somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘের খামে অশ্রুদানা-২

২৯ শে মার্চ, ২০০৮ দুপুর ১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


হাসপাতালের কেবিন থেকে চাঁদ দেখা যায়না। কিন্তু জোছনা দেখা যায়, ভরাট জোছনা। ক’দিন আগেই পূর্ণিমা গেল। এখনো তার রেশ রয়ে গিয়েছে।মনে হচ্ছে, পুরো পৃথিবী যেন জোছনায় ডুবে আছে। চুরি করে হাসপাতালের ছাদে চলে গেলে কেমন হয়? মাথা কেমন ভো ভো করছে, নাহলে নার্সদেরকে ফাঁকি দিয়ে চলেই যেতাম। পনের তলার ছাদে দাঁড়ালে নিশ্চয়ই নিজেকে জোছনা-পরী মনে হবে। মনে হবে আকাশে ভেসে যাচ্ছি……অবশ্য বেড পর্যন্ত বিশাল জানালার পর্দা সড়ালেই বেরিয়ে আসে মেঘ। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ… তুলোর মত… ভিজে ভিজে স্বপ্নের মত…… আমি যেন আকাশের উপর ভেসে ভেসে ঘুমুচ্ছি… জানো, ছোটবেলায় আমার প্রিয় একটা দিবাস্বপ্ন ছিল। আম্মু বকা দিলেই মন খারাপ করে বারান্দায় বসে বসে স্বপ্ন দেখতাম একদিন আমার খুব বড় একটা অসুখ হবে। হসপিটালের সাদা ধবধবে বিছানায় শুয়ে থাকব। আমার মাথার কাছে ফুলদানীতে কয়েকটা ফুল থাকবে। একটা বিশাল জানালা থাকবে যেটা দিয়ে গাছ দেখা যাবে। আর ঐ গাছে একটা পাখির বাসা থাকবে। আমি শুয়ে শুয়ে পাখি আর গাছ দেখবো। তখন আম্মু আর বকা দিবেনা…… এখন ঠিকই ধবধবে সাদা রুমে, সাদা চাদরে শুয়ে আছি। বিশাল বিছানাও আছে। গাছ আর পাখির বদলে আছে মেঘ…… হাজার হাজার মেঘ… ওরা শুধু চলে যাচ্ছে…এতো বিরামহীন মেঘেরা, একটুও থামেনা। কখনো যেন হেঁটে, কখনো যেন দৌঁড়ে…ওরা যাচ্ছেতো যাচ্ছে...ওরা কোথায় যায়? এতগুলো মেঘ থেকে একটাও কি পৌঁছে তোমার দেশে? ওখানে যেখানে তুমি এখন গভীর ঘুম। তোমার জানালার পাশে গিয়ে কি একটাও থমকে দাঁড়ায়? তোমাকে কি বলে দেয় অনেক দূরে একটা মেয়ে হসপিটালের কেবিনে শুয়ে জানালা দিয়ে আকাশ দেখতে দেখতে, জোছনা দেখতে দেখতে, মেঘ দেখতে দেখতে তোমাকে ভাবছে।………আম্মু একটু আগে পেপার পড়ে শুনাচ্ছিল। কোন সাংবাদিক যেন সন্তানদের পড়ার খরচ চালাতে না পেরে কিডনী বিক্রি করে দিতে চেয়েছে। টিভিতে নাকি রাহেলার উপর নিউজ করছে। ভারতে ‘নতুন বাংলাদেশ’ মানচিত্র হাতে মিছিল করেছে ‘নতুন বাংলাদেশের’ দাবীদাররা। ……… আমি শুনেও শুনি্না। চুপ করে থাকি। আম্মু আমার অনাগ্রহ দেখে নিজেই চুপ মেরে যায়। আম্মু বুঝেনা এত বকর বকর মেয়েটা এমন চুপ মেরে আছে কেন। আমার আসলে কথা বলতে ইচ্ছা করেনা…… একটা সময় মানুষের জীবনে সবকিছু কত অর্থহীন হয়ে যায়। কাল যখন একটা সময় মনে হচ্ছিল আমি বুঝি চলেই যাচ্ছি- অদ্ভূদ শুন্যতায় মনটা ঘনীভূত উদাসীনতায় ডুবে যাচ্ছিল। এই তাহলে চলে যাওয়া? জীবনে এতকিছুর তবে অর্থ কী থাকে? কী অর্থ থাকে হিংসা আর তীব্র রাগের? কী অর্থ থাকে ভালবাসা আর এত মায়ার? এভাবেই যে সবাই চলে যায়…… বুক ভরা শূন্যতা নিয়ে… আমার তখন লিচুনচুর চেহারা ভাসছিল চোখের সামনে… বড়বড় চোখের মায়াভরা শিশুটা নতুন ধমক দিতে শিখেছে ‘বঅঅপপ!’ এতরাতে ও নিশ্চয়ই ভাবীর কোল ভরে ঘুমিয়ে আছে……… এই ছোট ছোট শিশুরা…ওরাও একসময় বড় হবে। তারপর ওরাও একদিন চলে যাবে…… ইঞ্জেকশানের পর ইঞ্জেকশান…প্রথমে গলা ছেড়ে কাঁদলেও হাল ছেড়ে দেয়া নাবিকের মত একসময় এলিয়ে পড়ে ছিলাম চুপ করে। একটা মানুষ চলে গেলে ঠিকই আবার সব চলে নিজস্ব নিয়মেই। তবে কেন এত অসহ্য হাবুডুবু খেয়েও ভেসে থাকার চেষ্টা?......তারচে’ তুমিও এসো আমার মেঘের উপর… মেঘ ভেসে যাক অনেক অনেক দূর… একসময় ফেরার ঠিকানা হারিয়ে ফেলি…… জীবনের শেষ মোড়ে এসেতো একসময় না একসময় ঠিকনা হারিয়ে ফেলতেই হয়……

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০০৮ ভোর ৬:৩৯
৪৯টি মন্তব্য ২৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×