somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগ কী?

২৬ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগার রেজওয়ানসহ অনেকেই এবিষয়ে ইতোপূর্বে পোস্ট দিয়েছেন। বাংলা ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কিত গবেষণাপত্র লিখতে গিয়ে ব্লগসম্পর্কিত প্রাথমিক ও তাত্ত্বিক ধারণাগুলো অধ্যয়ন করতে হয়েছে। তা থেকে কিছু বিষয় ব্লগারদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাই। আজকের বিষয় ব্লগ কী?

উইকিপিডিয়ার মতে, ব্লগ হলো ব্যক্তি পরিচালিত ওয়েবসাইট যেখানে সাধারণত মতামত, ঘটনার বর্ণনা কিংবা স্থির বা সচল চিত্রের নানা ভুক্তি থাকে। ভুক্তিসমূহ সাধারণত বিপরীত ক্রমে সাজানো থাকে (Click This Link)। অর্থাৎ এটি এমন একটি সাইট যেখানে ব্যক্তি ইচ্ছামতো তার মতামত, দর্শন, বিভিন্ন চলমান বিষয় সম্পর্কে তার ব্যক্তিগত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ স্বাধীনভাবে পরিবেশন করেন। টেক্সট ছাড়াও তিনি চিত্র বা ভিডিও সরাসরি বা হাইপারলিঙ্ক আকারে পরিবেশন করতে পারেন। ব্লগের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো এতে পাঠকদের মতামত প্রদান, তর্ক-বিতর্ক করার সুযোগ থাকে এবং এভাবে এটি একটি মিথস্ক্রিয়ামূলক একটি পাতা হিসেবে গড়ে ওঠে। একেকটি টেক্সট বা চিত্রের ভুক্তিকে ‘পোস্ট’ বলা হয়ে থাকে। তবে টেক্সটনির্ভর ছাড়াও কেবলই স্থিরচিত্রের (ফটোব্লগ), সচলচিত্রের (ভিডিওব্লগ বা ভ্লগ), অডিওর (পডকাস্টিং) ব্লগ থাকতে পারে। ব্লগ সার্চ ইঞ্জিন টেকনোরাতি ২০০৮ সালের ব্লগাবর্ত-পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাচ্ছে যে, ২০০২ সালের পর থেকে তারা এপর্যন্ত ১৩ কোটি ৩০ লক্ষ ব্লগের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে। আর সাইবারপরিসরে প্রতি ঘণ্টায় ৯ লাখ ব্লগ পোস্ট করা হয়ে থাকে। ব্লগারদের দুই-তৃতীয়াংশই পুরুষ আর শতকরা ৫০ ভাগ ব্লগার ১৮-৩৪ বছর বয়সসীমার। (Click This Link/)। ব্লগ শব্দটি এসেছে ‘ওয়েবলগ’ থেকে, যাকে ভাঙ্গলে দাঁড়ায় ‘ওয়েব’(সাইট)-এর ‘লগ’। এক্ষেত্রে ‘লগ’ শব্দটি এসেছে ‘দৈনন্দিন কার্যকলাপ লিপিবদ্ধ করার রেকর্ড বই’-এর ধারণা থেকে, যা এর মূলগত অর্থ ‘সমুদ্রযাত্রার সময় জাহাজের দৈনন্দিন ক্রিয়া-কলাপের রেকর্ড’ থেকে এসেছে। ‘ওয়েবলগ’ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন জর্ন বার্জার, ১৯৯৭ সালে, তার অনলাইন জার্নাল ‘রোবোট উইজডম’-এ। প্রথমদিকের ব্লগাররা ছিলেন প্রযুক্তি-জ্ঞানী লোকজন, যেমন আইটি ইন্ডাস্ট্রিতে কর্মরত প্রোগ্রামার বা ডিজাইনার। কিন্তু ১৯৯৯ সালে বিভিন্ন ব্লগ পোর্টাল যেমন পিটাস, ব্লগার, গ্রোকসুপ-এর আবির্ভাবে ব্লগিং অনেক সহজ হয়ে আসে। ব্লগ-এ পোস্ট করা, লেখা সম্পাদনা করা এখন ইমেইল করার মতোই সহজ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর থেকে সাইবারপরিসরে ব্লগের সংখ্যা হু হু করে বাড়তে থাকে। এসব পোর্টালে ব্লগপাতা সৃজন করে ব্লগিং চালিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়তি অর্থমূল্য দিতে হয়না। অন্যের কাছে নিজেকে প্রকাশ করার এরচেয়ে সুলভ মাধ্যম আর হয়না, এখন সবাই-ই চাইলে লেখক-প্রকাশক হতে পারেন।

ব্লগিংয়ের জন্য মাতৃভাষাকেই পছন্দের ভাষা হিসেবে ব্লগাররা বেছে নিয়েছে। টেকনোরাতির ২০০৬ সালের জুন মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে যে ইংরেজিভাষী পোস্টের সংখ্যা ছিল ৩৯%। এরপরেই আছে জাপানি (৩১%) ও চীনাভাষী (১২%) পোস্ট (Click This Link)।

