somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুস্তক পর্যালোচনাঃ“বাংলাদেশের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেরসাফল্য সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ” মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত একমাত্র বইয়ের একটি ক্রিটিক্যাল রিভিউ!

১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বহুবিধ কোলেটারাল জমাদানের (উপার্জনের বৈধ কিংবা অবৈধ তথাপি ফর্মাল পেপারস) বাধ্যবাধকতা থাকায় বাংলাদেশের কৃষি, মৎস্য, কুটির শিল্প, আধুনিক শিল্প, ট্রান্সপোর্টেশন ইত্যাদির বিস্তৃত শ্রমজীবী শ্রেণী ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাংকিং খাতের গ্রাহক হয়ে উঠতে পারেনি। ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাংকিং কখনই প্রান্তিক কৃষি শিল্প শ্রমজীবী শ্রেণী ও এর সমুদয় অর্থনৈতিকে মূল ধারার ব্যাংকিং খাতে ইঙ্কলুসিভ করে গড়ে তোলার মডেল ডেভেলপ করতে পারেনি অথবা পলিসিগত বাঁধার কারণে তাদের পক্ষে সেরকম কিছু গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। শুধু উচ্চবিত্ত ও উচ্চ-মধ্যবিত্ত (কিংবা বেতন পরিশোধ) কেন্দ্রিক ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা কিছু ক্ষেত্রে সমাজ বান্ধব হয়ে উঠলেও বহু ক্ষেত্রে তা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিসরে নিন্মবিত্ত ও প্রান্তিক নাগরিককে আর্থিক সেবার বাইরে রেখে একটা সমাজ ও অর্থনীতি অবান্ধব ব্যবস্থা জারি রেখেছিল। দেখা গিয়েছে গরীবের তরে এই ব্যবস্থা ব্যাংকিংকে একটা “পুলিশি তদন্তের মত দেখতে” ভয়ংকর কাঠামোয় দাঁড়া করেছে। ফলে তার বিকাশ একটি সীমিত গণ্ডিতেই সীমাবদ্ধ থেকেছে, এতে নতুন ধারার ব্যাংকিং এর প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের আর্থ সামাজিক অবস্থার বিভিন্ন ধাপ,ভিন্ন ভিন্ন সময়ে আমাদের আর্থিক চাহিদা ও বর্তমান অবদি দেশের আর্থিক লেনদেনের ক্রমধারা উত্তরণের পর্যায় গুলো সংক্ষেপে সমাজতাত্বিক ও গবেষক খন্দকার সাখাওয়াত আলী সাহেব বইয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায়ে সুন্দরভাবে আলোচনায় এনেছেন, এখানে গ্রামীণ লেনদেনের ধরন, সোশ্যাল সেইফটি নেট এবং তৃণমূল প্রশাসনের ভাতার মত মাইক্রো ইকোনোমির এলিমেন্ট গুলোও আলোচনায় আনা হয়েছে। নীতি পর্যালোচনা করে কতিপয় সুপারিশ সারসংক্ষেপ হিসেবে বইয়ের একেবারে প্রথমেই উপস্থান করেছেন যা বইয়ের স্ট্রাকচারকে সমৃদ্ধ করেছে।

ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকিং কোলেটারাল ভিত্তিক প্রতিবন্ধকতার উপর দাঁড়িয়ে ক্ষুদ্র ঋণ বহু ধারায় প্রসারিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে মাত্র ১ যুগ পেরিয়ে বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ঋণের মোট গ্রাহক প্রায় ২ কোটি (উল্লেখ্য এই ক্ষুদ্র ঋণের আড়ালেও রয়েছে বহুবিধ কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও মাল্টি পারপাস সমিতি ভিত্তিক মহাজনী সুদি প্রথা)। তবে নাগরিকের এড্রেস ভেরিফিকেশন অনিশ্চয়তা এবং অন্যান্য কিছু কারণে ক্ষুদ্র ঋণের সুদও বছর শেষে আকাশ চুম্বীই থেকে গেছে। ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকিং এর অনলাইন ব্যাংকিং সেবার আংশিক উপস্থিতিতে, অনলাইন ডিজিটাইজড ফিচার ব্যাংকিং, ডেবিট পে কার্ড ব্যাংকিং, অনলাইন এপ ব্যাংকিং, NFC ব্যাংকিং কিংবা টেলি ওয়ালেট (টেলি চার্জ ভিত্তিক কিংবা ব্যাংক টু টেলি ওয়ার উভয়) ইত্যাদি ব্যাংকিং ফেসিলিটির প্রায় পুরোপুরি অনুপুস্থিতিতে, সোশ্যাল ডাইনামিক্স এমনকি অত্যাবশ্যকীয় দৈনন্দিন জীবনের লেনদেনের মার্কেট ডায়নামিক্স উপর ভিত্তি করে টেলিকম সেবার সাপ্লিমেন্টারি সার্ভিস USSD বেইজড থার্ড পার্টি এপ্লিকেশন সার্ভার কেন্দ্রিক মোবাইল ব্যাংকিং মেইন স্ট্রীম “মোবাইল ব্যাংকিং” এর স্বীকৃতি পেয়েছে। মাত্র ৬ বছরেই নবধারার এই লেনদেন ভিত্তিক মোবাইল ফোন ও ফোন নম্বর বেইজড ব্যাংকিং চার কোটি গ্রাহকে সমাদৃত হয়েছে যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা (বইতে সেই সময়ের ডেটা ৭৫০ কোটির উল্লেখ, পেইজ ১১) দৈনিক লেনদেনর এই ব্যাংকিং বেইজ এক অবিশ্বাস্য ভিত্তিতে কিভাবে উঠেছে এসেছে তার ব্যাকগ্রাউন্ড লিখক সুন্দরভাবে ডেটাভিত্তিক এনালাইসিসে উপরস্থাপনায় এনেছেন। পরবর্তিতে দেশের পলিটিক্যাল ইকোনোমি, রেগুলেশন স্ট্রাটেজি, আর্থ সামাজিক অবস্থা বিকাশের বর্তমান ধারায় “মোবাইল ফাইনান্সিয়াল ব্যাংকিং”ব্যাবসাকে প্রটেক্ট করার দৃষ্টিকোন থেকে কতিপয় সুপারিশ করেছেন এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়েছে।

প্রস্তাবিত সিদ্ধান্ত গুলোর উপর পর্যালোচনাঃ
১। “বাজারকে প্রতিযোগিতা মূলক” রাখতে মোবাইল নেটোয়ার্ক ওউনারদের MFS অংশীদারিত্ব দিতে বারণ করার যে কথা বলা হয়েছে তাকে আমি সুস্বাগত জানাই (পেইজ ১৪,২১,৪৭,৭৭)। তবে এর অনুকূলে যুক্তি উপস্থাপনের জন্য শুধু বাজার প্রতিযোগিতা এবং বাজার ভারসাম্যকে সামনে আনা হয়েছে (তৃতীয় অধ্যায়ে বিস্তারিত প্রেক্ষাপট আলোচনা করা হয়েছে)। বিপরীতে বরং বহুস্তরে সজ্জিত বাংলাদেশের আমলাতান্ত্রিক রেগুলেশন জাত জটিলতাকে ফোকাসে আনা দরকার। MFS সার্ভিস সেবা মোবাইল অপারেটরদের দিলে এখানে আরো বেশি প্রতিযোগীতা সৃষ্টি হতে পারে ফলে আর্থিক লেনদেন আরো বেশি সাশ্রয়ী হতে পারে (প্রথমদিকে বাজার ব্যবসা কিছুটা কম লাভনির্ভর হবে তবে ধীরে ধীরে এতে মুক্তবাজার ভারসাম্য ও স্থিতাবস্থায় আসবে)। কিন্তু সমস্যা হিচ্ছে বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতায় এতে দেশের আর্থিক খাতে ভয়াবহ রেগুলেটরি জটিলতা সৃষ্টি হবে কেননা তখন MFS বাংলাদেশ ব্যাংক'এর আর্থিক রেগুলেশন এবং BTRC'র টেলিকম রেগুলেশনের দ্বৈত জঞ্জালে পড়ে আরো বেশি অস্থির ও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠবে। এতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আর্থিক খাতে আরো বেশি পলিটিক্যাল ইনজেকশন এর ক্ষেত্র সূচিত হবে। অন্য সমস্যা হচ্ছে যেহেতু সেবাটি পুরপুরি টেকনোলজি বেইজড, তাই দ্বৈত রেগুলেশন যে কোন কারগরি বাস্তবায়নকে বিলম্বিত করবে, ফলশ্রিতিতে সিকিরিটি সংক্রান্ত কারিগরি বাস্তবায়ন জটিলতর হয়ে উঠবে।

