somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নৈতিকতার রূপান্তর!

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফরাসী বিপ্লবের হাত ধরে ইউরোপীয় রাষ্ট্রী গুলোর কাঠামো রাজা ও চার্চ ভিত্তিক ক্ষমতা ও আইনের দ্বিকেন্দ্রিক মডেল থেকে গণতান্ত্রিক মডেলে ট্রান্সফর্ম হয়। এই ট্রান্সফর্মেশনে ক্রিশ্চিয়ান এথিকস (নৈতিকতা) গুলোকে এডাপ্টেড করে আইনে রূপান্তরিত করা হয়। যেহেতু ধর্মীয় নৈতিকতা গুলো রাষ্ট্রীয় আইনে ইনক্লুসিভ করে ফেলা হয় তাই বস্তুবাদী রাষ্ট্র ও সমাজে ধর্মের চাহিদা আর অবশিষ্ট নেই বলে প্রচারণা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। কিন্তু দুটি শতাব্দী পেরিয়ে সেই সময়ের ক্রিশ্চিয়ান এথিকসের ফ্রেইমোয়ার্ক বর্তমানে বেশ রূপান্তরিত।

বস্তুবাদী সমাজের ও ব্যক্তির সকল ট্রেন্ডকে ও অনৈতিক চাহিদাকে বৈধতা দিতে দিতে কোড অফ ক্রিশ্চিয়ান এথিকসের বহু ধারা অবশিষ্ট নেই। শুধু রাষ্ট্রের অর্থ ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব আয় সংক্রান্ত নৈতিকতার বিধান গুলো টেকনোলজির কার্যকরিতায় বলিষ্ঠ প্রায়োগিক মডেলে রূপ পেয়েছে। অন্যদিকে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ পর্যায়ের নৈতিকতার সংজ্ঞা গুলো সব শিথিল হয়ে সেই সময়ের যাবতীয় অনৈতিকতা আজকে নৈতিকতা হিসেবে আইনে বৈধতা পেয়েছে। ফলে আজকের ইউরোপীয় সমাজে ক্রিসচিয়ানিটি অবদান হীন। বন্ধ চার্চের দালানের উপস্থিতি, অটো টাইমারে ঘন্টার ধ্বনি, সান্টা বা সিন্টারক্লাসের শিশু উৎসব, কার্নিভাল, কিছু বিয়ে অনুষ্ঠান, সৎকার ছাড়া ঈসায়ী ধর্মের কোন নৈতিক ও ব্যবহারিক আবেদন এই সমাজে নেই।

এটা অনস্বীকার্য যে, ফরাসী বিপ্লব পরবর্তি সময়ে ইউরোপে কল্যাণ রাষ্ট্রের চিন্তা ও চর্চায় ক্রিশ্চিয়ান এথিক্সের ব্যাপক প্রভাব ছিল যার ফলে নৈতিকতার অনেক কিছুই আইনে রূপান্তরিত হয়ে সমাজ সুরক্ষা দিয়েছে। পোষ্ট কলোনয়াল সময়েও আমরা দেখি কল্যাণ রাষ্ট্র গঠনের চর্চা অব্যহত ছিল ( যদিও এই চিন্তা ও চর্চার পরিধি রাষ্ট্রীয় সীমানার ভিতরে সীমাবদ্ধ ছিল)। বর্তমানে ২টি ট্রেন্ড বিশেষত উল্লেখ্য, ১। এথিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডেড আইন গুলো শিথিল হয়েছে ও হচ্ছে। ২। রাষ্ট্র আর্থিক ভাবে দুর্বল হবার সাথে সাথে ও নতুন নতুন বিষয়ে রাষ্ট্রের খরচের পরিসর বাড়ার সাথে সাথে আগের মানবিক বিবেচ্য কিংবা সোশাল সিকিউরিটি সংক্রান্ত এমনকি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের রাষ্ট্রীয় দিক থেকে এথিক্যাল বরাদ্দ গুলো সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে কল্যাণ রাষ্ট্রের চিন্তার ফাউন্ডেশন মৌলিক অবস্থান থেকে সরে গেছে।

