তবে নৃতাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশে একজনও ইংরেজি ও হিন্দি ভাষাভাষি না থাকলেও আমাদের এই প্রানের ভাষাকে ইংরেজি ও হিন্দির সাথে পাল্লা দিতে হচ্ছে। বাংলাদেশের আদালত ও সংবিধান এর প্রধান ভাষা এখনও ইংরেজি, বাংলা এর আনুবাদ সংস্করণ। আদালতের রায় লিখিত হয় ইংরেজিতেই। অন্যদিকে হিন্দি বিনোদনের ভাষা, বিকৃত কথ্য বাংলায় এর অনুপ্রবেশ লক্ষণীয়। তাই বাস্তবিক অর্থে বাংলা হিন্দির সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ব্যাপক শিকার।
অন্যদিকে বাংলা এখনও বিজ্ঞান ও ব্যবসায় উচ্চ শিক্ষার কিংবা কারিগরি জ্ঞানের ভাষা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারেনি, আসলে বলা উচিত আমরা এখন উচ্চ শিক্ষার ভাষা হিসেবে বাংলাকে মর্যাদা দিতে পারিনি। বলা হয়ে থাকে অপরের ভাষায় শিল্প সাহিত্য বা দর্শন কিংবা ধর্মতত্ব পড়ে যেমন আধ্যাত্বিক পর্যায়ে পৌঁছানো যায়না, ঠিক তেমনি অন্য ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা করেও এর উৎকর্ষে উঠা যায় না। এর জন্য চাই আগে নিজের ভাষার জ্ঞান-বিজ্ঞানের হাতেখড়ি। আমাদের বিদ্যাপীঠ সমূহ বলতে গেলে সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া এখনও কিছু চৌকশ কর্পোরেট নির্বাহী কিংবা সেকেলে প্রশাসনের গতানুগতিক মানের আমলা তৈরির কাজই করে যাচ্ছে, এর পিছনে যে ভাষাগত বাঁধার মনস্তাত্ত্বিক দিকটি রয়েছে তা অনালোচিত। জীবিকার খাতিরে আমাদের মেধাবীরা ইংরেজিকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন বা দিতে হচ্ছে, বিস্তৃত গ্রামীণ মধ্যবিত্ত আরব বিশ্বে গিয়ে আরবিকে কর্মসংস্থানের ভাষা হিসেবে আয়ত্ব করেছেন। সমসাময়িক বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে তাল মিলাতে গিয়ে এই প্রতিযোগিতা দিন দিন হয়ে পড়ছে অসম, এতে বাংলা পিছিয়ে পড়ছে যার প্রভাব এখনই পশ্চিম বাংলায় দৃশ্যমান, পূর্ব বাংলায় এই প্রভাব অনুমেয়।
অতি অদূরদর্শী হয়ে আমরা অগ্রসর বাঙালীরা প্রান প্রিয় ভাষাকে উচ্চ শিক্ষা এবং জীবিকা নির্বাহের ভাষা হিসেবে দূরে ঠেলে রেখে শুধু মাত্র প্রান্তিক আর অনগ্রসর কায়িক শ্রমজীবী মানুষের পেশাগত ভাষা হিসেবে রেখেই ঢের তৃপ্তি পাচ্ছি।
মাতৃভাষা বাংলার একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশ এবং জ্ঞান বিজ্ঞান এর জগতে এর উতকর্ষে আমরা কতটুকু চিন্তাশীল, আন্তরিক আর দ্বায়িত্বশীল তা ভাবার কথা সময় বার বার আমাদের বিবেক নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। একুশ এই বার্তা নিয়ে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের কাছে হাজির হয় প্রতি বছর।
