somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

কোটা প্রথায় কয়েকটা অসামাঞ্জস্য

২৭ শে মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১। ধরুন একটা ছেলে বা মেয়ে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপজাতীয় কোটায় চান্স পেল (যেমন বুয়েটে উপজাতীয় কোটা আছে)। এই একই ছেলে বা মেয়ে গ্র্যাজুয়েট বা ইঞ্জিনিয়ার হয়ে আবারো সিভিল সার্ভিসে ঢুকতে কোটার সুবিধা পাবে। তাইলে ব্যাপারটা কি দাঁড়ালো! দুই বার অন্য যোগ্য কাউকে মেধা ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় ঠকানো হল, অর্থাৎ ২ বার রাষ্ট্র কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট তৈরি করলো,অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীর অনুকুলে!

অথচ হবার ছিল এরকম- ৫ থেকে ১০ বছর বিশেষ বিশেষ উপজাতীয় অথবা অনগ্রসর আঞ্চলিক (জেলা) কোটা থাকবে (এই কোটা শুধু মাত্র ঐ এলাকায় স্থায়ী ভাবে বসবাস করাদের জন্য, রাজধানী বা অন্য শহরে বসবাসকারীর জন্য নয়), এই সময়ের মধ্যে উপজাতীয় অধ্যুষিত অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষার অবকাঠামো এবং সেই ভাবে কর্মসংস্থান অবকাঠামো (প্রণোদনা দিয়ে বেসরকারি বিজনেস সেখানে যাবে, সরকার দুরদর্শী ইনফাস্ট্রাকচার মেনেজমেন্ট করবে)। তারপর কোটা উঠে যাবে।

২। ব্যাপক প্রতিযোগীতার এই সময়ে কোটা ধারী কোন একজন ছাত্র ছাত্রী জীবনে শুধু একবার কোটা সুবিধা নিয়ে রাষ্ট্রীয় অনুকুল্য নিতে পারার কথা। কিন্তু সেটা বাংলাদেশে আনলিমিটেড!

১৭ থেক ২০ লক্ষ ছেলে মেয়ে একটি ব্যাচে থাকে, আপনি একই ছেলে বা মেয়েকে মুক্তি কোটায় স্কুলে ঢুকালেন, আবার কলেজে, আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার চাকুরিতে। বিশাল বিশাল সব আবদার। বাকিরা শুধুই মুড়ি খেয়ে যাচ্ছে!

অথচ এই একজনকে বার বার কোটা দিবার মানে হচ্ছে তার আসলে সত্যিকারের কোন ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে না বরং তাকে বার বার ঠেলে বা তুলে দিতে হচ্ছে অন্যদের ঠিকিয়ে। সুতরাং এই পুরো সিস্টেম টেকসই না।

৩। শহরে বসবাসকারী এবং শহুরে ভোগ ও জীবনে অভ্যস্ত ছেলে মেয়েরা জেলা কোটার সুবিধা ভোগ করেন, অথচ পিছিয়ে পড়া পিতৃ ভিটার অঞ্চলে কখনই বড় হননি, কিংবা একেবারেই সংযোগ নেই। অথচ জেলা কোটা ভোগের দাবিদার শুধু ঐ বিশেষ অঞ্চলে স্থায়ী ভাবে বসবাসকারী ও শিক্ষা গ্রহণ কারীরাই, যারা রাষ্ট্রের সুবিধা গুলো থেকে বঞ্চিত হয়েছে!

