somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আল্লাহ কি নিরাকার ? ও সর্বত্র বিরাজমান ?? (২য় অংশ)

২০ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ইসলাম শিক্ষা
নবম-দশম শ্রেণী
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ড, ঢাকা ।

প্রথম অধ্যায়- আকাইদ

প্রথম পরিচ্ছেদ (ক) তাওহীদ: পৃষ্ঠা ২

আল্লাহ-তিনি অদৃশ্য ও নিরাকার অথচ সর্বত্র বিরাজমান ।
উল্লেখিত বইটি ছাত্রদের কচি মনে আল্লাহ সম্পর্কে যে বিশ্বাস বদ্ধমূল করতে চেয়েছে তা হল আল্লাহ নিরাকার এবং তিনি সর্বত্র বিরাজমান । বইটির এই বক্তব্য যে ‘ইসলাম’ তা, প্রমাণ হয় বইটির নামে, আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান কথাটি ইসলামের শিক্ষা হিসাবে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে । কিন্তু ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হল আল্লাহ সাকার ও আরশে সমাসীন, তিনি নিরাকার নন এবং সর্বত্র বিরাজমানও নন ।

আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান কথাটি হিন্দু ধর্ম হতে এনে ইসলাম শিক্ষার মধ্যে ঢুকানো হয়েছে ।

নিম্নে তার প্রমাণ দেয়া হল:
মাধ্যমিক হিন্দু ধর্ম শিক্ষা
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও টেকস্টবুক, ঢাকা ।
চতুর্থ পাঠ ঈশ্বরবাদ ২৩, ২৪, ২৫ পৃষ্ঠা ।
ব্রহ্ম ঈশ্বর । তিনি এক অদ্বিতীয় । তিনি নিরাকার ও সর্বব্যাপী । বইটিতে হিন্দু ছাত্রদিগকে হিন্দু ধর্ম থেকে শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, সেটা তাদের ব্যাপার । কিন্তু আমরা দেখছি ইসলাম শিক্ষা বইটিতে কোমলমতি মুসলিম ছাত্রদেরকে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা দেয়া হচ্ছে ইসলাম শিক্ষার নামে ।

ব্রহ্ম ঈশ্বর । তিনি এক অদ্ধিতীয় । তিনি নিরাকার, সর্বব্যাপী ।

এই বইটি হিন্দু ছাত্রদিগকে হিন্দু ধর্ম শিক্ষা দিয়েছে । অবশ্য হিন্দু ধর্ম শিক্ষার লেখকগণ; ঐ কথাগুলির বরাত বেদ হতে দিয়েছে । কিন্তু ইসলাম শিক্ষার লেখকগণ আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান এই কথাটি কোথায় পেলেন তার কোন বরাত দেননি । এতে প্রমান হয় ইসলাম শিক্ষার লেখকগণ হিন্দু ধর্মের শিক্ষাকে ইসলামের শিক্ষা বলে চালিয়ে দেবার অপচেষ্ট করেছেন । এই অপচেষ্টার কারণ কি ? অন্যদিকে তথাকথিত একদল মুসলমান বলে থাকেন আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজমান, এ কথাটি একটি খাঁটি মিথ্যা কথা । এ কথার কোন দলিল কুরআন এ হাদীসে নেই । মানুষের আমল বিশুদ্ধ হবার পূর্বশর্ত হল বিশুদ্ধ ঈমান । সূরায়ে নাহল ৯৭, বনি ইসলাইল১৯ । ঈমান বিশুদ্ধ না হলে আমল যতই বিশুদ্ধ হোক তা কবুল হবে না । যেমন- নামাজ বিশুদ্ধ হবার পূর্বশর্ত হল অজু । অজু শুদ্ধ না হলে নামাজ হবে না । ঈমানের মধ্যে সর্বপ্রথম হলো আল্লাহর উপর ঈমান । সেই আল্লাহর উপর ঈমাণ যদি বিশুদ্ধ না হয়, তাহলে অন্যান্য আমল যত বিশুদ্ধ হোক, যেমন নামাজ, রোজা,হজ্জ, যাকাত কোনটাই কবুল হবে না । আল্লাহ নিরাকার ও সর্বত্র বিরাজান কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা । এই বিশ্বাস ঈমানকে কলূষিত করবে, সারাজীবনের আমলকে বরবাদ করবে । তাই আমরা আল্লাহর আকার ও আল্লাহর সম্পর্কে কুরআন ও সহীহ হাদীসের বরতে তুলে ধরার চেষ্টা করলাম । পাঠক কোন বিষয়ে দ্বিমত পোষন করলে আমাদিগকে জানালে উপকৃত হব ।

