somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেয়েটি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যা যা লিখেছিল

০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগস্ট

একটা মিথ্যেবাদী। ভালোবাসতে জানে না সে, কথা রাখতেও শেখে নি। আমি সাঁতার কেটে মাঝনদীতে গিয়েছি আর চিৎকার করে বলেছি : প্রেম তার নেশা। বলেছি : অভিনয় করেছে, আমার একা থাকার শান্তি খেয়েছে।

সেপ্টেম্বর

কী করে এমপি-থ্রি’টা অন করবো জানি না। তোর গান আর শোনা হলো না।

রুপার সাথে তোর দেখা। আহা, কতদিন ধরে জমিয়ে রাখা প্রেম, তোকে দেখেই সে-প্রেম মুহূর্তে উথলে ওঠে। সব শুনেছি। যত কষ্ট দিবি, নিজেকে ততই বোঝাবো।

রুপার সেলনাম্বার চেয়েছিলাম। কীসে তোর এত ভয়? তোকে নিয়ে আর কোনো কষ্ট নেই, তোর স্বাধীনতা তোরই থাক।

অক্টোবর

বিজনেস স্টার্ট করার পর তোকে খুব দরকার হতো, ঠিক এ সময় তুই চলে গেলি! বাবা নেই, ভাইয়া নেই, আমাদের এলাকাটা ভালো না। এত টাকার বিজনেস, খুব ঝুঁকি। তুই আমার ডানহাত ছিলি... সেই ডানহাতটা ভেঙে সরেও গেলি। কত টেনশন মাথায়। কী করে পথ চলবো জানি না। দোয়া করিস।

খুব বেশি স্যাক্রিফাইস করেছি তোর জন্য। আর কখনো যেন ইমোশনাল হয়ে না পড়ি; আমার প্রতিও অন্য কেউ না হয়; দোয়া করিস।

যদি পারতাম, সব পাই-পাই করে ফিরিয়ে দিতাম। তোকে টাকার পাল্লায় তুলতে পারলে কষ্ট কমতো।

তুই এত ভালো কেন? তোকে হারিয়ে অনেক কষ্ট। দোয়া করিস।

নভেম্বর

আমি তো এমন প্রেমিক চাই নি, অপরাধ ঢাকতে যে-প্রেমিক পায়ে পায়ে প্রেমিকার দোষ খোঁজে।

আমায় ভালোবাসতিস, সে প্রমাণ আজও দিতে পারিস নি। আমি নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তোর জন্য আমার স্যাক্রিফাইস বড্ড বেশি ছিল।

তোকে কোনোদিনই আর ভোলা হলো না। তুই ভালো থাকিস।

ডিসেম্বর

রিলেশন আর নেই; প্রয়োজন ফুরোলে কেউ রাখে না। তোর প্রয়োজন ফুরিয়েছে। আমি তোকে আজও খুঁজি। তুই ভালো থাকিস।

আমাকে অনেকগুলো টাকা ঋণ দিয়েছিলি; ফিরিয়ে দিলাম, নিজের কাছে সামান্য রেখে; যদি ইচ্ছে হয় কোনোদিন তোর থেকে কিছু পাবার, ও-টাকায় কিনে ভাববো- এ তোরই দেয়া উপহার। তুই ভালো থাকিস।

জানুয়ারি

আমাকে অনেক দিয়েছিস, আমি পারি নি কিচ্ছুটুকুন; যা দিয়েছি তার কোনো বাজারমূল্য নেই : মহার্ঘ সময় - যখন তোকে ছাড়া আমি আর কিছুই ভাবি নি। তবু তুই ভালো থাক।

আমি তোকে খুঁজবো। যা কিছু তৃষ্ণা সৃষ্টি হয়েছিল, তোরই জন্য। তুই আরো কঠিন হ, আরো আরো - সীমারের চেয়েও। তবু তুই ভালো থাক।

ফেব্রুয়ারি

আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না।

যা পেয়েছি তার চেয়ে কঠিন কোনো শাস্তি দিতে পারবি? আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না। তুই ভালো থাক।

অনেক দিয়েছিস। কোনো হিসেবেই তার দাম হয় না। এটুকু ঋণ নিয়ে চলে যেতে হবে।
আমাকে আর কেউ, আমার বাবাও এত ভালোবাসে নি রে... আমার কিচ্ছু ভালো লাগে না। তুই ভালো থাক।

