somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নদী ও পানির অধিকার: ফারাক্কা নিয়ে ভাসানীর ঐতিহাসিক দুটি চিঠির প্রেক্ষাপট, গুরুত্ব ও ভবিষ্যত প্রভাব!

২২ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস! ফারাক্কা নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে লিখা মওলানা ভাসানীর লেখা চিঠি ২টি ৪২ বছর পরে আজও প্রাসঙ্গিক কেননা আমাদের নেতৃত্ব ও আমরা নাগরিকরা পানি আধিকার ও প্রাপ্তির বুদ্ধিবৃত্তিক ও কার্যকর কৌশল, এমনকি কোন আন্দোলন দাঁড়া করাতে পারিনি। প্রভু ও জুজু তোষণের রাজনীতি, পানি নদী ও পরিবেশের প্রতি দায়হীন নাগরিক ভোগবাদিতা দেশকে মরুকায়ণে নিয়ে যাচ্ছে।
-------------------------------------------------------------------------------------
‘আমার আন্তরিক আশা, তুমি স্বচক্ষে দেখিলেই ইহার আশু প্রতিকার হইবে এবং বাংলাদেশ ও হিন্দুস্থানের মধ্যে ঝগড়া-কলহের নিষ্পত্তি হইয়া পুনরায় বন্ধুত্ব কায়েম হইবে। ফারাক্কা বাঁধের দরুন উত্তর বঙ্গের উর্বর ভূমি কিভাবে শ্মশানে পরিণত হইতেছে তাহাও স্বচক্ষে দেখিতে পাইবে।’
-------------------------------------------------------------------------------------
ইন্দিরা গান্ধীকে মওলানা ভাসানীর লেখা একটি চিঠি-
-------------------------------------------------------------------------------------
প্রিয় মিসেস ইন্দিরা গান্ধী,
প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী ভারত সরকার আপনার ১৯৭৬ সালের ৪ মে’র পত্র ফারাক্কা সমস্যা সম্পর্কে সরকারি বিবৃতির পুনরাবৃত্তি মাত্র। আপনার প্রখ্যাত পূর্বপুরুষ— মতিলাল নেহরুর নাতি এবং জওয়াহেরলাল নেহরুর কন্যার নিকট থেকে এরূপ পত্র আশা করিনি। আপনি নিজে বঞ্চিত লোকের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সকল ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সকল সময় সংগ্রাম করেছেন। মুক্তিযুদ্ধকালে আপনি এবং ভারতের সকল জনগণ যে সাহায্য করেছে এজন্য আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ।
ফারাক্কা সম্পর্কে আপনাকে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল পরিদর্শন করে কৃষি এবং শিল্প উত্পাদনের যে ক্ষতি হবে তা পরিমাপ করা জন্য পুনরায় অনুরোধ করছি। সম্পূর্ণ সরকারি প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর না করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। কারণ তাতে বর্তমান অবস্থা প্রতিফলিত হয় না।

এককভাবে গঙ্গার পানিপ্রবাহ প্রত্যাহার করার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আমি ব্যাপকভাবে পরিদর্শন করি।

পারস্পরিক সমঝোতা ও সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার উদ্যোগকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি। কিন্তু সমাধান স্থায়ী ও বিস্তারিত হতে হবে। দু’মাসের নিম্ন প্রবাহের মধ্যে তা সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না; সারা বছরের স্রোত অন্তর্ভুক্ত থাকার ভিত্তিতে ফারাক্কা সমস্যা সমাধানের জন্য পূর্বে আপনাকে কয়েকবার টেলিগ্রাম করেছি। বাংলাদেশের সাড়ে তিন কোটি মানুষের জীবন-মরণ সমস্যা অন্যদের দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়। দুই দেশের নেতাদের একত্রে বসে সমাধানে পৌঁছা উচিত।
সম্মুখ বিরোধ ও সংঘর্ষ বাদ দিয়ে আমি অনুরোধ করছি আপনি নিজে হস্তক্ষেপ করে নিজে সমাধান করবেন, যা আট কোটি বাংলাদেশীর নিকট গ্রহণযোগ্য হবে।
যদি আমার অনুরোধ আপনি গ্রহণ না করেন, তাহলে অত্যাচারিত মানুষের নেতা আপনার পূর্বপুরুষ এবং মহাত্মা গান্ধীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে সমস্যা সমাধানের জন্য কর্মসূচি প্রণয়ন করতে বাধ্য হব। এ সঙ্কট সমাধানে আমার সর্বোচ্চ সহযোগিতা এবং দু’দেশের বন্ধুত্ব সম্পর্ক শক্তিশালী করার জন্য নিশ্চয়তা দিচ্ছি।

