somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গ বৈবাহ বিদ্রুপ

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১২ রাত ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অতঃপর জনহিতৈষী শুভাকাঙ্খিদের দল আর থাকিতে পারিল না। এই যথার্থ মাহেন্দ্রক্ষনে, যা কিনা পুঁথি পঞ্জিকার নির্ভুল হিসাবে এই ক্ষুদ্র নশ্বর জীবনে একবারই আসে, সেই সময়ে কিনা কন্যার পিতৃশ্বরের এহেন নির্বিকার কালক্ষেপন! তাহারা সকাতরে মাথা দুলাইয়া এমন নির্বুদ্ধিতার তিরস্কার করিতে করিতে অতি বিজ্ঞ ভাব লইয়া দরবারে উপস্থিত হইলেন।
কহিলেন, “মহারাজ, যদি আজ্ঞা হয়, তবে একখানা প্রস্তাব ছিল।“
- নির্ভয়ে কও।
- আমাদের কন্যা রাজেশ্বরী যথাযথ যৌবনাপ্রাপ্ত হইয়াছে। রূপে, গুণে, সৌহার্দ্যে তাহার জুড়ি মেলা ভার। বলি কি, এইবার তাহার জন্য একজন যোগ্য মনিহার পাত্র সন্ধান করিবার সময় আসিয়াছে। কালবিলম্ব অনুচিত!

মহারাজ অত্যন্ত চিন্তাসম্বলিত চেহারায় লাল চক্ষু রগরাইয়া, মাথার টোপর খানিকটা নাড়াইয়া কহিলেন, “বটে! তা, রাজেশ্বরীর শিক্ষা কতদুর সম্পন্ন হইয়াছে?”
- খোঁজ লইয়া জানিলাম, তোতালয় শিক্ষাভোজনালয় হইতে তিনি সম্মানের সহিত পক্ষি-দর্শন শাস্ত্রে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করিয়াছেন। আজকাল অবশ্যি উনার কথাবার্তা, চিন্তাধারায়ও তাহার প্রকাশ্য প্রমান পাওয়া যাইতেছে। মুখস্ত বুলির মতন সারাক্ষন এমনও দুর্বোধ্য লাইন আওড়ায় যাহা কিনা আমাদের মতন বিজ্ঞ রাজপন্ডিতদেরও বোধগম্য হয়না।
- খাসা। আমাদের কন্যা তবে যথার্থ শিক্ষাই পাইয়াছে। অতঃপর, সে কি করিতে ইচ্ছুক?”
- আজ্ঞে, সে কি কথা! বলি, দর্শন শিক্ষা তো অনেক হইল। এইবার কিনা কিঞ্চিত বাস্তব শিক্ষাও হউক। শাস্ত্রে বলে, সংসার ধর্মই নারীর বড় ধর্ম।
- বটে। খাসা বলেছ। সমস্ত পক্ষীরাজ্যে ঢাকঢোল পিটাইয়া তবে জানাইয়া দাও, আমাদের রাজকন্যা রাজেশ্বরী, যাহার তুলনা পক্ষীকুলে অপ্রতুল, তাহার জন্য যোগ্য, পুরুষোত্তম, অপ্রতুলতর পাত্র বিচরন করা হউক।
**

- মহারাজ, বলিতেই হয়, আমাদের রাজকন্যার উপর ভাগ্যদেবী যথেষ্টই প্রসন্ন। নইলে, বরগুনে পাণি গ্রহনেচ্ছুক হবুবরদের সংখ্যা যে ফর্দ ছাড়াইয়া যাইতেছে!
- আপ্লিকেশন কটা পড়িয়াছে? পাত্রদের গুনপরিচয়, বংশবিচার করিয়া এর মধ্যে সবচাইতে উপযুক্তকেই মনঃপুত বলিয়া বিবেচিত হইবে।দরকার হইলে রাজ্যজুড়ে এসেমেস এর মাধ্যমে ভোটিং ব্যবস্থাও করিব।

