somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পকণিকা : চক্র

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চক্র
বুড়োদের ঘর

আমার অনটনের সংসারে কোনোদিনই স্ত্রী ও সন্তানদের শখ মেটাতে পারি নি। মাসের শুরুতে যে বেতন পাই, মা-বাবার ওষুদের খরচ আর মাস-কাবারি খোরাকি দেয়ার পর যা থাকে তা দিয়ে খুব কষ্টে মাসের তিন সপ্তাহ পার করি, বাকি দিনগুলো ধারদেনায় চলে।

এজন্য স্ত্রীর অসন্তোষ আমাকে নীরবে মেনে নিতে হয়। বড় ছেলেকে টিফিনের খরচ এতোটাই মেপে দিতে হয় যে, সে কোনোদিন বন্ধুদের ‘ট্রিট’ করতে পারে না, আর বন্ধুরাও কোনোদিন রিটার্ন ট্রিট না পাওয়াতে ওকে আর কোনো পার্টিতেই ডাকে না। ওর এই লজ্জা আর অপমানের কথা মনে হলে আমার চোখ ফেটে পানি বেরিয়ে পড়ে।

ছোটো ছেলেটা একদিন স্কুলে অন্য এক বাচ্চাকে সিল্ক ক্যাটবেরি চকোলেট খেতে দেখেছিল। ওর খুব লোভ হয়েছিল। এক টুকরো চকোলেট চেয়েও সে পায় নি। ফ্লোরে চকোলেটের খোসা পড়ে থাকলে সেটি সে কুড়িয়ে নেয় এবং খোসা চাটতে চাটতে বাড়িতে এসেছিল। ছোটো ছেলের এ ঘটনায় আমি আর আমার স্ত্রীর বুক ভেঙে গিয়েছিল।

বড় ছেলের একদিন খুব ক্রোধ হলো। সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ‘তুমি বাড়িতে টাকা দাও কেন? আর দিবে না, বুঝেছ? ঐ টাকা দিয়ে আমাদেরকে আরেকটু সুখে রাখবে।’

আমরা খুব কষ্টে কিছু টাকা জমিয়ে ছোটো ছেলের জন্য একদিন একটা সিল্ক ক্যাটবেরি চকোলেট কিনে আনলাম। সে মহাউল্লাসে সেটি খেলো, তার কয়েকজন বন্ধুকে দিল, ভাইয়া আর আপুকে দিল, এবং আমাকে আর তার মাকেও কিছু না দিয়ে পারলো না।

স্ত্রী একদিন ক্ষোভ করে বলছিল, ‘বাড়িতে কি কিছু টাকা কম দেয়া যায় না?’
ছোটো ছেলে কীভাবে যেন কথাটা ধরে ফেলে। বললো, ‘আব্বু, তুমি তোমার বাবাকে টাকা দাও কেন?’
আমি হেসে ফেলি। তাকে বুকে জড়িয়ে বলি, ‘তোমাকে ক্যাটবেরি চকোলেট কে কিনে দিল, বলো তো?’
‘তুমি।’ সে ঝটপট উত্তর দেয়। আমি বলি, ‘তাহলে বলো তো, আমি যখন ছোটো ছিলাম তখন কে আমাকে লজেন্স কিনে দিত?’
এবারও সে প্রশ্ন শেষ হবার আগেই জবাব দিয়ে ফেললো, ‘তোমার বাবা।’ তারপর সে হাসতে থাকে, আমি তার মাথায়-পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করতে থাকি।

...

আমার বৃদ্ধ মা-বাবা বেহেশ্‌তবাসী হয়েছেন অনেক বছর। আমি আর আমার স্ত্রী আমার মা-বাবার পুরোনো বাড়িটাতে থাকি। ছেলেমেয়েরা অনেক বড় হয়েছে। কিছুদিন পর পর ওরা বাড়িতে আসে।
ওরা আমাদের কোনো খারাপ গুণ পায় নি। ওরা যখন বাড়িতে আসে, সঙ্গে ওদের বউয়েরা আর ছেলেমেয়েরাও আসে। তখন আমার বাড়িতে চাঁদের হাট বসে। নাতি-নাতনিগুলো আমাদের গলা জড়িয়ে পড়ে থাকে। বাড়ি থেকে যাবার সময় আমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যেতে মা-বাবার সাথে তীব্র মর্জি করতে থাকে।
কিন্তু ওরা জানে, আমরা আমার মা-বাবার ঘর ছেড়ে কোত্থাও যাব না। আর আমরাও দৃঢ়ভাবে জানি, একদিন ওরাও এই বুড়োদের ঘরেই ফিরে আসবে।

বেঁচে থেকো, আমার সোনার প্রতিমারা, সুখে থেকো।

৮ আগস্ট ২০১৪
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পরিণতি - ৩য় পর্ব (একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস)

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:২৮



( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)

তিন


আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।

চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইফতার পার্টি মানে খাবারের বিপুল অপচয়

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৩



গতকাল সরকারি ছুটির দিন ছিলো।
সারাদিন রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাকাই ছিলো। ভাবলাম, আজ আরাম করে মেট্রোরেলে যাতায়াত করা যাবে। হায় কপাল! মেট্রো স্টেশনে গিয়ে দেখি গজব ভীড়! এত ভিড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×