২। বইয়ের কয়েকটি স্থানে যেমন-সারসংক্ষেপ, মুখবন্ধ, পঞ্চম অধ্যায়ে "পৃথক" পেমেন্ট ব্যাংকের ধারণা দেয়া হয়েছে এবং এর লাইসেন্স কাকে কাকে দেয়া যায় তার পরামর্শ দেয়া হয়েছে যাকে আমি একেবারেই অপ্রয়োজনীয় মনে করি। বরং রেগুলেটর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত বাংলাদেশের বর্তমান ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকিং ও মোবাইল ব্যাংকিং উভয়কেই ফুল ফেসিলিটির পেমেন্ট সিস্টেম হিসেবে ইভল্ভ করা। মানে এই উভয় ধারাকেই সমন্বিত, বাই ডিরেকশনাল ইন্টার অপারেবিলিটি সক্ষমতা সম্পন্ন পেমেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থায় উন্নীত করার রোড ম্যাপ ডিফাইন ও বাস্তবায়ন করা। অর্থাৎ একটি এন্ড টু এন্ড "পেমেন্ট গেইট ওয়ে" বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করা দরকার যা একদিকে সকল বাণিজ্যিক ব্যাংক, MFS, বিভিন্ন ইন্ডীপেন্ডেন্ট ক্রেডিট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম, অন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সফট ও হার্ড পে-গেইটওয়ে গুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় আইটি ইনফাস্ট্রাকচারের সাথে ফিজিক্যালি কিংবা সিকিউরড নেটয়ার্কে লজিক্যালি সংযুক্ত করে "অল টু অল" ইন্টার অপারেবিলিটি নিশ্চিত করবে অন্যদিকে সকল ব্যবসাকে (মুদি চেইন শপ থেকে শুরু করে ক্ষুদ্র মাঝারি ও বৃহৎ শিল্প) ইউনিভার্সাল পে মেশিন POS টার্মিনাল কিংবা MFS পে-সিস্টেমের আওতায় আনবে। এতে নাগরিক ক্যাশের পরিবর্তে ভার্চুয়াল মানিতেই ব্যাংক কার্ড, MFS মোবাইল একাউন্ট, NFC এবং অন্য যে কোন ডিজিটাল ওয়ালেটের মাধ্যমে তার পেমেন্ট করতে পারবেন। এতে দুটি অর্জন আসবে। নাগরিকের সমুদয় আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আসবে এমনকি কালো টাকার উৎসে ভাটা পড়বে ফলে আর্থিক লেনদেন জাত অপরাধ তদন্তে ট্রান্সপারেন্সি আসবে। অন্যদিকে ক্ল্যাসিফাইড ভ্যাট আদায় জনবল নির্ভরতা কাটিয়ে ডিজিটাইজড হবে। (মানে "বাংলাদেশ ব্যাংক" এবং "NBR" উভয়ের প্রকৃত ডিজিটাইজেশন বেইজড রেগুলেশনারি অপারেশনের পথ উন্মুক্ত হবে)।