শুভেচ্ছান্তে—
আপনার বিশ্বস্ত
আবদুল হামিদ খান ভাসানী
-------------------------------------------------------------------------------------
-------------------------------------------------------------------------------------
“আজ আমি বড়ই দুঃখের সঙ্গে জানাই, হিন্দুস্তানের প্রাইম মিনিস্টার ইন্দিরা গান্ধীর পিতা আমার অতি ঘনিষ্ট বন্ধু এবং সহকর্মী ছিলেন । তার দাদা আমার সহকর্মী ছিলেন । আমি তাদের কাছ থেকে যে স্নেহ ও ভালোবাসা, ন্যায়নীতির আদর্শ শিক্ষা লাভ করেছি, মৃত্যুর শেষ পর্যন্ত আমি তা ভুলব না । কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় – বার বার আমি ইন্দিরা গান্ধীকে পত্র লিখেছি আমাদের জাতিসংঘের প্রয়োজন হবেনা, অন্য কোন দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে না, তুমি নিজে এসে দেখ ফারাক্কা বাঁধের পরিণতি কি হয়েছে – মাত্র একটি বৎসরে প্রায় অধিকাংশ নদীর মাছ ধরা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে । যে মাছ পৃথিবীর সেরা – পদ্মার ইলিশের মত সুস্বাদু মাছ আর কোথাও পাওয়া যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি না । তাছাড়া ফসলের দিক থেকে দশ আনি ফসল কম হয়ে গেছে । আগামী বছর কি হবে একমাত্র খোদা-তালাই জানেন । ইন্দিরা গান্ধীকে আমি ভয় দেখাবার জন্য আন্দোলন আরম্ভ করি নাই । ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে ন্যায়-বিচার পাবার জন্য আন্দোলন আরম্ভ করেছি । সারা দুনিয়ার ন্যায়পরায়ণ শান্তি প্রিয় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমি ফারাক্কা বাঁধ বিরোধী আন্দোলন আরম্ভ করেছি । ”
[ মাওলানা ভাসানীর ভাষণ – ১৩ নভেম্বর, ১৯৭৬ ; দরবার হল, সন্তোষ ], সন্তোষ এ এটাই সম্ভবত মৃত্যুর পুর্বে তাঁর শেষ ভাষন ।
-------------------------------------------------------------------------------------
নদী অধিকার নিয়ে আমাদের আন্দোলন এখন একেবারেই বিচ্ছিন্ন ও অসংগঠিত । ব্যপক গনসচেতনতা প্রয়োজন। এই ঐতিহাসিক দুটি চিঠির প্রেক্ষাপট, গুরুত্ব ও ভবিষ্যত প্রভাব অপরিসীম। আন্তর্জাতিক নদীর পানি হিস্যার দাবীকে ভারতের সাথে কৌশলগত নেগসিয়েশনের পর্যায়ে নিতে কার্যকর সামাজিক, নাগরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জন আন্দোলন দরকার!

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------
প্রস্তুতি এবং প্রেসেস ডেভেলপঃ

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------
বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে যে যৌথ নদী কমিশন আছে, ভারতীয় ইচ্ছায় আজ সেটা প্রায় অকেজো, নিয়মিত মিটিং হচ্ছে না। তথাপি ডকুমেন্টেশন রেকর্ড এবং পরবর্তিতে সালিশি কাজে সহায়তার ভিত তৈরি করতে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক নদীর পানির পরিমাপ, কম প্রবাহ, একেবারেই প্রত্যাহারকৃত প্রবাহ নিয়ে নিয়মিত চিঠি পাঠিয়ে যেতে হবে।

এই জন্য বাংলাদেশকে ভারতীয় সীমানার ঠিক কাছাকাছি অবস্থানের ওয়াটার ফ্লো ম্যাজারমেন্ট ডাটা নিবার প্রসেস ঠিক ঠাক করতে হবে, এক্সিস্টিং প্রসেস এবং সিস্টেমকে আরো উন্নত করতে হবে। ভারতীয় কাউন্টার পার্ট থেকে উত্তর আসুক বা না আসুক নিয়মিত বিরতিতে যৌথ নদীকমিশনের বাংলাদেশ পক্ষ এবং আমাদের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে পানির নিন্ম প্রবাহের তথ্য ভারতকে জানিতে ব্যবস্থা নিতে বলতে হবে। এটা ভবিষ্যৎ এর সালিসি কাজে সহায়তা দিবে এবং ভারতের উপর একটা নৈতিক চাপ বজায় রাখবে। এই চিঠি সকল আন্তর্জাতিক নদীর জন্যই আলাদা আলাদা করতে হবে, চুক্তি থাক বা না থাক, কেননা দেখা যাচ্ছে তিস্তায় প্রবাহ শূণ্য, উজানের দেশ কোন ভাবেই একটি নদি এভাবে হত্যা করতে পারে না। তীরবর্তী সবার পানি ব্যবহার শেষেও নদীতে একটা %প্রবাহ রাখতে হবে নদী বাচিয়ে রাখতে। বাংলাদেশকে এই বিষয়গুলো নিয়মিত আপডেইট করে রাখতে হবে।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------
উল্লেখ্য ২০১৬তে পদ্মার প্রবাহ ভয়ংকর পর্যায়ে কমে যাওয়ায় চিঠি দেয়া হয়।
২০১৬
যৌথ নদী কমিশনের তথ্য অনুযায়ী এবারেরশুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই জানুয়ারি মাসের প্রথম ১০ দিনে ইতিহাসের সবচেয়ে কম পানি প্রবাহ ছিল ফারাক্কা পয়েন্টে। এর আগে জানুয়ারি মাসে পানি এত কম প্রবাহ হয়নি। গত বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম ১০ দিন ফারাক্কায় গঙ্গার গড় পানি প্রবাহ থেকে বাংলাদেশ পেয়েছিল ৫৯ হাজার কিউসেক। চলতি বছর সেই পানির প্রাপ্যতা কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার ৫১৬ কিউসেক। ২০১৪ সালে এই সময়ে বাংলাদেশের পানির প্রাপ্যতা ছিল ৭০ হাজার ৮৫৩ কিউসেক। এভাবে চলতে থাকলে ফেব্র“য়ারি ও মার্চ মাসে পানির প্রাপ্যতা আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী পানি প্রবাহের গড় হিসেবে পানি কমে গেছে। তাই এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে যৌথ নদী কমিশনের ভারতীয় সদস্য সি. লালকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
২০১৬ তে পদ্মার পানি সরবারহের ডেটা- পর এবারের শুষ্ক মৌসুমে এই প্রথম বাংলাদেশ সর্বনিম্ন পানি পেয়েছে। এমনকি গঙ্গা চুক্তি যখন ছিল না; সেই সময়টাতে বাংলাদেশকে পানি নিয়ে এমন দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়নি। দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা জানান, গত ২১ থেকে ৩১ মার্চ ওই ১০ দিনে ভারত বাংলাদেশকে ১৫ হাজার ৬০৬ কিউসেক পানি দিয়েছে। যা ছিল স্মরণকালের সর্বনিম্ন পানির রেকর্ড। অথচ এ নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় কিম্বা যৌথ নদী কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবাদ জানানো হয়নি। যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) তথ্যানুযায়ী, ইতোপূর্বে ২০০৮ সালে ১১ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ওই ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন পানি পাওয়ার রেকর্ড ছিল ১৭ হাজার ৫১৯ কিউসেক। চলতি শুষ্ক মৌসুমে চুক্তি মোতাবেক বাংলাদেশ মাত্র ৪ বার ৩৫ হাজার কিউসেক করে গঙ্গার পানি পেয়েছে। এ ছাড়া ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনওয়ারি হিসেবে প্রতিটিতে বাংলাদেশ পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। জেআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি শুষ্ক মৌসুমে প্রতি ১০ দিনওয়ারি হিসাবে ১ থেকে ১০ জানুয়ারি পানি পেয়েছে ৩৫ হাজার কিউসেক, ১১ থেকে ২০ জানুয়ারি পেয়েছে ৩১ হাজার ৩৯৪ কিউসেক, ২১ থেকে ৩১ জানুয়ারি ৩১ হাজার ১৪ কিউসেক। ১ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি ২৯ হাজার ৭৩৩ কিউসেক, ১১ থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি ২৮ হাজার ৮২০ কিউসেক, ২১ থেকে ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পেয়েছে ২৬ হাজার ৮৬৫ কিউসেক পানি। মার্চের প্রথম ১০ দিনে অর্থাৎ ১ থেকে ১০ মার্চ পর্যন্ত পেয়েছে ২৫ হাজার ৪১৯ কিউসেক, ১১ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত পেয়েছে ৩৫ হাজার কিউসেক, ২১ থেকে ৩১ মার্চ এই ১০ দিনে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৫ হাজার ৬০৬ কিউসেক পানি। যা স্মরণকালে সর্বনিম্ন রেকর্ড। ১ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত পানি পেয়েছে ৩৫ হাজার কিউসেক, ১১ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত পেয়েছে ১৮ হাজার ২৮২ কিউসেক এবং ২১ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত পেয়েছে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি। দেশের পানি বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারের শুষ্ক মৌসুমে যে হারে গঙ্গার পানি বাংলাদেশ পেয়েছে, তা গঙ্গা চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
২০১৫
যৌথ কমিটির পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, চলতি বছর ফারাক্কা পয়েন্টে পানিপ্রবাহ কমেছে। কেননা গত বছরের মার্চ মাসের প্রথম ১০ দিনে ফারাক্কা পয়েন্টে পানিপ্রবাহ ছিল এক লাখ এক হাজার ৯শ’ ৯৯ কিউসেক। আর সে সময় বাংলাদেশ পানি পেয়েছিল ৬১ হাজার ৯শ’ ৯৯ কিউসেক। তবে চলতি বছরের একই সময়ে পানিপ্রবাহ ছিল ৬৭ হাজার ৫৮ কিউসেক। আর বাংলাদেশ পানি পেয়েছে ৩৩ হাজার ৫শ’ ২৯ কিউসেক।