টেকনোরাতি ব্লগকে মোটা দাগে তিন ভাগে ভাগ করেছে: ব্যক্তিগত, পেশাগত ও কর্পোরেট। পৃথিবীব্যাপী ব্লগ বলতেই প্রধানত ব্যক্তিগত ব্লগ বোঝা হয়ে থাকে। তবে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চালু হওয়া ব্লগের সংখ্যা ইদানীং বেড়ে চলেছে, ব্লগের জনপ্রিয়তা দেখে মুনাফামুখী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানসমূহ এগিয়ে এসেছে ব্লগিংয়ে। এধরনের ব্লগকে বলা হয় কর্পোরেট ব্লগ। আজকাল অনেক জনপ্রিয় ব্লগার তাদের সাইটে বিজ্ঞাপনও পাচ্ছেন। এসবের বাইরে ব্লগের বিভিন্ন জঁরা হলো মিডিয়াভিত্তিক (ফটোব্লগ, ভ্ল­গ, আর্টব্লগ ইত্যাদি), বিষয়ভিত্তিক (রাজনীতি, ফ্যাশন, ভ্রমণ, সঙ্গীত সম্পর্কিত ব্লগ)। টেকনোরাতির ২০০৮ সালের জরিপে দেখা যাচ্ছে ব্লগারদের আলাপের বিষয় হিসেবে সবচেয়ে ওপরে আছে ব্যক্তিগত বিষয়াবলী /জীবনযাপন (৫৪%), এরপরে আছে প্রযুক্তি (৪৬%), সংবাদ (৪২%), রাজনীতি (৩৫%), কম্পিউটার (৩৪%), সঙ্গীত (৩১%), চলচ্চিত্র (৩০%) ইত্যাদি।

তবে উইকিপিডিয়ার 'ব্লগ' ভুক্তিতে ব্লগের অনেক ক্যাটাগরির কথা বলা হলেও ব্লগ কমিউনিটি সম্পর্কে কিছু বলা নেই। একক কারও ব্লগ নয়, ব্লগ কমিউনিটি বা ব্লগীয় সমাজ-এ অনেক ব্লগার সদস্য হয়ে থাকেন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তারা আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক করে থাকেন। অথচ ব্লগিংয়ের প্রথম দিকে ‘ওপেন ডায়রি’ বা ‘লাইভ জার্নাল’-এর মতো ব্লগ কমিউনিটির অস্তিত্ব ছিল বা এখনও আছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ব্যক্তিগত ব্লগই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। অথচ বাংলাভাষীয়দের কাছে ব্লগ মানেই ব্লগ কমিউনিটি, একটা সমাজ, মতপ্রকাশ ও মিথস্ক্রিয়ার একটা প্ল্যাটফর্ম। ব্লগীয় সমাজের এইসব সদস্যদের কারো কারো ব্যক্তিগত ব্লগ থাকলেও তাতে অন্য মানুষের পদার্পণ কমই ঘটে। অর্থাৎ ব্লগাররা পরস্পরের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক করতে চান। অতি অল্প ইন্টারনেট ব্যবহারী একটা দেশের মানুষরা সাইবার কমিউনিটিতে মিথস্ক্রিয়ামূলক সক্রিয়তায় বিশ্বাসী, এটা লক্ষ করার মতো।
২০টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্বাসীকে লজিকের কথা বলার দরকার কি?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১৭




হনুমান দেবতা এবং বোরাকে কি লজিক আছে? ধর্ম প্রচারক বলেছেন, বিশ্বাসী বিশ্বাস করেছেন ঘটনা এ পর্যন্ত। তাহলে সবাই অবিশ্বাসী হচ্ছে না কেন? কারণ অবিশ্বাসী বিশ্বাস করার মত কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের শাহেদ জামাল- ৭১

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:৫৪



শাহেদ জামাল আমার বন্ধু।
খুব ভালো বন্ধু। কাছের বন্ধু। আমরা একসাথেই স্কুল আর কলেজে লেখাপড়া করেছি। ঢাকা শহরে শাহেদের মতো সহজ সরল ভালো ছেলে আর একটা খুজে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভাবছিলাম ২ লক্ষ ব্লগ হিট উপলক্ষে ব্লগে একটু ফান করব আড্ডা দিব, কিন্তু এক কুৎসিত অপব্লগার সেটা হতে দিলোনা।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:০৫



এটি ব্লগে আমার ২৬০ তম পোস্ট। এবং আজকে আমার ব্লগের মোট হিট ২০০০০০ পূর্ণ হয়েছে। আমি আনন্দিত।এই ছোট ছোট বিষয় গুলো সেলিব্রেট করা হয়তো ছেলে মানুষী। কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শয়তান বন্দি থাকলে শয়তানি করে কে?

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ১৮ ই মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২০



রমজানে নাকি শয়তানকে বেধে রাখা হয়,তাহলে শয়তানি করে কে?

বহুদিন পর পর ব্লগে আসি এটা এখন অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। বেশ কিছু বয়স্ক, মুরুব্বি, সম বয়সি,অল্প বয়সি একটিভ কিছু ব্লগার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কট বাঙালি

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:২৪



কদিন পরপরই আমাদের দেশে বয়কটের ঢল নামে । অবশ্য তাতে খুব একটা কাজ হয় না । বাঙালির জোশ বেশি দিন থাকে না । কোন কিছু নিয়েই বাঙালি কখনই একমত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×