৩। MFS এর প্রস্তাবিত গাইডলাইনকে চূড়ান্ত করার পরামর্শ অবশ্যই সময়ের দাবি,অভিন্ন অবস্থান থেকে আমরা চাই গাইডলাইনকে দেশের বাস্তবতায় দুরদর্শী করে নির্মিত করা হোক অতি দ্রুত।

বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা প্রস্তাবনার পর্যালোচনাঃ

নির্দেশনা-১ ব্যক্তি গ্রাহকের সাথে আলাপ করে মাত্র একটি মোবাইল একাউন্ট খোলা রেখে বাকিগুলো বন্ধ করার যে নির্দেশনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে (পৃষ্ঠা ৬৮) তা অদ্ভুত। এই মর্মে লিখকের বক্তব্য পরিষ্কার এবং বাস্তব। উপরোক্ত ২ নং সিদ্ধান্তের পর্যালচনায় আলোচিত এন্ড টু এন্ড 'পেমেন্ট গেইট ওয়ে' বাস্তবায়িত হয়ে গেলে ফাইনান্সিয়াল ট্রান্সপারেন্সি এমনিতেই চলে আসবে। ব্যক্তির মোবিলিটি, ভিন্ন ভিন্ন যায়গায় ভিন্ন ভিন্ন মডেলের মোবাইল ব্যাংক বুথ, এটিম বুথ-MFS কোলাবরেশন ও এজেন্টের উপস্থিতির সাপেক্ষে গ্রাহকের চাহিদা মত ভিন্ন ভিন্ন ফেসিলিট নিশ্চিত করতে একাধিক মোবাইল একাউন্ট অতি দরকারি। আর ভিন্ন ভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এর ক্যাশ আউট ফিও এবং উত্তোলনের মুডও ভিন্ন, তাই গ্রাহককে তার পছন্দ মত সাশ্রয়ী পদ্ধতি খুঁজে পাবার প্রতিযোগিতামূলক অপশন দেয়াই মার্কেট ডায়নামিক্স। অন্যদিকে কথা বলে একাউন্ট বন্ধের এডমিনেস্ট্রেশন বাংলাদেশের বাস্তবতায় অসম্ভব এবং এটা দুর্নীতি-হয়রানির সৃষ্টির কারণ হতে পারে।

নির্দেশনা-২ ক্যাশ ইন ক্যাশ আউটের সিলিং কমিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, লিখক এটাকে সমালোচনা করেছেন যা বস্তুনিষ্ঠ। এই সিলিং বাড়ানো যেতে পারে, তবে তার আগে সিকিউরিটি থ্রেট রয়েছে কিছু তার ফিজিবিলিটি স্ট্যাডী করা গেলে ভালো হয়। MFS এ হুন্ডী হচ্ছে এই ধারণার সাথে লিখক দ্বিমত করেছেন যার সাথে আমি সহমত পোষণ করি। হুন্ডী থামানোর জন্য এক্টিভ সোর্স গুলোতে (ফরেন কারেন্সি এক্সচেইঞ্জ, ব্ল্যাক ও কার্ব মার্কেট, ক্রস বর্ডার ট্রেইড, হাই টেক এয়ার পোর্ট সার্ভেইলেন্স, স্থল বন্দর সার্ভেইলেন্স, পেপার নোট চোরাচালান, স্বর্ণ চোরাচালান ইত্যাদি) নজরদারি এনে প্যাসিভ সোর্সে নজরদারি উঠিয়ে দেয়া যুক্তি যুক্তি মনে করি।

নির্দেশনা-৩ এখানে ট্রানজেকশন রেকর্ড ও কোল্যাটারাল ম্যানুয়ালি রাখার কথা বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক, এটা মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের প্রেক্ষাপটের সাথে কিছুটা সাংঘর্ষিক। আমি মনে করি এর সবগুলো ধাপ বেদরকারি যেমন স্বাক্ষর/টিপ্সই/ম্যানুয়াল রেকর্ড। বরং যেটা করা যেতে পারে তা হচ্ছে প্রতি ট্রানজেকশনের সাথে শুধু ন্যাশনাল আইডির নম্বর/কপি জমা নেয়া ও এর সাথে পেমেন্টের ট্রানজেকশন আইডি ট্যাগ করে ভার্চুয়ালি সংরক্ষণ করা। শুধু দরকার সাপেক্ষে (ফ্রডুলেন্স) পোস্ট প্রসেস করা যেতে পারে এই ডেটা।

