বাজারে নতুন পত্রিকা!!! আসুন পড়ে দেখি...
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
জুন মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রুমানা মঞ্জুর স্বামীর বীভৎস নির্যাতনে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। কিন্তু এই ভয়ঙ্কর খবরটা গনমাধ্যমে আসে আরও ৪/৫ দিন পর। তাও রুমানা মঞ্জুর দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের একজন শিক্ষক বলেই খবরটি গনমাধ্যমে গুরুত্বের সাথে আসে বলে আমার ধারণা। কারন দেশের পাবলিক বিশ্বিবদ্যালয়গুলোতে প্রতিটি গনমাধ্যমের প্রতিনিধি কাজ করেন। সেই সূত্রেই খবরটি আমাদের নজরে আসে। খবরটি জনমনে এতই বিক্ষুধ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যে রুমানা মঞ্জুরের নির্যাতক পাষন্ড স্বামী গ্রেপ্তার হবার খবরটি টেলিভিশন মিডিয়ায় ব্রেকিং নিউজ হিসেবে আসে। টেলিভিশনের ব্রেকিং নিউজ মানেই বুক কাঁপানো কোন সুসংবাদ বা দু:সংবাদ।
বেশ কয়েকদিন হৈচৈ চললো বিষয়টি নিয়ে। তারপর বিরোধীদলের হরতালে চিফ হুইপের উপর আক্রমনের খবর আমাদের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে নিলো। রুমানা মঞ্জুর ক্রমেই প্রথম পাতা থেকে পত্রিকার ভেতরের পাতার ভেতরের কোন কলামে চলে যেতে লাগলেন, শিরোনাম থেকে 'বিরতির পরের সংবাদ' হয়ে গেলেন।
আমাদের জীবনযাত্রা এরকমই। আমরা কিছুদিন পরেই সবকিছু ভূলে যাই, যদি নিজেরা কিছু না হারাই। আমরা এটাতেই অভ্যস্ত। আমিনবাজারে ৬ ছাত্রের মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে আমাদের আর কোন মাথাব্যথা নেই। মাথাব্যথা শুধু ঐ ৬টা পরিবারের, কষ্ট ঐ ৬টা পরিবারের। চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে চেনা কচি মুখগুলো যারা আর দেখেন না তারা জানেন কষ্ট কাকে বলে?
এতসব খবরের মাঝখানে আরেকটা খবর কিন্তু প্রতিদিনই একটু একটু করে পত্রিকার প্রথম পাতায় উঁকি দিতে থাকে। রাজধানী ঢাকার অভিজাত এলাকায় দেশের অন্যতম সেরা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী নিপীড়নের খবরটি। খবরটি নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব চলছে মনে হলো পত্রিকা পড়ে। কেউ দিচ্ছেন, কেউ দিচ্ছেন না, দিচ্ছেন তো দায়সারাভাবে। সবাই কেমন জানি একটু দ্বিধাগ্রস্ত। আসলে বড় কিছু না হলে ক্যামেরা বা কলম নড়ে চড়ে না। রাস্তায় নামো, আন্দোলন করো, মানববন্ধন করো-তবে না মানুষ জানবে, শুনবে, বুঝবে। ঐ যে বললাম মাথাব্যথা শুধু তাদের, যাদের গেছে। আমরা আমজনতা রাতের খবর দেখে ঘুমাই, সকালে অফিসে যাই। অফিসে গিয়ে নিজেদের জীবনের চাপে মানুষের জীবনের কথা ভুলে যাই।
যাদের গেছে তারাই এবার মাঠে নামলো। ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা একযোগে নামলেন। বেগম রোকেয়া, জাহানারা ইমাম কিংবা সুফিয়া কামাল হয়তো দেখছেন। দেখে নিশ্চয়ই সাহস পাচ্ছেন, নির্যাতিত মেয়েটা একা না, ওর সাথে ওর বন্ধুরা আছে, বড় আপুরা আছে, ছোট বোনরা আছে। ভিকারুননিনা নূন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের আপডেট এবং নিখুঁত খবর ঠিক পাচ্ছিলাম না। আছে তো নাই, নাই তো আছে টাইপ অবস্থা। অবশেষে একটা নতুন পত্রিকা পেলাম একদম জলজ্যান্ত সত্য এবং টাটকা। মিনিটের খবর মিনিটে, সেকেন্ডের খবর সেকেন্ডে!!
