শিমুলের মতো সুন্দরী মেয়ে আজও দেখি না; সারাদিন কেটে গেছে ওর উড়ন্ত ওড়নার রংধনু দেখে, আমার দিকে ফিরেও চায় নি– কেটে গেছে দিনের পর দিন এভাবেই; বহু বহুদিন।
ওর বিয়ে হয়ে গেল। যুবকেরা দলে দলে সন্ন্যাসে গেল। গেলাম আমিও। চৈত্রনিদাঘে, জলসঙ্গমে খুন হয়েছি শিমুলের কথা ভেবে। শিমুল পলকে সব দিয়ে দিল ওর বরকে– কোথাকার কোন পামর পুরুষ, উড়ে এসে জুড়ে গেল আজীবন দখলে। আকৈশোর বিন্দু বিন্দু যত্নে ওর বাড়ন্ত কুসুমে জমতে দিয়েছি মধু, একদিন আমাদের সম্পদ হবে এ ভেবে– মোক্ষম গ্রাস কেড়ে নিল উপনিবেশী বর! আমার কথা একবারও ভাবে নি শিমুল; নয় কাউকে কখনো।
সায়ন্তনি; কনকচাঁপা; রঞ্জনা; ওরা খুব সুখে আছে ‘পরপুরুষের’ ঘরে। ওদের অঢেল আহ্লাদ আর স্বামীদের সাথে অবাধ উৎফুল্ল ঢলাঢলি দেখি, আর করাতের মতো কে যেন চিরায় আমাদের পাঁজরের হাড়। মেয়েরা পাষণ্ডিনী; ওরা কেবল বরকেই বোঝে, আর তীর্থের প্রেমিকদের বিমর্ষ বিলাপে ওদের ব্যাপক বিনোদন হয়।
‘কষ্ট নিস না দোস্।’ জুঁইকে আজ কবিতা শোনালে ও শুধু এটুকু সান্ত্বনাবাক্য আওড়ালো। আর বললো, ‘যাকে নিয়ে এসব মহৎ কবিতা লিখেছিস, সে খুব ভাগ্যবতী রে!’
আমার খুব সাধ হয়েছিল জুঁই বলবে, ‘তুই কি জানিস, আমিও কতরাত নির্ঘুম কাটিয়েছি তোর কথা ভেবে? তোর কথা মনে পড়তেই বুক থেকে ঠেলে নামিয়ে দিয়েছি বরকে!’ জুঁই বললো না। মেয়েরা পাষণ্ডিনী; ওরা কেবল বরকেই বোঝে।
সংবিধান সংশোধনের একচ্ছত্র ক্ষমতা যদি আমার হাতে থাকতো, মাইরি বলছি, স্বামীদের সাথে মেয়েদের এহেন রংতামাশা, ঢলাঢলি আইন করে ঘোষণা করতাম সংবিধানবিরোধী, অবৈধ। এসব মূলত ক্লাসমেট আর বিয়েপূর্ব-প্রেমিকগণের ফুর্তির বেসাতি, যাদের বিরান জীবনে অদ্যাবধি বউ জোটে নি... একদা একখানা অর্বাচীন বউ জুটে গেলেও বউমণিরা ‘ঘড়ায়-তোলা’ নিত্যব্যবহার্য জল, বান্ধবীরা সুগভীর সন্তরণদিঘি।
***
‘কেতকীর সঙ্গে আমার সম্বন্ধ ভালোবাসারই, কিন্তু সে যেন ঘড়ায়-তোলা জল–প্রতিদিন তুলব, প্রতিদিন ব্যবহার করব। আর লাবণ্যর সঙ্গে আমার যে ভালোবাসা সে রইল দিঘি, সে ঘরে আনবার নয়, আমার মন তাতে সাঁতার দেবে।’
শেষের কবিতা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১০ সকাল ৭:৫৭
** ই-বুক অয়োময় সুপুরুষ, এপ্রিল ২০১৮ ডাউনলোড লিংক
উৎসর্গ : ওরাই