somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

ঋণাত্মক রেমিটেন্স প্রবাহের কারণ অনুসন্ধান, জুম উদ্ভোদন ও “ন্যাশনাল পে'গেইটওয়ে”র বাস্তবতা!

২২ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশে দেশে গৃহ যুদ্ধ উদ্ভূত শ্রমবাজার অস্থিতিশীলতা এবং জ্বালানী তেলের মূল্য হ্রাস জনিত অর্থনৈতিক মন্দা সহ বহুবিধ কারণে প্রবাসীদের আয় ও কর্মক্ষেত্র সংকুচিত হবার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রেমিটেন্স প্রবাহ মাত্র এক বছরেই ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ধ্বস প্রত্যক্ষ করেছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে ব্যাংক রেমিটেন্স ফান্ডেড করার ডিউরেশন ও কমপ্লেক্সিটি (প্রসেস ও গ্রাহক হয়রানি) কমাতে কাজ করেছে, ইনফ্লো রেমিটেন্স চার্জ হীন করার পদক্ষেপ নিয়েছে যা প্রশংসনীয়। এই বাইরে অবৈধভাবে দেশে অর্থ প্রেরণকারী মোবাইল অ্যাকাউন্ট সনাক্ত করার বিচ্ছিন্ন কিছু পদক্ষেপ আছে, আছে রেমিটার দের পুরস্কার দেবার মত ভালো উদ্যোগ। মোবাইল ব্যাংকিং অপারেটরদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আনার ব্যাপারেও চিন্তা ভাবনা হচ্ছে।

তবে বলা প্রয়োজন যে ডায়াগনস্টিক সার্ভের নাম করে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথাকথিত গবেষক দলের একাধিক বিদেশ ভ্রমণ অপ্রয়োজনীয় ছিল বিপরীতে বাংলাদেশ মিশন ও দূতাবাস গুলোকে এই এসাইনমেন্ট দিয়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রবাসীদের ফিডব্যাক নেয়ার কষ্ট ইফিশিয়েন্ট ও বাস্তবধর্মী উদ্যোগ নেয়া দরকার ছিল। আরো উল্লেখ্য বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা, তেলের মূল্য হ্রাস ও যুদ্ধের কারণে বিশ্ব জুড়ে রেমিটেন্স প্রবাহ কমার যে সতর্কতা জারি করেছিল বিশ্ব ব্যাংক, দৃশ্যতই বাংলাদেশ ব্যাংক তা আমলে নিয়ে কোন প্রিভেন্টিভ উদ্যোগ নেয়নি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নেয়া এইসব উদ্যোগের বেশকয়েকটিই সাময়িক স্বস্তির যায়গায় কার্যকর হবে, তবে দীর্ঘমেয়াদের রুট কজ এনালাইসিস না হবার করনে আদতে ফলপ্রসূ ও টেকসই উন্নতি আসবেনা ভবিষ্যতের রেমিটেন্স প্রবাহে।
অর্থাৎ বাংলাদেশকে উচ্চমান রেমিটেন্স প্রবাহ অব্যহত রাখতে কিছু টেকসই দিক উপ্লভদ্ধিতে আনতে হবে।

১। আন স্কিল্ড ও কথিত সেমি স্কিল্ড শ্রম রপ্তানির বাজার থেকে বাংলাদেশকে বহুবিধ ডোমেইনের স্কিল্ড ম্যানপাওয়ার রপ্তানির ইনফাস্ট্রাকচার গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশের ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং এডুকেশন ইনফাস্ট্রাকচার গুলোকে ইভল্ভ করে স্কিল্ড ম্যানপাওয়ার রপ্তানির এপ্ল্যাইড ইঞ্জিনিয়ারিং ফাউন্ডেশনের রূপ দেয়া যায়। আধুনিক টেকনোলজির সাথে যুতসই হাই স্কিল্ড ম্যানপাউয়ার তৈরিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকেও ঢেলে সাজাতে হবে।

১ক। অতি অবশ্যই বাংলাদেশের আনস্কিল্ড শ্রম রপ্তানির পরিমাণ এবং এর রেমিটেন্স ফ্লো কমে আসবে, কারণ সময়ের সাথে এই আনস্কিল্ড শ্রমবাজারই গুটিয়ে আসবে। পরিবর্তে বাংলদেশকে দীর্ঘমেয়াদের জন্য স্কিল্ড ও হাই স্কিল্ড ম্যানপাওয়ার রপ্তানির বাজার তৈরিতে মনযোগী হতে হবে।

১খ। বাংলাদেশের নিজেরই স্কিল্ড ও হাই স্কিল্ড হিউম্যান রিসোর্স দরকার কেননা দেশের প্রায় সব কারিগরি সেক্টেরেই বিদেশি এক্সপার্ট ও সেমি এক্সপার্টদের উপস্থিতি লক্ষণীয়। (তবে অধিকাংশ বড় বড় আইটি ও অন্য ইনফাস্ট্রাকচার সেক্টরে বিদেশি এক্সপার্ট আসেন সেসব প্রজেক্টের ঋণদাতা দেশের কোম্পানি ও রিসোর্স দিয়ে প্রায় শতভাগ কাজ করানোর শর্তের কারণে)। বাংলদেশকে কর্ম সংস্থান তৈরির এই মৌলিক বিষয় গুলো নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে, সস্তা শ্রমের বিক্রিতে যে রেমিটেন্স দেশে আসছে তার বেশিরভাই এক্সপার্ট শ্রমিক ক্রয়ে ব্যয়িত হচ্ছে। ফলে সাধারণ জনতা রেমিটেন্সের সুফল পাচ্ছে না।

১গ। বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নাগরিক অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছেন যারা মূলত রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থী হিসেবে দেশের অর্থনীতির বোঝা হয়ে উঠছেন। এদের ৩ টি সেগ্মেন্ট-

বেশির ভাগেরই আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয় এবং ফেরারী হিসেবে থাকতে হয়। যেহেতু অনেক দেশে ফেরারি শ্রমিক বৈধভাবে উপার্জনে অক্ষম তাই তারা দেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার করে আনেন। অথবা ঐদেশের বৈধ প্রবাসীর কাছ থেকে ফরেন কারেন্সি নিয়ে দেশে ইকুইভালেন্ট এমাউন্ট পে করেন।

রাজনৈতিক আশ্রয় যারা পান তারা একটি নির্দিস্ট সময় পর্জন্ত (৫ থেকে ১০ বছর দেশ ভেদে) জীবনধারণের জন্য নূন্যতম ভাতা ভোগ করেন, এই ভাতা রক্ষার নিমিত্তে তারা কোন আর্থিক কর্ম কান্ড কিংবা চাকুরি করেন না। যেহেতু বছর বছর ভাতার পরিমাণ কমছে তাই মানসম্পন্ন জীবনের জন্য তারা দেশে ব্যবসা করে হুন্ডিতে টাকা পাচার করেন। এই লোকগুলোর সাথে ক্ষমতার রাজনীতির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকে। বিদেশে বসেই এরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়নের অংশ।

উল্লেখযোগ্য বিদেশে সেটেল্ড ধনী প্রবাসী বাংলাদেশে ব্যবসা করেন কিন্তু দেশে টাকা রাখেন না।


তবে রেমিটেন্স স্থিতি কমার কিংবা প্রবাহ কমার যেসব কারণ এখনও অনুধাবন করা যায়নি, তার মধ্যে একটা এমন হতে পারে যে,
"বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অর্থ পাচার ও বৈদেশিক ট্রানজেকশন ডকুমেন্টেশনে আগুন লাগানো, বেসিক ব্যাংক-সোনালি ব্যাংক সহ সকল ঋণ জালিয়াতি এবং একই সাথে বেসরকারি ব্যাংক গুলোতে সরকারের হামলা (রেমিটেন্স ইনফ্লোর ব্রিহত্তম ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক মালিকানা জালিয়াতি), উত্তরোত্তর পারিবারিক প্রতাপ ও ব্যাংক মালিকদের স্বনামে-বেনামে ঋণ অব্যবস্থাপনার মত অব্যহত ও লাগাতার ব্যাংক কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতে সচেতন নাগরিক বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকিং সিস্টমের উপর আস্থা হারিয়েছেন। ফলে তারা সচেতন ভাবেই বিকল্প অনলাইন মাধ্যমে কিংবা অবৈধ পথে অর্থ আদানপ্রদানে জড়িয়ে পড়ছেন।"

