somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুয়েটের ০৭ ব্যাচ এর লেভেল পূর্তি উদযাপন আর বাংলাদেশের একটি স্বনামধন্য কোচিং সেন্টারের ব্যবহার

২৪ শে এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





তোমরা তো ৫০ টাকা দিলেও নিবা, ৫ হাজার যে দিচ্ছি এটাই বেশি। X(

তোমরা কেমন ইন্জিনিয়ার :-P হবা এপ্লিকেশন লেখা শেখো নাই?


বুয়েটের একটা ট্রেডিশন হল সব ব্যাচের একটা নিজস্ব নাম থাকে। লেভেল কমপ্লিশান (ছাত্র/ছাত্রী হিসেবে অনেক কষ্টে ১টা বছর বহু চড়াই উতরাই পার করে অবশেষে ২য় বর্ষে উঠা) প্রোগ্রামের জন্য তাই আমাদের আয়োজন ছিল বিশাল, আর ব্যাচের নাম দেয়া হল লুব্ধক '০৭। প্রিপরেশন নিতে লেগে গেছে প্রায় একটা মাস। এর মধ্যে পহেলা বৈশাখে বুয়েটের অনুষ্ঠান পড়ে যাওয়ায় টাইমও পেছাতে হয়েছে একবার। বুয়েটে এমনিতেই অবশ্য অনেক অনুষ্ঠান টনুষ্ঠান লেগে থাকে, তবে এই লেভেল কম্প্লিশনটা যেমন হয় তার তুলনায় অন্যগুলো কিছুই নয় :) তাই অনেক প্রতীক্ষার এই অনুষ্টানটা যাতে বেশি ফাটাফাটি হয় সেটার দিকেই ছিল সবার মনোযোগ, আর কারো উৎসাহের কমতিও ছিল না।

গতকাল অবশেষে হয়ে গেল আমাদের লেভেল পূর্তি উদযাপন! সকালে DSW (Director of Students Welfare) স্যার আমাদের বুয়েট '০৭ ব্যাচের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট http://www.buet07.org উদযাপনের মাধ্যমে অনুষ্টান উদ্ভোধন করেন। র‌্যালি দিয়ে শুরু হয় দিনটি উদযাপন, যার পরে ছিল অনুষ্ঠানের ইউনিক আকর্ষণ গেইম শো । B-) রং মেখে সব একেকটা তখন ভূত, ডিএসডব্লিউ এর কঠিন নিষেধাগ্গায় অবশ্য সেটা মাত্রা ছাড়ায়নি। দুপুরে মেগা ফিস্টের পর সাড়ে চারটা থেকে শুরু হয় থ্রাস মেটাল কনসার্ট :D আমাদের নিজেদের বিভিন্ন ব্যাচের আর কিছু প্রফেশনাল আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ড মিলে সাতটা আর সবশেষে আর্টসেল ;) আর্টসেল ১১টার সময় শো শেষ করার পর আর দাড়ানোর শক্তি ছিল না।

অনুষ্ঠানের মজা তো আর লিখে প্রকাশ করা যাবে না। সেটা অবশ্য এই লেখার আসল ঘটনা না। আমাদের দেশে এইচ এস সি পরীক্ষার সময় থেকেই সম্ভাব্য শিকার পরীক্ষার্থীদের ওপর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারগুলো কেমন হামলে পড়ে তা তো সবাই জানে। এরকমই একটা কোচিং সেন্টারের প্রসপেক্টাসে প্রতিবারই দেখা যায় বুয়েটের ফার্স্ট, সেকেন্ড, ... সহ মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা প্রায় সবার নাম। বুয়েটের যতগুলো সিট তার ৯০% ই এই কোচিং এর শিক্ষার্থীদের দখলে থাকে বলে দাবি করা হয়। সেটা হয়ত মিথ্যা নয়। যেই বিষয়টা এই কোচিং সেন্টার প্রকাশ করে না সেটা হল তাদের সাফল্যের হার, অর্থাৎ কতজন এই কোচিং থেকে বুয়েট ভর্তি পরীক্ষা দিল আর কতজন আসলেই বুয়েটে চান্স পেল। দেখা যায় কোচিং এ পড়েছে ৫-৬ হাজার আর বুয়েটে চান্স পায় ৭০০ জন :|

এখন এরা বলবে বুয়েটে তো ৫-৬ হাজার সিট নেই, তাই চান্স পাবে এই ৭০০ জনই। আসল কথা হল এই ৭০০ জন যারা চান্স পেল, তারা কোচিং করুক বা না করুক এমনিতেই চান্স পেত। তাদের সাফল্যের পেছনে কোচিং সেন্টারের অবদান কতটুকু সেটা দেখতে গেলে হতাশ হতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এইসব কোচিং থেকে কোনভাবে উপকৃত হইনি, আর আমার দেখা বেশিরভাগ ফ্রেন্ডই যারা বুয়েটে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে আছে তাদের দেখেছি কোচিং সেন্টারে টাইম পাসের জন্য যেতে।

