somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রকৌশলী হতে এসে লাশ হয়ে বাড়ী ফিরলো রায়হান!!!!!

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে লাশ হয়ে বাড়ী ফিরলো কাপ্তাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট(বিএসপিআই/সুইডিশ) এর কন্সট্রাকশন বিভাগের দ্বিতীয় শিফটরে ছাত্র সৈয়দ কায়সার রায়হান। ক্যাম্পাসের পার্শ্ববর্তী নতুন বাজার এলাকায় কিছু সিনিয়র ছাত্রের সাথে উপজেলা নির্বার্হী অফিসারের বাকবিতন্ডার জের ধরে সম্মিলিত প্রতিবাদে অংশ নিয়ে লাশ হতে হলো তাকে। সুইডিশ ৪৯ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম লাশ হতে হলো কোন ছাত্রকে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এটিই প্রথম কোন ছাত্রহত্যার ঘটনা।

কি হয়েছিলো সেদিন ঃ সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা। ক্যাম্পাস সংলগ্ন নতুন বাজারের প্রধান সড়কে তীব্র গতিতে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলো এক ছাত্রের অতিথি হিসেবে ক্যাম্পাসে বেড়াতে আসা বন্ধু রনি। এই সময় বাজারেই ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নুরুজ্জমান। বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী এবং অটোরিক্সা চালক মোটরবাইক আরোহী ছাত্রটিকে আটক করে ইউএনও এর কাছে নিয়ে আসলে তিনি ২০০ টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ৭ দিনের কারাদন্ড প্রদান করেন। ছেলেটি মোবাইলে তার বন্ধুকে খবর দিলে সুইডিশ ছাত্রবাস থেকে কয়েকজন ছাত্র এসে ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ইউএনওকে চাপ দিতে থাকে। এই সময় বাজারের ব্যবসায়ী,অটোরিক্সা চালক ইউএনও এর পক্ষ নিলে আরো ছাত্ররা ক্যাম্পাস থেকে এলে সেখানে তীব্র বাতবিতন্ডা হয়। এই সময় পুলিশের সাথে ছাত্রদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ ছাত্রদের উপর টিয়ারশেল এবং গুলি বর্ষন করে। এই সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে রায়হান। আহত হয় আরো অন্ততঃ পনেরজন শিক্ষার্থী।
আহত রায়হানকে প্রথমে চন্দ্রঘোণা মিশন হাসপাতালে নেয়া হলেও পরে অবস্থা সংকটাপন্ন হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে রাত পৌনে নয়টায় মৃত্যু হয় তার।

পাল্টাপাল্টি দাবী ঃ সংঘর্ষের ঘটনা নিয়ে পুলিশ এবং ছাত্রদের পক্ষ থেকে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দেয়া হচ্ছে। পুলিশ বলছে,উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ছাত্ররা অবরুদ্ধ করলে তাকে বাঁচানোর জন্য পুলিশ এগিয়ে যায়,এই সময় ছাত্ররা পুলিশের উপর হামলা করলে পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলিবর্ষন করেছে। তবে ছাত্রদের দাবী,সেখানে মোটরসাইকেল নিয়ে ইউএনও এর সাথে তাদের তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ইউএনও ও এএসপি (কাপ্তাই সার্কেল) এর নির্দেশে পুলিশ ঠান্ডা মাথায় গুলি করে রায়হানকে হত্যা করেছে। সেখানে গুলি করার মতো কোন পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি বলে দাবী করেছে তারা।

