somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘটনার অন্তরালেঃ সড়ক দুর্ঘটনা, প্রতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা এবং আদালতের রায়

০১ লা মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের সড়ক চূড়ান্ত পর্যায়ে অনিরাপদ। এখানে অধিক চূরি নিশ্চিত করতে সড়কের লেইন চুরি হয়েছে সর্ব কালেই। বড় বড় এবং স্পেইসিয়াস আধুনিক যাত্রী বা পণ্যবাহী বাস ট্রাকের সাথে স্পেইস এবং ভার বহন সক্ষমতার সমন্বয় করে রাস্তা লেইন, বাঁক, সারফেইস নির্মান করা হয়নি। রাস্তার বাঁক টেকনিক্যালি বাস্তবায়িত হয়নি, নেই সঠিক ও পর্যাপ্ত রোড সাইন। কিংবা নির্মান সামগ্রী নিন্ম মানের, পীচ আনুপাতিক হারে দেয়া হয় না, অতি নিন্ম মানের ইটা ব্যবহৃত হয়। রাস্তায় গর্ত থাকে প্রচুর, রাস্তার সারফেইস বেশ উঁচু নিচু। রাস্তায় সার্ভিস লেইন নাই, নেই বাস বা ট্রাকের স্ট্যান্ড, একেবারে সাইডের লেইন উঠা নামার জন্য প্রসস্ত নয়, নেই নিন্ম গতির বাহনের জন্য আলাদা রাস্তা, চুরি করতে গিয়ে হাঁটার যায়গা খানাও পীচ ঢালা পথে দখল হয়ে পড়ে।

আন্তঃ জেলা, আন্তঃ বিভাগ সহও থানা গুলোকে কানেক্টেড প্রায় সব সড়কই ডিভাইডারহীন, বহু জেলা এবং থানা সড়ক মাত্র ১ লেইনের। রাস্তার ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি যান থাকায় ওভার টেকিং এ চালক খুবই কম সময় এবং স্পেইস পেয়ে থাকে। ডিভাইডারহীন সংকীর্ণ সড়কে ওভারটেকিং বিপদজনক সত্ত্বেও সময়কে বীট করতে গিয়ে বহু মুখোমুখি সংঘর্ষে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে লেইনের প্রস্থ কম হবার কারনে আধুনিক বড় বড় বাস ট্রাকের বেলায় দেখা যায় বিপরীতমূখী ২টি বাস ট্রাককে ডিভাইডারহীন সড়কে অতি নিন্ম সেইফটি মার্জিনে ওভার টেইক করতে হয়, এতে একই রাস্তায় চলা কম গতির বাহন (নসিমন-করিমন-টেম্পু, মটর বাইক) আঘাত প্রাপ্ত হয়।

রাস্তার পাশে সড়ক বনায়ন হয়েছে এমন গাছে যার প্রধান মূল ছিল না, ফলে ঝড়ে এইসব গাছ উপড়ে পড়ে। উপরন্তু বন বিভাগ সড়ক গাছের পুরানো বা আধা ভাঙা ঢাল কাটিয়ে সরানোর কাজ করে না। ঠিক রাস্তার উপরেই বসে হাট-বাজার-দোকান-টেম্পু ও স্থানীয় পরিবহনের স্ট্যান্ড। রাস্তা পারাপারে কোন নিয়ম প্রতিষ্ঠা পায়নি দেশে (ফুট ওভারব্রীজ অপর্যাপ্ত, থাকলেও সেটা ব্যবহার না করে হুট করে সড়ক পার হবার প্রবনতা প্রবল)।
স্বল্প কিংবা দূরপাল্লার কোন যাত্রী বা পণ্য বাহী বাস ট্রাকেই এখনও সীট বেল্ট বাঁধার বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়নি। চালক মোবাইল ফোনে কথা বলেন অবিরত!
ফলে সব মিলিয়ে রাস্তা মরণ ফাঁদ।

