somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

বিদ্যুৎ উৎপাদনের সাথে পরিবেশ রক্ষার ট্রেইড অফ এবং আন্দোলনের পরবর্তি ফেইজ!

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুন্দরবন নিয়ে যথেষ্ট সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে তার পরেও সার্বিক সচেতনতা ও প্রকৃত গণজাগরণ তৈরি না হলে সেটা সমাজের সম্মিলিত দায় যার জন্য দুর্বিত্তায়নের প্রতি নাগরিকের সহনীয়তা ও পরিবেশের প্রতি চূড়ান্ত অবহেলার দিক দায়ী থাকবে। তবে আন্দোলনের একটা ম্যাচিউর পর্যায়ে এসে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এবং তাদের বিস্তৃত শিক্ষিত সমর্থক বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে দুটি কথা বলতেই হয় যা কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে।

সুন্দরবনের পক্ষে মিছিল,সমাবেশ করতে, পোষ্টার-লিফলেট বিলি করতে, রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা করতেঃ বিএনপি'কে নিষেধ করেছে কে?
আমি এর উত্তর খুঁজেছি এভাবে-
১। সুন্দরবন লূটে ঢাকার মাফিয়া চক্র ও স্থানীয় দালাল-কর্মী চক্র অবিরত কাজ করছে, তাতে সকল রাজনৈতিক দল জড়িত। হাম্বা লীগ ও বিম্পি কর্মীরা তার প্রধান প্রধান বাহিনী, মেঠো কর্মী যখন যারা ক্ষমতায় থাকে!
২। প্রভূ ভিত্তিক রাজনীতির মনের বাঘ! পাছে ভারত চটে!!!
৩। উন্নয়ন ও পরিবেশ রক্ষার টেকসই দিক এবং এই দুয়ের সামগ্রিক সমন্বয় কিংবা ট্রেইড অফ বুঝার মত রাজনৈতিক প্রজ্ঞার উপস্থিত প্রকট বাংলাদেশের ক্ষমতা বলয় ও এর বাইরের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের মাঝে।


তবে আরেকটি জিজ্ঞাসা থেকেই যায় যা বিশেষত সরকারি দলের ব্যাপারে!
একটি দলের অভ্যন্তরে কিংবা বাইরে বহু ইন্টেলেকচুয়াল থাকেন যারা সরাসরি বা পরোক্ষ ইন্টারফেইসে দলকে সঠিক ডিরেকশন দিয়ে থাকেন, ভিন্ন ভিন্ন বিষয়ে সঠিক ইনপুট দিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল "বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ" এর ভিতরে বাইরে কি এমন কেউ নেই যারা বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়নে সরকারকে সঠিক উপদেশ দেয়ার, সরকার বা দলের ভুল অবস্থানের প্রতিবাদ করার সামর্থ্য রাখেন?

এই সুবিশাল শূন্যতা, এই হীনতা বৃহৎ এই দলটি আজ থেকে ১০-২০ বছর পরে কিভাবে টেকেল দিবে? এই বুদ্ধি ব্রিত্তিক দৈন্যতা ও নৈতিক পরাজয়ের দায় দলটির শিক্ষিত সমর্থকর বা বুদ্দিজীবিরাই বা কিভাবে বহন করবেন? কেন তারা সাস্টেইনেবিলিটির এই শোচনীয় দিক গুলো নিয়ে মুখে কুলূপ এঁটেছে। এই রকমের দলীয় দাসবৃত্তির শেষ কোথায়?