যাইহোক, এই কোচিং সেন্টারের কার্যকারিতা নিয়ে আমি কারো সাথে তর্ক করতে যাচ্ছিনা। অনেকে হয়তো ভাবছেন লেভেল কমপ্লিশানের সাথেই বা হঠাৎ ওমেকা'র সম্পর্ক আসল কোথা থেকে /:) হ্যা, আমি বলতে চাচ্ছি এদের মূল চালিকাশক্তি বুয়েটের এইসব ছাত্রদের প্রতিই পরবর্তীতে এদের ব্যবহার ও মনোভাব।

আমাদের লেভেল কমপ্লিশান ছিল একটা মেগা প্রোগ্রাম, ব্যক্তিগতভাগে রেজিশ্ট্রেশন ফি দিয়েও যার পুরো ব্যয়ভার মেটানো সম্ভব ছিল না। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমাদের স্পন্সর এর দিকে হাত বাড়াতে হয়েছে। আমাদের প্রোগ্রামে বিভিন্ন ইভেন্টে প্রায় ৭-৮ টির মত স্পনসর ছিল।

বুয়েট ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সাথে জড়িত বিভিন্ন কোচিং সেন্টারগুলো সাধারণত বুয়েটের বিভিন্ন ইভেন্টের স্পন্সর হয়ে থাকে। তার একটা কারণ যেহেতু এইসব কোচিং বুয়েটের স্টুডেন্টদের ওপর চলে আসছে, তাদের মন ধরে রাখা আর বুয়েটের স্টুডেন্টদের রিকমেনডেশানের ওপরই অনেক ছেলেমেয়ে কোন কোচিং এ ভর্তি হবে, এটা নির্ধারণ করে। কাজেই বুয়েটের স্টুডেন্টদের ওপর এইসব কোচিং অনেক ভাবেই নির্ভরশীল, বুয়েটের স্টুডেন্টরাই এইসব কোচিংএ ক্লাস নেয়। বুয়েটের ০৭ ব্যাচের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম রুমি, যার নাম বেচে ওমেকা অনেকদিন চলবে, সেই রুমি স্পন্সরশীপের জন্য ফোন করলে ওমেকা থেকে জাননো হয় আমাদের ৫ হাজার টাকা দেয়া হবে। যেখানে এরকম একটা মেগা ইভেন্টের জন্য বাজেট লাখের ওপর। আর ওমেকা প্রতিটা স্টুডেন্টের কাছ থেকে ভর্তির সময় ৭-৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। আর স্পনসর মানি হিসেবে তারা ১ নয়, ২ নয়, ৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। :D

এখানেই শেষ না, তারা আমাদের বলে তোমরা কেমন ইন্জিনিয়ার এপ্লিকেশন লিখে আনো নাই? এসব কথা গতকাল প্রগ্রামের সময় সবার সামনে তুলে ধরার পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে পুরো '০৭ ব্যাচ। ওমেকার চামড়া... তুলে নেব আমরা এই স্লোগানে পুরো কনসার্ট ভেন্যু কেপে উঠে। ওমেকার আর কোন ক্লাস নেবে না '০৭ ব্যাচ। আমরা কেমন ইন্জিনিয়ার, সেটা ওমেকাকে দেখতে পাবে। এছাড়া সার্বিকভাবে ওমেকা কে বর্জনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়, '০৭ ব্যাচের একটা ছাত্র/ছাত্রীও আর ওমেকা'র সাথে কোনভাবে জড়িত হবে না।

বুয়েটের ছাত্রদের ওপর ওমেকার এই আচরণ আর অপমান শুধু '০৭ না, সব ব্যাচের ওপরই, যাদের নাম বেচেই কিনা এই কোচিং চলে আসছে। তাই সবারই উচিত এই ওমেকা বর্জন করা। তাছাড়া এদের কোচিং এ ভর্তির আগে কারও তো এদের আসল চেহারা দেখার সুগোগ থাকে না। ততদিনে এতগুলো টাকা হয়ে যায় হাতছাড়া। বুয়েটের সব ব্যাচের ভাইয়া/আপু সহ সবার প্রতিই অনুরোধ থাকল ওমেকা'কে বর্জনের। দেখা যাক আর কতদিন এদের ভন্ডামী টিকে থাকে!


ছবিগুলো তুলেছে ফারহানা, '০৭
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:৩১
৫৬টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×