এর বাইরে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদানের কোন অনলাইন-অফলাইন কোর্স, কারিকুলাম, শিক্ষণ পদ্ধতি, সরকারি-বেসরকারি এজেন্ট ভিত্তিক প্রসেস ডেভেলপ করা হয়নি, করা হয়নি স্টান্ডার্ড পরীক্ষা পদ্ধতি প্রবর্তন (শুধু তথাকথিত ডিজিটাল প্লেইট করতে বেশুমার টাকা ঢালা হয়েছে যা না করা হলেও কোন ক্ষতি হোত না কেননা এখনও ঘুষ দিয়ে ডিজিটাল লাইসেন্স এবং প্লেইট ২টাই পাওয়া যায়)। শিক্ষাহীন, কর্মহীন কিশোর যুবক দীর্ঘদীন হেল্পারি করে পেটে ভাতে ঠেলা গুতা খেয়ে ড্রাইভিং শিখে, কিন্তু রাস্তার সাইন বুঝার বাধ্যবাধকতা তার থাকে না।
অর্থাৎ অতি নিন্ম মানের রাস্তায় অ প্রতিষ্ঠানিক ভাবে শিক্ষা নেয়া লোকে বড্ড নিরাপত্তা ঝুঁকিতে গাড়ি চালায়।

তবে এর বাইরেও কিছু ব্যাপার আছে যা একেবারেই অনালোচিত। এরকম ৩ টি ব্যাপার হোল-

১। প্রতিটি যাত্রী এবং পণ্য বাহী ট্রান্সপোর্টে ব্যাপক চাঁদাবাজি।
"জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সহাসচিব রবিউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘সীমান্ত থেকে গরুর হাট পর্যন্ত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা গরু প্রতি চাঁদাবাজি হচ্ছে। এর বাইরে আছে গাবতলি গরু হাটের ইজাদারদের অত্যাচার।"

২৭ জুলাই ২০১৩'র একটি ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট বলছে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে ৪৩৯ কিমি চলতে একটি ১০টনের পণ্যবাহী ট্রাকে ২২ হাজার টাকা শুধু চাঁদাবাজি হয়।

পরিবহনে চাঁদার হার ঠিক করা

২। যানজটে ব্যয়িত শ্রম ঘন্টা এবং পণ্য নষ্ট।
ফলে একই পরিবহন (বাস, ট্রাক) দিয়ে চাঁদাবাজি এবং যানজটে ব্যয়িত ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নির্দিস্ট সময়ে বেশি ট্রিপ দিতে বাধ্য হন চালক। এতে করে এমনিতেই অনিরাপদ সড়কে যেন তেন ভাবে চালিয়ে, একটানা অতি সময় ঘুম হীন শ্রান্ত ভ্রান্ত চালককে গন্তব্যে পৌঁছার অর্থিক, মানসিক এবং স্বাস্থ্যগত তাড়নাগুলো তাড়িয়ে বেড়ায়।

৩। যানবাহনের ক্রমাগত ব্যবহার ও ফিটনেস হীনতা। মানহীন রাস্তায় নিরন্তর ভাবে চলা ভালো কিংবা নিন্মমানের গাড়ির ইঞ্জিন, চাকা, টায়ার এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশের ফিটনেস চেক করা হয় না। নির্দিস্ট মাইলেজ সাপেক্ষে বাধ্যবাধকতা মূলক ও রুটিন ফিটনেস চেকের সিস্টেমও (MOT/APK) ডেভেলপ করা হয়নি। গাড়ীর স্পীড গভর্ণর টেম্পারিং করে স্পীড লিমিট বাড়ানো হয় যা সাধারণত টেস্টে কভারই করা হয়না। কালেভদ্রে মেট্রো এলাকায় যেসব ফিটনেস টেস্ট হয় তাতে ফেইল করা যানবাহন ঘুষের বিনিময়ে হয় সেই মেট্রোরই রাস্তায় নামে না হয় সেগুলো মফঃস্বল শহরে নিয়ে নামানো হয়।।



