somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ F-1 ভিসার কনফারমেশন পেলাম.....

৩০ শে এপ্রিল, ২০০৯ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঠিক এক বছর আগে লোভনীয় চাকরি ছেড়ে GRE পড়ার মাধ্যমে যে অনিশ্চিত পথে যাত্রা শুরু করেছিলাম, আজ US Embassy থেকে ভিসা কনফারমেশন পাওয়ার পর তার সফল সমাপ্তি হলো। এই দীর্ঘ এক বছরে কত কত বাধা, কত টেনশন, কত টাকার অনিশ্চিত শ্রাদ্ধ.....ভাবতেই কেমন লাগে। একেকটা uni তে apply করতাম আর টেনশনে থাকতাম, স্কলারশিপ পাবো তো? দিলেও ফুল স্কলারশিপ দিবে তো? প্রায় লাখখানেক টাকা খরচ করতেছি(নিজের+বাপের), এগুলা কাজে লাগবে তো? আর GRE-র কথা চিন্তা করলেই তো কেমন কেমন লাগে! একেকটা word তো word না যেনো হাতুড়ী। যে স্পীডে মুখস্থ করতাম তার দ্বিগুন স্পীডে ভুলতাম। আর TOEFL এক্সাম দিতে গিয়ে তো মর্মান্তিক কাহিনী। ভুলেও কেউ গ্রামীন স্টারে TOEFL এক্সাম দিতে যাইয়েন না,আর যদি schedule এর প্যাচে পড়ে দিতেই হয়, তাহলে আল্লাহর নাম নিয়ে মনটারে শক্ত করে যা হয় হবে এমন একটা preparation নিয়ে রাখাই ভালো B-)। যখন তখন pc অফ হয়ে যাবে, concentration যাবে ব্রেক হয়ে(যেটা TOEFL এ সবচেয়ে বেশি দরকার)। তবে এখানকার একটা সুবিধাও আছে যেটা কিছু সৌভাগ্যবান/সৌভাগ্যবতী পেয়ে থাকে আর তা হলো নিজের PC বন্ধ থাকার সময় যদি অন্য কারো speaking চলতে থাকে আর নিজের speaking যদি তখনো না হয়ে থাকে,তাহলে ঐগুলা শুনে শুনে সুন্দর লিখে ফেলা যায় আর নিজের speaking এর সময় জাস্ট কপি পেস্ট। এইটা বাদ দিলে গ্রামীন স্টারে TOEFL এর এক্সপেরিয়েন্স কমবেশি সবারই ভয়াবহ। আমি নিজে খুব ভালো Preparation নিয়ে গেছিলাম, কিন্তু তিনবার pc বন্ধের ফাদে পড়ে পুরা তালগোল পাকায় গেছিলো। এক্সাম শেষে তো বিরক্ত হয়ে নেক্সট এক্সাম কবে দিবো এইটা নিয়ে চিন্তা শুরু হয়ে গেছিলো। আল্লাহর অসীম কৃপায় যে পার্টগুলায় গোলমাল লাগছিলো ঐগুলা কাউন্ট হয়নাই, আর আমারো স্কোর ভালোই আসছে। net এ স্কোর দেখে আমি নিজেই চমকে গেছি, আমার ধারনা ছিলো আরো ১০-১৫ কম পাবো :)


যাইহোক, GRE TOEFL তো ভালয় ভালয় শেষ হল, এখন অ্যাপ্লিকেশনের পালা। ছিলাম সাগরে,পড়লাম মহাসাগরে। হাজার হাজার ইউনি usa তে, কোনটা ছেড়ে কোনটায় apply করবো? তার উপর একেকটায় apply করতে ৭-১০ হাজার টাকা বেরিয়ে যায়। কেমনে জানবো কোনটায় ফান্ডিং পাওয়া যাবে? শুরু হল দিনরাত নেট সার্চিং আর প্রফেসরদের মেইল করা। গনহারে টিচারদের ইমেইল করতে লাগলাম। সব মেইলের ভাষা একই--"আপনার ওয়েবসাইট দেখলাম,আপনার অমুক রিসার্চ পেপারটা আমি মন দিয়ে পড়ছি,আমার খুব খুব পছন্দ হ্ইছে (যদিও খালি রিসার্চ টাইটেল ছাড়া কিছু দেখিনাই)....আমি আন্ডারগ্রাজুয়েটে ঠিক এই টপিকসের উপর কাজ করছি (কচু করছি, একটা থিসিস করছিলাম তাও জোড়াতালি দিয়ে).....আপনার রিসার্চ ইন্টারেস্ট আর আমার রিসার্চ ইন্টারেস্ট একদম সেইম (কম্পিউটার সায়েন্সের সঅঅব ফিল্ডই আমার ফেভারিট রিসার্চ এরিয়া হয়ে গেছিলো কদিনের জন্য).....আমি আপনার সাথে কাজ করতে খুবই আগ্রহী (যদি TA/RA দেন).....আপনার সাথে কাজ করতে পারলে ধন্য হয়ে যাবো........blah blah blah"। রেসপন্সও পেতে থাকলাম অনেক। কিছু রেসপন্স খুবই হাস্যকর-----"আমার তোমাকে খুবই পছন্দ হইছে, হ্যা আমি তোমাকে নিতে চাই, কিন্তু দুঃখের বিষয় আমি কোনো ফান্ডিং দিতে পারবোনা...আসবা?"। কিছু আছে হৃদয়বিদারক-----"তোমার আর আমার রিসার্চ ইন্টারেস্ট একই, তোমাকে নিতে পারলে খুশী হতাম, কিন্তু আমি এই সেমিস্টারে স্টুডেন্ট নিচ্ছিনা"। আবার কিছু আশাব্যন্জক-----"তোমার প্রোফাইল/CV পাঠাও দেখি"----পাঠানোর পর "হ্যা তোমার GRE TOEFL স্কোর তো ভালই, অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজও স্ট্রং, তো ডিসিশন তো নিবে অ্যাডমিশন কমিটি,ওরা নিশ্চয়ই তোমাকে গুরুত্বের সাথে consider করবে,hope for the best"। এসব মেইল ক্লান্তিহীনভাবে পড়তাম আর মেইলবক্সে ট্যাগ করে রাখতাম। অবশেষে ৬টা স্কুল সিলেক্ট করতে পারলাম। এখন ভার্সিটিতে গিয়ে recommendation letter কালেক্ট করা। সে আরেক কাহিনী যার শুরু আছে শেষ নাই :(( (আরেকদিন বলবো)


