somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভাড়াটিয়া হিসেবে আপনারও রয়েছে আইনি অধিকার; বাড়িওয়ালার প্রভুত্ব দমন করতে জেনে নিন এখনই

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সারা মাস খাটা-খাটুনি শেষে মাসিক বেতনের সিংহভাগই বাড়িওয়ালার হাতে তুলে দিতে হয়। এরপরও কি স্বস্তি আছে?
নানা অজুহাত আর কৌশলে মালিকপক্ষ দফায় দফায় ভাড়া বাড়াতেই থাকে। গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত যন্ত্রণার কারণ হয়ে ওঠে। ঘর মালিকের সাফ জবাব এটা যদি মানতে না চাও তো নিজের পথ দেখো। আবার প্রতিমাসে ন্যায্য ভাড়া দিয়েও ভাড়াটে হিসেবে সুযোগ-সুবিধা ঠিকমতো পাচ্ছেন না। ভাড়াটিয়াকে নিরুপায় হয়ে সব মেনে নিতে হয়।

কিন্তু আপনি কি জানেন ভাড়াটে হিসেবে আপনারও কিছু অধিকার আছে ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে। এই অধিকার কোন বাড়িওয়ালা লঙ্ঘন করলে তাঁকেও পেতে হবে শাস্তি। আইন অনুযায়ী বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত সমস্যা নিষ্পত্তির জন্য ভাড়ানিয়ন্ত্রক রয়েছেন। সাধারণত জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতগুলো এ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
বাসা বা অফিস ভাড়া নেওয়ার আগে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে কিছু করণীয় কাজ রয়েছে, যা ভাড়া নেওয়ার আগে সেরে রাখলে পরে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। একইসাথে আইনি সুরক্ষা পাওয়া যায়। ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া
নিয়ন্ত্রণ আইনে বেশ কিছু সুরক্ষার কথা বলা আছে।

★★নতুন বাড়ি ভাড়া আইনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক

বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১ অনুযায়ী কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক নিম্নরূপঃ

♣বাড়ি মালিক তার ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ এক মাসের বাড়ি ভাড়ার বেশি জামানত নিতে পারবে না।

♣নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর করার পর দুই বছর তা আর বাড়ানো যাবে না।

♣ভাড়া আদায়ের পর ভাড়াটিয়াকে বাড়ি ভাড়ার রসিদ দিতে হবে।

♣ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ সংশ্লিষ্ট বাড়ির বাজার মূল্যের শতকরা ১৫ ভাগের বেশি হবে না।

♣বাড়ি মালিক তার বাড়িটি স্বাস্থ্যসম্মত, বসবাসের উপযোগী করে রাখতে আইনত বাধ্য।

♣ভাড়াটিয়া যদি নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করতে থাকেন এবং বাড়ি ভাড়ার শর্তসমূহ মেনে চলেন, তাহলে যতদিন ভাড়াটিয়া এভাবে করতে থাকবেন ততদিন পর্যন্ত উক্ত ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

♣যুক্তিসংগত কারণে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করতে চাইলে যদি মাসিক ভাড়ায় কেউ থাকে, সে ক্ষেত্রে ১৫ দিন আগে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিতে হবে।

★★নিচে করণীয় দিকগুলো তুলে ধরা হলঃ

#ভাড়ার ব্যাপারে লিখিত চুক্তি করুন
বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার মধ্যে একটি চুক্তিনামা সই হবে। যাতে থাকবে- চুক্তির মেয়াদ, বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়ার নাম, ঠিকানা, উভয় পক্ষের মোবাইল নাম্বার।

#ভাড়ার পরিমাণ, মাসে কত তারিখের মধ্যে তা পরিশোধযোগ্য, পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ বিল, অন্যান্য সেবা থাকলে তার চার্জ ইত্যাদিও চুক্তিতে অন্তর্ভূক্ত থাকবে।

#জামানত থাকলে তা কি প্রতি মাসে ভাড়ার সঙ্গে সমন্বয় হবে, না-কি বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার সময় এককালীন ফেরতযোগ্য সে বিষয়টিও স্পষ্ট থাকতে হবে।

#বাড়িওয়ালা এবং ভাড়াটিয়ার মধ্যে যে চুক্তিই হোক না কেন, তা ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিতভাবে করতে হবে।

#ভাড়া নেবেন রসিদ দিয়ে
সব বাড়ির মালিক ভাড়াটিয়াকে ভাড়ার বিপরীতে লিখিত রসিদ দিতে বাধ্য। এ রসিদ নির্ধারিত ফরমে সই করে ভাড়াটিয়াকে দিতে হবে। বাড়ির মালিক ভাড়ার রসিদের একটি অংশ (মুড়ি) সংরক্ষণ করবেন। এ রসিদ সম্পন্ন করার দায়দায়িত্ব বাড়িওয়ালার। রসিদ দিতে ব্যর্থ হলে ভাড়াটিয়ার অভিযোগের ভিত্তিতে বাড়িওয়ালা আদায়কৃত টাকার দ্বিগুণ অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

