এলিফ্যান্ট রোডে জরুরি ছবি তোলা যায়, লেজারপ্রিন্ট, ঢাকা শহরের সেরা
এ কথা যখন বলছিলি, তখনও আমার মাথায় সূর্য গলে পড়ছিল
আর আমি বসুন্ধরা সিটির উন্মুক্ত ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টের রিভল্ভিং চেয়ারে তোর হাত ধরে মুখোমুখি বসবার
সবটুকু অবয়ব ভেবে ভেবে সূর্যকে দ্রুত পেছনে ফেলে
যাচ্ছেতাই একটা ক্যাবের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে মোবাইলস্ক্রিনে তোর ডাকের অপেক্ষায়
বাংলাদেশের সেল্সগার্লরাও আজকাল অত্যাধুনিকা, সুন্দরী ও তুখোড় স্মার্ট–ওদের রোশনাইয়ে ঝলমল করে মডার্ন শপিংমলের বাহারি বিপনিপুঞ্জ। আমি যেখান থেকে দৌড়ে ছুটেছিলাম উন্নত কোয়ালিটির ছবি তুলবো বলে, তোর কথায়, বিগত বছরগুলোর গতানুগতিক পাসপোর্ট আর স্ট্যাম্প সাইজ ছবির সবগুলো নেগেটিভ ওরা সযত্নে তুলে রেখেছে, ‘চাহিবামাত্র’ প্রিন্ট দেবার প্রস্তুতিসহ। ওরা খুব সমীহ করে, ব্যক্তির চেয়েও পদের কারণে।
এলিফ্যান্ট রোডের ক্যামেরাম্যান জানালো সবকিছু এলোমেলো–
‘ছবি কি কাল নিলে হয় না?’
‘না। আধঘণ্টা বড় জোর।’
‘দু ঘণ্টা সময় কি দেয়া যায়? রাত আটটায়?’
‘নোও। হাফ এ্যান আওয়ার এ্যাট বেস্ট। অর, আই কুইট।’
মেয়েদের মধ্যে কী আছে জানি না। ওরা সব পারে। মেয়েরা কীভাবে ভেঙে গুঁড়ো করে দেয় পাহাড় ও পাথর? সুন্দরীদের সাথে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে, বিশ্বাস করি না। মিষ্টি সেল্সগার্ল, যার কণ্ঠস্বর ততোধিক সুরেলা, বললো, ‘ভাইয়া, আপনি এখানটায় বসুন প্লিজ। হয়ে যাবে।’
এক মুহূর্ত শেষে ৩০ মিনিট পার হয়ে গেলে ‘এ নিন ভাইয়া, আপনার ছবি’ বলে যখন মেয়েটি প্যাকেট বাড়িয়ে বিলের কাগজটা এগিয়ে দিল, তখনও আমি স্টুডিয়োর দরজার দিকে সটান তাকিয়ে। একটা কবিতার মতো লতানো গ্রীবা উঁকি দিয়ে সুনিশ্চিত আমার পানেই ধেয়ে আসবে- পিঠে পেলব হাত রেখে বলবে–‘দেরি হয়ে গেলো রে...’
ক্যামেরায় শট দিয়ে এ্যালিফ্যান্ট রোডে ভিড়ের ভেতর আমরা হাঁটবো; আজও আমি কালো প্যান্টের কাপড় খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হয়ে গেলে তুই সবচেয়ে অপছন্দের কাপড়টাকে ‘এটা খুব ভালো লাগে’ বলে তীব্র বকা খাবি; ফুচকা খেতে বসে অহনার কথা পাড়বি–ওর জন্য খুব মায়া হয় বলে; বেইলি রোডে কি নাটক দেখা যায় আজকের সন্ধ্যায়? ‘খোঁজ দ্যা সার্চ’, বাংলাদেশে ওয়েস্টার্ন স্টাইলের দুর্দান্ত ছবি এই প্রথম, চলছে বলাকায়–তুই যখন ইডেনে পড়তি, একদিন বলাকায় সিনেমা দেখতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তুই বার বার চুল টেনে ঘুম ভাঙিয়েছিলি–আজও সেরকম হতে পারে–সিনেমা হলে আমার সবচেয়ে আরামপ্রদ ঘুম হয় মনে হয়; বসুন্ধরার সিনেপ্লেক্সে আজও যাই নি–কীভাবে কোথা থেকে টিকেট কেটে কোথা দিয়ে ঢুকতে হয়, তা আমায় শেখাবার কথা ছিল তোরই;
এরপর মহাকালের হিসাবে খুব অল্পই কেটে গেছে। আর, আমার ভেতর থেকে বেড়ে উঠছে পাহাড় ও পাথর। আমি বসে আছি। ইংল্যান্ডের ফলো অনে পড়ে বাংলাদেশ যখন টগবগ করে জ্বলছিল সেকেন্ড ইনিংসে, কমিউনিটি টেলিভিশনের সামনে যখন উপচে পড়ছিল দর্শক, আর একটি উইকেটও যেন না পড়ে আজ চতুর্থ দিনের শেষ দশ ওভারে, এমন প্রার্থনার পরও সবাইকে হতাশ ও বাকরুদ্ধ করে আশরাফুল যখন প্যাভেলিয়নমুখি, আমি তখনও মনেপ্রাণে আকুল বেদনায় ঘামছিলাম, এই তুই ফোন করে বলবি- ‘আমার খুব ভুল হয়েছে; শেষবারের মতো মাফ করা যায় না?’
আমি
বসে
আছি।
আমি
বসে
থাকি।
অনন্তকাল।
৩১ মে ২০১০
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১২:০৮