বাংলাদেশর প্রতিটি জনপদে যেসব শহুরে ও আঞ্চলিক ভাষায় শিশুরা কথা বলা শিখে সেটাই প্রকৃত মাতৃভাষা। এটা যশোর নদীয়ার প্রকৃত প্রমীত বাংলা হতে পারে, শুহুরে ভাষা হতে পারে কিংবা আঞ্চলিক ডায়ালেকটও হতে পারে। হতে পারে আমাদের উপজাতীয় ভাষাও।
পুস্তকের ভাষা প্রমিত বাংলা। কিন্তু বাধ্যবাধক ভাবে এটা বিস্তৃত নাগরিকের এবং নবাগত শিশুর মাতৃভাষা নয়! হ্যাঁ বিশ্বের সব দেশেই সব অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য।
ভাষা চলমান নদীসম যা স্থান ও কাল অতিক্রম করে রুপান্তরিত হয়। এই রূপান্তরকে জানা ও বুঝার উপলভদ্ধিতে গভীরতা চাই। তবেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন অর্থবহ হতে পারে।
বাংলার ভাষা শহীদদের আত্মদান মাতৃ ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবীতে (মূলত অর্থনৈতিক ও কর্মসংস্থান জনিত, সেই সাথে জাতিগত সম্মানের ব্যাপারও ছিল)। এর মানে এই নয় যে প্রমীত বাংলাকে স্টাব্লিশ করতে গিয়ে আঞ্চলিক ভাষা এবং উপজাতীয় ভাষা গুলো বিস্রিতি হয়ে যাবে।
অতি উল্লেখ্য ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর "বাংলা ভাষার আঞ্চলিক ভাষার অভিধান" এর পর দেশের আঞ্চলিক ভাষার ব্যকরণ তৈরি, শব্দ ও প্রবাদ গ্রান্থায়নের কাজ এগুয়নি। এটা একটা জাতিগত হীনতা। এই হীনতার মধ্যেই হারিয়ে গেছে সিলেটি বর্ণমালা, হারিয়ে গেছে সাঁওতালি বর্ণমালা (হতে পারে চাকমা মারমা মুরং হাজং দেরও, লিখক উপজাতীয় ভাষা বিষয়ে এক্সপার্ট নন)।
আঞ্চলিক ভাষারও দুটি রূপ থাকে, প্রতিটি কথ্য রুপের সাথে সাথে রয়েছে আঞ্চলিক ভাষার একটি সাধু রূপ। বড্ড অবহেলায় এগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে, প্রমাণ হয়ে আর্কাইভড হয়ে থাকবে শুধু কিছু আঞ্চলিক গান। অন্যদিকে অতিমাত্রায় কথ্য স্ল্যাং এর প্রোমোশনে শহুরে এবং আঞ্চলিক চলিত ভাষা গুলো অতিমাত্রায় কদর্য রূপ নিতে বসেছে।
আঞ্চলিক ভাষার মুক্তো গুলো প্রমিত বাংলার শাখা প্রশাখার মত, এই মুক্তো গুলো হারিয়ে গেলে বাংলার দার্শনিক আবেদন তো বটেই, বরং ভাষা তত্ত্ব এমনকি এই অঞ্চলের মানুষের জীবন, আচার,অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এবং প্রাকৃতিক জ্ঞান- এই সমুদয় জ্ঞান ব্যবস্থাপনা হারিয়ে যাবে (আসলে অবহেলায় যেতে বসেছে)। ভাষার শব্দ ও প্রবাদ গুলো কিভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনে ট্রান্সফর্ম হয়েছিল তা না জানলে জাতি গত অভ্যুদয়ের অজানা দিক গুলো উন্মোচনের পথ বন্ধ হয়ে পড়বে। ফলে অঞ্চলিক ভাষা যত বেশি হারাবে তত বেশি আদতে মূল বাংলাকেই তা কদর্য ও শাখাহীন করবে।
ভাষা শহীদদের আত্মাহুতির তাতপর্য এটাই যে, আমরা বাংলার বিকাশ ও উতকর্ষে কার্যকর নিন্ম থেকে উচ্চ শিক্ষার স্তর সাজাবো, বাংলায় উচ্চ শিক্ষা ও গবেষাণার দ্বার উন্মোচিত করবো, বাংলায় জ্ঞান রিপ্রডিউস করবো এবং সেই সাথে আঞ্চলিক ও উপজাতীয় ভাষা রক্ষার উদ্যোগ নিব। উদ্যোগ নিব শিশুকে মাতৃভাষায় শিক্ষা দানের সুন্দর ও সহজবোধ্য কাঠামো তৈরি করবো।
(পুনশ্চঃ ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। আল্লাহ্ তাঁদের আত্মদানকে মহিমান্বিত করুণ। আমীন! )
দুনিয়ার সব জনপদের সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভাষা রক্ষা পাক। বৃহৎ ভাষার রাজনৈতিক-অর্থনীতি তাড়িত ভাষা ভিত্তিক সাংস্কৃতিক আগ্রাসন কাটিয়ে মায়ের ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হোক দিকে দিকে, এই কমনা করি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:৪২