পত্রিকাটার নাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে ঘটে যাওয়া প্রকৃত ঘটনা।
এই পত্রিকার সাংবাদিকরা প্রচন্ড ফাস্ট খবর দিতে লাগলেন, একদম লাইভ!! ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি আপডেট! ফোনে না, একদম লিখিত! আমার দেখা সর্বশেষ পত্রিকার পাঠক সংখ্যা ১১,৫৭৯ জন!!!
অবাক হচ্ছেন?? এই পত্রিকার নাম শোনেননি??
যেটাকে আমি পত্রিকা বলছি সেটা আসলে ফেইসবুকের একটি পেইজ যা ভিকারুননিনা নূন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা তৈরি করেছেন এবং তারাই এটার দেখভাল করছেন। তারাই এই পত্রিকার রিপোর্টার, সাব-এডিটর, এডিটর। এই পেইজে সর্বশেষ ১১,৫৭৯ জন লাইক করেছেন, অর্থ্যাৎ তারা এই পত্রিকার সাথে আছেন।
ফেইসবুকের এই পেইজে প্রতিদিন ভিকিদের আন্দোলনের খবরের আপডেট থাকে। পরিমলের শুনানির কি হলো, কোন পত্রিকায় তাদের পক্ষে বা বিপক্ষে কি খবর ছাপা হলো, ব্লগে কে কি লিখলো। সেই সাথে ছবি। কোন বরেণ্য ব্যক্তি তাদের আন্দোলনে শরিক হলো, পুলিশ বাধা দিলো কিনা, সাংবাদিকরা চোখ রাঙালো কিনা, প্রেস কনফারেন্স হওয়ার পরও নিউজ এলোনা, ওদিকে দেশের বাইরে কোথায় প্রেস কনফারেন্স হবে তাও জানিয়ে দেয়া হলো তারিখ, ঠিকানা সহ (Clifton Restaurant, brick lane , London, uk Time: 6:00PM Sunday, July 24th)
তাই গতকাল (২৭ জুলাই) সকাল থেকেই পত্রিকাটা খুলে বসেছিলাম, কখন খবর আসে। কারন ঐদিন এইচএসসি’র রেজাল্ট দেবার কথা। পত্রিকাটির রিপোর্টার, সাব-এডিটর, এডিটরদের কাছ থেকে যেরকম খবর আশা করেছিলাম ঠিক সেরকমই রিপোর্ট পেলাম।
যেই কলেজে রেজাল্ট হওয়ার সাথে সাথে ঢোল আর বাদ্যবাজনার আওয়াজে কান পাতা যেতোনা, সেখানে নাকি কোন আওয়াজই হইনি। না রেজাল্ট খুবই ভালো। এবারও তারা সেরাদের দলে, তবু আওয়াজ নেই! কারন তাদের নাকি বিজয় হয়নি, আজ নাকি তাদের বিজয়ের দিন নয়। আরে বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ হলো, নিজের কষ্ট স্বার্থক হলো তাও বিজয় হয়নি?? না হয়নি।
কারন তারা আজ কাঁদতে আসেনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছে। বিজয় সেদিন হবে যেদিন পরিমলদের ফাঁসি হবে। তাই আজকে কোন জয়ধ্বনি নেই। পত্রিকাটির নিয়মিত পাঠক হিসেবে আমি সেই সকালের অপেক্ষায় রইলাম যেদিন পত্রিকার আট কলাম জুড়ে শিরোনাম হবে তোরা সব জয়ধ্বনি কর: পরিমলদের প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি।
সেইদিন আমি এমন জয়ধ্বনি শুনতে চাই যাতে বাংলাদেশের দীর্ঘ ৪০ বছরের ঘুম ভেঙে যায়। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল যেন একসাথে জেগে ওঠে!!!
ছবি: ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজে ঘটে যাওয়া প্রকৃত ঘটনা পত্রিকা থেকে নেয়া।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।
ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক
বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন
মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )
যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন
কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন
একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।
এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।
ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন