ঘটনা এমন নয় যে পঞ্চাশ/একশ বছর ইবাদত বন্ধ ছিল। বরং মুসলমানরা দৈনিক পাঁচবার জামাতে নামাজ আদায় করে। সুতরাং চলমান ইবাদত কেউ লিপিবদ্ধ করলে তা’ ভুল হবার কথা নয়। আর ভুল লিপিবদ্ধ করলে তা’ কেউ গ্রহণ করার কথা নয়। কারণ ইবাদত চলমান। এমন নয় যে বন্ধ থাকা ইবাদত চালু করা হয়েছে। সে জন্য দুই তৃতীয়াংশের বেশী মুসলমান (হানাফী) যেভাবে ইবাদত করছে তাতে নানা সংশোধনী উপস্থাপন করেও কোন কাজ হচ্ছেনা।
চলমান ইবাদত প্রথম লিপিবদ্ধ করেছেন ইমাম আবু হানিফা (রঃ)। আব্বাসীয় খেলাফতের প্রধানকাজী বা চিপ জাস্টিস ইমাম আবু ইউসুফ (রঃ) নেতৃত্বে গঠিত চল্লিশজন বিজ্ঞ আলেমের কমিটি ইমাম আবু হানিফা লিখিত ইবাদতের নিয়মাবলীর প্রুভ দেখে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে জনগনের ব্যাবহারের জন্য প্রচার করে।
এরপর ইসলামের বিধি-বিধানে কিছু সংশোধনী উপস্থাপন করেছেন ইমাম মালেক (রঃ)কিন্তু তা’ অল্প কিছু লোক গ্রহণ করে।
এরপর ইসলামী বিধি-বিধানে কিছু সংশোধনী উপস্থাপন করেছেন ইমাম শাফেঈ (রঃ) কিন্তু তা’ কিছু সংখ্যক লোক গ্রহণ করে।
এরপর ইসলামের বিধি-বিধানে কিছু সংশোধনী উপস্থাপন করেছেন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল(রঃ)কিন্তু তা’ অল্প কিছু লোক গ্রহণ করে।
একই দলের সংশোধনী বিধায় এ চার দলের সবাই সবাইকে সঠিক মনে করে। পার্থক্য এটুকু যে এদের কেউ সংশোধনী গ্রহণ করেছে কেউ গ্রহণ করেনি। তবে মূল দল হানাফীর অনুসারী এখনো দুই তৃতীয়াংশের বেশী মুসলমান।
কিছুকাল আগে আহলে হাদীস নামে এক ফেতনার উদ্ভব হলো, তারা বলছে ইমামদের উপস্থাপিত এসব বিধি বিধান মানা যাবেনা বরং বহু পরে লিখিত হাদীসের কিতাবের অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো হাদীসের কিতাবে চলমান ও রহিত বা মানসুখ বিধি অসনাক্ত অবস্থায় রয়েছে। এখন এটা যে ভাবে আছে সেভাবে মানতে গেলে বিভ্রান্তি সুনিশ্চিত। আর মুসলমানদের ইবাদত নষ্ট করতেই ইবলিশ শয়তান এ মতের উদ্ভব ঘটিয়েছে, যার অন্যতম মুখপাত্র ডাঃ জাকির নায়েক।
হাদীস দুই রকম হওয়ার কারন, বিভিন্ন এলাকার প্রতিনিধি দল মহানবীর (সঃ) নিকট মুসলমান হয়ে ইবাদতের নিয়ম জেনে এলাকায় চলে গেছেন। এরমধ্যে মহানবী (সঃ) ইবাদতে পরিবর্তন করেছেন যা দূর এলাকার সাহাবায়ে কেরাম জানতেন না। সুতরাং মহানবীর (সঃ) জীবদ্দশায় ইবাদত কয়েক রকম হলো। ইমাম আবু হানিফা (রঃ) ইবাদতের সেইধারা গ্রহণ করেছেন যা মহানবী (সঃ) থেকে হজরত আলীর (রাঃ)মাধ্যমে কূফায় এসেছে। একাজে তিনি সত্তর হাজার ছহী হাদীস ব্যবহার করেছেন।
সময় যত গড়িয়েছে তত হাদীসের ছহী রাবীর ইন্তেকাল হয়েছে। তাদের হাদীসের যারা রাবী হয়েছে তারা ছহী না হওয়ায় সেই সব হাদীস ছহী তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। অবশেষে সত্তর হাজার ছহী হাদীস হয়েগেল দশ হাজার। আহমদ ইবনে হাম্বলের সময় এ সংখ্যাছিল ত্রিশ হাজার।
এখন কেউ দশহাজার হাদীস মেনে আহলে হাদীস হলেতো তার ষাট হাজার হাদীস অমান্য করা হবে। তবে সে কেমন কি আহলে হাদীস হবে?
এখন আহলে হাদীস মানলে হাদীস মানা হয় দশহাজার(আনুঃ), যাতে আবার মানসুখ হাদীসের মিশ্রণ রয়েছে। হাম্বলী মানলে হাদীস মানা হয় ত্রিশ হাজার(আনুঃ), যাতে আবার মানসুখ হাদীসের মিশ্রণ রয়েছে। শাফেঈ মানলে হাদীস মানা হয় পঞ্চাশ হাজার(আনুঃ), যাতে আবার মানসুখ হাদীসের মিশ্রণ রয়েছে। মালেকী মানলে হাদীস মানা হয় ষাট হাজার(আনুঃ), যাতে আবার মানসুখ হাদীসের মিশ্রণ রয়েছে। সৌদি শেখ ও ওহাবীরা হাম্বলী ও আহলে হাদীস মানে কম হাদীস মেনে সারার জন্য। আর যে সব হাদীস, হাদীসের কিতাবে উঠেনাই সেসব হাদীসকে যয়ীফ আখ্যা দিয়ে ওহাবী আহলে হাদীসরা তারা ছাড়া আর সবাইকে বিদাতী ও মুশরিক আখ্যা দিয়ে ফেতনা-ফাসাদের বিস্তার ঘটাচ্ছে।
এখন আপনারাই বলুন মুখে মুখে চলমান হাদীসের সবগুলো তিনশত বছর পর পাওয়াকী আদৌ সম্ভব? আহলে হাদীসরা বলছে আল্লাহ হাদীসের হেফাজত করেছেন। কথা ঠিক, আর তা’তিনি হেফাজত করেছেন ইমাম আবু হানিফার(রঃ) মাসয়ালায়। তিনি হাদীস হেফাজতের জন্য তিনশত বছর অপেক্ষা করবেন কোন কারনে? সুতরাং প্রথম জন যিনি হাদীস ব্যবহার করেছেন তাঁর মাধ্যমেই আল্লাহ হাদীস হেফাজত করেছেন। প্রমাণ, হুয়াল আউয়াল-তিনি প্রথম। সুতরাং তিনি শুরুতেই কাজ সারবেন, পরের জন্য কাজ ফেলে রাখবেন না, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং হানাফীরা যে পথে রয়েছে সে পথই ইসলামের বিশুদ্ধ পথ যা মহানবী (সঃ) থেকে এ পর্যন্ত এসেছে। তবে হানাফীরা শাফেঈ, মালেকী ও হাম্বলীদেরকেও সঠিক মনে করে। কারণ মহানবীর জীবদ্দশায় কয়েক রকম ইবাদত একসাথে সঠিক হতে পারে তবে এটাও সঠিক হওয়ার কথা। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক পথে অবিচল রাখুন, আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৬