আমি যা চেয়েছি বিলকুল ভুল করে চাই নি কিছুই
আমাকে আজো ডাকে ভরা সারণির আড়িয়াল বিল
আমি আজো সাঁতার ভুলি নি, নিটোল পানিতে ডাহুকের ডুব
আমাকে সুখ দেয় ছোটো ছোটো ঢেউ, নিবিড় ও অনাবিল
**
আমার আড়িয়াল বিল ছিল,
বাহারি কচুরি ফুল, কার্তিকের ভোরে ঠেলাজালে চিংড়িপোনা-
টেংরাপুঁটি আর টাটকিনির খলবলানিতে সকাল-দুপুর মত্তবেলা
**
আড়িয়াল বিলের পশ্চিম পাড়ে, দোহারে আমার জন্ম, আর আমি বেড়ে উঠেছি আড়িয়াল বিলের কাঁদা গায়ে মেখে, পানিতে গোসল করে, সাঁতার কেটে, মাছ ধরে। আড়িয়াল বিলে ধাপারি খালের মুখে আমাদের ছোট্ট একটুকরো বোরো জমি ছিল। বাবার সাথে ছোটোবেলা থেকেই সেই জমিতে যেতাম। একদিন সেই জমিটা বালুতে ভরে গেলো, আর বাবা ওটাকে বেচে দিল। আমি কাঙাল হয়ে গেলাম যেন, একজন অনাথ বালকের মতো।
আড়িয়াল বিলে উন্নাকালে ঘাস কেটেছি দুই বেলা। বিলের পাড়ে গরু চড়িয়েছি, ডাংগুলি খেলেছি, তীব্র পিপাসায় ছুটে গিয়ে পানি খেয়েছি। আড়িয়াল বিলের পাড়ে আমাদের কিছু জমি ছিল। ওখানে লাঙলে চাষ করে গরুকে গোসল করিয়েছি দোহারের খালের মুখে, মুখটা যেখানে আড়িয়াল বিলে পড়েছে।
১১ ভাদ্রতে আড়িয়াল বিলে বিরাট নৌকা বাইচ হতো, ১২ ভাদ্রতে মেঘুলা বাজারের কাছে, ধাপারি খালের মুখে পদ্মানদীতে। নৌকা বাইচ ছিল অনেক উত্তেজনাকর একটা উৎসব।
আড়িয়াল বিলে আমি খোলা নৌকায় একদিন রাত কাটিয়েছিলাম, একা। গভীর রাতে, অনেক অন্ধকারে আকাশের অনেক উপর থেকে পাতিলের মতো ভূতের আগুন পড়তে দেখেছিলাম। আমি ভয় পাই নি। বড়ো হয়ে জানতে পেরেছিলাম, ওটা ভূতের আগুন না, উল্কাপতন ছিল।
আড়িয়াল বিলে নৌকা নিয়ে ঘুরেছি আমার বন্ধু জসীমের সাথে, আবুলের সাথে। জসীমের নৌকায় আমরা প্রায়ই বিকেলে আড়িয়াল বিলে যেতাম। ওর ক্যাসেট প্লেয়ারে আমরা খালি গলায় বেসুরো কণ্ঠে গান রেকর্ড করতাম।
আড়িয়াল বিলের উপর দিয়ে বর্ষাকালে খেয়ানৌকায় পার হয়ে বক্সনগর, গোবিন্দপুর গিয়েছি, ঢাকায় যাতায়াতের জন্য।
আড়িয়াল বিলে গেলে আমি খুব উত্তেজনা বোধ করি। কত ইতিহাস আড়িয়াল বিলের গভীরে লুকিয়ে আছে। আমার শৈশব আর কৈশোরও যেন আড়িয়াল বিলে ঘুমিয়ে আছে।
আড়িয়াল বিল একোটা স্মৃতির নাম। আমার প্রাণের ভেতর আড়িয়াল বিল। আড়িয়াল বিলের প্রাণের গভীরে আমার সত্তা।
আমার বড়ো ছেলে
উৎসর্গঃ দোহারের মানুষ
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৩৭