somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এক নিরুদ্দেশ পথিক
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব,ইইই প্রকৌশলী। মতিঝিল আইডিয়াল, ঢাকা কলেজ, বুয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র।টেলিকমিউনিকেশন এক্সপার্ট। Sustainable development activist, writer of technology and infrastructural aspects of socio economy.

মশা ব্যাঙ ও বৃষ্টির কথা!

০৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘটনাক্রমে মনে পড়া! সম্ভবত স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর গণিত বইয়ের ঐকিক নিয়ম অথবা গড় বিষয়ক অধ্যায়ে একটা প্রশ্নে উল্লেখ ছিল ১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাঙ্গের ঠ্যাং বিক্রি করে কত কোটি আয় করেছে! এত বছর পর মনে পড়লো অংকটার কথা! স্মৃতিতে ভেসে উঠে সন্ধ্যার পরে বা ভোরে ফাঁদ দিয়ে ব্যাঙ ধরার দৃশ্য গুলো, যা আমি গ্রামে দেখেছি। ব্যাঙ ধরার অতি সহজ কৈশল্টা খুব মজার বিষয় ছিল তখন! অথচ এটা একটা অপরিকল্পিত নন টেকসই কাজ ছিল। ব্যাঙ বাণিজ্যিক ভাবে চাষ করে বিক্রি করলে সমস্যা ছিল না, সেটা করলেই ভাল হত। তা না করে প্রাকৃতিক ভাবে বেঁচে থাকা ব্যাঙ নাই করা হয়েছে।

১। ব্যাঙের ঠ্যাং বিক্রি করে পর্যাপ্ত ব্যাঙ মারা শেষে প্রাকৃতিক খাদ্য চক্র থেকে একটি স্তর নষ্ট করা হয়েছে। রাসায়নিক পতঙ্গ ও বালাই নাশকে উপকারী পতঙ্গ সহ নির্বিচারে নষ্ট হয়েছে প্রাকৃতিক খাদ্য চক্রের ভারসাম্য। মাছ চাষের বাণিজ্যিক মডেলে পানির নিন্ম মধ্য ও উচ্চ স্তরের খাদ্য চক্র ভিত্তিক প্রাকৃতিক চাষ হারিয়েছে। পাতলা পলিথিনকে জেলি ফিস ভেবে খেয়ে মরেছে প্রায় শত ভাগ প্রাকৃতিক কচ্চপ। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পানি দুষণ ও রাসায়নিক চাষের মডেলের বহু স্তরের ইফেকটে বহু পতঙ্গ ভোজী পাখিও মারা পড়েছে। এভাবে ভিন্ন ভিন্ন কারণে প্রাকৃতিক খাদ্য চক্রে ছেদ পড়েছে।

২। ঢাকার লেইক গুলো বিচ্ছিন্ন, জলপ্রবাহ নেই। সুয়ারেজ ও ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্য মিলে লেইকের পানি আবর্জনা তুল্য, দুর্ঘন্ধময়। অপ্রবাহমান স্থীর ময়লা পানি মশক প্রজননের জন্য অতি উপযুক্ত!

৩। লেইকের নোংরা ও বিষাক্ত পানিতে মাছ নেই, ফলে মশার ডিম খাওয়ার কেউ নেই, না ব্যাঙ, না মাছ!

৪। ঢাকার এখনও অদখলকৃত খাল ও পুকুর গুলো ময়লার ভাগাড়, মশক প্রজননের জন্য অতি উপযুক্ত!

৫। এখনও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ময়লা সংগ্রহ করা হয়, ডাম্পিং উন্মুক্ত যা মশক প্রজননের জন্য অতি উপযুক্ত!

৬। বাড়ি গুলোর তিন দিক উচ্চ ওয়ালে বেষ্টিত, মাঝের ফাঁকে সুয়ারেজের লাইন, স্যাঁতসেঁতে। অল্প কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া দুই বাড়ির দেয়াল বেষ্টিত এই ফাঁকা স্থান আবর্জনার স্তূপে ঢাকা থাকে। মশক প্রজননের জন্য অতি উপযুক্ত!

৭। রাজধানীর রাস্তার ড্রেন যেখানে সেখানে ভাঙা ও উন্মুক্ত। সেখানে ময়লা জমে তৈরি হয় নিয়মিত জলাবদ্ধতা যা মশার প্রজনন ক্ষেত্র!