- আজ্ঞে হুজুর, এই যে পত্রপটে পাত্রের পরিপূর্ণ প্রতিচ্ছবিটি দেখিতেছেন, এ হল পক্ষিকুলের সম্ভ্রান্ত রয়্যালখেচর পরিবারের বিবাহোপযোগী একমাত্র পুত্র। আহা! কি সুদর্শন গড়ন, কি সুকুমার ভঙ্গি! সুবিন্যন্ত পালকগুচ্ছ, সুগম্ভীর ন্যাজ ! একেই না বলে রাজপাত্র।
- আত্মনাং সংবরনং, রাজপন্ডিত। পাত্রের গুন-পরিচয় বাতলাও।
- আজ্ঞে, পাত্র সদ্য বিলাত ফেরত, অত্যন্ত সুশিক্ষিত। সেখানে নাকি কোন এক মনুষ্য বিদ্যালয়ের ব্যালকনির খাঁজে বসিয়া প্রত্যহ মনোযোগ দিয়া বুলি শ্রবন করিতে করিতে তিনি শ্রবনবিদ্যার উপর পিএইচডি করিয়া ফেলেন। কিন্তু, যতদুর শুনি, কোনো সার্টিফিকেট…
- পন্ডিরাম, আমি আর কিছুই শুনিতে চাইনা। কন্যার রানীমাতার বড় শখ, জামাই বিলাত-ফেরতই হইতে হইবে। তাহার শিষের সুরও যেন হইবে আংরেজী। এমন পাত্র তো কুঁড়িদিন দেবদারু গাছে তপস্যা করিয়াও মেলেনা। অতিসত্তর পত্র মারফত পাত্রকে তালাশ করিয়া আশু বিবাহ সম্পন্নের বন্দোবস্ত্‌ করিতে বল। পক্ষীকুঞ্জতে রাজ্যের সক্কলকে নেমন্তন করো।এমন আনোন্দোৎসবের আয়োজন করো যা কেউ কোনদিন দেখেনি…।
**
রাজদূত এক অদ্ভুত সংবাদ নিয়া আসিল। রাজকন্যা রাজেশ্বরী নাকি আর সেই আগের মতটি নেই। রাজদরবারের সবাই অতি আগ্রহ নিয়া জানতে চাহিল তাহাদের অভিজ্ঞ পরামর্শ বরাবরের মতই সুফলে গেলো কিনা। রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, “হ্যা রে, সে কি আর আগের মতন গান গায়?”
- না, হুজুর।
- বেশ। বেশ। তা, আগের মতন যেখানে সেখানে নেচে বেড়ায়?
- জ্বী, না।
- খেলা করে?
- না।
- অদ্ভুত বুলি আওড়ায়?
- আজ্ঞে, না।

“উত্তম! উত্তম!” রাজা অত্যন্ত সুপ্রসন্ন হইয়া নিজের গজমতির মালাটি খুলিয়া দিয়া আজ্ঞা করিলেন, কন্যাকে দেখিতে যাইবেন।

**
অতঃপর, রাজা আসিল। মন্ত্রী আসিল। রাজপন্ডিতগন আসিল, পাইক-পেয়াদা আসিল। রয়্যালখেচরের একমাত্র পুত্র বিলাত-ফেরত জামাই যথাযথ অভ্যর্থনা জানাইয়া পেখম উচাঁইয়া কহিলেন, “ওই যে!”
সবাই দেখিল, রাজকন্যা পড়িয়া আছে চুপচাপ। তাহার অভিলাষী দৃষ্টি আকাশ খোঁজে না। তাহার দর্শনবিদ্যা যেন লজ্জিত হইয়া বিশাল এক প্রশ্নবোধক রূপে ক্ষণকালের জন্য ঝুলিয়া রহিল।

রাজা খানিকটা অপ্রস্তুত হইয়া সামলাইয়া নিয়া কহিলেন, “খাসা! রাজপক্ষীর জীবন তবে যথার্থই সম্পুর্ন হইয়াছে!”

***
পাখিসব করে রব, রাতি পোহাইলো;
একটি কুসুম-কলি অকালে ঝড়িলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৭
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×