বেশিরভাগ রেমেটেন্স পাঠানো নাগরিক শ্রম ঘন বা কম শিক্ষিত বলে তাদের সেন্স অফ হিউমার, সেন্স অফ সোশ্যাল এনালাইসিস নেই এটা বলা যাবে না। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা আস্থার যায়গা, সেখান থেকে টাকা পাচার হয়ে গেলে বৈধ রেমিটেন্স পাঠানো প্রবাসী চেতনে অবচেতনে একটা ধাক্কা খান বটে। অন্যদিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় রেমিটেন্স আনয়নকারী ব্যাংক ছিল ইসলামী ব্যাংক, সেটাকে কার্যত কিডন্যাপ করা হয়েছে ফলে সে সোশ্যাল ও পলিটিক্যাল সেক্টর সেই ব্যাংক ব্যবহার করতো তারা নিশ্চিতই কিছুটা হতাশ। এটার প্রমাণ ইসলামী ব্যাংকের রেমিটেন্স ফ্লোতে পাওয়া যাবে। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি আরো বেশ কিছু ব্যাংক শেয়ার বাজার ব্যবহার করে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে, অন্যদিকে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান বানাতে আইন আসছে। এতসব ঋণ জালিয়াতির পরে আবারো নতুন এই সব কেলেঙ্কারি নাগরিককে ভাবিত করে। তার আস্থার যায়গাটা নষ্ট হয়ে যায়। আর যে লোক উপার্যন করে সে তার ফান্ডের যৌক্তিক ব্যবস্থাপনা এন্সিউর করতে চাইবে এটা খুব স্বাভাবিক। ফলে লেজিটিমেসি কিংবা নৈতিকতার দিক থেকে ব্যাংক কেলেঙ্কারি গুলোর পর অবৈধ পথে রেমিতেন্স পাঠান আরো বেশি অবারিত হবে। অর্থাৎ যেখানে ব্যাংক কোষাগারইই চুরি হয়ে যাচ্ছে সেখানে হুন্ডিকে সে আগের মত অবৈধ ভাববে না!

২। বৈধ পথে রেমিটেন্স কমার একটিভ কারণ গুলোর পাশাপাশি প্যাসিভ কারণগুলোর সুরাহা করতে হবে। একটি বড় প্যাসিভ কারণ বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ফরেন কারেন্সি রেইট উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কম। ব্যাংক গুলো গ্রাহককে ডলার, ইউরো কিংবা রিয়ালের বিপরীতে কম টাকা অফার করে এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত রেইটের চেয়েও কম দেয়। ফলে হার্ড ক্যাশ কার্ব মার্কেটে (ব্ল্যাক ও মানি এক্সচেইঞ্জে) ভাঙানোর একটি অতি স্বাভাবিক প্রবনতা রয়েছে প্রবাসীদের মাঝে। এখানে অতি উল্লেখ্য যে, ব্যাংক গুলোর রিয়াল, ডলার, ইউরো ইত্যাদি ফরেন কারেন্সির ক্রয় ও বিক্রয়ের বিশাল পার্থক্য অগ্রহণযোগ্য। একদিকে ডলার প্রতি ফর্মাল ইনফর্মাল সেক্টরের রেইট ভিন্নতা ৫-৮ টাকার মত অন্যদিকে একই ব্যাংকের ক্রয় বিক্রয় রেটের ভিন্নতাও ৫ টাকার বেশি । এই ধরণের উভমুখী গ্রাহক ঠোকানর প্রবনতা প্রবাসীদের ব্যাংক মূখী করে না। এটা উপ্লভধির মধ্যে আনা জরুরী।