কিছু লোক আছেন যারা আল্লাহর আকার অবিশ্বাস করেন । আল্লাহর আকার আবিশ্বাস করার অর্থ আল্লাহকে অবিশ্বাস করা । সাথে সাথে মনে রাখতে হবে সৃষ্টি জগতে যতকিছু আছে তার কোনটির আকারের সাথে আল্লাহর আকারের সাদৃশ্য নেই । যেমন- আল্লাহ বলেছেন :

قَالَ يَا إِبْلِيسُ مَا مَنَعَكَ أَن تَسْجُدَ لِمَا خَلَقْتُ بِيَدَيَّ أَسْتَكْبَرْتَ أَمْ كُنتَ مِنَ الْعَالِينَ

আল্লাহ বললেন, হে ইবলিস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল ? তুমি আহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ? [সুরা ছোয়াদ] ।

এখানে আল্লাহ তাঁর হাতের কথা বললেন । মানুষেরও হাত আছে, তাই বলে আল্লাহর হাত মানুষের হাতের মত, এই বিশ্বাস করা যাবে না । এই বিশ্বাস যদি কেউ করে তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে । বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহর হাত আছে, সেই হাতের তুলনা সৃষ্টি জগতে নেই । যেমন আল্লাহ তেমনই হবে আল্লাহর হাত । তার হাতের সম্পূর্ণ বিবরণ আমাদের জানা নেই । শুধু বিশ্বাস করব যে, আল্লাহর হাত আছে । যদি বিশ্বাস করি আল্লাহর হাত নাই তাহলে কুরআনের ঐ আয়াত অবিশ্বাস করা হয় । আর কুরআনের আয়াত অবিশ্বাস করলে মানুষ কাফের হয়ে যায় ।

কিছু লোক বলে থাকেন আল্লাহ যে হাতের কথা বলেছেন, তা বাস্তব হাত নয়, তা হল কুদরতের হাত । এ কথাটিও মিথ্যা । তাতেও আল্লাহর কুরআন অবিশ্বাস করা হয় । কারণ কুদরতী হাত বললে বাস্তব হাতকে আবিশ্বাস করা হয়, আস্বীকার করা হয়, সুস্থ হাতেই ক্ষমতা বা শক্তি থাকে । যদি বাস্তব হাত বিশ্বাস করা হয় তাহলে হাতের সাথে ক্ষমতা [কুদরত] ও বিশ্বাস করা হয় । কিন্তু যদি কেবল কুদরত [ক্ষমতা ] বিশ্বাস করা হয় তাহলে হাতকে বিশ্বাস করা হয় না । তাই যারা আল্লাহর হাতের অর্থ কুদরাত করেন, তারা বাস্তব হাতকে বিশ্বাস করেন না । আর এটাই হল কুফরী । বিশুদ্ধ বিশ্বাস হল আল্লাহর বাস্তব হাত আছে এবং সে হাতর অসীম ক্ষমতা আছে ।

কুরআনের আয়াতের এরূপ খমখেয়ালী অর্থ সর্ব প্রথম চালু করে জাহাম বিন সাফওয়ান নামক এক ব্যক্তি । সে খোরাসনের তিরমিয অন্চলের অধিবাসী ছিল । এরূপ খামখেয়লী অর্থ করার জন্য ১২০ হিজরীতে আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ডপ্রপ্ত হয়ে মৃত্যু বরন করেন । তারীখ-তাবারী ৭ম খন্ড, ৩৩০ পৃষ্ঠা ।

