somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রচুর প্রপাগান্ডা

০৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহবাগ আন্দোলন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি করেছে। কিন্তু সেটাই সব বা একমাত্র বিষয় নয়। রক্তস্নাত বাংলার কিছু মানুষ এই জাতির জন্মকে অস্বীকার করতে চেয়েছে, হত্যা-লুণ্ঠন-ধর্ষণ যাবতীয় যুদ্ধাপরাধ করেছে। তাদের বিচার হচ্ছে চার দশক পরে। এই বিচারে জনমতের প্রতিফলন হয়নি, হতে হবে Ñ আন্দোলনের এই-ই বহিরঙ্গ। কিন্তু বাংলা বসন্তের অন্তরঙ্গে আছে চলমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিকেই প্রত্যাখ্যানের প্রস্তাবনা। পশ্চাৎপদ-প্রগতিবিরুদ্ধ রাজনীতি এদেশে থাকবে কি থাকবে না, তারও হিসেব সম্পন্ন করতে চায় শাহবাগ আন্দোলন। বড় দুই দলের পুনরাবৃত্ত হ্যাংলামো, এই আন্দোলন নাকচ করে। কিন্তু এই জন-আন্দোলন যাদের বিরুদ্ধে, সেই জামাত-শিবির ও তার প্রতি সহানুভূতিশীল চক্র এই অভূতপূর্ব আন্দোলনে কালিমা লেপন করতে চেয়েছে। প্রপাগান্ডার আশ্রয় নিয়ে তারা শাহবাগকে কতকগুলো স্টিগমায় বেঁধে ফেলতে চেয়েছে Ñ ১. শাহবাগ সরকারের সাজানো নাটক ২. এই আন্দোলন নাস্তিকদের আন্দোলন ৩. এখানে যে তরুণেরা গিয়েছে তারা মাদকসেবী আর যে তরুণীরা গিয়েছে তারা মন্দ নারী। এই কালিমা লেপন চলেছে ফেসবুকে-ব্লগে, রাজনীতিবিদদের বক্তব্যে এবং ‘আমার দেশ’-এর মতো পত্রিকার পাতায়।

শাহবাগ আন্দোলন মোটেই সরকারের সাজানো নাটক নয়। মনে রাখতে হবে ৫ ফেব্র“য়ারির বিকেলে যেই জনা পঞ্চাশেক মানুষ জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছিল, তারা সরকারের বিরুদ্ধেই দাঁড়িয়েছিল। তারা মনে করেছিল, সরকার ও জামায়াতের মধ্যে সম্ভবত একটা আঁতাত হয়েছে, নইলে ছয়টি মামলার পাঁচটি প্রমাণ হলেও ফাঁসি না হয়ে যাবজ্জীবন কেমন করে রায় হয়? অন্য সবার মতো সরকারও হতভম্ব হয়ে স্বতঃস্ফূর্ত জনসমাবেশের প্রকৃতি বুঝতে প্রথম দু’তিনদিন পার করে দিয়েছে। সরকারের সাজানো নাটক হলে আওয়ামী লীগ নেতা হানিফকে প্রজন্ম চত্বরে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। এরপর সরকার বুঝতে পেরেছে এই আন্দোলনকে সমর্থন দেয়া দরকার, আখেরে তাদেরই লাভ। ফলে প্রকাশ্য না হলেও, অপ্রকাশ্য সমর্থন সরকার প্রথম দুই সপ্তাহ দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু ২১ তারিখের মহাসমাবেশের পর থেকে ছাত্রলীগ সামনের সারিতে চলে আসে, এবং সরকারপক্ষের অংশগ্রহণ প্রকাশ্য হয়ে ওঠে।

ব্লগার রাজীবকে হত্যার পর ‘ব্লগারদের আন্দোলন’রূপে পরিচিত শাহবাগ যেক্ষেত্রে আরও ফুঁসে ওঠার কথা, রাজীবের নিজস্ব/ফেইক নানান পোস্টকে সামনে হাজির করে কেবল তার অপমৃত্যুর অবমাননাই করা হয়নি, পুরো আন্দোলনই নাস্তিকদের আন্দোলন বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্মাশ্রয়ী সেই প্রপাগান্ডা বেশ কল্কেও পায়। কিন্তু যদি ধরেও নেই, রাজীব নাস্তিক ছিলেন, দায়িত্বজ্ঞানহীন অনেক পোস্টের স্রষ্টা তিনি, কিন্তু তারপরও তাকে হত্যা যেমন বৈধ হয়না, তেমনি পুরো আন্দোলন নাস্তিকদের হয়ে যায়না। নাস্তিকরা সবকালেই সব সমাজে ছিল, কিন্তু তাদের সংখ্যা সবসময়ই কম থাকে। ফলে শাহবাগে আন্দোলনরত কেউ কেউ হয়তো নাস্তিক ছিল, কিন্তু তার শতকরা হার একের চেয়েও কম হবে।

অন্যদিকে শাহবাগের তরুণেরা মাদকসেবী, বা সুনির্দিষ্টভাবে গাঁজাসেবী, এই কলঙ্কলেপনেরও চেষ্টা করা হয়েছে। এই সংখ্যাটাও নাস্তিকদের মতোই হবে।

ওপরের সবগুলো প্রপাগান্ডার অতি সামান্য হলেও ভিত্তি আছে। কিন্তু শাহবাগের নারীরা মন্দ নারী, এই অভিযোগের ভিত্তি একেবারে শূন্য শতাংশ। লক্ষ করার বিষয় হলো শাহবাগ আন্দোলনে নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। তাদের দিক থেকে এই অংশগ্রহণের ভিন্ন দিকমাত্রা রয়েছে। জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নারীপ্রগতিবিরুদ্ধ। আজ যে নারীর পরনের জিন্স তার পদক্ষেপে দৃঢ়তা এনেছে, জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে প্রথম আঘাত আসবে তার পোশাকে। ফলে লাকী-মুক্তা-সামিয়ারা এই আন্দোলনের অন্যতম অংশ। নারীকণ্ঠ শাহবাগের স্লোগানের নেতৃত্বে, নারীর এই স্লোগানকণ্ঠ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। নারীর অগ্রযাত্রা পশ্চাৎপদতা ও পিতৃতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করে। শাহবাগের নারীরা পতিতা, এই প্রপাগান্ডায় সত্যের লেশমাত্র নাই।

শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর বলছে ‘সৎ লোকের শাসন’ নয়, আগামী বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষাকৃত সৎ রাজনীতি অপেক্ষা করছে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×