৩। এটা ঠিক যে সাময়িক নজরদারির কারণে সাময়িক ভাবে অবৈধ মোবাইল ব্যাংকিং ট্রানজেকশন এবং হুন্ডির প্রবণতা কিছুটা কমেছে। কিন্তু এই দুটি সেক্টর খুব দ্রুতই বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া সাম্প্রতিক উদ্যোগগুলোর কাউন্টার উদ্যোগ নিয়ে আসবে, ফলে ইনফর্মাল সেক্টরে আবারো রেমিটেন্স বাড়বে। এর ব্যাখ্যায় বলা যায়, যেহেতু বাংলাদেশে থেকে বাইরে দুর্বিত্তায়িত কালো টাকা পাচারের হুন্ডি চক্র অতি সক্রিয় তাই খুব সহজেই হুন্ডীচক্র ডলার ও ইউরোর ক্রয় রেইট বাড়িয়ে দিয়ে (গ্রাহককে ব্যাংকের চেয়েও বেশি এট্রাকটিভ রেইট দিবে) বিক্রয় রেইট থেকে সেটা পুষিয়ে নিবে (কালো টাকার পাচারকারীদের আরো বেশি দামে ডলার ইউরো কিনতে হবে)।

অর্থাৎ বৈধভাবে দেশে ঢুকা ফরেন কারেন্সির ডেস্টিনেশ হল দুর্বিত্তায়িত কালো টাকা পাচরে। যে রিয়াল ডলার ইউরো প্রবাসীদের শ্রমের কষ্টার্জিত মূল্য হিসেবে দেশে আসছে তাই দুর্নিতি ও রাজনৈতিক দুর্বিত্তায়নের অর্জিত কালো টাকার বিপরীতে আবারো সেই ফরেন কারেন্সি হয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। বাংলদেশ ব্যাংকে দীর্ঘমেয়াদে এই চক্র ভাঙার মিশন নিয়েই কাজ করতে হবে। কেন বাংলাদেশে এত বেশি ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ কাজ করছে এবং কেন ফরেন কারেন্সি এক্সচেঞ্জ গুলোর সেবাকে ফর্মাল ব্যাংকিং খাতে ট্রান্সফর্ম করা হচ্ছে না এই দুর্বিত্তায়িত ধাঁধাঁ বাংলাদেশ ব্যাংক'কে সমাধান করতে হবে।


৪। সম্প্রতি বাংলদেশ ব্যাংক ও আইসিটি মিলে (আবারো বেশকয়কেটি ভ্রমণ বিলাস, পেপাল ইউ এস অফিসে ) পেপালের জুম সার্ভিস চালু করেছে। বোধগম্য নয় যে একটি অনলাইন ফান্ড ট্র্যান্সফার সার্ভিস ওপেনিং এতটা শো ঢাউনের মাধ্যমে লঞ্চ করার পরও কার্যকর কোন অর্জন কি আদৌ হবে কিনা! বাজারে পেপাল জুমের প্যারাল্যাল বেশ কয়েকটি অনলাইন ফান্ড ট্র্যান্সফার সার্ভিস ইতিমধ্যেই রয়েছে (WesternUnion, XpressMoney, Worldremit, Transfast, Ria, MoneyGram, Payoneer, Payza, Neteller, Skrill ইত্যাদি)। বাংলাদেশের অনলাইন ফরেন ফান্ড ইনফ্লোর সমস্যা আদতে যেকটি তার কোনটাই এই প্রোজেক্টে এড্রেস করা হয়নি।