জ্ঞান চর্চা ও গবেষণায় ভাষা হিসেবে বাংলার সীমাবদ্ধতার বাইরেও কিছু দিক নিয়ে মনোযোগী হওয়া দরকার। বাংলার ব্যাপক বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক বিকাশ কিছু কিছু ক্ষেত্রে এতই উত্তেজনাকর ভাবে আবির্ভূত হয়েছে যে ভাষার মান সংরক্ষণে এর অপধারার লাগাম টেনে ধরা নিতান্তই জরুরি মনে করছি ।অধুনা রাজনীতির আর বিনোদন শিল্পের বিকৃত বাংলা এর মৌলিকতাকে চ্যালেঞ্জ করছে বললে বাড়াবাড়ি হবে না বোধ হয়।এতে বাংলার শৈল্পিক আবেদন যে দিন দিন বিসৃত ও মলিন হচ্ছে তা নির্দ্বিধায় বালা যায়। আজকের বাংলা একদিকে যেমন যশোর ও নদীয়া জেলার সাধু বাংলা নয়, তেমনি কথ্য বাংলার শিল্পিত রূপটিও নয়। ভাষার প্রয়োগ উদাসীনতার কদর্য দিক গুলো একদিকে যেমন ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক ভাষা গুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে আজ ঠিক তেমনি এটি বাংলার শৈল্পিক দিকটিকেও একদিন হেয় করে বসবে।
মাতৃভাষা বাংলার বিকাশ ও উৎকর্ষ তরাত্বিত করতে ভাষাকে সমৃদ্ধ করার ব্যাপক দুরদর্শী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নেয়া দরকার। এর কিছু সীমিত পরিসরে আলোচনায় আনছি-
ক। মাতৃভাষা বাংলার একাডেমিক ও প্রাতিষ্ঠানিক বিকাশে- প্রচলিত বাংলা শিক্ষা দান পদ্ধতিকে পরিবর্তন করা দরকার!
আমাদের স্কুল সমূহে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ১০০ নম্বরের বাংলা, ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ২০০ নম্বরের পরীক্ষার বিপরীতে বাংলা প্রথম এবং দ্বিতীয় পত্র পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এত দীর্ঘ বাংলা পাঠ্যক্রম থাকা সত্বেও সাধরনের কথোপকথন এবং লিখায় ভাষার মার্জিত কিংবা প্রমিত রুপটির চুড়ান্ত অনুপুস্থিতি অতি বিস্ময়ের ব্যাপার। এর কারন শিক্ষাদান পদ্ধতিটির চূড়ান্ত অকার্জকরিতা।
দেখা যাচ্ছে একজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্জন্ত স্কুল কলেজ এবং পাবলিক পরীক্ষা মিলে মোট শুধু বাংলায় ৫৭০০ নম্বরের উপর শুধু লিখিত পরীক্ষায় অবতীর্ন হন, যা সম্পুর্ন আনুষ্ঠানিক।(১ম,২য় এবং বার্ষিক/পাবলিক পরীক্ষা মিলে প্রাথমিকে ১০০*৩*৫=১৫০০, উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০*৩*৫=৩০০০, কলেজে ২০০*৩*২=১২০০ নম্বর)। তথাপি বাংলার লিখিত রুপে এই শিখার্থীগণ নূন্যতম পারদর্শীতা নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা স্তর পার করতে পারছেন না।
