somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

ভূমি হীন মানুষের মিছিল!

১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার মধ্যে আন-ইন্সটিটিউশনাল চর্চার মর্মন্তুদ রোগ (ভীতিসঞ্চার,চাঁদাবাজি, গুম, খুন কেন্দ্রিক) থাকার কারণে, দুর্বিত্তায়িত রাজনৈতিক সংস্কৃতির উর্বর ক্ষেত্র হওয়ায় এখানে রাজনীতির লোকদের হঠাৎ আর্থিক সক্ষমতা, উন্নয়ন এবং শিল্পের কারণে ইকোনোমিক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল এবং রাজনৈতিকভাবে ভূমিচ্যুত (ডিস্প্লেইসড) নাগরিকের সংখ্যা বেশি।

উপরন্তু রয়েছে নদী ভাঙ্গনের খড়গ। এর বাইরে রয়েছে উচ্চবিত্ত সমাজের ভূমি জবরদখল কেন্দ্রিক কলুষিত অপরাধ প্রবণতার রীতি। এর বাইরে রয়েছে বছর বছর বন্যায় ফসলের হানি এবং ফসলের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া জনিত জমি-ফসল-ক্ষুধা কেন্দ্রিক ত্রিমুখী হতাশা। মহাজনী সুদ প্রথা রহিত হলেও অধুনা ক্ষুদ্র ঋণ এবং তার মস্তান কেন্দ্রিক সংগ্রহ ব্যবস্থা বহু প্রান্তিক নাগরিককে রাতের আঁধারে ভূমি থেকে পলায়ন পর করে তুলেছে। উপরন্তু পুত্র সন্তান হীন পরিবার এবং কন্যা সন্তানকে ভূমি অধিকার থেকে তাড়না করা আমাদের সমাজিক ব্যাধি। বেকার ছেলের কর্ম সংস্থানের নিমিত্তে জমি বিক্রয় করে নেতা কিংবা প্রশাসনের লোকেরদের ঘুষ দেয়ার প্রথা এখানে চলমান। ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে কিংবা বিশেষ করে কন্যা দায় গ্রস্ত পিতাকে মেয়ে বিয়ে দিতে কম দামে জমি বিক্রয় করতে হয়।


এ বহুমাত্রিক আর্থ সামাজিক কারনে ঘনবসতিপূর্ণ দেশটির কৃষিভিত্তিক নাগরিকের ভূমি হারানোর শঙ্কা সদা জাগ্রত। এই সদা জাগ্রত শঙ্কা বাংলাদেশের দিকে দিকে উন্নয়ন প্রকল্পের নির্বিচার ভূমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সংগ্রাম হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এরকমই একটি ভূমি হারানোর প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠে ফুলবাড়িতে কয়লা খনির উন্মুক্ত উত্তোলনের বিরুদ্ধে জন আন্দোলন। সাম্প্রতিক সময়ে একই রকম চরিত্রের আন্দোলন আমরা দেখেছি আড়িয়াল বিলে বিমান বন্দর স্থাপনের পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে, সিলেটের চূনারুঘাটে স্পেশাল ইকনোমিক জোন স্থাপন কেন্দ্রিক, চট্রগ্রামের বাঁশখালীতে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন কেন্দ্রিক। এই নিয়মিত চিত্রের সর্বশেষ ধাপ গাইবান্ধা।

ব্রিটিশ বেনিয়া কৃষকের জমি ছিনিয়ে সাম্রাজ্যবাদী দালালদের দিয়ে জমিদারি প্রথা বাস্তবায়নের সময় ট্রাইবাল, নন ট্রাইবাল সবার জমি ছিনিয়ে নিয়েছে। আবুল মনসুর আহমদ এবং শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা আন্দোলন এবং পাকিস্তান আন্দোলনের পরবর্তী ধাপে আইয়ুব খানের হাত দিয়ে পুর্ব বাংলার কৃষক মহাজন্দের কাছ থেকে জমি ফিরে পেলেও ট্রাইবাল ল্যান্ড নিয়ে বাংলাদেশের প্রশাসন কোন সংস্কার করেনি এবং ইচ্ছাকৃত স্বেচ্ছাচারিতা দেখিয়েছে। পার্বত্য উপজাতীয় প্রান্তিক নাগরিক, সাঁওতাল আদিবাদী সহ বহু এথনিক মাইনরিটি অপরের দয়া দাক্ষিণ্যে পরের বাড়ির কোনা কাঞ্চিতে দাস হয়ে শত বছর জীবন জাপন করেছে, কিন্তু সময় পেরিয়ে জান্তে পারে আসলে তাদের ভূমি নেই, তারা দেশ হীন।

এই প্রক্রিয়া ছাড়াও দুর্বলের (হিন্দু মুসলমান উপজাতীয় সব গরীব) জমি মিল ফ্যাক্টরি, চিনির কল ইত্যাদির কথা বলে, ভয় দেখিয়ে, বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে এমনকি বনায়ন এবং কৃষি খামারের অজুহাতে- বহু ভাবে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে।

আড়িয়াল বিল, ফুলবাড়ি খনি, সিলেটের চুনারূ ঘাটের আন্দোলন, গাইবান্ধা এবং নওগাঁর সাঁওতাল আন্দোলন এই সব কিছুই নাগরিকের ভুমি অধিকার কেন্দ্রিক। সামনে সরকার যে ১০০টি গুরুত্বপূর্ণ এস ই পি জেড পরিকল্পনা নিয়ে আগাচ্ছে তাতেও ভুমি অধিগ্রহণের টাকা অধিক পরিমানে লূট করতে দুর্বলের জমি বেছে বেছে নেয়া হবে। প্রকল্পগুলো অতিমাত্রায় ভূমি নির্ভর হওয়ায় এবং সরকারি খাস জমি ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক দুবৃত্তদের দখলে চলে যাওয়ায়, ধারণা করা হচ্ছে এই প্রতিটি অঞ্চলে ভূমি প্রতিরোধের আন্দোলন গড়ে উঠবে।
বাস্তুভিটা এবং কৃষি জমি রক্ষার এই তাগিদ ঐতিহাসিক কারণে মরণপণ। গতানুগতিক ভাবে নিতান্তই সংকটে বা চাপে না পড়লে বাংলাদেশের জন আন্দোলনের সাথে কোন পর্যায়েই রাজনৈতিক দলের সংযোগ থাকে না, এতে প্রায় প্রতিটি আন্দোলন রক্তপাতে গড়ায়। প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে নাগরিকের দিকে বন্দুক তাক করানোর এই খেলায় রাষ্ট্র নিজেই মদদ দিচ্ছে।

দুর্বলকে পলিটিক্যালি এবং ইকোনোমিকিলি ডিস্প্লেইস করতে বাংলাদেশের ক্ষমতা বলয়ের জুড়ি নেই। দেশের গৃহ গণনা ভিত্তিক আদমশুমারীতে এই বহু পান্থায় ভূমিচ্যুত ভাসমান নাগরিক স্থান পান কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে বিস্তর।

রাজধানীর ফুটপাথ এবং বস্তির গ্লানির জীবনে ধেয়ে আসা মানুষের মিছেলের উৎস কোথায়?
এই আলোচনার শুরু করতে এত ভয় কেন রাষ্ট্রের?
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×