১৯৯১ এর পরে শিক্ষা উপবৃত্তি চালু হলে দেশের প্রাথমিক শিক্ষা এবং নারী শিক্ষা বিশেষ গতি লাভ করে। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ছেলেদের জন্য অষ্টম এবং মেয়েদের জন্য দ্বাদশ পর্যন্ত উপবৃত্তি বর্ধিত করা হয়। কিন্তু বিগত ১ দশকে শিক্ষা সম্প্রসারণে নতুন কোন প্রণোদনা নেই। উল্টো আছে ফাঁস চর্চাকে প্রতিষ্ঠিত করে শিক্ষা হীনতার কূটচাল।
ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে শিক্ষা উপবৃত্তি অন্তত দ্বাদশ পর্যন্ত বাধ্যতামুলক করুণ। শিক্ষা উপবৃত্তির সাথে সাথে সকল পাবলিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফি মৌকুফ করতে হবে। নাগরিকের শিক্ষার সাধারণ স্তর নিশ্চিত করতে সব দায়িত্ব এবং খরচ সরকারকে বহন করতে হবে যে কোন ধরণের এক্সকিউজ ছাড়া। একই সাথে বছরে অন্তত একটি স্কুল ড্রেস, এক জোড়া জুতা এবং ১টি স্কুল ব্যাগ দিতে হবে।
রাষ্ট্র হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক বেইল আউট দিয়ে ঋণ জালিয়াতির নামে কৌশলে পলিটিক্যালি মটিভেটেড বাজেট লুটপাট অব্যহত রাখে অথচ উন্নত শিক্ষা ও মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থাপনা বরাদ্দের ব্যাপার আসলে আর্থিক অজুহাত দেখিয়ে জনস্বার্থ্য সংশ্লিষ্ট খরচ থেকে দূরে থাকে। এই দুর্বিত্তপনার অবসান চাই। শিক্ষার সাথে প্রযুক্তি মিলিয়ে দেশের শিক্ষা বাজেট বেশি দেখানোর যে দুর্বিত্তপণা তাকে বন্ধ করতে হবে। রাষ্ট্র নিজেকে মধ্যবিত্ত হয়ে উঠার রাজনৈতিক দম্ভ অহংকার দেখায়, তা আচরণে না হয়ে নাগরিক সেবায় চর্চিত ও প্রতিফলিত হোক।
এখনও দেশে স্কুল ড্রেসের অভাবে বাচ্ছারা স্কুলে যেতে অনীহা দেখায়, অবিভাবকদের ড্রেস বানিয়ে দিবার সাধ্য হয়না। এখনও রেজিস্ট্রেশন ফির অভাবে ছাত্র ছাত্রীদের পাবলিক পরীক্ষা দেয়া মুশকিল হয়, এর জন্য ধার দেনা করতে হয়। এমনকি পরিবার গুলো উচ্চ সুদে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে পাবলিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফি জোগায়। এর বাইরে রেজিস্ট্রেশন ফির নাম করে স্কুল গুলো বর্ধিত ফি নেয়, এই ফি সম্পূর্ণ রূপে তুলে দেয়া হোক।
নির্দিষ্ট পরিমান ভূমি নাই এইধরনের কৃষক, সম্পূর্ণ ভূমি হীন কৃষক, বস্তি বাসী, রিক্সা অয়ালা, ভাসমান শ্রমিক, ভুমি হীন উপজাতি ইত্যাদি এবং বিশেষ ভাবে গার্মেন্টস পরিবারের জন্য কৃষি ও শিল্পে শিশু শ্রমের ইকুইভালেন্ট মানে উপবৃত্তি সহ উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা উপকরন দেয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। সেই সাথে এই ধরণের গরীব শ্রমজীবি ও কৃষি পরিবার যাতে বাচ্ছাদের স্কুলে পাঠায় এবং সন্তানের শিক্ষার প্রতি মনোযোগী হয় তার জন্য নিয়মিত কাউন্সেলিং এর ব্যবস্থাও তৈরি করতে হবে। আমাদের সমাজ শিক্ষায় যথেষ্ট পশ্চাৎপদ, এর উত্তোরণ জরুরী।
ফ্রি প্রাথমিক, ফ্রি মাধ্যমিক, ফ্রি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার ব্যবস্থা, সেই সাথে ফ্রি শিক্ষা উপকরনের বন্দোবস্ত করতে হবে। শিক্ষা উপকরন হিসেবে বই, নির্দিষ্ট সংখ্যক খাতা-কলম-পেন্সিল, বছরে একটি স্কুল ব্যাগ , একটি স্কুল ইউনিফর্ম এবং একজোড়া জুতা প্রদানকে সুনির্দিষ্ট করতে হবে। ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর মধ্যে প্রতিটি শিক্ষার্থী কে একটি জ্যামিতি বক্স ফ্রি দেয়া যেতে পারে। এটি ক্লাস সিক্স এ উঠলেই ফ্রি বই বিতরনের সময় দেয়া যেতে পারে।
ফ্রি শিক্ষা উপকরণ শিক্ষার্থী দের বাড়তি অনুপ্রেরণা দিবে, শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থী ও শ্রমঘন পরিবারগুলোর বাড়তি মটিভেশন আনবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:১৫