সব শ্রেণীতেই বাংলা প্রথম পত্রে কিছু কবিতা এবং গল্প পড়ানো হয় নৈতিকতা শিখানোর জন্য যা আসলে সংস্কারে আনা দরকার। আদতে নৈতিকতা এবং মূল্যবোধ সমাজের চিন্তা ও চর্চা এবং পরিবারিক মূল্যবোধ থেকে আসার কথা, তা না এসে থাকলে সেটা নিয়ে কাজ করার মৌলিক পরিকল্পনা দরকার। তবে এইসব কবিতা গল্প অবশ্যই সহায়িকা হিসেবে থাকাই শ্রেয় যা বিদ্যালয়ের পাঠাগারে উন্মুক্ত পাঠের জন্য থাকবে। শিক্ষকগণ সময়ে সময়ে প্রাসঙ্গিক ক্লাস কথনে কিংবা পাঠচক্র করে এথিকস এবং ভ্যালূ নিয়ে তাগাদা দিবেন। অন্যদিকে বাংলা দ্বিতীয় পত্রে সাধারণ থেকে শুরু করে অন্তত্য জটিল পর্যায়ের ব্যাকরণ শিখতে বাধ্য করা হয়, পরীক্ষা নির্ভর পাঠ্য ক্রমের বাধ্যবাধকতার কারনে।
অকার্যকর পাঠ্যক্রমের বিপিরীতে এসে পঠন, লিখন, শ্রবণ, বলন, উপস্থাপন এবং যোগাযোগ এই ৬টি স্কিল সেটের বিপরীতে বাংলার একাডেমিক পাঠ্যক্রম ডেভেলপ করা দরকার যা মাধ্যমিকেই সমাপ্ত হবে। উচ্চ মাধ্যমিককে অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের ভারমুক্ত করে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ফাউন্ডেশনের অনুকূলে এডভান্স পাঠ্যক্রম দিয়ে সাজানো দরকার যাতে স্নাতকের ১ম বর্ষে ফাউন্ডেশন কোর্স নিতে না হয়।
উচ্চ মাধ্যমিক একটা উচ্চ ধাপ, যেখান থেকে লাইফ স্কিল ডেভেলোপ শুরু করা দরকার, কর্মসংস্থান বিষয়ক শিক্ষা ক্রমকে এখানে ফোকাসে আনার শুরু দরকার, দরকার এক একটা রিসোর্স্কে সাব্জেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট বানানোর প্রক্রিয়া শুরু চেষ্টা।
সাহিত্য বোধ তো দুরের কথা ১২টি একডেমিক ধাপের পরেও মানুষের সাধারণ কথনে, লিখনে ও যোগাযোগে বাংলার যে কদর্য রূপ বিস্তৃত হচ্ছে সেটা নিয়েই আমি শঙ্কিত। স্কিল সেট ভিত্তিক ভাষা শিক্ষা ক্রমও মানবিক-দার্শনিক-আধ্যাত্বিক বিকাশ করতে পারে, সেটা নির্ভর করে কতটা গবেষণা লভদ্ধ, উচ্চমান ও দূরদৃষ্টি সম্পপন্ন পাঠ্যক্রম তৈরি হবে এবং কোন পদ্ধতিতে সেটা পঠিত হবে তার সমূদয় মাস্টার প্ল্যানের উপর অর্থাৎ সাব্জেক্টিভলি কিভাবে মূল্যবোধ সমাজে পেনিট্রেইট করতে হবে তার সিস্টেম্যাটিক একাডেমিক এপ্রোচের উপর।
সময়ের প্রয়োজনে ইংরেজি সহ জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নত ভাষা সমূহ শিক্ষার জন্য অতি কার্জকরি পঠন, লিখন, শ্রবণ এবং বলন পদ্ধতি ডেভেলপ করেছে (উদাহরণ স্বরূপ- আইইএলটিএস বা স্কুলের ভাষা শিক্ষার জন্য পঠন, লিখন, শ্রবণ এবং বলন ইত্যাদির পাঠ্যবই কিংবা সফটওয়্যার)। ভাষা বিজ্ঞানী ও মনস্তত্ত্ববিদগণের ডিজাইন করা এই সব ভাষা পাঠ্যক্রমের কার্জকরিতা যুগ যুগ ধরে প্রমাণিত যার মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীদেরও আকৃষ্ট করা পরিকল্পনা সমূহ ফলপ্রসু হয়েছে। শিক্ষাদান (একাডেমিক) এবং যোগাযোগের (কমিউনিকেশনের) জন্য বিশেষ বিশেষ পাঠ্যক্রম ভিত্তিক অফলাইন কিংবা অনলাইন ভাষা শিক্ষার মডিউল ডেভেলপ না করে আমরা এখনও সেই অকার্জকর গৎবাঁধা পদ্ধতিতেই ভাষা শিক্ষা নিয়ে ব্যস্ত আছি।
