আত্মাভিমান
একটা কর্পোরেট অফিসে কাজ করে সে। ছোট্ট খুপরির মতো ব্লকে তার ডেস্ক। চমৎকার ফরমাল ড্রেসের উপর টাই পরলে তাকে সত্যিকার স্মার্ট ও সুদর্শন মনে হয়। কিন্তু তরুণিরা তার দিকে কালেভদ্রে তাকায়। পাশের ডেস্কে সুন্দরিদের সাথে পুরুষ সহকর্মিদের নানারকম হাসিঠাট্টা, রঙ-তামাশার হুল্লোড় শোনা যায়।
এসব কান খাড়া করে, কখনোবা অনিচ্ছাসত্ত্বেও সে শোনে, আর আফসোসে তার বুক ফেটে যায়।
কিন্তু কি তার দোষ? কিংবা ত্রুটি? সে নিবিড়ভাবে নিজের ভিতর খুঁজতে থাকে।
একদিন তরুণিরা দেখলো, দেয়ালের গায়ে লাল রঙের একটা অদ্ভুত স্টিকার ঝুলছে, তাতে লেখা রয়েছে : ‘অনুপম হাসান। বিবাহিত।’
২৩ জুলাই ২০১৪
একটা রহস্যগল্প
ইনবক্সে ব্লগার সোমহেপি ওরফে কবি ইমন তোফাজ্জল ভাই আমাকে মেসেজ করেছেন : সোনাভাই, আপনার মোবাইল নাম্বার লাগবে, জরুরি।
আমি মেসেজ পাওয়া মাত্রই মোবাইল নাম্বার পাঠিয়ে দিলাম, এবং ব্যাপারটা যেহেতু জরুরি, তিনি আমাকে ফোন করবেন সে আশায় বসে না থেকে নিজেই তার মোবাইলে কল দিলাম। তার মোবাইল নাম্বার আমার কাছে আছে। আমার নাম্বারও তাঁর কাছে ছিল, কিন্তু পথে ছিনতাইকারির কবলে পড়ে ওটা খুইয়েছেন, এমনকি, হয়তো ছুরিকাহতও হয়ে থাকবেন। এটা ‘ইমারজেন্সি কল’ না হয়ে যায় না।
আমি ইমন ভাইয়ের নাম্বারে জরুরি কল দিলাম। খুব ঠাণ্ডা গলায় ইমন ভাই কল রিসিভ করলেন এবং আমি কে তা জানতে চাইলেন। ইমন ভাইয়ের সাথে ৪-৫ মাস পর পর মোবাইলে কথা হয়। আমার কণ্ঠ তাঁর অপরিচিত নয়। একটু অবাক ও মনক্ষুণ্ণ হলাম। যেভাবে ‘জরুরি’ বার্তা দিয়েছিলেন, তাঁর কণ্ঠে তার লেশমাত্র নেই।
আমি পরিচয় না দিয়ে বললাম, আপনাকেই বরং বলতে হবে আমি কে? ইমন ভাই বললেন, ‘খলিল ভাইয়ার কণ্ঠের মতো লাগে।’ আমি খুশি হলাম- ইমন ভাই তাহলে আমার কণ্ঠ ভোলেন নি। কৌতুক করে বললাম, ‘আপনার কন্ঠ তো দেখি ইমন ভাইয়ের কন্ঠের মতো লাগে।’ এরপর আমরা দুজন হাসতে থাকলাম।
তারপর আমরা পরস্পরের কুশলাদি জানতে শুরু করি। ইমন ভাই বললেন, ‘প্রায় ৫-৭ বছর পর আমাদের কথা হচ্ছে।’ আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘নাহ, মাত্র ৫-৭ মাস আগেই তো আমাদের কথা হলো!’ তিনি বললেন, ‘না, আরো বেশি, অনেক অনেক বেশি।’ তারপর আমাকে ঢাকায় যেতে বললেন। পাবলিক লাইব্রেরিতে তাঁরা ৬ প্রকাশনি মিলে বিশেষ বইমেলার আয়োজন করছেন। আমি অবাক হলাম- ইমন ভাইয়ের যে প্রকাশনি আছে, এটা তিনি কোনোদিনই আমাকে বলেন নি। আমি জানতামই না। তিনি বললেন, ‘কেন, আমার মুক্তদেশ নামে প্রকাশনি আছে, ভুলে গেছেন? ইত্যাদি, আমির প্রকাশনি থেকে আপনি কত বই বের করেছেন, আমাদের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ছিল, মনে নাই? তবে আমি এখন আর ওদের সাথে নাই।’ মুহূর্তে আমার ভুল ধরে ফেলি। কিন্তু গলার স্বর স্বাভাবিক রেখে, যেন এতক্ষণ ইমন ভাইয়ের সাথেই কথা বলছিলাম, এভাবেই বলতে থাকি, ‘ইমন ভাই, কি যে বলেন না! এগুলো কি আমাকে মনে করিয়ে দিতে হবে? আমার সবকিছু মনে আছে।’
কিন্তু যার সাথে এতো রসালো ও অন্তরঙ্গ আলাপন হলো, তিনি ইমন তোফাজ্জল ভাই ছিলেন না, যদিও কথোপকথনের সব তথ্য-উপাত্ত সঠিক, এবং যদিও কন্ঠটা কোনো জিন বা ফেরেশতার নয়।
তাহলে রহস্যটা কি?
৩ জুন ২০১৪
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:৪৭