বর্তমানে বই পুস্তকে, কুরআনের ভিবিন্ন তাফসীরের এরূপ বহু অর্থ পাওয়া যাচ্ছে । তা সবই বিভ্রান্তিকর ।

আমরা আল্লাহর কিতাব ও রাসুল [সা:] বিশুদ্ধ হাদীস মুতাবেক আল্লাহর আকার সম্পর্কে তুলে ধরার চেষ্টা করছি । আমাদের এই পুস্তকটি পড়ার পর ক্ষেপে যাবেন কেবল তারা, যারা হিন্দুদের ধারণা বিশ্বাস স্থাপন করে আছেন । যারা কুরআন ও হাদীসের মধ্যে নিজেদের বক্তব্য ঢুকিয়ে কুরআন ও হাদীসের বিকৃতি ঘটাতে চান, অথবা আল্লাহর আকার সম্পর্কে অজ্ঞ ও মুর্খ থাকতে চান । অন্যদিকে যারা সস্তা ওয়াজ ও নসীহাত করে মানুষকে হাসিয়ে, কাদিঁয়ে, মিথ্যা কাহিনীর মধ্যমে ওয়াজের ময়দানকে সরগরম করে ফেলে, সেই সকল মিথ্যুক প্রতারক ওয়ায়েজগণ । তবে কুরআন হাদীসের অভিজ্ঞ কোন আলেম যদি আমাদের বর্ণনার ব্যাপারে কোন ভুল ধরতে পেরে থাকেন, তাহলে দলিল প্রমাণ সহ লিখিতভাবে প্রেরণ করলে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধনী সংযুক্ত করব ইনশাআল্লাহ । অনুরোধ রইল কেবল মাত্র ভাবাবেগের বশে, বিনা দলিলে, আপন খেয়ালে, কোন বুজুর্গের কথা কষ্ট করে পাঠাবেন না, যারা কুরআনের অর্থ অবগত নয় । কমপক্ষে মেশকাত শরীফও আগাগোড়া পড়েনি । এমনকি ইসলামী আকাইদ সর্ম্পকে একখানা কিতাবও পড়েনি এমন বহু মাদ্রাসার শিক্ষক পীর ও তাবলীগের মুবাল্লিগের সাথে সাক্ষাত করেছি, সাধারণের নিকট বুজুর্গ বলে খ্যাত, কিন্তু ইসলামী জ্ঞানে তারা শূণ্য । এ ধরণের কাট হুজুরদের দলিল বিহীন কোন কথা কষ্ট করে পাঠাবেন না । অতীতের তথাকথিত কোন বুজুর্গের কথাও আমাদের নিকট পাঠাবেন না । কোন আয়াতের অর্থ যদি দ্বিমত পোষন করেন তাহলে প্রথমে আরবী ব্যাকরণ [সারফ, নাহু, বালাগাতের] দৃষ্টে এবং বিশুদ্ধ হাদীসের বরাতে তুলে ধরে পাঠাতে অনুরোধ করছি । হাদীস যেন যয়ীফ না হয়, মউযু না হয় । কোন ব্যাখ্যার বরাত যদি পাঠান তা যেন কোন মুকাল্লিদ ও সুফীর কিতান না হয় । এটাই হল আনুরোধ । যারা আরবী বুঝেন তাদের নিকট অনুরোধ তার যেন ইমাম বায়হাকী [রা:] এর কিতাবখানি পড়েন ও তা প্রচার করেন এবং আমাদের বর্ণনা তাঁর কিতাবের সাথে মিলিয়ে দেখেন ।

শায়খ মুফতী মোহাম্মদ আবদুর রউফ সালাফী
এম, ৪৮, খালিশপুর হাউজিং এস্টেট, খুলনা
চলবে.........................
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×