সব শ্রেণীতেই অতিরিক্ত বিষয় হিসেবে বাংলা শিক্ষার্থীকে চাপে রাখছে অথচ সময়ের সাথে এই শিক্ষার কোন কার্যকরিতা দেখা যাচ্ছে না। মাতৃভাষায় একাডেমিক পারদর্শিতা যেখানে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিকের শিক্ষা বর্ষ গুলোতেই আসার কথা ছিল সেখানে ১২টি শিক্ষা বর্ষে পড়ানোর পরেও আমাদের শিক্ষার্থীরা ভাষার শিল্পিত রূপ ও মননশীলতা রপ্ত করতে পারছেন না। এর অন্যতম কারন পুঁথি নির্ভর পরীক্ষা ভিত্তিক মানহীন পাঠ্যক্রম যা কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা কিংবা মনস্তাত্বিক সার্ভের আদলে তৈরি করা হয়নি।
খ। বাংলায় পাঠ্যবই, শিক্ষা সহায়িকা বই, বিষয় ভিত্তিক মানসম্পন্ন বই প্রকাশের পদক্ষেপ নেয়া।
১। দেশ বিদেশের হাজার হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যাপনারত স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সবগুলো ডিসিপ্লিনে প্রথিতযশা ও উচ্চমান শিক্ষকগণের প্রোফাইল তৈরি করে, উনাদেরকে নিজ নিজ বিষয়ে লভদ্ধ জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং আধুনিক জ্ঞানের সমন্বয়ে একাধিক পুস্তক প্রণয়নের আমন্ত্রণ জানানো। এইকাজ একটা সুবিশাল কর্মযজ্ঞ যার জন্য সত্যিকারের জ্ঞানী শিক্ষকের প্রোফাইল তৈরি করতে হবে, উনাদের পুস্তক লিখে নিজেদের রিপ্রডিউস এর গুরুত্ব বুঝাতে হবে, বই লিখায় নিরস্তর উৎসাহ দিতে হবে।
এনসিটিবিটি'র মূল বইয়ের একই পাঠ্যক্রমে উচ্চমান কন্টেন্ট এবং তার অনুমোদন সাপেক্ষে একাধিক রেফারেন্স বই নিশ্চিত করা গেলে ১টি মাত্র পাঠ্য বই ও তাতে প্রদত্ত প্রশ্নপত্র কেন্দ্রিক পুঁথি নির্ভরতা কাটিয়ে উঠবে।
২।স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সবগুলো ডিসিপ্লিনে প্রথিতযশা শিক্ষকগণের সমন্বয়ে উচ্চ মান পর্যালোচনা পরিষদ তৈরি করতে হবে, বই লিখার পর পর্যালোচনা পরিষদ কর্তিক রিভিউ তৈরি করে সেটা আবার লিখকের মাধ্যমে ঠিক করে নিয়ে চূড়ান্ত পাণ্ডুলিপি তৈরি করার কাজ গুলো নিবিড় তত্ববধানে যত্নসহকারে এবং অতি গুরুত্বদিয়ে করতে হবে।
৩। বই সময় মত প্রকাশ এবং দেশ-বিদেশের সকল প্রতিষ্ঠানে সার্কুলেশনের এমনকি বিপণনের উদ্যোগ নিতে হবে। বই প্রকাশের দেখভাল এবং খরচ বাংলা একাডেমি করবে। সরকার এই মৌলিক বিষয়ে উচ্চ ক্ষমতার সমন্বয়কারী দল গঠন করবে এবং যথাসময়ে অর্থ বরাদ্দ দিবে।
এর মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাসি জ্ঞানীদের জ্ঞান রি-প্রডিউস করা হবে যাতে উনাদের অবর্তমানেও আমরা তাঁদের লভদ্ধ একাডেমিক জ্ঞান এর সঠিক ব্যবহার করতে পারি।
৪। বিদেশি ভাষার পাঠ্যবই, শিক্ষা সহায়িকা বই, বিষয় ভিত্তিক মানসম্পন্ন বই বাংলায় অনুবাদের ব্যাপক পদক্ষেপ নেয়া
