পূর্ব পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলার আয়োজন করেন এবং ১৯৭২ সালে গোলাম আযম লন্ডনে 'পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি' গঠন করেন এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র উচ্ছেদ করে আবার এই ভূখন্ডকে পাকিস্তানের অংশে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করেন।
যুদ্ধাপরাধ নজরদারিতে গোলাম আযম নজরদারিতে গোলাম আযম
ঢাকা, জুলাই ০৭ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া শুরু এবং জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ তিন নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রেক্ষাপটে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে 'গণ আদালতে' অভিযুক্ত দলটির সাবেক আমির গোলাম আযমকে নজরদারিতে রেখেছে সরকার।
জামায়াতের রাজনৈতিক গুরু গোলাম আযম মঙ্গলবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাকে যুক্তরাজ্যে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন নীতি নির্ধারক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "গোলাম আযম গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন।"
প্রতি বছরই তিনি সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে যুক্তরাজ্য যান জানিয়ে বড় মগবাজারে নিজ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ৮৭ বছর বয়সী আযম বলেন, "২০০৮ সালে আমার ওয়াইফ ভিসা পেলেও আমাকে ভিসা দেওয়া হয়নি। আমি ব্রিটিশ আদালতে আপিল করেছিলাম। আপিলের রায় আমার পক্ষে হওয়ার পরও আমাকে যেতে দেওয়া হয়নি।"
আপিলের জবাবে যুক্তরাজ্য সরকার তার পক্ষেই রায় দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, "বাংলাদেশ সরকার আমাকে যেতে দিচ্ছে না। এবছর এপ্রিল মাসের ২৭ তারিখ আমার পাসপোর্ট নিয়ে গিয়েছে।"
এর আগে গোলাম আযমের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে তার বাড়ির সামনে থেকে দুই দিন ঘুরে এলেও দেখা করার অনুমতি মেলেনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই প্রতিবেদকের।
মঙ্গলবার সাড়ে ৩ টার দিকে তার বাড়ির সামনের দোকানি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বিকাল ৫ টার দিকে পাাশের মসজিদে নামাজ পড়ার জন্য তিনি বের হন।
৫ টা পর্যন্ত বাড়ির সামনে অপেক্ষা করার পর তিনি রুবেল নামে ১৩/১৪ বছর বয়সী একটি ছেলের কাঁধে ভর দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন।
শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে অভিযুক্ত গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে মদদ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
মানবতার বিরুদ্ধে এসব অপরাধের বিচার করতে সরকার গত ২৫ মার্চ ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭৩ অনুসারে বিচারক প্যানেল, তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেল গঠন করে।
সরকার যুদ্ধাপরাধদের বিচার করতে যাচ্ছে, একারণেই কি আপনাকে দেশ ত্যাগ করতে দেওয়া হচ্ছেনা? এই প্রশ্নের জবাবে আযম বলেন, "এসব বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। যুদ্ধাপরাধ কি আমি জানি না।"
এর আগে গোলাম আযমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টায় তার যুক্তরাজ্য প্রবাসী দৌহিত্র নাবিল আল আযমীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি উত্তেজিত হয়ে যান। তিনি বলেন, "আমরা পারিবারিকভাবে প্রেসের সঙ্গে কথা না বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
"কিছু দিন আগে একটি দৈনিক পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছিলাম তারা ভুল ও মিথ্যা তথ্য ছেপেছে। আমি আপনার কোনো প্রশ্নেরই জবাব দেব না", বলেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর বর্তমান সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "গোলাম আযম সাহেব তার মগবাজার কাজী অফিস রোডের বাড়িতে আছেন। নিয়মিত নামাজ আদায় করছেন। সংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করেন না তিনি।"
গত ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও নায়েবে আমির দেলওয়ার হোসাইন সাঈদীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগসমূহ: ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা, লূণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, জনপদ ধ্বংস, নারী ধর্ষণ প্রভৃতি অপরাধমূলক কাজে মদদ দেওয়া।
নিজ উদ্যোগে শান্তি কমিটি, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী গঠন এবং হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে রাজাকার বাহিনী গঠন করায় প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, জনপদ ধ্বংসের নীলনকশা প্রণয়ন করে আল-বদর, আল-শামসকে দিয়ে মানুষ হত্যা করানো।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীকালে 'পুর্ব পাকিস্তান বাস্তবায়ন কমিটি' গঠন করে বিদেশি শত্র"র চর হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা
ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী ষড়যন্ত্র করে অপরাধ সংগঠন করা।
আনিসুজ্জামানের সাক্ষ্য:
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে ১৯৯২ সালে গণআদালতে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেছিলেন "১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্র"মুক্ত হলে গোলাম আযম পাকিস্তানে বসে মাহমুদ আলীসহ 'পুনরুদ্ধার কমিটি' নামে একটি সংগঠনের সূচনা করেন।
