somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশনের সমন্বয় হীনতা!

১৮ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ম্যাথ ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর আন্তঃসম্পর্ক-
---------------------------------------

ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যাথের প্রায়োগিক বিষয়, বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। যে কোন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সেই অত্যন্ত উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ম্যাথ কোর্স থাকা বাধ্যতামূলক। গণিত ছাড়া ইলেক্ট্রিক্যাল ইলেক্ট্রনিক কিংবা কম্পিউটার সাইয়েন্স কিংবা মেকানিক্যাল কিংবা সিভিলের কোন প্রব্লেমই সলভ করা যায় না। ইলেক্ট্র ম্যাগ্নেটিক বিষয় গুলুর কিংবা সিগ্লালস এন্ড সিস্টেমস, বা ভিএলেসাই, ইউ এল এস আই, অপ্টো ইলেক্ট্রনিক্স , প্রোগ্রামেবল লজিক ডিজাইন কিংবা বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্রিটিক্যাল সমাধানে সর্বোচ্চ পর্যায়ের ম্যাথ লাগে।

আমাদের উচ্চ মেধাবীরা পিউর ম্যাথ কিংবা পিউর সায়েন্সের (ফিজিক্স, কোয়ান্টাম/ফার্মিওন মেকানিকক্স-ফিজিক্স, পিউর কেমেস্ট্রি ইত্যাদি) পড়ছেন না। উচ্চ শিক্ষা রিসার্স বেইজ না হলে, কিংবা সমাজের সমস্যার সমাধান রিসার্চ ড্রিভেন না হলে মেধাবী কেউ পিউর ম্যাথ বা পিউর সায়েন্স পড়বেন না, উনাকে খেয়ে পরে বাঁচতে হবে! তবে সাধারণ ম্যাথমেটিশিয়ান ম্যাথের প্রায়োগিক দিক কম জানেন, সেটা জানতে গেলে উনাকে উচ্চ পর্যায়ের ইঞ্জিনিয়ারিং এপ্লিকেশন জানতে হবে। সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং তার নিত্য নতুন সমস্যা সমাধানে গণিতকে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ দেয়। ফলে ম্যাথমেটিশিয়ানদের এইসব নিয়ে কাজ করতে হয়। তবে অধুনিক সময়ের একাডেমিক সফটওয়্যার প্রোগ্রাম গুলো বেশ প্রখর। মোট কথা গনিত ও বিজ্ঞান একে অন্যের পরিপুরক। গনিত সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষা।

তবে যেটা আলচনায় আসা খুব দরকার সেটা হোল ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশনকে ২ ভাগে ভাগ করা, ইন্ডাস্ট্রি অরিয়েন্টেড (এপ্ল্যাইড ইউনিভার্সাটি) এন্ড রিসার্চ অরিয়েন্টেড। রিসার্চ বেইজড ইউনিভার্সিটিতে পিউর ম্যাথের সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ড এ এমনিতেই কানেক্টেড থাকে। বড় বড় ল্যাবেও তাই।

অতি উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন এন্ড ইম্পলিমেন্টেশনের যার পর নাই নিন্ম মানের দিকে তাকিয়ে আমি নির্ধিধায় বলতে পারি, আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশনের উদ্দেশ্য ব্যর্থ। বরং জিঞ্জিরা'র স্ব শিখিত রি ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক ফোর্স সফল, তারা কখনো রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পায়নি।



আমাদের ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশনের সমন্বয় হীনতাঃ
---------------------------------------------------------------
আমাদের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স গুলোকে উচ্চ মানে সাজিয়ে তোলা খুব দরকার। ডিপ্লোমা কোর্স এইচ এস সি এর পরে শুরু করানো দরকার। তবে এইচ এস সি র মধ্যেই উচ্চ মান ম্যাথের ফাউন্ডেশন নিয়ে আনতে হবে (ধরুন এলেভেল এর সমমান) যাতে শিখার্থীকে উচ্চ শিক্ষা স্তরে/বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে ফাউন্ডেশন কোর্স না করতে হয়।


আমাদের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এর একাডেমীক পাথ একেবারেই ভুল বা অন্যায্য। প্রথমে গণিত ও বিজ্ঞানের ফাউন্ডেশন হীন নিন্ম পর্যায়ের ম্যাথ জানা শিখার্থীকে ইঞ্জিনিয়ারিং এ আনা হচ্ছে। এসএসসির ঠিক পরেই ডিপ্লোমার সিলেবাসে কোর ডিপার্টমেন্টাল সাবজেক্টের সাথে সাথে এ্যাপ্লাইড ম্যাথ, মেক্যানিক্স এর মত জটিল বিষয় পড়তে হয় যার জন্য ছাত্র ছাত্রী প্রস্তুত থাকে না, ফলে না সে একজন রিসার্চার হয়ে ওঠে, না সে হয় হাতেকলমে দক্ষ রিসোর্স। তার উপর ৪ বছরের কোর্স এর পর ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন ভালো ছাত্রকে আরো ৪ বছর লাগাতে হচ্ছে গ্র্যাজুয়েশনে, পরবর্তি চার বছরের ভিতর কোন কাট অফ বা ব্রেক ডাউন নেই।
দরকার এইচ এস সি 'র পর ডিপ্লোমা শুরু করে সেখানে ২ বা ৩ বছর ইঞ্জিনিয়ারিং ফাউন্ডেশন দিয়ে পুরো ১-২ বছরের জন্য ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়ে যাওয়া। এতে কর্মমুখী ইঞ্জিনিয়ারিং স্কিল এন্ড এপ্টিচুড বাড়বে। এই লেভেল এর পর ২ বছরের অতিরিক্ত কোর্সে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ শিখার্থীকে ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েশন দেয়া উচিত। উল্লেখ্য রেগুলার ইঞ্জিনিয়ারিং এও ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং যতসামান্য এক-দু সপ্তাহ কিংবা মাস যা কর্মমুখী ইঞ্জিনিয়ারিং স্কিল এচিভে বড় বাধা।