৪। ১৯৯২ এর পর শিক্ষায় মেয়েদের উপবৃত্তি চালু হবার পরের দুই দশকে শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ এবং মান উভয়েই বেড়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলুতে দেখা যাচ্ছে পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন, পাশের হার এবং মোট জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে মেয়েরা এগিয়ে। এমতাবস্থায় শিক্ষা উপবৃত্তিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, শিক্ষা উপকরণ ফ্রি দেয়া (স্কুল ও কলেজ ড্রেস, ব্যাগ, জ্যামিতি বক্স,জুতা, ঘড়ি ইত্যাদি), মেয়েদের জন্য স্কুল ও কলেজে ফেসিলিটি (অন্তত স্বাস্থ্য ও সেনিটেশন) বৃদ্ধি করা, ট্রান্সপোর্টেশন ফেসিলিটি যেমন সাইকেল লোন দেয়া, পাবলিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন ফ্রি করা, নারী শিক্ষক বাড়ানো, শিক্ষা মান ও শিক্ষক মান বাড়ানো, গরীব পরিবারে কৃষি বা গার্মেন্টস শ্রমের কাছাকাছি হারে আর্থিক শিক্ষা প্রণোদনা দিয়ে নারী শিক্ষা আরো এগিয়ে নেয়া দরকার।

এই সব বেসিক ফেসিলিটি ও ইনফাস্ট্রাকচারে মনোযোগ না দিয়ে মেয়েদের কোটা রাখার অদুরদর্শী কাজ হচ্ছে।

আরো একটি অসামাঞ্জস্যের উদাহরণ হোল- মুক্তি কোটা নিজেই-

৫। কোটা সুবিধায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধার চেয়ে জীবিত মুক্তিযোদ্ধার সর্বেসর্বা বিচরণ। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা যেহেতু তদবির করতে বেঁচে নেই তাই উনাদার পরিবারের সদস্যদের উপস্তিতি প্রায় নেই বললেই চলে মুক্তি কোটায়। অন্যদিক জীবিত বৈধ ও অবৈধ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একক বিচরণ লিস্ট, এই লিস্ট এ অবৈধ রা দিন দিন ভারি হচ্ছে, তাদের তদবির দিন দিন কলুষিত করছে মুক্তি কোটার লিস্ট। ফলে মুক্তি কোটার চুড়ান্ত অপপ্রয়োগ হচ্ছে।

৬। সব চাকুরীতে কোটা থাকার যৌক্তিকতা নেই। বুদ্ধিবৃত্তিক, শিক্ষা ও গবেষণা এবং পরিকল্পনা খাত গুলোতে কোন ধরণের কোটা থাকতে পারে না। কোটায় বা বাঁকা পথে চাকুরী নিয়ে বা কম শিক্ষার সুযোগ নিয়ে কেউ হয়তো দেশে প্রশাসনে সাধারণ বা নিন্ম বুদ্ধিবৃত্তিক গতানুগতিক সার্ভিস দিয়ে যেতে পারবে কিন্তু বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে বহু সমস্যায় জর্জরিত ও জটিল হতে থাকা সম্পদ ব্যবস্থাপনা, কৌশলগত পরিকল্পনা, ডিজাইন ও ইঞ্জিনিয়ারিং বাস্তবায়ন ইত্যাদি খাতে এবং দেশের গন্ডির বাইরের ইন্টেলেকচুয়াল বিষয়াদিতে অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের কোটা প্রোডাক্ট নিয়ে বাংলাদেশ কখনই প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না। এই ধরনের নিন্মমান মানবসম্পদ (রিসোর্স) দেশকে সম্মানজনক ভাবে রিপ্রেজেন্ট করতেও পারে না।


৭। দেশের পশ্চাত্পদ লোকালয় গুলোকে, প্রাকৃতিক কারণে পিছিয়ে পড়া নাগরিককে সুরক্ষা দিতে সেখানে কিছু টাইম ডিফাইন্ড অতি সীমিত কোটা থাকতে পারে। এ সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রকে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে অর্থনীতি সচল করার এবং কর্মসংস্থান তৈরির স্থায়ী কাঠামো তৈরি করতে হবে। বোধ ও বিবেকসম্পন্ন একটি স্বাধীন সমাজে অনির্দিষ্টকালের জন্য মেধা ও যোগ্যতার স্বীকৃতির বিপরীতে মেধাহীন পঙ্গুত্ব তৈরির ‘কোটা ব্যবস্থা’ নামক প্রণোদনা চলতে দেয়া যায় না। দেশটি তার স্বাধীনতার ৪৮তম বছরে পদার্পণ করেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৭
৬টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×