somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিতার মৃত্যু বা অমরত্ব

২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবিতারা ফ্যান্টাসি - কাল্পনিক সুরম্য ভুবন।

একটা সমুদ্র হঠাৎই পাখি হয়ে আকাশে উড়ে গেলো,
মেঘের বুক ছিঁড়ে গজিয়ে ওঠে অজস্র চারাগাছ।
একটা পাহাড় নদী হয়ে শূন্যে বিলীন, একটা নদী রমণীয় হাত বাড়িয়ে
প্রেমিকা হয়ে ওঠে। উড়ন্ত রোদ থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে
বেরিয়ে পড়ে পাখির শাবক, বৃষ্টিতে ঝরে পড়ে থোকা থোকা সুখ
এবং অমরাবতীর ফুল। কবিতারা ফ্যান্টাসি - কাল্পনিক সুরম্য ভুবন।
অথচ কবিতারা ফ্যান্টাসি নয়। কবিতারা রিয়েলিটি।

শব্দেরা চিত্রকল্প - এসব বাহাস বাতুলতা।
শব্দেরা একটা যুদ্ধ।
শব্দেরা বোমারু বিমান – মুহুর্মুহু বজ্রবর্ষণ।
শব্দেরা গোলন্দাজ শেল - বিকট শব্দে বিস্ফোরণ, তুমি বিধ্বস্ত।
শব্দেরা দমকা বাতাস- বুকের উপর সজোরে ধাক্কা দেবে, পাঁজর ভেঙে
ফানা ফানা করে ফেলবে হৃৎপিণ্ড।
শব্দেরা সুবিপুল ভাব।
শব্দেরা সুগভীর সিন্ধু।
শব্দেরা আপনআপনিই আসবে,
তোমার পঙ্‌ক্তিতে বেছে নেবে যে যার অবস্থান।
শব্দদের জোর করে চাপিয়ে দিও না - তখন এরা অপাঙ্‌ক্তেয়;
কিছুদিন বাদে এরা ঝরে যাবে, মরে যাবে -
তোমার কবিতা অবশ্য তার অনেক আগেই মৃত এক ফসিল।

কবিতারা ফ্যান্টাসি নয়, কবিতারা জীবন।
তুমি আর আমি রক্তমাংসে কবিতার ভেতর।

কবিতারা শব্দের খেলা, অথবা হৃদয়গ্রাহিতা।
শব্দের খেলা অনেক ক্ষেত্রেই হয়ে ওঠে আরোপিত ও বর্জ্যবহ; কৃত্রিম শব্দেরা
কবিতাকে খেয়ে ফেলে; কবিতা তখন শব্দসার একটা কঙ্কাল

কবিতারা শব্দসংকেত নয়, কিংবা ধাঁধা,
যেমন ছুরিবৃক্ষনাভি, ভাতভূশণ্ডিভৃগু- কী এর অর্থ জানি না।
অদ্ভুত কিংবা উদ্ভট, এমনকি অনির্বচনীয় কিছু শব্দকেও পাশাপাশি সাজালে
বড্ড অসংলগ্নভাবে- অগাকান্ত বাগডাসা অচ্ছুৎ কামুক পেয়ারা- মনে করো,
পাঠকের ঘাম ঝরানো কবিদের মহৎ কোনো কাজ নয়।
প্রতিটা শব্দকে অতটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে
পরখ করতে যেয়ো না, ওরা পালাবে
কবিতা হয়ে উঠতে পারে অমসৃণ কাঠের মতো রুক্ষ ও রসকষহীন-
তুমি নিজেই তখন কবিতাকে খেয়ে ফেলবে;
একটা ভালো কবিতায়, যখন তুমি ঘোরের ভেতর, শব্দেরা
অনর্গল ছুটে আসবে সারে সারে, দল বেঁধে
পঙ্‌ক্তিতে পঙ্‌ক্তিতে বেছে নেবে যে যার অবস্থান।

স্বভাব কবিরা শব্দের খেলায় পারদর্শী নন;
হৃদয় ফুঁড়ে তাঁদের কবিতা উদ্গত হয়।
এ কবিতা তোমাকে জীবনের সাথে একাত্ম করে।
কোনো কোনো কবি শব্দের খেলা পছন্দ করেন,
তেমন কিছু পাঠকও রয়েছেন।

জীবনের বোধন সবচেয়ে বেশি ব্যক্ত হয় সরলরৈখিক কবিতায়। এ কবিতা মুহূর্তে পাঠককে নাড়িয়ে দেয়, আলোড়িত করে। পৃথিবীর সেরা কবিতাগুলো সরলরৈখিক। এ কবিতার পাঠক সর্বাধিক। পাঠক এ কবিতা খুঁড়ে জীবনের স্বাদ পান। জীবন এখানে অতিশয় প্রাণবন্ত।

যুগে যুগে দু-একজন কবি কবিতা শাসন করেন;
কালের গর্ভে কবিরা হারিয়ে যান, কেউ কেউ খুব দ্রুত।
মহাকাল কয়েকজনকে মনে রাখে।
কোনো কোনো মৃত কবি সহসা জেগে ওঠেন - কখনো কবিতার গুণে,
কখনো-বা যুগের হুজুগে।

মাইকেল মধুসূদন শব্দকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি খেলেছেন ‘মেঘনাদবধ’-এ। ওগুলো আজকের কবিতায় বড্ড বেমানান, উত্তর-প্রজন্মে খুব হাস্যকর হয়ে উঠবে না সেগুলো, বুকে টোকা দিয়ে কে এ নিশ্চয়তা দেবে! এই কিছুদিন আগেও রবীন্দ্র-নজরুল ছিলেন মাঝ গগনের দীপ্যমান সূর্য, তেমনি জসীমউদ্‌দীন ও সুকান্ত। দশম শ্রেণিতে প্রতিভা ম্যাডাম প্রথম শোনালেন ‘রূপসী বাংলা’র এক আশ্চর্য কবির কথা; একাদশ-দ্বাদশ, কী স্নাতকেও তাঁর কোনো কবিতা আমরা পড়ি নি, অথচ, তিনি যেন হঠাৎ ধুমকেতুর মতো মর্ত্যে নেমে এলেন- সমগ্র বাংলায় এখন এক অদ্বিতীয় নাম – জীবনানন্দ দাশ। রবির তেজও ক্রমশ ম্রিয়মান- কেউ কেউ বলেন – অমৌলিক তিনি। জীবনবাবুর অনেক কবিতা পাঠকপ্রিয় হয়েছে, বার বার সে-গুলো ঘুরে-ফিরে সামনে দাঁড়ায়; বাকিগুলো তাঁর জীবদ্দশার মতো মৃতবৎ কোথায় পড়ে আছে, আমরা অনেকেই জানি না। যুগের হুজুগ কি কেটে যাবে, আবারও কি তিনি হারিয়ে যাবেন, অকস্মাৎ?

শব্দের খেলা বা সাময়িক হুজুগ কিছুদিন ম্যাজিকের মতো কাজ করে।
শতাব্দীর দাপুটে কবিদের নাম আমরা ভুলে গেছি।
নেশা কেটে গেলে নজরুল আর শামসুর রাহমান, এবং আমার নীল লোহিত
অনাগত অনেক অনেক দিন ধরে আমাদের কবিতা শেখাবেন-
এতটা সরলরৈখিক, এতটা হৃদয়গ্রাহী ও জীবন-নিংড়ানো কবিতা
তাঁদের মতো তামাম বাংলায় আর কে লিখেছেন?

২৭ মার্চ ২০১৪
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×