৪ক। জুম বা অন্য অনলাইন মেঠডে (এপল/এন্ড্রয়েড এপস) বাংলাদেশে রেমিটেন্স আসছে কিন্তু সেই টাকা এনক্যাশ করতে গ্রাহককে মাত্র ২-৩টার মত ব্যাংকেই যেতে হচ্ছে এবং হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। এই হয়রানির দুটো দিক থাকে- একদিকে টাকার মূল্যমানে রেইট কম থাকে অন্যদিকে বেশ কিছু পেপার ওয়ার্ক্সের ঝামেলা থাকে। ফলে শুরু করলেও এই মেথড গুলো কিছুদিন পর গ্রাহক বান্ধব হয়ে আবির্ভূত হতে ব্যর্থ হয়। আবার দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বড্ড বেশি। ফলে এই স্বল্প খরুচে সার্ভিস গুলোও ৫৩টি ব্যাংকের সবার সাথে ইন্টারফেইস তৈরির মত খরুচে বিজনেইস কেইস এডাপ্ট করতে পারে না।

৪খ। বাংলদেশ আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে একিউরেইট সিটিজেন এড্রেস ম্যানেজমেন্টে জোর দেয়নি। ফাইনান্সিয়াল এড্রেস ভেরিফিকেশন, এড্রেস বেইজড ব্যাংক একাউন্ট বিলিং, মান্থলি সার্ভিস ও ইউটিলিটির অটো ব্যাংক বেইজড পেমেন্ট এখানে সুচনাই করতে পারে নি। ভোটার নম্বর প্রদান ও এর বিপরীতে বায়োমেট্রিক নেয়ার যে তোড় ঝোড় তা দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা সহজীকরণ কিংবা অপরাধ দমনে কোন কাজের আসছে না। এতে করে পোস্টাল সার্ভিস গুরুত্ববহ হচ্ছে না, এমনকি স-শরীর উপস্থিতি কেন্দ্রিক পণ্য ও সেবা ক্রয়ের মডেল, (তদবির ও স-শরীর উপস্থিতি কেন্দ্রিক প্রশাসনিক কাজও) নগরীকে ভয়াবহ যানজট পুর্ণ রাখতে সহায়ক ভূমিক রাখছে। বাংলাদেশে সিটিজেন ফাইনান্সিয়াল করেস্পন্ডেন্স কোম্পানির ঠিকানা কেন্দ্রিক, অনেক আর্থিক সেবা চাকুরির পে-স্লিপ ভিত্তিক, যেহেতু এড্রেস ট্রাস্টেড না তাই বিজনেস এখানে সরাসরি নাগরিক ডিলিংকে ট্রাস্ট করে না। এই কারণেও এখানে বহু বিজনেস গ্রো করতে পারছে না, এন্টার প্রেনিউর শিপ মুখ থুবড়ে পড়ছে পেমেন্ট না পাওয়া এবং পেমেন্ট প্রাপ্তির জটিলতায়। বিস্তৃত মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত উদ্যোক্তা কৃষি ও শ্রমজীবিকে বিজনেস ফাইনানশিয়ালি ট্রাস্ট করে না। এর ব্যাপক প্রভাব পেমেন্ট সার্ভিসে এমনকি অর্থনীতিতে পড়ছে।

এড্রেস ভেরিফিকেশন না থাকায় পুর্ণাংগ পেপাল (যেটা ফ্রি ল্যান্সার ও আইটি এক্সপার্টদের দীর্ঘ প্রত্যাশা) সেবা বাংলাদেশে আসতে পারছে না, সীমিত পরিধিতে পেপালের মালিকানাধীন মোবাইল ফান্ড ট্র্যান্সফার সার্ভিস “জুম”এই আমাদের সীমাবদ্ধ থাকতে হচ্ছে। (জুম রেমিটেন্স গেইটয়ে হলেও পেপ্যালের কোন সুবিধা জুম দেয় না) বরং পাইয়োনিয়ার এপের এক্সপেন্ডেচার ইন্টারফেইস বেশি। এবং ওয়ার্ল্ড রেমিট এপের এক্সচেইঞ্জ রেইট ভালো।

