somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীল পরী (পর্ব-৪)

২২ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




পরীর স্বামী ডাঃ এ রহমান রামলাল হিসেবে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিয়েছেন। মাধুবী তাকে পর্যাপ্ত সময় দিচ্ছে। সেদিন মাধুবী রাম লালকে তাদের বাড়ী নিয়ে গেল। গাছে বেশ সুন্দর পেয়ারা। মাধুবী তরতর করে গাছে উঠে গেল, রামকে পেয়ারা খওয়াবে বলে। অবশ্য পেয়ারা গাছটাও বেশ উঁচু নয়। রাম গাছের নীচেই ছিল। মাধুবীর পা ফসকালো। তারাপর তারা দেখল রাম নীচে আর মাধুবী উপরে। দুর থেকে চুনি ওরফে চরন ঘটনা দেখল এবং জিহবে কামড় দিল। তারা দু’জন তাড়াতাড়ি উঠে পড়ল। চরন এগিয়ে এল। সে বল্ল, আমি কিছু মনে করিনি। এটা এক্সিডেন্ড। তবে দু’জনকে বেশ মানায়। প্রতি উত্তরে কি বলা যায়, কেউ খুঁজে পেল না। রাম ও চুনি ফিরে গেল। মাধুবী ঘরে নিজ কক্ষে ঢুকে ঘটনা বুঝার চেষ্টা করছে।

উঠতি বয়সে বাবা মারাগেল। মা বল্লেন, পড়াশুনা শেষ করে পরিবারের হাল ধরতে হবে। অসম্ভব সুন্দরী মাধবীকে সে কালে অনেকেই প্রপোজ করেছে। জবাবে সে বলেছে টাইম নাই। আর এখন ভাই-বোনদের সবার একটা গতি হওয়ার পর মাধুবী দেখছে তার কথা শুনার এখন আর কারো টাইম নাই। অন্যকে তার বলা কথা সময় ভেদে তার নিজের দিকেই ফিরে এল।

অবস্থা এমন হয়েছে যে, মুরগীর বাচ্চা, পাখির বাচ্চা, মানুষের বাচ্চা দেখলে মাধুবীর ভিতরটা মোচড়ায়। তারমানে তার ভিতরে মাতৃত্ব বোধ জেগে উঠেছে। কিন্তু কেউ বিয়ে না করলেতো আর মাতৃত্ব হবেনা। কিন্তু কে বিয়ে করবে মাধুবীকে? যে বয়সের লোকেরা মাধুবীকে বিয়ে করার কথা তাদের সবার বউ বাচ্চা আছে। এখন যারা তাকে বিয়ে করতে আসে তারা তাদের বাচ্চা মাধুবীর কান্দে চাপাতে আসে। তারচে বরং রাম ভাল। সে অতীত ভুলেছে। সে জন্য রামকে নিয়ে মাধুবী সন্তানের স্বপ্ন দেখে।

রাম বিকেলে মজুর তদারকিতে যায়। বসে একটা চালা ঘরে বাঁশের টঙ্গে। ছুটির দিন মাধুবীও সেখানে আসে। দু’জন গল্প করে। আজ একটা গল্প মনে পড়ে মাধুবীর। ঠাকুমা থেকে শুনা। ইন্টারেস্টিং গল্প। শাহ এমরান-চন্দ্রবান।

মাধুবীর আজ ছুটির দিন। সকালের কথা ভাবতে ভাবতে সে বিকেলে রামের আস্তানায় যায়। রামকে বলে, ঠাকুমা বলা একটা গল্প মনে পড়েছে। রূপ কথার গল্প। রাম শুনলে সে শুনাবে। রাম সম্মতি প্রদান করে। গল্প শুরু হয়-

মধ্য এশিয়ার এক দেশের রাজ কুমারের নাম শাহ এমরান। সে এক রাত্রে এক রাজ কন্যাকে স্বপ্নে দেখে। তার পর্যটক বন্ধু বলে, বঙ্গের রাজ কন্যা চন্দ্রবানের সাথে স্বপ্ন রাজ কন্যার বিবরন মিলে। শাহ এমরান সে কথা শুনে কৌতুহল মিটাতে ছদ্মভেসে ঘোড়া ছুটিয়ে বঙ্গে চলে আসে। চন্দ্রবানের সাথে স্বপ্ন কন্যা মিলে যায়। কিন্তু সমস্যা হল, রাজকন্যা মন্ত্রী পুত্রের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এখন মন্ত্রী পুত্র খেকে রাজ কন্যার মন ফিরিয়ে তার দিকে ফিরাতে পারলে তার রাজ কন্যালাভ হয়। হিসেবটা জটিল।

শাহ এমরান নিঃসন্তান মালিনিকে এক থলি স্বর্ণমূদ্রা উপহার দিয়ে তার সহায়তা কামনা করে। মালিনি সম্মত হয়। শাহ এমরান রাজ বাড়ীতে একটা চাকুরী চায়। যাতে রাজ কন্যার কাছাকাছি থাকতে পারে। মালিনি জানায়, ছাগলের রাখালের পদ খালী আছে। শাহ এমরান জানায় তাতেই তার চলবে। মালিনি তাকে চাকুরী ঝুটিয়ে দেয় তার বোন পো পরিচয়ে। প্রেমের কারণে শাহজাদা হয়ে পড়েন ছাগলের রাখাল।

অবশেষে একদিন শাহজাদা চুপিসারে রাজকন্যা ও মন্ত্রী পুত্রের পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা জানতে পারে। সিদ্ধান্ত হয়, মন্ত্রীপুত্র বাবার সিন্দুক থেকে এক লক্ষ্য স্বর্ণমূদ্রা চুরি করবে। রাজ কন্যা বকুলতলা ঘাঁটে নৌকায় তার দাইমা সহ অপেক্ষা করবে। মন্ত্রীপুত্র স্বর্ণমূদ্রা নিয়ে আসার পর তারা অজানার পথে পাড়ি জমাবে।

শাহজাদা গোপনে মন্ত্রীকে জানায়, আজ যে কোন সময় আপনার গুনধর পুত্র আপনার সিন্দুক খালি করবে এবং পালিয়ে যাবে। আমার কথা বিশ্বাস না হয়, পাহারা বসান, তবে সে যেন টের না পায়। মন্ত্রী নিজেই পাহারায় থাকলেন, সাথে থাকল ছাগলের রাখাল। স্বর্ণমূদ্রা সমেত ধরা পড়ল মন্ত্রীপুত্র। চুরির দায়ে তার এক মাসের কারাদন্ড হলো। প্রহরীরা তাকে ধরে নিয়ে গেল।

শাহ এমরান বকুল তলা ঘাঁটে গিয়ে রাজ কন্যাকে জানালেন, মন্ত্রীপুত্র এঘাঁটে নৌকায় উঠবেনা। তিনি উঠবেন বেলতলা ঘাঁটে। তাকে বেলতলা ঘাঁটে নাও নিয়ে যেতে বলা হযেছে। এদিকে শাহ এমরান মাঝির থেকে নৌকা কিনে তাকে বাড়ী পাঠিয়ে দিল। তারপর নৌকা নিয়ে অজানার পথে পাড়ি জমাল।

সন্ধা হয়েগেল। মাধুরী বল্ল, কাল আবার বলব, এখন যাই বলে মাধবী বাড়ী ফিরে গেল। আর রাম লাল তার ফিরে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০১৭ রাত ১২:৩২
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×