৮। নাগরিক সুযোগ পেলেই চিপা চাপা থেকে শুরু করে যেখানে সেখানে সে কোন ধরণের ময়লা ফেলে। আমাদের দরিদ্র মানসিকতারই যথাযথ আফটার ম্যাথে মশারা দলে দলে পথেঘাটে ডিম ছড়াবার সুযোগ পায়।


সুতরাং দুটি সিটি কর্পোরেশন, ১০টি মশক নিধন অঞ্চল, প্রায় ৬শ মশা মারা কেরানী,হস্তচালিত ও স্বয়ংক্রিয় মিলে ১৫৯৩ টি মশক নিধন মেশিন (উল্লেখ্য, এর অর্ধেকই নষ্ট!) এবং প্রায় ৪৫ কোটি টাকার বাৎসরিক মশক নিধন বাজেট, সব মিলেও কেন কাজ হচ্ছে না। (সংখ্যা সোর্স, বাংলা ট্রিবিউন, লিংকে)।

ইজ ইট এ সারপ্রাইজ! নট এট অল!!!

এত মশা আগে কেউ কখনও দেখেনি! বাচ্চাদের পড়া শুনা, ঘুমানো থেকে শুরু করে ঘরে বাইরের সব কিছু যন্ত্রণাময় হয়ে উঠেছে! ডেঙ্গু, চিকুঙ্গুনিয়া সহ মশা বাহিত রোগে নগরজীবন বিপর্যস্ত!

এমতাবস্থায়-
১। অতি বৃষ্টিই মশার ডিম দূর কারার একমাত্র আশির্বাদ! তথাপি রাজধানীর এলাকা গুলোর প্রায় স্থায়ী জলাবদ্ধা, ড্রেন বদ্ধতা, বৃষ্টির পরের দীর্ঘ জলাবদ্ধতা, নির্মাণের ধীরতায় তৈরি গর্ত কেন্দিক জলাবদ্ধতা, ময়লার ডাম্পিং এগুলা অভিশাপ হয়ে আছে।

২। ঢাকার লেইক গুলো কানেকট করে লেইকের পানিতে মধ্যমানের কৃত্তিম স্রোত তৈরির সুযোগ আছে। (এরকম একটা মডেল নিয়ে আমি কিছু প্রাথমিক কাজ করেছি)। এতে করে আন্তঃ সংযুক্ত লেইকের স্থানে স্থানে ঘন মিহি জালের ফিল্টার দিয়ে মশক ও ডিম নষ্ট করা যাবে। এর বাইরে, রাজধানীর ভূমিতে পানির ফিল্টারিং বাড়াতেও জলাধার বাড়ানো এবং লেইক গুলো কানেক্ট করা দরকার।

৩। রাজধানীর বাড়ি গুলোর মডেল পরিবর্তন করে এমন করা যায় যেখানে নিচ তলা বাধ্যতামূলক ভাবে উন্মুক্ত থাকবে। একটি ব্লকের সব গুলো বাড়ির নিচতলা প্রাচীর হীন হবে, একটি বিশাল উন্মুক্ত পার্কিং, বাচ্চাদের খেলার যায়গা হিসেবে আবির্ভুত হবে। এর মাটির নিচে পানির ট্যাংক ও সুয়ারেইজ ট্যাংকের পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ স্টোরেইজ কিংবা সুয়ারেজ পানি রিসাইকেলের প্ল্যান্ট করা যাবে। ভবিষ্যতে নগরকে বাসযোগ্য করতে এগুলা লাগবে। বর্তমানে, শুধু দেয়ালের কারণে মশার ঔষধ সব যায়গায় পৌঁছে না। আর দেয়াল গুলোর মাঝের যায়গা মশক প্রজনন কেন্দ্র।

৪। মশা নিধনের জন্য যে স্প্রে করা হয়, তা জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির, এমনকি কয়েলেও ক্ষতি। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের এবং কেমিক্যাল এক্সপার্টদের উন্নত বিকল্প নিয়ে আসা দরকার।

৫। বর্জ্য ও ড্রেনেইজ (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে আমার একটা সিরিজ আলোচনা বণিক বার্তা ছাপিয়েছে) এবং ময়লা স্থির পানির লেইক ব্যবস্থাপনা উন্নত না হলে, আশু কোন সমাধান নাই!


(ঢাকার রাস্তায় মশক প্রজনন ক্ষেত্রের ছবি, গার্ডিয়ান)
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:১৪
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×