৪গ। বাংলাদেশের অল ইন অল একটি পুর্নাঙ্গ "পেমেন্ট গেইট ওয়ে" না থাকায় প্রায় সব রেমিটেন্স ইনফ্লোর ডেস্টিনেশ হল ক্যাশ আউট যা এই সময়ে এসে বিশ্ব বাস্তবতায় অগ্রহণযোগ্য। ব্যাংলাদেশ ব্যাংক একটি ন্যাশনাল ফান্ড ট্র্যান্সফার গেইটওয়ে (বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্র্যান্সফার নেটওয়ার্ক BEFTN) করেছে সত্য কিন্তু তা এন্ড টু এন্ড পে গেইটোয়ে নয়। এখানে আন্তব্যাংক সংযোগে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্র্যান্সফার হচ্ছে কিছু সীমিত পরিসরে। একদিকে সব ব্যাংক, সব শাখা ও সব গ্রাহক BEFTN ইন্টারফেইসের আওতায় আসেনি (ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি, ৫৩ টা ব্যাংকের অনেকেই অনেকেই BEFTN এর সাথে আইটি ইনফাস্ট্রাকচার গড়তে গড়িমসি করছে, কেননা বহু ব্যাংকের উদ্দেশ্য গ্রাহক সেবা নয় বরং ঋণ জালিয়াতি কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দুর্বিত্তপনা)।

অন্যদিকে আন্তব্যাংক ট্র্যান্সফার হওয়া ফান্ডেরও ডেসটিনেশন হল ক্যাশ আউট কেননা BEFTN এর কোন বিজনেইস ইন্টারফেইস নেই। দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সংযুক্ত করার আইটি ইনফাস্ট্রাকচার না থাকায় টাকা ব্যাংক থেকে বিজনেসে যাতে পারছে না বরং ম্যানুয়াল ক্যাশ আউট হতে হচ্ছে। মানে সামান্য কিছু ব্যাংক ছাড়া অন্যদের ব্যাংক কার্ড এখনও ব্যাপক হারে পে-কার্ড হয়ে উঠেনি। অর্থাৎ আমাদের এমন কোন পে-গেইট ওয়ে নেই যেখানে সেবা ও পণ্য বিক্রয়কারী, ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংক এরা সবাই একটি কমন ইনফাস্ট্রাকচারে এন্ড টু এন্ড সংযুক্ত।

ফলে একটি ব্যাংকের সাথে যদি কোন কোম্পানির বিশেষ আইটি ইন্টারফেইস থাকে তবে সেই ব্যাংক কার্ড দিয়ে শুধু সেই কোম্পানির পণ্যই কিছু আধুনিক চেইনশপ থেকে কেনা যায়। অনেকক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এই ইন্ডীভিজুয়াল বিজনেস টু ব্যাংক আইটি কানেকশন ও নেটোয়ার্ক সেটাপ গড়ে উঠছে বিদেশি প্ল্যাটফর্মের ভায়া (যেমন ভিসা প্ল্যাটফর্ম) হয়ে। বিপরীতে বাংলদেশের একটি সিকিউরড আইটি এবং ভার্চুয়াল ইনফাস্ট্রাকচার থাকা দরকার যেখানে সাধারণ মুদি দোকান, চেইন শপ, ইউটিলিটি কোম্পানি থেকে থেকে শুরু করে সকল বিজনেস এবং সকল ব্যাংক কানেকন্টেড থাকবে (সরাসরি কিংবা ভার্যুয়ালি)।