নির্দেশনা-৪ মাসিক ভিত্তিতে ট্রানজেকশন ডেটা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর কনসেপ্ট থেকে সরে এসে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত প্রতিটি প্রভাইডারের USSD গেইটওয়ের পোস্ট প্রসেসিং মডিউলের ডেটা নিজেরাই পোস্ট প্রসেস করা (লজিক্যাল FTP ইন্টারফেইস স্থাপন করে ট্রানজেকশন আইডি ও ভলিউম নম্বর নেয়ে পোস্ট প্রসেস)। অর্থাৎ ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকিং এর মত ট্রাঞ্জেস্কশন ডিটেইল ম্যানেজমেন্টের ম্যানুয়াল সিস্টেমকে ডিজিটাইজড করা। আমি বলছি এন্ড টু এন্ড পে-গেইট ওয়ে হলে এই ব্যবস্থা এমনিতেই পুর্ণ অটোমাইজড হয়ে যাবে।


বাংলাদেশ ব্যাংক ট্র্যান্সফার ভলিউমের সিলিং আরোপিত করলেও পার ট্রানজেকশন ট্র্যান্সফার কষ্ট সেটেল করা হয়নি। ফলে নির্দেশনাটি উভয় দিক্ত হেকেই গ্রাহকবান্ধব হয়নি। MFS ১,৮৫ বা ২% ট্র্যান্সফার কষ্ট এর উপর দাঁড়িয়ে উঠা এজেন্ট নির্ভর সিস্টেম, (যা বর্তমানে ধীরে ধীরে এটিএম নোটোয়ার্কের সাথে কোলাবোরেটেড হচ্ছে)। এজেন্ট নির্ভর মডেল (৭৭% এজেন্ট, ৭%, ১৬% MFS প্রভাইডার) নন টেকসই কেননা এর কষ্ট মডেল মূলত এজেন্টের স্বার্থ রক্ষা করছে (প্রথম দিকে মেথড জনপ্রিয় করতে এটা দরকার ছিল, তবে ধীরে ধীরে এ থেকে সাশ্রয়ী মডেলে ট্রান্সফর্ম করতে হবে)। গ্রাহক সন্তুষ্টির দিক থেকে এই মডেল মোটেই টেকসই নয়।

যেখানে বাংলাদেশের শ্রমের মূল্য অতি নিন্ম, স্মল ও মিডিয়াম বিজনেসে এখনো মার্জিনাল প্রফিটিবিলিট বিদ্যমান সেখানে ২% ট্র্যান্সফার কষ্ট মোটেই গ্রাহক বান্ধব নয়। অন্যদিকে যে কোন একটি ট্রানজেকশন একই পরিমান নেটোয়ার্ক রিসোর্স (মুলত টেলিকম কোর ও রেডিও রিসোর্স, অতি সীমিত পরিসরে থার্ড পার্টি এপ্লিকেশন সার্ভার রিসোর্স) এবং সম পরিমাণ এজেন্ট ইনভল্ভমেন্ট রাখে, ফলে নেটয়ার্ক কষ্ট একই হয়েও উচ্চ ভলিউমের ফান্ড ট্র্যান্সফারেও ফ্ল্যাট রেইটে ২% চার্জ কাটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য ও অন্যায্য। যেমনটা হওয়া উচত ছিলঃ ১০০০ টাকা পর্যন্ত ২% চার্জ রাখা হবে এবং এর উপরের সকল ট্রানজেকশনে ২০ টাকা (সর্বোচ্চ) ফি কাঁটা যাবে। বর্তমানে ১০০ টাকা ট্র্যান্সফারে ১.৮৫ টাকা (আদতে ২ টাকা)চার্জ করছে,ঠিক একই ভাবে ২০০০০ টাকায় ৪০০ টাকা নিচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়িক বাস্তবতায় ২০০০০ টাকা ইনভেস্ট করে দৈনিক ৪০০ টাকা লাভ করা প্রায় অসম্ভব, সেখানে একটি ফান্ড ট্রানজেকশনে কেন গ্রাহককে এই উচ্চ পরিমাণ কষ্ট বইতে হবে? রেগুলেটর হিসেবে বাংলাদেশ বাংককে উদ্যোগী হয়ে এই বিতর্ক উন্মুক্ত করা দরকার। এই চিত্র এটাই নির্দেশ করে যে দেশের মানুষ সত্যই একটি সহজ এক্সেস সম্পন্ন ব্যাংকিং কিংবা পেমেন্ট সার্ভিসের সেবা পেলে খরুচে MFS কে পরিত্যাগ করবে ধীরে ধীরে। বইতে MFS'র চ্যালেঞ্জ হিসেবে এই আলোচনার অনুপুস্থিত রয়েছে (পেইজ ৫২+ আলোচনায়)।