বহু লেখক রাজনৈতিক ওয়েস্টার্ণ থটে চার্চের শেডো সবসময়ই থেকে যাবার কথা বলেছেন, মূলত তা কলোনিয়ালিজম প্রতিষ্ঠায় চার্চের ভুমিকা ও শাসক শ্রেণীর বহিঃ রাষ্ট্র কেন্দ্রিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসী মানসিকতার দৃষ্টিকোন থেকে। সেটা নৈতিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ইউরোপের অভ্যন্তরে ধর্মের ব্যবহারিক চর্চায় চার্চ তার ভূমিক হারিয়ে ফেলেছে। (যেমন বলা যায় প্যাক্টিসিং ক্রিশ্চিয়ান একেবারেই কমে গেছে, অধিকাংশ চার্চ বন্ধ হয়ে গেছে, ইউরোপে চার্চ গামী মানুষের চাইতে মসজিদ গামী মানুষের সংখ্যা এখন বেশি)। নতুন প্রজন্ম বাইবেলিক্যাল এথিক্স এর সাথে একেবারেই পরিচিত নয়। সমাজ ও পরিবারে চর্চা না থাকলে অবনতিশীল ক্রিশ্চিয়ান এথিক্স সামনের দিনে ঠিক কতটা ভুমিকা এই সমাজে রাখতে পারবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

বস্তুত অরিজিনাল কোড অফ ক্রিশ্চিয়ান এথিকস মানা বহু কস্ট সাধ্য ব্যাপার। তাই সমাজে চার্চের প্রভাব উঠে যাবার ফলে আইনে এডাপ্টেড ধারা গুলোর বাইরের (যা আবার শিথিল হয়েছে সময়ে সময়ে) ক্রিশ্চিয়ান এথিক্সের মানবিক ধারা গুলোর চর্চা হটে গেছে। চার্চ ধর্মে ধর্মে ও ধর্মেরই গ্রুপ গুলোতে সংঘাত জিইয়ে রেখেছিল বলে সাধারণ উপ্লভদ্ধি ছিল। কিন্তু এই বোধের উপরে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র যখন অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সংঘাত ও লুটপাট অব্যহত রেখেছে তখন বস্তুবাদী সমাজ ও নাগরিক তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় পায়নি। এইভাবে ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র ও ক্রিশ্চিয়ান বিশ্বে নৈতিকতা রূপান্তরের মধ্যে দিয়ে গেছে, যার বর্তমান সার সংক্ষেপ হল, ব্যক্তির চাহিদাই নৈতিকতা হোক সেটা আদি মানদন্ডে ঠিক বা বেঠিক।


অন্যদিকে মুসলিম সমাজের চিত্র ভিন্ন। মুসলিম সম্রাজ্য গুলোর পতন হবার পরে বিগত এক দুই ও তিন শতাব্দীতে (স্থান ভেদে) ভঙ্গুর কাঠামোর মুসলিম দেশগুলো বিদেশী শাসকে ও বিদেশী আইনে সরাসরি কিংবা আরোপিত দেশী শাসকে বিদেশী আইনে চালিত হয়েছে। তাই বর্তমানের রাষ্ট্রীয় আইনে ইসলামিক এথিক্সের উপস্থিতি সামান্য। অন্যদিকে এই কলোনিয়াল অঞ্চল গুলোর মিশ্র শাসন কাঠামো দুর্নিতি ও অব্যবস্থাপনায় ভরা বলে নাগরিক তার আর্থিক চর্চা সহ কোন বিষয়েই রাষ্ট্রকে বিশ্বাস করেনি। ফলে একদিকে আইনের উপস্থিতি না থাকায় সমাজে আর্থিক অপরাধ বেড়েছে অন্যদিকে সুবিধামত পরিসরে ব্যক্তি পর্যায়ে ইসলামিক এথিক্স মানার চর্চা চলেছে।

