একজন ব্লগার একজন লেখক।
একজন লেখক ব্লগে লিখলে তিনি একজন ব্লগার।
একজন লেখকের সমাজের প্রতি যে দায়িত্ব, একজন ব্লগারেরও তাই। এবং ভাইস-ভার্সা।
কথাগুলো বললাম এ কারণে, অনেকেই উল্লেখ করেন যে, ব্লগে লিখলেই ব্লগার হওয়া যায় না, তাকে ‘ব্লগারের’ গুণাবলি অর্জন করতে হবে।
একজন লেখকের ক্ষেত্রেও তাই। কাগজে বা ছাপার অক্ষরে কিছু লিখলেই তাকে লেখক বলা যায় না, তাকে ‘লেখক’ হবার জন্য প্রয়োজনীয় গুণাবলি ধারণ করতে হবে।
ব্লগে লিখলেই যে কেউ ব্লগার না- আমাদের কিছু কিছু ব্লগারের মধ্যে এই অহমিকা বোধ আছে। অতএব, তারা কিছু কিছু গুণ বা কার্যাবলির তালিকা করেন; কোনো ব্লগার সেগুলো পালন করলেই তিনি তবে ব্লগার। লক্ষ করলেই দেখবেন, তালিকাভুক্ত ঐ সমাজসেবামূলক কাজগুলো লেখকরাও করে থাকেন, ফেইসবুকাররাও করেন; বিভিন্ন এনজিওকর্মীরাও করেন। যিনি লেখকও না, ব্লগারও না, ফেইসবুকারও না, এনজিওকর্মীও না- তিনিও এ কাজগুলো করেন। আবার এ কাজগুলো যে সকল ব্লগার, সকল লেখক বা সকল ফেইসবুকারই করছেন, তাও না।
ঠিক কী ধরনের লেখা লিখলে আপনি একজন ‘জাত’ লেখক হিসাবে মর্যাদা পাবেন তা আলোচনার দাবি রাখে। লেখার গুণগতমান হলো একটা আপেক্ষিক ব্যাপার। আপনার লেখাকে হয়তো আমি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলাম- ধ্যাত, এসব কী লিখেন ছাইভস্ম? অথচ আমার কোনো লেখাকে অপর্না মম্ময় কিংবা আহমেদ আলাউদ্দিন লেখাই মনে করেন না। কিছু কিছু ‘ক্ষুদ্রমনা’ কবি নজরুলের কবিতাকে ‘তুচ্ছ’ বা ‘সরলরৈখিক’ অভিহিত করে নিজেদের ‘বৃহদত্ব’ জাহির করছেন; কিন্তু আমি এই ‘স্বঘোষিত’ বড় কবিদের কবিতা পড়ে দেখেছি তারা আমার লেভেলের চেয়েও অনেক নীচের লেভেলে অবস্থান করছেন (এটা আমার আন্দাজ অমুযায়ী। আপনার আন্দাজে হয়তো ঐ লেখক বর্তমানের সেরা লেখকদের একজন)। ঠাকুরের কবিতাকে হুমায়ুন আজাদের কাছে মৌলিক কবিতা মনে হয় নি; অর্থাৎ, হুমায়ুন আজাদ একজন ‘ব্রহ্মাণ্ড কবি’ ছিলেন, আর ঠাকুর ছিলেন মধ্যবিত্ত স্তরের একজন ‘বিশ্বকবি’ মাত্র।
আপনাকে আমি লেখকই মনে করি না, অথচ ব্লগে লেখা পোস্ট করার পর আপনার লেখা প্রশংসার বন্যায় ভেসে যায়। আমরা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে আমাদের নিজ নিজ লেখার নিজ নিজ ভক্তবলয় গড়ে তুলি। ভক্তদের কাছে আমাদের জনপ্রিয়তার কোনো কমতি নেই।
কাজেই, ব্লগে যাচ্ছেতাই লেখা বলে যাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছি/করছেন, কোনো কোনো পাঠকের কাছে তারও কিছু সাহিত্যমূল্য কিংবা আবেদন আছে। আমরা ব্লগার ও লেখক আলাদা আলাদা বস্তু বলে বলে সাধারণ মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে দিচ্ছি যে, ব্লগাররা হলেন নাস্তিক, অধার্মিক। ফলে ব্লগাররা পরিচিত মানুষের কাছে ঘৃণার পাত্র হিসাবেও ধিকৃত হচ্ছেন। হয়তো এমনও হয়ে থাকবে, নিজের পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের কাছেও নিজেকে ‘ব্লগার’ হিসাবে পরিচয় দেয়াটা অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছেন।
মূলত ব্লগার কোনো আলাদা বস্তু বা ব্যক্তি নন। তাঁরাও লেখকই। লেখকরা যেমন সমাজবদ্ধ জীব এবং সমাজের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ, ব্লগাররাও।
নাস্তিক্য বা আস্তিক্য হলো ব্যক্তিগত বিশ্বাস। সমাজের যে-কোনো ব্যক্তির নাস্তিক বা আস্তিক হওয়ার স্বাধীনতা রয়েছে। একজন লেখক বা ব্লগার সমাজের অংশ; তাঁরাও নাস্তিক বা আস্তিক হওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবেন।
০৭ আগস্ট ২০১৫
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ১১:৫০