৪-১। দেশে এবং বিদেশে স্কুল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সবগুলো ডিসিপ্লিনে সেসকল মান্সম্পন্ন বিদেশী পাঠ্যবই পড়ানো হয়, বিশ্বের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন নামকরা লিখকের উচ্চ মান বই পড়ানো হয় সেসবের বিশদ তালিকা তৈরি করে সর্বশেষ ভার্শনকে অনুবাদের ব্যবস্থা করা।
৪-২। এখানে সরাসরি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের টেক্সট বুক প্রকাশকের সাথে বাংলা একাডেমীর ফ্রেইমোয়ার্ক তৈরি করতে হবে। সরকারের আনুকূল্যে একাডেমি এই খাতে অর্থায়ন করবে। বিশ্ববিদ্যালয় সহ সংশ্লিষ্ট ফ্যাকাল্টির সাথে কমিউনিকেশন স্ট্যাব্লিশ করতে হবে।
গ। শিক্ষার জন্য এপ্লিকেশন ডেভেলপ।
দেশের তথ্য প্রযুক্তিবিদ আর এপ্লিক্যাশন ডেভেলপার (বিশেষ করে ইন্ডিভিজুয়াল ক্লাস ও কোর্স কন্টেন্টের আদলে ইন্টার্যাক্টিভ সফটওয়্যার ডেভেলপ, বিভিন্ন লেভেলের বাংলা শিক্ষার সফটওয়্যার ডিজাইন (পঠন, লিখন, শ্রবণ, বলন, উপস্থাপন এবং যোগাযোগ এই ৬টি স্কিল সেটের বিপরীতে), ব্যাকরণ এর এপ্লিক্যাশন ডেভেলপ এবং বাংলায় শিশু শিক্ষার ক্রিয়েটিভ এপ ডেভেলপ), প্রোগ্রামারদের একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য বাংলা একাডেমির কাজ করতে হবে। ডেভেলপারদের কাজের স্বীকৃতি দেয়া, কিছু ক্ষেত্রে মৌলিক কাজের পারিশ্রমিক দেয়াও দরকার।
উল্লেখ্য প্রথম বারের মত প্রথম শ্রেনীর বাংলা বইকে ইলার্নিং এর জন্য ভিডিও প্রেজেন্টেশনে আনা হয়েছে আমাদের আইসিটি এবং ব্রাকের যৌথ প্রযোজনায়, এটা খুবই গুতুত্বপূর্ণ একটা শুরু। পুরো বইটিকে ১ ঘন্টা ৪৫ মিনিটের একটি একক ভিডিওতে (https://www.youtube.com/watch?v=DvY4mSUiSTs) আনা হয়েছে যাকে আরো বেশি কাস্টমাইজড করা যায়, ক্লাস ভিত্তিক লেকচার মডিউল করা যায়, আনা যায় ইন্টারেকটিভ লার্নিং মডিউল এবং ইন্টারেকটিভ টুলস সমৃদ্ধ পিসি ও মোবাইল এপ্লিকেশন। তবে এটাও খেয়ালে রাখতে হবে যে বিস্তৃত গ্রামীণ শিক্ষা অবকাঠামোতে এটা ব্যবহারের অবকাঠামো এখনও তৈরি করা হয়নি। (লিখকের নিজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনও বিদ্যুতের সুবিধাই পৌঁছেনি,ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই একটি ফ্যানও, আর এইখানে আমি শিক্ষার আনন্দময় উপস্থাপন নিয়ে কথা বলছি!) এই অবকাঠামো পরিকল্পনাগুলো তৈরি হতে বড্ড বেশি দেরি হয়ে যাচ্ছে।
ঘ। মাতৃভাষার সাথে কর্মমূখী ভাষার সমন্বয় এবং ভাষা শিক্ষার প্রচলিত মডেলের কার্যকরিতা।