পানি প্রবাহের তথ্য সংবলিত এই রকম চিঠির আদানপ্রদান শুষ্ক মৌসুমের প্রতি মাসেই করতে হবে, মৌসুমের শুরু বা একেবারে শেষ দিকে এসে যাতে একটি/২টী চিঠি দিয়ে খান্ত হওয়া যাবে না।

-------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এগিয়ে যাওয়ার কৌশলঃ
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------
১। আমাদের ক্ষমতার বলয়ে এবং বাইরের নেতৃত্ব দুরদর্শী হলে, উনারা দলীয় ব্যাকগ্রাউন্ডের বাইরে নদী ও পানি বিষয়ে একটি সর্বজন নাগরিক আন্দোলন চালু রেখে ভারতের সাথে নেগোশিয়েশনের ট্রাম্প খোলা রাখতেন। আজ আমাদের নেতারা ভারতের সাথে কথা বলতে জাচ্ছেন শুধু হাত পা আর সুন্দর জামা কাপড় পরে। কারো সাথে জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও মাথা নেই। নেই নদী ও পানির অধিকারের নৈতিক অবস্থানের বোধ, নেই জন আন্দোলনের ইস্যু, নেই বুদ্ধিবিত্তিক নেগোশিয়েশনের এলিমেন্ট।

২। ফলে ভারত জানে যে, সে বাংলাদেশকে পানি দিলেও জন আন্দোলন, সচেতনতা, ইন্টীকচুয়াল মুভ না থাকায় এবং নেতৃত্ব একেবারেই অদুরদর্শী হওয়ায় এটা তাদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কোন বিপদে ফেলবে না।

