আমি অন্যের আন্দোলনে সমর্থন দিবার কথা বলছি না, বরং তাদের নিজেদের দলীয়
আন্দোলনের অনুপস্থিতি নিয়েই কথা বলছি।
১। বাংলাদেশে এত এত মাদ্রাসা মসজিদ থাকার পরেও ইসলামী দলগুলো মনে করে, জনস্বার্থ্য ইস্যু নিয়ে নাগরিকের কাছে যাওয়ার দরকার নাই, ভোটের সময় ইসলামের দোহাই দিয়ে ভোট চাইলেই কাজ হবে। ফলে ১০০ বছরের রাজনীতি শেষে এদের সম্মিলিত অর্জন সর্বোচ্চ ৫% ভোট কিংবা জনসমর্থন।
২। বাংলাদেশের বাম দল গুলোর কেউ কেউ বেশ ভালো ভাল কিছু কথা বলে। কিন্তু যখন আন্দোলন সগোত্রীয় "বড় ভাই" আওয়ামীলীগের জন্য বিব্রতকর অবস্থা দাঁড়া করার উপলক্ষ তৈরি করে তখন এরা "সমর্থন" দিয়ে দায়িত্ব সারে এবং খোঁয়াড়ে ঢুখে উচ্ছিষ্ট ভোগী দায়িত্ব সারে। ফলে শত বছর রাজনীতি করে এরা এখনও বুর্জুয়া দলের সমর্থন ছাড়া রাজনীতিতে জামানত হারায়।
"নাগরিক জীবন সংশ্লিষ্টতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনায় নাগরিকের আগাম অংশগ্রহণ" যে একটি অংশগ্রহণ মূলক কিংবা সাম্যবাদী রাজনীতির একটি মৌলিক ও কৌশলগত স্তর, নাগরিক বুঝা পড়া ও নাগরিক যোগাযোগের দিক থেকে তাকে অগ্রায্য করে বাংলাদেশের ডান ও বাম দলগুলো দিন দিন রাজনৈতিক ভাবে শুধু প্রান্তিকই হয়েছে।
৩। দেশের প্রায় সবগুলো সরকারি ব্যাংক সহ প্রায় ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক লূট হয়ে গেছে। শেয়ার বাজারে মহা লুট করে মহা বিপর্যয় তৈরি করা হয়েছে। হাজার কোটি করে লুট নিত্য চিত্র হয়ে উঠছে। প্রকল্প গুলোর ব্যয় হাজার কোটি করে বাড়ছে।
চার বছরে ৮ বার গ্যাস জ্বালানী বিদ্যুৎ এর দাম বেড়েছে। নগরীতে জ্যাম কমার কোন লক্ষণ নেই, ৬০ লাখ শিক্ষিত লোক বেকার।
দেশের সবগুলো আর্থিক, অবকাঠামো এবং নিরাপত্তা খাতে ভারত ও চায়নার একচেটিয়া ঔপ্নেবেশিক এস্টাব্লিশ্মেন্ট কায়েম হয়েছে, দেশের মানুষের ঋণের বোঝা বাড়ছে। সাধারণের জীবন আর্থিক টানাটানি ও প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনায় ক্লান্ত শ্রান্ত।
অথচ ক্ষমতা কেন্দ্রিক নির্বাচনী দাবী ও নেত্রী মুক্তির বাইরে বিএনপি'র কোন জনস্বার্থ্য সংশ্লিষ্ট কোন এজেন্ডা নেই। ব্যাপারটা এমন যেন রাজনীতিতে কেউ জেলে যায়নি, ব্যাপারটা এমন যেন দমনের রাজনীতি আর কেউ করেনি, নিজের সহ! যোগ্যদের দল থেকে বের করে দিয়ে, চাপ প্রয়োগে নীরব করে দিয়ে অদুরদর্শী ও মেধাহীন কিছু লোকে প্যাড সর্বস্ব কিছু দলের সাথে রাজনীতি করে বিএনপি জনস্বার্থ্য সংশ্লিষ্ট রাজনীতির কৌশল ভুলে গেছে।
বাংলাদেশে সম্পদ ব্যবস্থাপনার বোধহীন, অদুরদর্শী, নন টেকসই, মেধা ও দায়িত্বহীন মেরুকরণের রাজনীতির চূড়ান্ত পতন হোক। এই নন টেকসই রাজনীতি দেশপ্রেমিক বহু তরুণকে ভ্রান্ত করছে, আশা ও অর্জনহীন মিথ্যা অপেক্ষায় রেখে আন প্রডাক্টিভ করছে বছরের পর বছর। এই তরুণদের উপলভদ্ধিতে এই সত্য আনা উচিৎ যে, "একটি ব্যাপক, গভীর ও দীর্ঘ নাগরিক স্বার্থ্য সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক আন্দলনের অনুপস্থিতিতে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে দায়বদ্ধ রাজনীতি উপহার দেয়া অসম্ভব, তার সমাজ ও রাজনীতিকে বুঝার মেধা অপরিণতই থাকে"। ফলে সমাজ স্বার্থ্যহীন কর্মীসূচী হীন দল ক্ষমতায় যেনতেন ভাবে দৈবক্রমে চলে আসলেই যে রাষ্ট্রের লুটেরা, বেইনসাফি ফ্যাসিবাদী আচরণের অবসান হবে না। বরং সমাজ বোঝা পড়ার জমিন হীনতায় গড়ে উঠবে আরেক দল লুটেরা নেতৃত্ব, বিকাশ হবে নব ধারায় অত্যাচারী এস্টাব্লিশ্মেন্টের!
দেশে নৈতিকতা, দায়বদ্ধহীন অকেজো রাজনীতির চূড়ান্ত বিলোপ হোক। ধ্বংসস্তূপ থেকে জেগে উঠুক জনস্বার্থ ভিত্তিক নব রাজনীতির নতুন সূর্য।
যেসব দল নিজেরা "রাজনৈতিক ম্যাচিউরিটি" অর্জন করতে পারেনি অর্ধ শতকের রাজনীতিতে, একটি "প্রডাক্টিভ ও দায়িত্ববান নাগরিক" সমাজ গড়তে তারা ব্যর্থ হবে এটা ধর্তব্য। সুতরাং ইনসাফ কায়েমের জন্য এদের উপর ভরসা না করে নতুন শুরুর ডাক চাই।
আমরা এমন একটি নতুন ধারার রাজনীতি চাই যেখানে, রাজনীতি বে-ইনসাফ ও রাষ্ট্র লুটের দীর্ঘ পথ পরিক্রমা শেষে অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্য গুলোকে আন্দোলন হিসেবে উঠিয়ে আনার জন্য সমাজের দিকে চেয়ে থাকবে না। বরং রাজনীতি নিজেই সমাজের সব অব্যবস্থাপনা ও বৈষম্য গুলোর ফ্যাক্ট ফাইণ্ড করে নিজেরাই সমাজের সামনে তুলে আনার যোগ্য হবে, সমাজকে আলো দেখাবে।
প্রিয় তরুণ, সেই রাজনীতির জন্য নিজেদের প্রস্তুত করো!
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:০৮