somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনালি ও অন্যান্য

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দূরবীক্ষণ

একটা নিহত দিনের সবটুকু মায়া মাটির আধারে গেঁথে রেখে
ক্ষয়িষ্ণু স্মৃতির বুকে লুটিয়ে পড়ে দিশেহারা চোখ;
ক্ষুব্ধবাক পিঁপড়ের রাশি চঞ্চলতা ভুলে গিয়ে খুবলে খায়
দুর্বৃত্ত ঘাস। একজোড়া সংসপ্তক কাক আচানক ডানা ভেঙে
মাটিতে ঝরে পড়ে; অদূরে খা-খা অন্ধকার

তুমি এক বিশুদ্ধ বাগান; থরে থরে চারাগাছ; ডালে ডালে কিশলয়
আমৃত্যু তোমাকে এমনি চাই অফুরন্ত ঘ্রাণ

২৪ জুলাই ২০১৫


প্রতিশ্রুতি

প্রেম এক হিরন্ময় অমৃত। জীবন এতো ক্ষুদ্র কেন? এ ক্ষুদ্র জীবনটুকুতে তোমাকে
ভালোবেসে মিটলো না সাধ। পরের জীবনে অনন্তকাল ধরে
তুমি আমারই হবে - যাবার বেলায় এ কথা বলে যাও।

২৭ আগস্ট ২০১৫


সোনালি

সোনালি আমাকে বলেছিল, আমাদের বাসর হবে কোনো বদ্ধ ঘরে নয়, আড়িয়াল বিলের মাঝখানে
ডিঙ্গি নৌকোর ছাদখোলা পাটাতনে। শরতের কোনো পূর্ণিমায়, শাদা-কালো মেঘগুলো বার বার
জোসনা ঢেকে দিবে; দক্ষিণের কালিগাঁও থেকে উড়ে আসা বাতাসে উজানে ভেসে যাবে
আমাদের ডিঙ্গিখানি- আড়িয়াল বিলের সমগ্র বুক জুড়ে থোকা থোকা শাপলারা দুলে দুলে আমাদের
অভিবাদন জানাবে। সোনালি বলেছিল, তুমি আমাকে ছোঁবে না, বুঝলে তো! আমরা একটানা
অনেক-অনেকদিন আকাশে-বাতাসে-পাহাড়ে উড়বো, আর প্রেম করবো, বুঝলে না? তারপর আশ্বিনে
চকের পানি নেমে গেলে গাংকুলায় আমন ক্ষেতের পাড় ধরে বহুদূর হেঁটে হেঁটে ধানের গন্ধ আর
সোনারং শরীরে মাখবো।

বিরান সর্ষেক্ষেতের দিকে তাকিয়ে সোনালি বলতো, দেখো, কী অদ্ভুত সমুদ্র! সাধ হয় ডুবে মরি।
তারপর সত্যিই সে সমুদ্রে ঝাঁপ দিত। দিগম্বর সর্ষেসমুদ্র পেরিয়ে, কালাই, মটর, ডগাতোলা দূর্বা মাড়িয়ে
একনিশ্বাসে ছুটে চলতো সোনালি। তারপর বিপুল সায়াহ্নে ছোলাপোড়ানো একদঙ্গল ছেলেমেয়ের ভিড়ে
আমরা মিশে যেতাম।

সোনালি বলেছিল, আমরা একরাতে জয়পাড়া সিনেমাহলে ‘সাতভাই চম্পা’ দেখবো; ফিরতিপথে
দোহারপুরীর নিকষ আঁধারে ডানা-ঝাপটে-উড়ে যাওয়া প্যাঁচাদের ভয়ে একটুও চমকাবো না।

ভাদ্রের শেষে আড়িয়াল বিলের নৌকাবাইচ, নূরুল্লাপুরের শানাল ফকিরের ধামাইল, গালিমপুর সিদ্ধী পীরের
ওরস আর নূরপুরের মাঠে চৈত্র সংক্রান্তির মেলা- সোনালি বলেছিল, আমরা বহুদিন এসব ঘুরবো,
আর গাছের বাঁকলে এঁকে রাখবো উন্মাতাল প্রেমের স্বাক্ষর।

