somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূরভাষিণী

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


[কলেজে পড়ার সময় কোনো এক সাপ্তাহিক পত্রিকায়, খুব সম্ভবত ‘বিচিত্রা’য় একটা চমৎকার গল্প পড়েছিলাম- ‘দূরভাষিণী’। একটা ছেলের সাথে একটা মেয়ের কীভাবে যেন টেলিফোনে যোগাযোগ হয়। তাদের মধ্যে নিরন্তর ফোনালাপ চলে। এক সময়ে তারা হৃদয়গতভাবে পরস্পরের খুব কাছে চলে আসে। ছেলেটা একদিন মেয়েটার সাথে শহরের কোনো এক জায়গায় গিয়ে দেখা করতে চায়। মেয়েটা রাজি হয় না। শেষমেষ একদিন মেয়েটি জানায় তার পক্ষে কোনোদিন ছেলেটির সাথে দেখা করা সম্ভব হবে না। সে অন্ধ।

গল্পটি হয় রাবেয়া খাতুন, অথবা সেলিনা খাতুনের লেখা। আমার মনে নেই।

চমৎকার গল্পটার ভাষা ও ভাব আমার মনে গেঁথে আছে আজও। এবং আশ্চর্যজনকভাবে, আমার জীবনেও একটা মেয়ের সাথে প্রায় অনুরূপ একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছিল।]


দূরভাষিণী, আপনি বলেছিলেন অন্য সবার চেয়ে আমি নাকি ‘অন্যরকম’।
আমি বহুবার আপনার কাছে জানতে চেয়েছিলাম সেই ‘অন্যরকম’ বৈশিষ্ট্যের কথা।
আপনি টেলিফোনের প্রান্তে হাসিতে গলে পড়ে
বারংবার একই কথার ফুলঝুরি ছড়ালেন - ‘আপনি বড্ড অন্যরকম’।

আমি জানি না দূরভাষিণী, কী আপনার সত্যিকারের নাম, যে-নামে
আপনাকে ডেকে ডেকে প্রাণান্ত হতে কেবলই সাধ হয়। যে মেয়ে তার নাম বলে না
অথবা গোপন করে তাকে সবাই ‘অনামিকা’ ডাকে,
আমি ডাকি ‘দূরভাষিণী’।
আমি বলেছিলাম, অনামিকা, আপনি কি রাবেয়া খাতুনের ‘দূরভাষিণী’ পড়েছেন,
সেই অদ্ভুত মিষ্টি কণ্ঠস্বরের করুণ মেয়েটির বেদনার কাহিনি কি আপনার জানা আছে?
অবশ্য রাবেয়া খাতুন না হয়ে সেলিনা হোসেন বা অন্য যে কেউ-ই হতে পারেন
সেই কাহিনির জননী।
সেলিনা হোসেন কিংবা রাবেয়া খাতুন কিংবা অন্য কেউ - ‘দূরভাষিণী’
আপনি পড়েন নি - নরম করে জানিয়েছিলেন।
আমি বলেছিলাম, ‘অনামিকা’ বড্ড সাধারণ মেয়েদের নাম,
আপনার নামটি বরং ‘দূরভাষিণী‘ই থাক।

দূরভাষিণী, আমি জানি না কিংবা হয়তো সুনিশ্চিত জানি, আপনিই সেই দূরভাষিণী
সারাটা ক্ষণ আপনার প্রতীক্ষায় কান পেতে থাকি,
প্রতিদিন টেলিফোনে কত কথা হয়-
টিএসসি কিংবা পাবলিক লাইব্রেরি, জাতীয় যাদুঘরে কবিতাসন্ধ্যা, বাংলা একাডেমিতে বইমেলায় যাবার কথা বললেই আলসেমিতে আপনার অবশ কণ্ঠস্বর -
আপনি কি সেই দূরভাষিণী, করুণ সুমিষ্টকণ্ঠী দুঃখিনী বালিকাটি নন?

দূরভাষিণী, আপনি জানেন না আপনার কণ্ঠস্বরে কী অপূর্ব মাদকতা আছে, যা অবিরাম
আমার কানে বাজে
প্রতিধ্বনির মতো সেই কণ্ঠস্বর অবিরাম কানে বাজে,
হাঁটতে চলতে কানে বাজে;
খেতে বসি, তখনো কানে বাজে;
বেসিনের সামনে যাই, দাঁত ব্রাশ করি, আয়নায় চেহারা দেখি,
সেই কণ্ঠস্বর কানে বাজে; যখন গোসল করি, তখনো কানে বাজে,
শুতে যাই, ঘুমের ঘোরে আপনার কণ্ঠস্বর শুনে চমকে জেগে উঠি,
কানের কাছে সেই কণ্ঠস্বর - অবিরাম বেজে চলে।

দূরভাষিণী, আমি জানি, আপনার দেখা কোনোদিনই পাবার নয়, আপনিই
রাবেয়া খাতুনের ‘দূরভাষিণী।’
একদিন হঠাৎ ফোন করে দেখবো ও-প্রান্তে আপনি নেই, অন্য কণ্ঠস্বর,
আমি তৎক্ষণাৎ ক্র্যাডল চেপে লাইন কেটে দেবো,
তার পরদিন আবার ফোন করবো, সেদিনও আপনি নেই,
এরপর প্রতিদিন - প্রতিদিন অস্থির ফোন করা হবে, আপনি নেই;
ক্লান্ত একদিন থেমে যাবো হয়তোবা, দিনের পর দিন এভাবেই ব্যর্থ বিষণ্ণ সময় চলে যাবে,
মাসের পর মাস, বছরের পর বছর,
যুগ পেরিয়ে যাবে- একদিন আপনার ফোন নম্বরটিও কীভাবে ভুল হয়ে যাবে, কিংবা বদলে যাবে, কিংবা বদলে যাবেন আপনি নিজেই।


সেই বুকফাটা সময়ের বেদনায় কেবলই আমার অন্তর বিদীর্ণ হয়।




**২০০০
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫৭
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×