৩। প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলে যে গ্যারান্টি ক্লজ যুক্ত গঙ্গা চুক্তি আমরা পেয়েছিলাম তার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। প্রথমত- মওলানা ভাসানীর সূচিত ব্যাপক জনান্দোলনের প্রভাব। ২। দ্বিতীয়ত-বিষয়টি জাতিসংঘে তুলে ভারতের মান সম্মানে টান দেয়া। এখন জন আন্দোলনও নাই, আর বর্তমানের প্রধান দলগুলো ক্ষমতার সমীকরণে কেউই ভারতকে চটাতে চায় না, আর নদী ও পানির গুরুত্ব এবং সাটেইনেবিলিটির জ্ঞানও এদের কারো নাই।
-------------------------------------------------------------------------------------
পানি হিস্যার দাবী নিয়ে জাতিসংঘে যাওয়া এবং আফটার ম্যাথঃ
-------------------------------------------------------------------------------------
৪। ভারতকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অসম্মানিত করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গঙ্গা, তিস্তা,যমূনার পানি হিস্যার দাবী জানানো খুবই কার্যকরী হবে, ফলে নিয়মমাফিক ভাবেই ভারতকে পানি হিস্যা নিয়ে বসতে তাগাদা দিবে জাতিসংঘ।
তবে বাংলাদেশে পানি হিস্যার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক সামাজিক আন্দোলনের অনুপুস্থিতে এই সময়ে এটা আমাদের জন্য বুমেরাং হবে, কারণ আমদের নিজেদেরই সেখানে সচেতনতা নেই, সেখানে ভারত আন্তরিকতা নিয়ে আসবে না। আর অন্য আলোচনায় এর পরোক্ষ ফল ভালো নাও হতে পারে, ভারত ভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশকে আর্থিক ভাবে বিপদে ফেলতে পারে।

-------------------------------------------------------------------------------------
প্রথমেই জাতিসংঘে না গিয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশলে আন্দোলনকে বিন্যস্ত করাঃ
৫। তবে প্রথম স্টেইজে বাংলদেশের উচিৎ "কনভেনশন অন বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটি" ফোরামে নালিশ করা। ভারত যে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে বা একতরফাভাবে বন্যার পানি ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দেয়, এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পরিবেশ ফোরামে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।

৬। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশন, রামসার কনভেনশন, ইন্টারন্যাশনাল ওয়েট ল্যান্ড কনভেনশন। এসব কনভেনশনের আলোকে কিছু ফোরাম গঠিত হয়েছে, এ চুক্তিগুলোর অধীনে কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নদী ও নদীর পানি নিয়ে আরগুমেন্টগুলো করা সম্ভব।

৭। বায়োডাইভারসিটি কনভেনশনের যে ফোরাম রয়েছে, সেখানে বলা সম্ভব যে ভারত পানি প্রত্যাহার করছে বলে আমাদের প্রাণবৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বলতে পারে, ভারত পানি প্রত্যাহার করার কারণে আমাদের যে বিশ্বঐতিহ্য রয়েছে, সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

৮। রামসার কনভেনশনে বাংলাদেশ বলতে পারে, ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করার কারণে দেশের ওয়েটল্যান্ডগুলোর ওপর এর প্রভাব পড়ছে। আন্তর্জাতিক পরিবেশ ফোরামগুলোর কাছে এগুলো অবশ্যই তুলে ধরা যেতে পারে।
-------------------------------------------------------------------------------------


কিন্তু বাংলাদেশের সরকার গুলো এইসব বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশলে এগুচ্ছে না। আমাদের জাতীয় পর্যায়ে নদী ও পানি প্রাপ্তির আন্দোলনকে বেশ কয়েকটি ধাপে বিন্যস্ত করে আমাদের সরকার ভারতের কাছে পানি হিস্যার দৃশ্যমান নাগরিক চাপ উপস্থাপনের কৌশলে বহু যোজন পিছিয়ে।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী একজন স্ট্র্যাটেজিস্ট, আশা করি এই বোধ উদয় হবে, উনার দলের ভিতরে এবং বাইরে, আমাদের ক্ষমতাবলয়ের ভিতরে বাইরে।

বাংলাদেশের সাস্টেইনেবিলিটির প্রধান সুত্র অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীর পানির নৈতিক হিস্যা। পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং সাস্টেইনেবিলিটির সেন্স আসুক আমাদের, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!

ড এম এ আলী ভাইয়ার অনুপ্রেরণায় লিখিত!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×