খেয়াল করে দেখবেন আমাদের ডিপ্লোমা গণ বুয়েট কুয়েট রুয়েট চুয়েটে ভর্তি হতে পারেন না। উনাদের জন্য করা হয়েছে ডুয়েট। ফলে এই ইন্সটিটিউট গুলোর মধ্যে একাডেমিক পাথ তৈরির কোন হ্যান্ডশেইকিং নেই। যেমন নেই ইইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড রিসার্চ ডোমেইনের একাডেমীক সমন্বয়। সবাইকে একটা গতবাধা একাডেমীক কারিকুলাম ফলো করতে হচ্ছে যার সাথে জব ক্যারিয়ার কিংবা পোস্ট গ্র‍্যাজুয়েশনের সমন্বয় নেহায়েত কম।

এর বাইরে ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় থিসিস এবং রিসার্চের কোন কন্সর্টিয়াম নেই। মানে কোন কোন টপিকে কি কাজ হচ্ছে তার কোন ট্র্যাকিং বা ডকুমেন্টেশন নেই। ফলে একদিকে চোথা বাজি এবং কাট-কপি-পেস্টে দিন থিসিস বা রিসার্সারের দিন পার হয়, অন্য দিকে রিপিটেটেড কাজ হচ্ছে।

ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি প্রটেক্ট করতে (থিসিস বা জার্নালের কত% ওয়ার্ড কপি পেস্ট তা যাচাই) বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর কোন কমন ডেটাবেইজ এবং সফটওয়্যার নাই।

অন্যদিকে নিন্ম শিক্ষা স্তর বাংলা হবার কারণে এই লেভেল গুলোর টিচার ও স্টুডেন্টস এর জন্য উচ্চ শিক্ষা স্তরের যেকোন রিসার্চ, থিসিস বা জার্নাল ইংরেজীর পাশপাশি বাংলাতেও পাবলিশ করা দরকার। এটা করা দরকার বাংলা ভাষাকে উচ্চতর জ্ঞানের জগতে বিকশিত করার দায়বদ্ধতা থেকেও।


ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনের টেকনোলজি ট্রান্সফার উইন্ডো-
---------------------------------------------------------

দেশের বহু মাঝারি ও বড় ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন বিদেশীদের দিয়ে কারানো হয় (দুটি কারণ-১। দেশীয় প্রকৌশলীদের ব্যর্থতা। ২। বিদেশী প্রকৌশলীর ডিজাইন ভ্যালু বেশি ও বেশি টাকা মারা যায়)। এগুলোর রিভিউ ফেইজ থাকে না, কিংবা দায়াসারা থাকে। প্রায় সব ডিজাইনেই পিউর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনপুটের বাইরেও কম বেশি লোকাল ইকনোমিক জ্ঞান এবং স্থানীয় জীবনধারার ইনপুট লাগে যা আমাদের ইঞ্জিনিয়ার ও পলিসি মেকাররা কেয়ার করে না। আর বিদেশীদের তো এই ব্যাপারে কোন নলেজই থাকে না, ফলে সাবার ডিজাইনই কম বেশি ভুল হয়। বিদেশীদের আনা হয় ওয়ান অফ কাজের ভিত্তিতে, বিদেশী ডিজাইনারকে ইমপ্লিটেশন চ্যালেঞ্জ, ডিজাইন ত্রুটি মোকাবেলা করতে হয় না, তার আগেই তারা টাকা নিয়ে ফুটে। এইসব সংশোধনে দেশী এক্সপার্টদের ডাকা হয়, অন্যের ভুল কাজে সংশোধন আনা, রিভিউ ফেইজে উনাদের না রাখাটাকে উনারা ভালো চোখে নেন না। কোন ধরনের নজেজ ট্রান্সফার উইন্ডো থাকে না, ফলে দেশীয় ইঞ্জিনিয়ারদের রিসোর্ফুল হয়ে উঠা ডিফিকাল্ট হয়ে পড়ে।

ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইনের টেকনোলজি ট্রান্সফার উইন্ডো থাকা বাধ্যতামূলক। এর দুটি ধাপ-ক। বিদেশী টেকনোলজি ডেভেলপার টু দেশীয় এক্সপার্ট (রাষ্ট্রের ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক ফোর্স, ইন্ডীপেন্ডেন্ট এক্সপার্ট এবং শিক্ষক)। খ। বিদেশী টেকনোলজি ডেভেলপার ও দেশীয় এক্সপার্ট টু একাডেমিক লেভেল (শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও ছাত্র ছাত্রী)। এই ফেইজে শিখার্থীদের শুরুতেই আধুনিক ও উচ্চ প্রফেশনাল লেভেলের ডিজাইন কাজের সাথে পরিচয় ঘটিয়ে ভবিষ্যৎ মুখী করা যায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৭ সকাল ১০:১৬
৬টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×