সেন্টার ফর ইনজ্যুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)-এর জরিপ ‘বাংলাদেশ হেলথ ইনজুরি সার্ভে-২০১৬ (বিএইচআইএস)' জরিপে দেখা যায়, প্রতি বছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ১৬৬ জন নিহত হন৷ আর তাতে প্রতিদিন গড়ে নিহতের সংখ্যা ৬৪ জন৷''
বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৪ জন নিহত হয়৷

সড়ক আইনে চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি কয়েক বছরের সাজা এবং কিছু অর্থদন্ড। এই পরিস্থিতিতে একজন বিশিষ্ট নাগরিকের সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার বিপরীতে এসে আদালত দৃষ্টান্ত মূলক ভাবেও যদি চালককে মিরত্যু দন্ড দেন (যা নাগরিকভেদে আইনের শাসনকে অসম ভাবে প্রমোট করছে), তা অনিরাপদ সড়কে লাশের মিছিল কমাতে আদৌ ভূমিকা রাখবেনা। কারণ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য দক্ষ-অদক্ষ চালকই একমাত্র দায়ী নন। তাই আমরা বলছি চাঞ্চল্যকর কিছু করার চাইতে আদালত প্রকৃত কারণ খুঁজে তার সমাধান বের করতে নির্বাহী বিভাগকে টেকসই পর্যবেক্ষন সহ সুনির্দিস্ট নির্দেশনা দিক।

​ঠিক যারা অপরাধ করছে (ঘুষ, চাঁদাবাজি, অর্থ আত্মসাৎ, আর্থিক প্রতারণা, জমি ভাগাভাগি, ক্রয়-বিক্রয়ে অপরাধ ও অনিয়ম, দেনা-পাওনা পরিশোধে অস্বীকৃতি), ঠিক যেসব মৌলিক কারণে বাংলাদেশে মূল অপরাধগুলো ঘটছে, সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে, ঠিক যেভাবে দুর্নীতি হচ্ছে- তার মূল কারণ ও প্রকৃতি নির্ণয় এবং প্রতিষ্ঠান গত স্থায়ী সমাধান না বাতলে দিয়ে আদালত যদি শুধু দন্ড দিতেই থাকে তা ফলহীন হচ্ছে এবং হবে।

আমাদের বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ সময় সাপেক্ষ, নির্বাহী বিভাগের কঠোর নির্দেশনা না থাকলে পুলিশী তদন্ত আটকে পড়ে থাকে বছরের পর বছর, অন্যদিকে বিচারিক রায় ঘুষ আদান প্রদানে উবে যায়। ফলে এই ধরনের তদন্ত নির্ভর বিচারব্যবস্থা এবং বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে অকার্যকর।

অপরাধ সংগঠনের বিপরীতে আদালতকে সুস্পষ্ট পর্যবেক্ষণ দিতে হবে। মানে চাঁদাবাজি, জালিয়াতি, দুর্নীতি প্রতিরোধী সিস্টেম অটোমেশন বাস্তবায়ন, আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনয়নকারী আর্থিক ব্যবস্থা প্রণয়ন, প্রশাসনের বিশেষ বিশেষ স্তরে কার্যকর সংস্কারের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা দিতে হবে, ইনফাস্ট্রাকচার তৈরিতে অনিয়মের ও দুর্নীতির ব্যাপার সামনে আনতে হবে, উচ্চমান ও নিরাপদ রাস্তা তৈরির বাধ্যবাধতা সম্পন্ন নির্দেশনা দিতে হবে, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং গাড়ির ফিটনেস ব্যবস্থা প্রবর্তনের সঠিক এবং মানসম্পন্ন প্রসেস ডেভেলপে নির্দেশনা দিতে হবে এবং সেগুলো ফলোআপ করতে হবে, নির্বাহী বিভাগকে বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে। এই সব নলেজ ড্রিভেন অব্জার্ভেশন না করলে বুঝতে হবে, আদালত নিজেই অক্ষম,অযোগ্য এবং অদুরদর্শী।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:২৯
১০টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×