পূর্ব পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলার আয়োজন করেন এবং ১৯৭২ সালে গোলাম আযম লন্ডনে 'পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি' গঠন করেন এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র উচ্ছেদ করে আবার এই ভূখন্ডকে পাকিস্তানের অংশে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করেন।
১৯৭৩ সালে ফেডারেশন অব স্টুডেন্টস ইসলামিক সোসাইটি'র বার্ষিক সম্মেলনে এবং ব্রিটেনের লেসটারে অনুষ্ঠিত ইউকে ইসলামিক কমিশিনের বার্ষিক সভায় তিনি বাংলাদেশবিরোধী বক্তৃতা দেন। ১৯৭৪ সালে মাহমুদ আলীসহ কয়েকজন পাকিস্তানিকে নিয়ে তিনি পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি'র এক বৈঠক করেন।
এই সভায় গোলাম আযম ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে 'কাজ চালানোর' প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেন। এভাবেই গোলাম আযম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে গেছেন।"
---------------------------------------------------------------
-------------------------------------------------------------------
[১] ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হলে গোলাম আযম পাকিস্তানে বসে মাহমুদ আলী ও খাজা খয়েরউদ্দীনের মতো দেশদ্রোহীর সঙ্গে মিলিত হয়ে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি নামে একটি সংগঠনের সূচনা করেন এবং বিভিন্ন দেশে পূর্ব পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তোলার আয়োজন করেন। তিনি এই উদ্দেশ্যে দীর্ঘকাল পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর আমির বলে নিজের পরিচয় দিতেন।
[২] ১৯৭২ সালে গোলাম আযম লন্ডনে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’ গঠন করেন এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র উচ্ছেদ করে আবার এই ভূখণ্ডকে পাকিস্তানের অংশে পরিণত করার ষড়যন্ত্র করেন। ১৯৭৩-এ ম্যানচেস্টারে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন অফ স্টুডেন্টস ইসলামিক সোসাইটিজের বার্ষিক সম্মেলনে এবং লেসটারে অনুষ্ঠিত ইউ কে ইসলামিক কমিশনের বার্ষিক সভায় তিনি বাংলাদেশবিরোধী বক্তৃতা দেন। ১৯৭৪-এ মাহমুদ আলীসহ কয়েকজন পাকিস্তানিকে নিয়ে তিনি পূর্ব লন্ডনে পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটির এক বৈঠক করেন। বাংলাদেশকে পাকিস্তানে পরিণত করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে দেখে এই সভায় স্থির হয় যে, তাঁরা এখন থেকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান নিয়ে একটি কনফেডারেশন গঠনের আন্দোলন করবেন। এই সভায় গোলাম আযম ঝুঁকি নিয়ে হলেও বাংলাদেশে ফিরে অভ্যন্তর থেকে ‘কাজ চালানোর’ প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেন। ১৯৭৭-এ লন্ডনের হোলি ট্রিনিটি চার্চ কলেজে অনুষ্ঠিত একটি সভায় তিনি এ কথারই পুনরাবৃত্তি করেন এবং সেই উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য পাকিস্তানি পাসপোর্ট ও বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে আগমন করেন।
[৩] ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে গোলাম আযম রিয়াদে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ইসলামি যুব সম্মেলনে যোগদান করেন এবং পূর্ব পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সকল মুসলিম রাষ্ট্রের সাহায্য প্রার্থনা করেন। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৬ পর্যন্ত তিনি সাতবার সউদি বাদশাহ্র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার আহ্বান জানান এবং কখনো তিনি বাদশাহ্কে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করতে ও কখনো বাংলাদেশকে আর্থিক বা বৈষয়িক সাহায্য না দিতে অনুরোধ করেন। ১৯৭৪ সালে রাবেতায়ে আলমে ইসলামির উদ্যোগে মক্কায় অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এবং ১৯৭৭ সালে কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত একটি সভায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেন।
[৪] অনুরূপভাবে গোলাম আযম ১৯৭৩ সালে বেনগাজিতে অনুষ্ঠিত ইসলামি পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিদের কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেওয়ার জন্য লবিং করেন। একই বছরে ত্রিপলিতে অনুষ্ঠিত ইসলামি যুব সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে হানিকর বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
[৫] ১৯৭৩ সালে গোলাম আযম মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত মুসলিম স্টুডেনটস অ্যাসোসিয়েশন অফ আমেরিকা অ্যান্ড কানাডার বার্ষিক সম্মেলনে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানভুক্ত করার জন্য সবাইকে কাজ করতে আহ্বান জানান।
[৬] ১৯৭৭ সালে গোলাম আযম ইসতামবুলে অনুষ্ঠিত ইসলামিক ফেডারেশন অফ স্টুডেনটস অরগানাইজেশনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশবিরোধী বক্তৃতা করেন।
১ Click This Link
২ Click This Link
৩ http://www.sachalayatan.com/tanveer/13238
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:০৮