সুন্দরবন রক্ষাঃ জন আন্দোলনের প্রকৃতি কেমন হওয়া চাই!
বিএনপিকে ক্ষমতায় রেখে তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা কমিটির সম্পদ রক্ষার আন্দোলন যতটা সফল হয়েছে, একই বাম অক্ষীয় বলয়ে থাকা আওয়ামীলীগকে ক্ষমতায় রেখে “তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষার কমিটির” কোন পূর্ণ আন্দোলন এমনকি এর একটি আংশিক দাবিও সফলতা দেখছে না। এই অচলয়াতনের মীমাংসা হওয়া জরুরি।

নিজেদের মূল দলের ক্ষমতার জোটকে চ্যালেঞ্জ করে সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলন না করায় এই আন্দোলনটি কিছুটা প্রশ্ন সাপেক্ষ হলেও এর জনসচেতনতা তৈরির অর্জন উল্লেখযোগ্য। যেমনটি বদরুদ্দীন উমর বলেছেন, সরকারের ক্রিমিনাল কাজকে রাজনৈতিক প্রতিহত করার চেষ্টা না করে ইনিয়ে বিনিয়ে বলা বক্তব্যে সামাজিক আন্দোলন একধরনের শিশুতোষ কৌশল যা অকার্যকর! তবে মূল কথা হচ্ছে, পেটোয়া রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সামাজিক আন্দোলন বাংলাদেশে সফলতা পায়নি, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকান্ডের উপর ব্যাপক নিয়ন্ত্রণের এই সময়ে সামাজিক আন্দোলনের স্কোপও এখন সীমিত। ভারতীয় অর্থনৈতিক এস্টাব্লিশ্মেন্টের অনুকূলে দাঁড়ানো আওয়ামী লীগ এস্টাব্লিশ্মেন্ট সংকটে না পড়লে সামাজিক আন্দোলনের কোন দাবি মানারই সম্ভাবনা নেই। তাই সার্বিক ভাবে সুন্দরবন রক্ষায় রাজনৈতিক আন্দোলন দরকার।

কিছুটা নিজ রাজনৈতিক অক্ষে ও জোটে থাকা সহ দলের দুর্বিত্তায়নের বিপরীতে সহনীয় আন্দোলন, সরকার ও ভারতকে না চটানোর আন্দোলন দিয়ে কমিটি কিভাবে দেশের তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষার ব্যাপার গুলো সিকিউর করবে তার গভীর ভাবনা শুরু করা এখনই দরকার। অন্যদিকে নূন্যতম অংশগ্রহণ না করেও সচেতনতার তৈরি হওয়া প্লটে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেত্রী রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপক্ষে যে বক্তব্য দিয়েছেন তার পুনরাবৃত্তি কিংবা কোন ধরনের নূন্যতম রাজনৈতিক কর্মসূচী আমরা দেখতে পাইনি। এটা স্পষ্ট প্রতারণা, যদি না বিএনপি স্পষ্ট রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘোষণা করে।

এর বাইরে আরো বলতে হয়, জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন “জাতীয়” রাখার ব্যাপারে কমিটি নেতৃত্ব কৌশলী হবেন, আশা রাখি। জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনের মধ্যে কোন বাম রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ থেকে থাকলে (মঞ্জুরুল আহসান খানের বক্তব্য তাই নির্দেশ করেছে) তাকে পরাস্ত করে সর্বদলীয় জনতাকে সাথে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবেন।

চারিদিকে জঘন্য সব মানব শত্রু রেখে সুন্দরবন কতদিন টিকে থাকে, এই আশঙ্কাকে মূখ্য বিবেচ্য করে বন রক্ষার টপ টু বটম সমন্বিত মহা কর্মপরিকল্পনা চাই (রাষ্ট্রীয় ও নাগরিক) যার প্রতি সুস্পষ্ট রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ঐক্যমত্ত এবং দৃঢ় অঙ্গীকার থাকবে। জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলন দলমত নির্বিশেষে হওয়ার দাবী রাখে, বিদেশী প্রভুত্বের ভয় ও চাটুকারিতা কাটিয়ে সকল রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণ থাকা বাঞ্চনীয়, এক্ষেত্রে পক্ষ এবং প্রতিপক্ষের দল সমূহকে উৎসাহ দেয়াও রাজনৈতিক এবং নাগরিক কর্তব্যে পড়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটা আমাদের সম্মিলিত দায়বদ্ধতার দিকও।

