somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

অপরাধ, সমাজেরই দর্পণ?

২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

​আশির দশক থেকে বাংলা চলচ্চিত্র সমাজে বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসকে বেপারোয়া ভাবে প্রমোট করেছে। এর প্রেক্ষিতে নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ "সুস্থ ধারার" চলচ্চিত্র নির্মাণও যে একই সমাজে ব্যবসা সফল করা যায় তার পাইলট এবং বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছেন। কিন্তু তার পরেও বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সেই পথে হাটেনি, বরং গতানুগতিকতা অব্যহত রেখেছে। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, "সুস্থ ধারার" চলচ্চিত্র দর্শক সফল করতে যে মেধা এবং ক্রিয়েটিভিটি দরকার তা আমাদের ফিল্ম মেইকারদের নেই। বরং এদিক সেদিক থেকে ধার করা অপরাধের নিত্য নতুন কন্সেপ্ট দিয়ে খুব কম সময়ে একটা সিনেমা তৈরি করেই অর্থ উপার্জন এই ইন্ডাস্ট্রির লোকেদের মূল লক্ষ।
কিন্তু এতে সমস্যা কোথায়?

সমস্যা এই যে, এমনিতেই অপরাধ প্রবণ হয়ে পড়া সমাজে আরো নিত্য নতুন অপরাধ পেনিট্রেইট করছে কিংবা নিয়ন্ত্রিত গন্ডির অপরাধকে সাধারণের সাথে ব্যাপক আকারে পরিচয় করিয়ে এর বিস্তার ঘটাচ্ছে। অথচ সমাজ সংস্কার এবং সমাজ সংশোধনের ম্যাসেজ দেয়া চলচ্চিত্রের কাজ ছিল এবং এর জন্যই মূলত সাহিত্যের শাখা হিসেবে "উপন্যাস" দাঁড়িয়েছে, সে আমাদের চলচ্চিত্র বেমালুম ভুলে গেসে। সেই গুণ্ডা কাহিনীর নির্মাতা থেকে শুরু করে একালের তথাকথিত প্রতিভাবান ফিল্ম মেকার সবাই একই বৃত্তে ঘুরছেন, চমক বলতে শুধু ছবির প্রিন্ট কোয়ালিটি এবং দৃশ্যের সেটআপ!

​ব্যক্তি আমি গ্রাম, মফঃস্বল এবং শহুরে সমাজের যে বিস্তৃত অংশে বড় হয়েছি এবং যে বাংলাদেশের মানুষের যাপিত জীবনের যে ধারার পরিচিত তাতে সামাজিক অপরাধ প্রবণতা রয়েছে অবশ্যই। তবে সমাজের কিংবা প্রতিবেশীর বড় ধরণের কোন ক্ষতি হতে পারে এই রকমের অপরাধ প্রবণতা আমার পরিচিত সমাজে অতি চেনা ছিল না। অবশ্য "থাক! এই বারেই শেষ, আর করবো না", এই বলে ছোট খাট অপরাধ করার একটা চল সমাজে ছিল। তা স্বত্বেও ছোট খাট নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধ নিয়েও অনুশোচনায় মানুষ থাকতে দেখেছি, এমনকি নিজস্ব বন্ধু মহলেও 'আমি আসলে কাজটা ঠিক করি নি, কিংবা আর এরকম করা ঠিক হবে না', এরকম স্বীকারোক্তির চল চিল।

অবাক করার ব্যাপার, এই একই সমাজেই আমরা যদি রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের অপরাধ গভীরতা দেখি, সেসব অপরাধের পর্যায় এবং বিস্তার নিয়ে হতভম্ভ হয়ে যেতে হয়। এমন হীন অপরাধ এই সমাজেরই কিছু মানুষ পেলো কোথা থেকে? এই অমানুষত্ব এবং পশুত্ব এই সমাজের দর্পণ ছিল না কোন কালেই। এটা সুস্পষ্ট যে, সমাজ জঘন্যতম অপরাধ প্রবনতার শিকার হয়েছে লুটপাট, আত্মসাৎ, কলহ, মারামারি, জবরদখল কেন্দ্রিক বিবদমান রাজনৈতিক অপ সংশ্রবের কারণে, কেননা রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়ন সমাজের তৃণমূলে এসে সামাজিক সংগঠন এবং এর ফাংশনালিটিকে ভেঙে দিয়েছে এবং রিপ্লেইস করেছে, ফলে অপরাধ কেন্দ্রিক ভীতি নির্ভর অনিয়মই সমাজের নিয়ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। ফলে অপরাধই সমাজের মূল দর্পন হয়ে উঠেছে। এর বাইরে বহু অপরাধ কন্সেপ্ট এসেছে বিশ্বায়নের সাংস্কৃতিক বিনিময়ে, আর আমাদের চলচ্চিত্র এবং নাটক তাকে শুধু প্রমোটই করেছে, কিছু ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ধার করে এনে ফিল্ম সমাজকে নতুন নতুন অপরাধের কন্সেপ্টের সাথে পরিচিয় করিয়ে দিয়েছে।

বাংলা নাটক নিয়ে একটি প্রাসঙ্গিক কথা বলে শেষ করছি! (ভুল হলে মাফ করবেন) মোশারফ করিম প্রায় অর্ধ সহস্র বাংলা নাটকে অভিনয় করেছেন। খেয়াল করবেন, এর প্রায় প্রতিটাতেই তাকে কেন্দ্রীয় চরিত্রে দেখা গিয়েছে এবং প্রায় সবকটা চরিত্রই "প্রতারণা"য় ভরা। একটা দেশে হাজার হাজার নাটকের নায়ক শুধু "প্রতারণার" চরিত্রে অভিনয় করেন বা করতে হয়, এটা একটা বিস্ময় এবং ব্যাপারটা বড়ই লজ্জার! এই সব অভিনয়ের সহস্র ধরণের প্রতারণার কৌশল কি আমাদের সমাজের যাপিত জীবনের "আয়না"? যদি হয়, তা হলে এই অপরাধ প্রবণতার উৎপত্তি, বিস্তার এবং ভবিষ্য ঝোঁক নিয়ে এবং অপরাধ কেন্দ্রিক আয়নাবাজির নিয়ন্ত্রণ কৌশল নিয়ে বিস্তর গবেষণার দরকার আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×