৪ঘ। অনলাইন রেমিটেন্স গেইট ওয়ে গুলো কিংবা রেমিটেন্স আনয়নকারী এপস সার্ভিস গুলোর সাথে ন্যাশনাল ফান্ড ট্র্যান্সফার গেইট ওয়ে BEFTN’এর ইন্টারফেইস নাই। এমনকি আমাদের মোবাইল ব্যাংক ও ক্ল্যাসিক্যাল ব্যাংকগুলোর মধ্যেও পারস্পরিক ফান্ড ট্র্যান্সফার হচ্ছে না কেননা মোবাইল ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণকারী কোম্পানী গুলোর প্ল্যাটফর্ম (যেমন বিকাশ, রকেটের USSD গেইট'ওয়ে) BEFTN এ যুক্ত নয়। মোবাইল ব্যাংকিং গুলো শুধু তার মাদার কোম্পানির সাথে যুক্ত। (যেমন বিকাশ ব্র্যাক ব্যাংক, রকেটডাচ বাংলা)। এর বাইরে "ইন্ডিভিজুয়াল ব্যাংক টু বিজনেস"এর আদলে কিছু ক্ষেত্রে "ইন্ডিভিজুয়াল মোবাইল ব্যাংক টু বিজনেস" ইন্টারফেইস তৈরি হচ্ছে (যেমন বিকাশ ও রকেট দিয়ে কিছু কিছু দোকানে পে করা যায়)। আদালা আলাদা ইফোর্ট গুলো দীর্ঘমেয়াদী এন্ড টু এন্ড নেটোয়ার্কের বিপরীতে ইন্ডীভিজুয়াল মেশ নেটোয়ার্ক হিসেবে অবির্ভুত হচ্ছে যা সময় ও অর্থের অপচায়কে ত্বরান্বিতই করছে শুধু। আর ইন্টার ব্যাংকিং ফান্ড ট্র্যান্সফার সুবিধাহীনতায় জুম এর মত সার্ভিস গুলো সাধারণ একটি মোবাইল ব্যাংকিং (যেখানে রেমিটেন্স আসে) একাউন্টের চেয়েও সীমাবদ্ধতা নিয়ে জন্ম নিচ্ছে যার ডেস্টিনেশন ঝামেলা পুর্ণ ক্যাশ আউট।


এইসব কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃ ব্যাংক ট্রানজেকশনের সঠিক হার জানে না বরং এখনও এটা ব্যাংকের কাছ থেকে নেয়। আর আরো বড় সমস্যা হচ্ছে দেশে কি পরিমাণ পণ্য ও সেবা ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে তার কোন ধারণাই NBR এর নেই। (আসলে এই ধারণা আসার কোন ফেয়ার পে ট্রাঞ্জেকশন ও আর্থিক মনিটরিং এর স্বচ্চ কোন ইনফাস্ট্রাকচারই নেই, NBR শুধু প্যাসিভ ও ভুল ডেটার উপর অনুমান ও বহুমুখী নেগসিয়েশন নির্ভর রাজস্ব টার্গেট নিচ্ছে, ফলে যা নাগরিক ভ্যাট দিচ্ছেন তা সিংহ ভাগই চুরিতে যায়।)

একটি যুগোপযোগী ফাইনান্সিয়াল পেমেন্ট সিস্টেমের ধারণা সম্ভবত বাংলাদেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক তো বটেই বাংলাদেশ ব্যাংক ও রাজস্ব বিভাগের নীতিনির্ধারক ও ডিজাইনাদের কাছে এখনও পৌঁছেনি। ফলে ক্যাশ লেইস সোসাইটির নাম করে এদিক সেদিক ঢিল ছোড়াছুড়ি আর কিছু ভ্রমণ বিলাস হচ্ছে, আদতে বাংলাদেশের ফাইনানশিয়াল পেমেন্ট একটি টেকসই প্ল্যাটফর্ম পাচ্ছে না।

ফলে রপ্তানি আয় সহ রেমিটেন্স মানি প্রবাহ ভার্চুয়াল মানি হয়ে উঠতে পারছে না, ক্যাশ আউটেই এর সমাপ্তি হচ্ছে। বলতে গেলে এর এক্সপেন্ডিচার এন্ড নেই। আর যেহেতু ক্যাশই ডেসটিনেশন তাই হুন্ডী ও কার্ব মার্কেটই লোকের পছন্দ যেহেতু সেখানে ক্যাশ রেইট অধিক।

স্কিল্ড শ্রমিক রপ্তানি, রেমিটেন্সের টেকসই ব্যবস্থাপনা, সঠিক ফাইনান্সিয়াল পেমেন্টে চেইন ব্যবস্থাপনা এই সমূদয় ব্যবস্থাপনার এন্ড টু এন্ড ডোমেইন সমূহ বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, রাজস্ব বোর্ড এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনা সেন্সে আসুক।
বাংলাদেশ এগিয়ে যাক!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×