যেহেতু এই আন্দোলন অপরাপর জন আন্দোলনের মত বসত এবং কৃষি ভূমি কেন্দ্রিক স্থানীয় জনতার ভূমি প্রতিরোধের আন্দোলন হিসেবে গড়ে উঠেনি, তাই এর স্থানীয় প্রতিরোধ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক ঐক্যমত্ত এবং অঙ্গীকারের বলিষ্ঠ আন্দোলন না হলে ভারতীয় অর্থনৈতিক এস্টাব্লিশ্মেন্টের অনুকূলে দাঁড়ানো ক্ষমতাবলয় সংকটেও পড়বে না, আন্দোলনও সফল হবে না।

২৬ জানুয়ারির পরে সরকার কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র না সরালে আন্দোলনকে পরবর্তি ফেইজে টেনে নিয়ে যেতে হবে। এই ফেইজে বিএনপিকে অন্যের আন্দোলনে শুধু সমর্থনের বাইরে এসে সরাসরি নিজেদের রাজনৈতিক আন্দোলনে আসতে হবে। বাম বলয়কে সরকারি ক্ষমতা বলয়ের বাইরে এসে সরাসরি রাজনৈতিক আন্দোলন করতে হবে যেখানে সরকারকে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ জানাতে হবে। মনে রাখতে হবে সচেতনতা তৈরি বাইরে আন্দোলনে এখনও কোন কার্যকর সফলতা আসেনি এবং প্রকল্পের কাজ বহুদূর এগিয়ে গিয়েছে।

এখানে উল্লেখ্য সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলন যাতে একতরফা কয়লা বিদ্যুৎ বিরোধী আন্দোলনে না গড়ায়। উপকূলের সুন্দরবন অংশে বা তার আসে পাশের নদীতে উত্তর দক্ষিণে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র না করে পটুয়াখালী-কুয়াকাটার পুর্বে সরিয়ে নিবার অপশন আছে আমাদের। এখানে আরো উল্লেখ্য বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদাকে সামনে রেখে সীমিত পরিসরে উচ্চ মান নিয়ন্ত্রিত কয়লা বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে (অন্তত সোলার বেইজড রিনিউএবল এনার্জির স্টোরেজ টেকনোলজি ম্যাচূওর হওয়া পর্যন্ত) তবে তা সুন্দরবন এবং তার প্রাণ বৈচিত্র নির্বিচারে ধ্বংশ করে হতে পারে না। আমরা নিন্মমানের ভারতীয় কয়লার বাজার চাই না, মিথ্যায় ভরা পরিবেশ সমীক্ষা চাই না, আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল টেকনোলোজির রাষ্ট্রীয় (কিংবা ভারতীয় মিথ্যা আশ্বাস ভিত্তিক) মিথ ও মিথ্যা চাই না।

অন্যেরা কার্বন নিঃসরণ করে আমরা করি না, এই সব গত বাঁধা রাষ্ট্রীয় কথার পুনরাবৃত্তি চাই না। অন্যের কার্বন নিঃসরণ করার ব্যাপার ঠিক আছে, আমাদের ভুলে গেলে চলবে না আমরা গত ১০০ বছরে নিজেদেরই বনভূমির ৭৫% উজাড় করেছি, এই ২০১৬ তেও বেশ কয়েকবার সুন্দরবনে ইচ্ছাকৃত আগুন লাগানো হয়েছে। নিজেদের পরিবেশ রক্ষার বোধ চাই, চাই পরিবেশ ধ্বংশ রোধের আন্তরিক কর্মপরিকল্পনা শুরু ও বাস্তবায়নের তাগাদা।

একদিকে পরিবেশ ও বন রক্ষা চাই, অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপরীতে পরিবেশ গত ক্ষতির একটা গ্রহণযোগ্য ট্রেইড অফ চাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৫৫
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×