অবশেষে মোটামুটি সবকিছু রেডি টেডি করে, অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরন করলাম আর ক্রেডিট কার্ডওয়ালা পাবলিক খুজতে লাগলাম। কিন্তু খোজাখুজি্ই সার,সবারই ন্যাশনাল ক্রেডিট কার্ড, ইন্টারন্যাশনাল কারোই নাই(থাকলেও দিতে চায়না)। কি আর করা, একটা ইউনির ডেডলাইন কাছে চলে আসছে। নিরুপায় হয়ে গেলাম ভার্সিটি অ্যাডমিশন ডট কম এ(আমি নাম দিছি গলাকাটি মিশন ডট কম, ওদের রেট চার্ট দেখলে মাথা ঘুরায়)। score forwarding আর অ্যাপ্লিকেশন ফি বাবদ এক্সট্রা যে টাকা বেরিয়ে গেলো, তাতে আমি প্রমাদ গুনলাম। এরকম হলে যে টাকা আছে তা দিয়ে ৬টার জায়গায় টেনেটুনে ৪টায় অ্যাপ্লাই করা যাবে। ভাগ্য ভালো আমাদের ভার্সিটির এক সিনিয়র ভাইয়া বুয়েটের এক ভাইয়ার সেল নাম্বার দিলেন যার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এগুলা করা যায়। উনি খুব অল্প টাকা চার্জ নেন। যাক আল্লাহ মুখ তুলে চাইলো অবশেষে। উনাকে দিয়েই বাকিগুলাতে অ্যাপ্লাই করলাম।

অ্যাপ্লাই তো শেষ, এখন অপেক্ষার প্রহর তো ফুরায় না। ৮ মাস বেকার বসে ছিলাম,পকেট পুরা গড়ের মাঠ,ঢুকলাম আরেকটা জবে। ডেইলি রাত্রে আশা নিয়ে মেইলবক্স চেক করি,কোনো খবর এলো কিনা। আল্লাহর অসীম রহমতে প্রথম যে মেইলটা আসলো ইউনিভার্সিটি থেকে,সেইটাই PhD এর জন্য ফুল স্কলারশিপের মেইল! আমাকে আর পায় কে (মজার ব্যাপার হল পরে আরো অ্যাডমিশন পাইছি,কিন্তু ফুল স্কলারশিপ আর একটাও পাইনি!)। এরপর ভিসা ইন্টারভিউ এর জন্য কাগজপত্র জোগাড়,দৌড়াদৌড়ি, I-20 হাতে নিয়ে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকা, ভিসার জন্য টেনশন......অবশেষে সেই ক্ষণ। আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম মহিলা অফিসার যেনো না পড়ে (শুনছি উনারা অনেক উল্টাপাল্টা q করে)। ভারি পুরুষ কন্ঠে আমার নাম শুনে লাফ দিয়ে উঠলাম। ইন্টারভিউ হলো সাকুল্যে দেড় মিনিট। full funding পাইছি কিনা, TA/RA কোনটা করতে হবে, gre/toefl স্কোর কত........শেষ। যদিও সাথে করে নিয়ে গেছিলাম একগাদা ডকুমেন্টস (খাস বাংলায় লেখা বাপের জমিজমার দলিল সহ), কিছুই লাগেনাই। যদিও additional processing এ পাঠাইছে, এক দেড় মাস টাইম লাগবে পাসপোর্ট হাতে পেতে, কিন্তু confirmation letter দিয়ে দিছে। আল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ সবকিছুর জন্য। আর পাঠকদেরও ধন্যবাদ এতক্ষন ধরে আমার প্যাচাল শোনার জন্য। ইচ্ছা আছে যারা usa যেতে আগ্রয়ী higher education এর জন্য, তাদের কাজে লাগবে এমন কিছু পোস্ট দেওয়ার। কারণ আমার ক্ষুদ্র experience এ যেটা দেখছি, GRE তে একটু ভালো স্কোর মানে স্কলারশিপ অলমোস্ট কনফার্ম, শুধু সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে হিট করতে হবে আর অ্যাপ্লিকেশন প্যাকেজটা স্মার্ট করে প্রেজেন্ট করতে হবে। আর স্কলারশিপ পেলে তো ভিসা ডালভাত। আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই। এখনকার মত বিদায়।
৫৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×