#একমাসের বেশি অগ্রিম ভাড়া নিতে পারবে না
কোন বাড়ি ভাড়া নিতে চাইলে বাড়িওয়ালা এক মাসের ভাড়ার বেশি ভাড়া অগ্রিম হিসেবে নিতে পারবেন না।

#প্রয়োজনে বাড়ি মেরামত করবে মালিক
বাড়িওয়ালা বাড়ি মেরামত করতে বাধ্য। শর্তানুসারে বাড়িওয়ালা যদি বাড়ির মেরামত না করেন, তাহলে ভাড়াটে ভাড়ানিয়ন্ত্রকের কাছে আবেদন করতে পারেন। ভাড়ানিয়ন্ত্রক নির্ধারিত পদ্ধতিতে নোটিশের মাধ্যমে মেরামতের জন্য নির্দেশ দিতে পারেন বাড়িওয়ালাকে। নিয়ন্ত্রক প্রয়োজন মনে করলে ভাড়াটেকেও তদন্ত সাপেক্ষে ওই খরচের মধ্যে মেরামতের জন্য নির্দেশ দিতে পারেন। ওই খরচ করা টাকা ভাড়ার টাকা থেকে কেটে রাখতে পারবেন ভাড়াটে।
যদি এমন পরিস্থিতি হয় যে বাড়ি মেরামত করা খুব জরুরি, যা না করলে বড় ক্ষতি হবে, তখন ভাড়াটে নিজেই বাড়িওয়ালাকে নোটিশ দিতে পারেন। এই নোটিশ জারির ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সময় বেঁধে দিয়ে বাড়িওয়ালাকে অনুরোধ করতে পারবেন। এর সঙ্গে আনুমানিক খরচের একটি হিসাব ভাড়ানিয়ন্ত্রকের কাছে পাঠাতে হবে। যদি এ সময়ের মধ্যে বাড়িওয়ালা মেরামত করতে ব্যর্থ হন, তাহলে ভাড়াটে নিজেই খরচ করতে পারবেন এবং খরচের হিসাব ভাড়ানিয়ন্ত্রকের কাছে পাঠাতে পারবেন।

#বাড়িওয়ালা চাইলেই উচ্ছেদ করতে পারবে না
চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করে থাকলে ভাড়াটিয়াকে হঠাৎ করে উচ্ছেদ করা যায় না। চুক্তিপত্র না থাকলে যদি কোনো ভাড়াটিয়া প্রতি মাসের ভাড়া পরবর্তী মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে পরিশোধ করেন, তাহলেও ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করা যাবে না। যুক্তিসংগত কারণে ভাড়াটিয়াকে উচ্ছেদ করতে চাইলে যদি মাসিক ভাড়ায় কেউ থাকে, সে ক্ষেত্রে ১৫ দিন আগে নোটিশ দিতে হবে। চুক্তি যদি বার্ষিক ইজারা হয় বা শিল্পকারখানা হয়, তবে ছয় মাস আগে নোটিশ দিতে হবে।
চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হলেও বাড়িওয়ালা যদি ভাড়া নিয়ে থাকেন, তাহলে ধরে নেওয়া হবে যে বাড়িওয়ালা চুক্তিপত্রটি নবায়ন করেছেন।

#মূল গেটের চাবি
বাড়ির মালিকের কাছ থেকে মূল গেটের চাবি বুঝে নিন।

#বিদ্যুতের মিটার রিডিং
নতুন বাসা বা অফিসে উঠার আগে প্রতি ভাড়াটিয়ার জন্য আলাদা আলাদা যে বৈদ্যুতিক মিটার থাকে তার বর্তমান রিড়িং এর পরিমাণ বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়া উভয়কে লিখে রাখুন পরবর্তী মাসের বিদ্যুৎ বিল হিসেবের জন্য।

#গিজার, পানির মিটার, ইলেক্ট্রিক লাইন, গ্যাস, ময়লা ফেলা বা দারোয়ান রাখা ইত্যাদি সম্পর্কে বাড়িওয়ালার কাছ থেকে আগেই জেনে নিন।

#আশেপাশের পরিবেশ সম্পর্কে বাড়িওয়ালা আপনাকে অবহিত করবেন। এটা তার দায়িত্ব।

#এসব বিষয় মেনে চললে আপনার বাড়িভাড়া আতঙ্ক কিছুটা হলেও কমবে।

আজকে ধন্যবাদ জানিয়ে এখানেই শেষ করছি। ভাল থাকবেন। :)

(ছবিঃ ইন্টারনেট)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৪০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×