অন্যদিকে স্মার্টফোন পেনিট্রেশন বাড়ার সাথে সাথে USSD বেইজড মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সিস্টেম কিভাবে টিকে থাকবে কিংবা এর রূপান্তর ঘটবে এই আলোচনা বইতে উঠে আসেনি। আধুনিক এপস বেইজড প্ল্যাটফর্মে ট্রান্সফর্ম ঘটিয়ে সরাসরি টেলিকমের USSD নির্ভরতা যথাসম্ভভ কাটিয়ে তোলার চ্যালেঞ্জ রয়েছে MFS এর। USSD বেইজড ফাইনান্সিয়াল প্ল্যাটফর্ম গুলো এখনও ইন্টার অপারেবল না ফলে ইন্টার MFS ট্রানজেকশনের পথ রহিত রয়েছে। ফলে প্রয়োজনে একই ব্যাক্তিকে সবগুলো সার্ভিস প্রভাইডারের একাউন্ট হোল্ডার হতে হচ্ছে। USSD বেইজড MFS ব্যাপক ভিত্তিতে স্মল ও মিডিয়াম রেইঞ্জ পাওনা পরিশোধ ও শ্রমের উপার্জন স্থানান্তরে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তবে MFS পণ্য ক্রয়ের পে মেথড হয়ে উঠেনি ব্যাপকভাবে। এইদিক গুলোকে বইয়ের পরবর্তি রিভিশনে স্থান দেয়া জরুরী বলে আমার বিশ্বাস।

মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ডোমেইনে লিখিত এই ধারার প্রথম বই হিসেবে সমাজতাত্বিক ও গবেষক জনাব খন্দকার সাখাওয়াত আলী সাহেব একটি মহৎ এবং আন্তরিক প্রচেষ্টার সাথে দেশের ফাইনান্সিয়াল সিস্টেমের ক্রমবিকাশের ধারা গুলো সাবলীল উপস্থাপনায় পাঠাকের কাছে তুলে ধরেছেন। নীতিনির্ধারনী বক্তব্য এবং প্রস্তাবনা হিসেবে এর গুরুত্ব বিস্তর যা ভবিষ্যতে আরো বহু স্ট্যাটেজিক আলোচনা শুরুর প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। পরিশেষে আমি লিখকের দীর্ঘায়ু কামনা করি এবং তাঁকে আন্তরিক মোবারকবাদ জানাই।


লেখক: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্টিভিস্ট, প্রকৌশলী, ইইই, বুয়েট। সফটওয়্যার সলিউশন আর্কিটেক্ট, ভোডাফোন নেদারল্যান্ডস। সাবেক টেলিকম সলিউশন আর্কিটেক্ট, এরিকসন (নাইজেরিয়া, ঘানা, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস); কোর নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, অ্যাকটেল এবং অ্যালকাটেল-লুসেন্ট বাংলাদেশ।
[email protected]

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:১০
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×