মার্চ

আমার সেলফোন থেকে তোকে কল করলে ‘busy’ পাই, কিন্তু অন্য নাম্বার থেকে করলে তা হয় না। আমাকে কতভাবেই না বোকা বানালি। সান্ত্বনা - তোকে ভালোবেসেই ঘিলু খুইয়েছি। সত্যি ভালোবাসায় এমনই হবার কথা ছিল। তাই তো সংসার ছেড়েও সংসারী হতে পেরেছি। তুই পেরেছিস? তুই এমন কেন?

অতি ‘কাজে’ ব্যতিব্যস্ত তুই। তাই একদণ্ড সময় নেই আমাকে দেবার। আমাকে অনেক মূল্যবান কাজে সময় দিতে হয়। একটু কোর্টে গেলাম। যাবার আগে বলে গেলাম : সেলফোন ‘অন’ রাখিস। তুই এমন কেন?

ভালো লেখার শক্তি যদি থাকে, বই ছেপে স্বীকৃতি পাবি। ‘অপদার্থ’ কবিরাই মোবাইলে মেয়েদের কবিতা শোনায়। কবিতায় রুপার অনুরাগ কি অনেক বেশি? আমার চেয়েও?

তোর কণ্ঠ আমায় পাগল করে দিল। তুই এমন কেন?

এপ্রিল

তোর সাথে আর কী কথা থাকতে পারে? আমি ভুল করেছি, শাস্তিও পাচ্ছি। বিশ্বাস মরে গেছে, মনও। যতবার গোলচক্করে যাই, জিরো পয়েন্টের দিকে তাকিয়ে বলি : ভুল মানুষের পথে হেঁটে ভুল করেছি।

মে

জানতাম, যে-কোনো অজুহাতেই চলে যাবি। সব জেনেই সব ফেরত দিলাম। দিতে পেরে হাওয়ায় ভাসছে কাঁধ। একদিন সুদগুলোও পাঠিয়ে দেব।

তোকে কত ভালোবেসেছি তা শুধু এ মন জানে। তোর কোনো কষ্ট, কোনো ক্ষতি চাই না আজও। খুব কষ্ট হয় তোর জন্য, পাঁজরে ব্যথা হয়; তবু নিজেকে বোঝাই : তুই আমার কেউ না।

আমি মিথ্যে বলি না তুই জানিস। তবু কিছুই হলো না। কোনোদিনই হবার নয়।

তোর জন্য ন্যাড়া ভিক্ষু সেজেছি সুকেশী অপ্সরা। সুখ এটাই ভালোবাসতে পেরেছি। জাত-মান-কূল সব হারালাম। বিনিময়ে দুঃখ দিলি। ‘প্রেমিকা’ স্বীকৃতিটুকুও আমার পাওয়া হলো না।

তোর উপেক্ষাই আমাকে বহুদূর ঠেলে নিয়ে যায়, তোর টানেই আবার ফিরে আসি।

সবকিছু একদিন পাঠিয়ে দেব, যা কিছু পাবি। কোনো মহার্ঘের বিনিময়ে তোকে চাই নি। শুধু লোভ হয়েছিল তোর মনটার। আমার বুকের ভিতর ঘণ্টির মত তোর কণ্ঠ বেজে চলে। আমাকে পাগল করে দিল।

যে চলে যাবার, সে চলে যাবে। বনের পাখিরা বনের আকাশে সুখ বাঁধে।
তুই চলে যা।
তুই চলে যা।
চলে যা।

ভালো থাকিস।
ভালো থাকিস, পাখি।
ভালো থাকিস জাদুসোনা, টিয়ে।
ভালো থাকিস অফুরন্ত, ভীষণ দিনগুলোতে...

জুন

........

জুলাই

........

এরপর যতদিন মেয়েটা বেঁচেছিল, নিয়মিত মেসেজ পাঠাতো। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর সেগুলো তার সেলফোনে ‘মেসেজ সেন্ড ফেইল্‌ড’ হিসাবে ভেসে উঠতো।


২৬ আগস্ট ২০০৮


সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৮
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×