আজও সোনালি ছুটছে, অতীত থেকে বর্তমানে; অথবা ভবিষ্যত গিলে খেয়ে কালের প্রান্তরে, যার নাম ইতিহাস।
আমি আড়িয়াল বিলে ছুটে যাই, গাংকুলায় ছুটে যাই, আমাদের সর্ষে-মটর-মাষকালাই-মাড়ানো ক্ষেতের আলে
গিয়ে দাঁড়াই- সোনালির সাধগুলো বিধূর কান্নায় পায়ে পায়ে হাঁটে- আমাদের ছোলাপোড়ানো দিনগুলো হারিয়ে গেছে,
সর্ষের সমুদ্র মরে গেছে, মটরশুঁটির দানাগুলো আমাদের দাদিমার ঘরে এখন একগুচ্ছ স্মৃতির ফসিল।

২৯ আগস্ট ২০১৫


প্রতিটা গভীর নিশীথে যে নারী আমাকে ডাকেন

প্রতিটা গভীর রাতে, যখন অতলান্ত নিদ্রায় ডুবে গেছি- বহূদূর আসমান থেকে
ভেসে আসা সুরের মতো বেজে ওঠে এক মহীয়সী কণ্ঠ : ‘জাগো’।
আধো নিমীলিত চোখে ঘুমের জড়তা; আঁধারের ছায়ায়
কেউ কি বসে পড়লো নরম শিথানে?
‘জাগো! জাগবে না?’ সুরেলাকণ্ঠী আবারও বলে ওঠেন।
আমি আড়মোড়া ভেঙে চারপাশ দেখি।
কেউ নেই। খা-খা অন্ধকার।
‘ভুলে গেছো?’ অন্ধকারের গহ্বর ফুঁড়ে সেই স্বর জেগে ওঠে।
‘কে আপনি? বলুন তো কোথা থেকে বলছেন? কে আপনি, এ নিশুতি দুপুরে?’
মহীয়সী শব্দ করে হাসেন। বলেন,‘আমাকে চিনলে না? খুব ভুলোমনা তুমি।’
‘নাহ! কোনোদিন দেখি নি। এ কণ্ঠও বড্ড অচেনা। কে আপনি?’
‘আমাকে তুমি চিনো। দূরবর্তিনী, অথচ আমিই তোমার ছায়া।’
‘আজগুবি কথা রাখুন। আপনি কেউ নন। স্বপ্ন। একটা স্বপ্নের ভিতর প্রতিদিন
আমাকে ত্যক্ত করছেন আপনি।’
‘হাহাহা। স্বপ্ন নই, আমিই ধ্রুব।’
‘আপনি যান। বিরক্ত হচ্ছি খুব। ঘুমোতে দিন।’
‘আচ্ছা যাই। ঘুমোও। গোধূলির হাওয়ায় আঁচল উড়িয়ে প্রতিদিন
তোমাকে দেখি- আমাকে ভুলো না প্রিয়; দিনের একভাগে একবার হলেও
আমার কথাটি ভেবো। আমি সোনালি। তোমার অলঙ্ঘ্য প্রেমিকা। আমি মৃত্যু।’

৩১ আগস্ট ২০১৫


আজ তোমাকে এমন কোথাও নিয়ে যাব

আজ তোমাকে এমন কোথাও নিয়ে যাব যেখানে কেউ নেই
এ এক নির্জন রঙ্গশালা, যেখানে যাচ্ছেতাই করা যায়
কড়া পাহারা, কারো চোখরাঙানি, নিয়ম-শৃঙ্খল নেই, নেই কোনো নিষেধাজ্ঞা
যা খুশি ভাবতে পারায় কোনো পাপ নেই
বসন-ভূষণ খুলে ফেলে নাঙা শরীরে লজ্জা পাবে না তুমি
কোনো বাধা নেই - যেমন, যেভাবে সাধ তেমনই খেলতে পারো

এ হলো এক নিরালা বাগান।
তোমার হাতে এমনই এক জাদুর কাঠি-
এক ফুঁ-য়ে একটা গোলাপ, অথবা একটা সাপ বানিয়ে ফেলতে পারো

আজ তোমাকে এমন কোথাও নিয়ে যাব, যেখানে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই
স্বাধীন সার্বভৌম এ এক অদ্ভুত ভুবন - তোমার মধ্যে তুমি।
তোমার ভিড়ে তুমি আর তোমার ছায়া।
প্রকৃত ‘তোমাকে’ একমাত্র সেখানেই খুঁজে পাবে।

২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৩
২১টি মন্তব্য ২১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×