গুলি তবে কার নির্দেশে ? ঃ পুলিশের চট্টগ্রাম রেজ্ঞের অতিরিক্ত ডিআইজি বিশ্বাস আফজাল হোসেন ও পুলিশ সুপার মাসুদ উল হাসান কাপ্তাই এসে স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এই সময় তিনি সাংবাদিক বলেন-ছাত্ররা পুলিশের উপর হামলা করায় পুলিশ আত্মরক্ষার প্রয়োজনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে গুলিবর্ষন করেছে। তবে পুরো বিষয়টি দুঃখজনক বলে মন্তব্য করে তিনি ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন। এই সময় তিনি দাবী করেন-ছাত্ররাও গুলি করেছে এবং বহিরাগতরাও অস্ত্র নিয়ে সংঘাতে অংশ নিয়েছে। তিনি আরো দাবী করেন-নিহত রায়হান পুলিশ নয়,অন্য কারো গুলিতেও নিহত হতে পারেন।
অন্যদিকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নুরুজ্জমান পুলিশকে তিনি কোন গুলি করার নির্দেশ দেননি জানিয়ে বলেছেন,এএসপি (কাপ্তাই সার্কেল) এর উপস্থিতিতে ঘটনা ঘটেছে। আমি কোন গুলির নির্দেশ দেইনি। গুলি করার মতো কোন পরিস্থিতিও হয়নি বলে স্বীকার করেন তিনি। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গুলিবর্ষন এবং ছাত্রমৃত্যুর ঘটনাকে‘ দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা ঃ রায়হান ঘটনায় জের ধরে অনির্দিষ্ট কালের জন্য পলিটেকনিক্যালটি বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের মঙ্গলবার সকাল আটটার মধ্যে হল খালি করে দেয়ার জন্য সকাল সাতটায় নোটিশ জারি করার পর শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ করেছে। শিক্ষার্থী মারুফ, হাসান, জাকির অভিযোগ করেছে সকালে প্রশাসন তাদের ঘুম থেকে তুলে শিক্ষার্থীদের জোর করে হল ছাড়তে বাধ্য করে ।
পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ সিদ্দিকুল বারি ইন্সটিটিউট বন্ধ ও হল খালি করার ঘোষনার কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন সহপাঠী হত্যার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে তাই যেকোন অনভিপ্রেত ঘটনা এড়াতে উর্ধ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। তিনি বলেন-আমরা আমাদের ছাত্র হত্যার বিচার চাই। এই বিষয়ে সকল শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে খুব শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে এবং ক্যাম্পাস খোলা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ঃ
শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনায় ব্যাপক বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকালে আকস্মিকভাবে ইন্সটিটিউট বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগে বাধ্য করার পর সকাল এগারোটায় উপজেলার লিচু বাগান এলাকায় শিক্ষার্থীরা ব্যাপক বিক্ষোভ করে। তারা সহপাঠী রায়হান হত্যার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নুরুজ্জামান এবং এএসপি (সার্কেল) প্রণব কুমার সাহাকে দায়ী করে তাদের অপসারন দাবী করেছে। এই সময় বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী জাকির,হাসান,সাকিব,ফয়সল সহ বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। লিচুবাগানে সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বাসযোগে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে নিহত রায়হান এর গ্রামের বাড়ীতে যায়। সেখানে তারা তার জানাজায় অংশ নেয়। দুপুরে রায়হানকে তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠী জাকির। ছাত্ররা অবিলম্বে ক্যাম্পাস খুলে দেয়া,রায়হান হত্যাকারীদের গ্রেফতার,ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ প্রত্যাহার,ক্যাম্পাসে রায়হানের একটি ছাত্রাবাস ও ভাস্কর্য নির্মাণ,তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের দাবী জানিয়েছে।

পুলিশের মামলা ঃ হত্যাকান্ডের ঘটনায় কোন মামলা না হলেও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় ছয়জন ছাত্রের নাম উল্লেখ করে আরো দুই শতাধিক ছাত্রকে আসামী করে কাপ্তাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন থানার উপ পরিদর্শক ইব্রাহীম খলিল। কাপ্তাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইউসুফ সিদ্দিকী জানিয়েছেন,তদন্তশেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সাথে যার মোটরবাইক চালানো নিয়ে সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে সেই রনিও ইউএনও এর দেয়া দন্ডে কাপ্তাই থানা হাজতে আটক আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জনপ্রতিনিধিদের বিস্ময় ঃ তুচ্ছ ঘটনা শেষ পর্যস্ত ছাত্রহত্যার ঘটনায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। কাপ্তাউ উপজেলা চেয়ারম্যান অংসুচাইন চৌধুরী,ভাইস চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন সেলিম,উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহাদাত হোসেন চৌধুরীসহ স্থানীয় সাংবাদিক,রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা একযোগে পুরো বিষয়টিকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন-আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যাটির সমাধান হতে পারতো। একজন ছাত্রের মৃত্যু কারোই কাম্য নয়। একইসাথে ছাত্রদের ও পুলিশের,উভয়েরই আরো সহনশীল হওয়া উচিত ছিলো।

বাবা মায়ের আহাজারি ঃ চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার নজুমিয়াহাটের আব্দুল মান্নান আর জয়নব বেগমের ৩ ছেলে ১ মেয়ের সংসারে সৈয়দ কায়সার রায়হান দ্বিতীয়। বাবা-মায়ের স্ব্প্ন বুকে নিয়ে হ্রদের পাড়ের ছোট্ট পাহাড়ী শহর কাপ্তাইতে অবস্থিত বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট-এ ভর্তি হয়েছিলেন প্রকৌশলী হতে। কিন্তু নিয়তির কি নির্মম পরিহাস। মাত্র দ্বিতীয় শিফটে পড়াকালেই সহপাঠীদের সম্মিলিত প্রতিবাদে সামিল হতে গিয়ে কি নিদারুন মৃত্যু তার ! মঙ্গলবার দুপুরে প্রিয় সন্তানের লাশ কবরে মাপিতে ঢেকে দেয়ার পর তারা বাবা আব্দুল মান্নান,মা জয়নব বেগম আর ভাইবোন,স্বজনদের কান্না আর আহাজারি,যে বেদনার্ত পরিবেশ তৈরি করেছে,তা অনেক পাষান হৃদয়েও কাঁপন ধরিয়েছে নিশ্চিত।









৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×