বিজ্ঞান ব্যবসা ও কলায় উচ্চ শিক্ষা অতি দ্রুত নতুন নতুন শাখায় বিস্তৃত হবার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাসের প্রতিটি ডোমেইনেই নতুন নতুন কোর্স কন্টেন্টের অতিরিক্ত পাঠের চাপ বাড়ছে, ফলে বিশ্বিবিদ্যালয়কে সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট তৈরিতে বেশি থেকে বেশি সময় দিয়ে হাবি জাবি সাবজেক্টের বোঝা সরিয়ে ফলতে হবে। আমাদের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক গণিত ও বিজ্ঞান সিলেবাস আন্তর্জাতিক এবং ভারতীয় উভয় মানেই নিন্মমানের। এমতাবস্থায় নবম দশম একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে অপ্রয়োজনীয় বিষয়াদি দিয়ে বোঝাই না করে সেখানে প্রকৃত লাইফ স্কিল বেইজ শিক্ষা নিয়ে আসার তাগাদা রয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে যেসব মৌলিক ফাউণ্ডেশন কোর্স পড়ানো হয় (যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং এ্র গণিত পদার্থ রসায়ন ইত্যাদির নিন্ম পর্যায় গুলো) সেগুলোকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে আনার প্রয়োজন পড়েছে।
এখানে দুটি মৌলিক বিষয়ের সেটেলমেন্ট এবং কোর্স কনটেন্ট ডেফিনিশন করা জরুরিঃ
১। যেহতু দ্বাদশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ১৮ বছর তাই এরই মধ্যে শিক্ষার্থীকে এমন শিক্ষা দেয়া চাই যাতে সে এর বেশি একাডেমিক লেখা পড়া না করেও সেমি স্কিল্ড কর্মজীবনে প্রবেশ করতে পারে। অথবা এই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার ভিত্তিতেই সেলফ লার্নিং, ওয়ার্ক ওরিয়েন্টেড লার্নিং কিংবা অনলাইন ও সার্টিফিকেশন বেইজড লার্নিংকে নিজ নিজ ইন্টারেস্টে শিক্ষার্থী নিজেই এগিয়ে নিতে পারেন। সুতরাং নবম দশম একাদশ ও দ্বাদশে কে কোন সাবজেক্ট পড়বে তা শুধু অভিভাবকের ইচ্ছার উপর ছেড়ে না দিয়ে এমনভাবে নির্ধারণ করা যাই যেখানে ছাত্র ছাত্রীর বেসিক ইন্সটিঙ্কট (মেধা ও ঝোঁক), রেজাল্ট, ভাষা গত দক্ষতা এবং জব মার্কেট চাহিদা প্রাধন্য পাবে। অর্থাৎ ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং এর যে চ্যাপ্টার বাংলাদেশে উচ্চ মাধ্যমিকের পরে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দুটি বর্ষ শেষ হবার পর (যখন মেজর ডিসাইড করা হয়) হচ্ছে তাকে আসলে নবম শ্রেনীতেই নিয়ে আসতে হবে। এতে করে ছাত্র ছাত্রীর উপর অপ্রয়োজনীয় বিষয়ের চাপ কমবে এবং নির্দিস্ট বিষয়ের উপর ফোকাস বাড়িয়ে শিক্ষার মানকে উচ্চ করা যাবে। আর যেহেতু স্কিল্ড জব মার্কেটও স্থিতিশীল নয়, তাই মৌলিক শিক্ষার (যেমন গণিত ও বিজ্ঞানের) ফাউণ্ডেশন কোর্সকে ক্রমাগত এনহান্স করে কর্মসংস্থান উপযোগী শিক্ষার ডায়নামিক স্ট্রাকচার তৈরি জরুরি। ভারত ও চায়নার শিক্ষার স্তর গুলো আসলে তাই করে যাচ্ছে।
২। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার ফাউণ্ডেশনের আলোকে মধ্যামিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার কোর্স কনটেন্ট সাজানোর মৌলিক প্রয়োজন।
আজকের শহুরে (এমনকি কিছু গ্রামীণও) বাচ্চাদের স্কুলে গিয়ে বর্ণমালা সহ বেশি কিছু বিষয়াদি শিখা লাগছে না যা আমাদের সময়ে দরকারি ছিল, টেকনোলজির কারণে বাচ্চাদের ন্যাচারাল লার্নিং কার্ভ ও লার্ণিং সেন্স এমনিতেই এত শার্প যে, বিদ্যালয় সিলেবাস থেকে অপ্রয়োজনীয় বিষয়াদি সরানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। অন্যথায় ধীরে ধীরে বিদ্যালয়কে শিশু অপ্রয়োজনীয় ভাবতে বাধ্য হবে। অর্থাৎ নিন্ম থেকে উচ্চ, সবা স্তরেই শিক্ষার কনটেন্ট রিচ এন্ড স্লিম করার একটা স্বতঃস্ফুর্ত চাহিদা রয়েছে, এটি একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, যাকে উপলভধিতে আনা জরুরি।
এই দুটি মৌলিক বিষয়ের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ গত বিষয় গুলো উচ্চ শিক্ষার কারিকুলামে সংযুক্ত করার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে-
৩। বাংলাদেশের ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স গুলোতে হিউম্যানিটিজ সাবজেক্ট হিসেবে ডীপ লেভেল ইকোনমিক্স পড়ানোর তাগাদা কিছুটা কম। ফলে দেশের যে কোন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফাস্ট্রাকচারাল, ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইমপ্লিমেন্টেশন কিভাবে নাগরিক জীবনের অর্থনৈতিক ভ্যারিয়েবলস, কৃষি খাদ্য প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট তৈরি করছে তার কোন স্ট্যাডী হয় না। যে কোন ইঞ্জিনিয়ারিং ইমপ্লিমেন্টেশনে উচ্চ মান পরিবেশ গত সমীক্ষার তাগাদা এবং চর্চাও এখানে বিরল। ফলে উন্নয়ন প্রকল্প বাংলাদেশে ব্যাপক ভাবে নন টেকসই হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
৪। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কিভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের এলিমেন্ট গুলোকে নেগেটিভ্লি ইমপ্যাক্ট করছে তার স্ট্যাডিও উচ্চ শিক্ষায় সংযুক্ত করার দরকার পড়েছে। যাবতীয় ডোমেইনে সেন্স অফ গ্লোবাল এন্ড রিজিওনাল সাস্টেইনেবিলিটি ছাড়া আগামীর উচ্চ শিক্ষা একদিকে অসম্পূর্ণ, অন্যদিকে বিপজ্জনক।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৮