ইংরেজিতে শিক্ষা দিবার জন্য ইনফাস্ট্রাকচার গঠনের ভুলভাল চেষ্টা ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে চললেও সেটা তৃণ মূল পর্জায়ে ব্যাপক সাফল্য পায়নি, স্থানীয় আচার ব্যবহার এবং সংস্কৃতি, মানুষের জীবনধারা কম্ফোর্ট জোনে রেখেই নিজের শিক্ষণ ব্যবস্থা ডেভেলপ করতে হবে। অন্য কোন কপি পেস্ট মডেল যে ফল আনছে না তা দৃশ্যমান।আধুনিক শিক্ষার উৎসস্থল ইউরোপের প্রায় প্রতিটি ছোট বড় জাতি মাতৃ ভাষায় শিক্ষা লাভ করে। মাত্র কয়েক মিলিয়ন মানুষের ইউরোপীয় দেশ সমূহের ভাষায় গণিত পদার্থ রসায়ন চিকিৎসা জীববিজ্ঞান আর্কিটেকচার ব্যবসা এবং শিল্প কলার হেন কোন বিভাগ নেই যার পাঠ্য বই ডাচে রচিত, অনুদিত বা প্রকাশিত হয়নি এবং যা লোকাল ভাষায় স্কুলে পড়ান হয় না। একই চিত্র চীন জাপানেরও। কিন্তু মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় থেকে ২য় এমনকি ৩য় ভাষা শিক্ষা অপশনাল থাকায় এই নেশনগুলোর কোনটই আন্তর্জিক ভাষা ইংরেজিতে পিছিয়ে পড়েনি।
যে ছেলে-মেয়ে স্কুলের পাশাপাশি পিতা মাতার কৃষি কাজে এবং ঘরের কাজে সহায়তা করে, তাকে আপনি বিদেশি ভাষায় বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে বাধ্য করতে পারেন না, এটা একটা মনোগত বাঁধা দাঁড়া করিয়ে দেয়। তাঁর ব্রেইন বাংলা টু ইংরেজি এবং ইংরেজি টু বাংলা দ্বৈত রুপান্তরে ব্যস্ত থাকে, উপরন্তু না বুঝার ভয়ে আচ্ছন্ন থাকে। প্রতিটি বাক্যই যদি কনভার্শন প্রসেসে আসে তাইলে ইন্নোভেশন আর ক্রিয়েটিভিট আশা করা যায় না বরং শিক্ষা ভীতি আসে।সাইকোলজিস্টগণ এর বেশি ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন। এই সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়েও আছে, প্রচুর বিদেশী ভাষার রেফারেন্স পড়ার চর্চা আমাদের হয়ে উঠেনি একারনেই।ফলে কন্সেপচুয়াল ডেভেলপমেন্ট বড্ড দেরিতে আসে, আমরা দেখছি আন্ডার গ্যাজুয়েশনে তেমন মানসম্পন্ন গবেষণা কাজ হয়ই না। তাই হয় আপনাকে স্ট্রং ইংরেজি শিক্ষার স্ট্রাকচার ডেভেলপ করতে হবে যা ২০০ বছরের প্রচেষ্টায়ও পুরোপুরি সফল হতে পারেনি, অন্যথায় আপনাকে বাংলা ভিত্তিক বিকল্প সহ ইংরেজি-বাংলার কার্যকর সমন্বয়ের কথা ভাবতে হবে। এর বাইরে উচ্চ শিক্ষায় বাংলা ভাষা সমৃদ্ধ করার তাগিদ এবং দায়বদ্ধতাও রয়েছে।
বাংলা একাডেমিকে শুধুমাত্র বাৎসরিক মেলা আয়োজন, কিছু নন একাডেমিক বই সম্পাদনা এবং পারিভাষিক শব্দ খোঁজার প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় কাজে বছর পার করলে চলবে না, কিভাবে বাংলা ভাষাকে ব্যবসা বিজ্ঞান ও গবেষণার জগতে উৎকর্ষময় করা যায়, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির যুগে অন্য ভাষার আধিপত্য ছাপিয়ে টিকিয়ে রাখা যায় এবং ক্রমবিকশিত করা যায় সেই দিকে মনযোগী হতে হবে।বাংলায় উচ্চ শিক্ষাদান প্রস্তুতির পরিকল্পনা নেয়াই বোধ করি অমর একুশের সত্যিকারের তাগাদা।শহীদ মিনারের ফুলেল সৌন্দর্জকে ছাপিয়ে উঠুক বাংলা শিক্ষাদানের বুদ্ধি ব্রিত্তিক সৌন্দর্জ।
বাংলা ভাষা এবং বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৩