্যাটফর্ম। ব্লগীয় সমাজের এইসব সদস্যদের কারো কারো ব্যক্তিগত ব্লগ থাকলেও তাতে অন্য মানুষের পদার্পণ কমই ঘটে। অর্থাৎ ব্লগাররা পরস্পরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক করতে চান। অতি অল্প ইন্টারনেট ব্যবহারী একটা দেশের মানুষরা সাইবার কমিউনিটিতে মিথস্ক্রিয়ামূলক সক্রিয়তায় বিশ্বাসী, এটা লক্ষ করার মতো।