মুসলিমদের ইসলামিক এথিক্স এর বর্ণনায় ব্যক্তির উপর ও ব্যক্তির সম্পদে পিতা মাতা আত্মীয় প্রতিবেশি ও সমাজের এত এত অধিকার বর্তেছে যে, এখানে বস্তুবাদী জীবন পালনের কোনই সুযোগ নেই। পিতা মাতা, স্ত্রী সন্তান ভাই বোন পরিবার, আত্মীয় পরিজন, প্রতিবেশী, এতিম মিসকিন, দুস্থ, রোগী ইত্যাদি সবার হক, গরীবের হক, প্রাণীকুল ও পরিবশের হক, যাকাত সহ সমুদয় দায়িত্বকে সামনে রেখে ব্যক্তি মুসলিম যে কিনা একজন সত্যিকারের "আত্ম সমর্পণকারী" তার ভোগবাদী ও বস্তুবাদী হবার সুযোগ সীমিত। যেহেতু এগুলার অনেক কিছু নিয়ে রাষ্ট্র নাক গলায় না বা গলাতে পারে না তাই ব্যক্তি মুসলিম তার কম্ফোর্ট জোনে থেকেই কিংবা ঈমানী পরিসরে থেকেই পালন করে বা করে না কিংবা বিপরীত কিছু করে তার জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে দায়িত্ব সারে। একদিকে এই সহনীয় এথিক্যাল বাউন্ডারি অন্যদিকে রাষ্ট্রের নিজের নাজুক এথিক্যাল অবস্থা, শাসক ও প্রশাসকদের দুর্নীতি- এই দুয়ে মিলে অপরাধ সংস্কৃতিকে বিস্তৃত করছে।

অর্থাৎ কস্টকর ইসলামিক নৈতিকতা পালনে মুসলিমরা ব্যক্তি গত বোধে তাড়িত হয়ে যেখানে যতটুকু নূন্যতম পারা যায় ততটুকুই নিজের সুবিধামত করেছে, বাকিটুকুর (এমনকি পাপ, মহা পাপও) জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে দায়িত্ব সারছে। এই যুগপৎ ধারায় সমাজে ঘুষ, দুর্নিতি ও অপরাধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

অর্থাৎ বিশ্বের দেশে দেশে ব্যক্তি সমাজ রাষ্ট্র ভিন্ন ভিন্ন মডেলে অনৈতিকতার চর্চা জারি রেখেছে ভিন্ন ধারায় ভিন্ন রূপে। মানবকে মানবিক রাখতে সত্য ও নৈতিকতার যে চর্চা, চিন্তা ও বোধ জন্মেছিল পৃথিবীতে, তার অপ রূপান্তরের স্রোত ভিন্ন ভিন্ন ধারায় বিভক্ত হলেও তাদের তীব্রতা বড়ই তীক্ষ্ণ।

সমাজের সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহ্‌ পাক জ্ঞান বিবেক বুদ্ধি দূরদৃষ্টি ও প্রজ্ঞা দিয়ে কিছু মানুষ প্রেরন করেন প্রতিটি সমাজে, তাঁরা সেই সমাজ কে আলোকিত করেন। আমাদের সমাজে আমরা জ্ঞানী গুনী জ্ঞানহীন, শিক্ষিত অশিক্ষিত ও প্রপগতিশীল প্রতিক্রিয়াশীল শ্রেনী বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আল্লাহ্‌কে জঞ্জাল মুক্ত করে সমাজ আলোকিত করার পাল্টা দায়িত্ব দিয়ে নিজেরা যার যার সাধ্যমতো বেপোরোয়া দুর্নীতি, আর্থিক সামাজিক অপরাধ, গরীবের হক লূট, মেহনতি মানুষের অধিকার নষ্ট, আত্বীয়-প্রতিবেশি কে ঠকানো, প্রাণ ও পরিবেশ ধ্বংসের অবিরাম চেষ্টায় লিপ্ত। একদিকে মাত্রাতিরিক্ত সব অপরাধে জনজীবন বিপর্যস্ত, অন্যদিকে পরিবেশ ঘাতী এনার্জি কনভার্শন ও প্রাণ ঘাতী যুদ্ধে পৃথিবী মানব বাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৪০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×