somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্মসমূহ

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর বুকে আজ পর্যন্ত কতগুলো ধর্ম এসেছে এবং কতগুলো টিকে আছে? গত রাত কেটে গেলো উইকিপিডিয়ার জন্য এই নিবন্ধটি লিখতে গিয়ে। আশা করি জ্ঞানপিপাসু পাঠকের ভালো লাগবে।

পৃথিবীতে মানুষের জীবন যাপনের দিক নির্দেশনা এবং সাম্য-মৈত্রীর বানী নিয়ে যুগে যুগে বিভিন্ন ধর্মের আগমন ঘটেছে। মধ্যপ্রাচ্য এবং ভারতবর্ষ হচ্ছে ধর্মের আদিভূমি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধর্মের নামে মানুষ রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছে আবার এই ধর্মই মানুষকে করেছে সুসংহত, মানবতাবাদী।

ইব্রাহীমিয় ধর্ম
ইব্রাহিমীয় ধর্ম বা আব্রাহামিক ধর্ম (ইংরেজি: Abrahamic Religion) বলতে একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোকে বোঝানো হয়, যাদের মধ্যে ইব্রাহিম এর সাথে সম্পর্কিত ধর্মীয় উৎপত্তি অথবা ধর্মীয় ইতিহাসগত ধারাবাহিকতা বিদ্যমান। এইসব ধর্ম হযরত ইব্রাহিম (আঃ) অথবা তাঁর বংশধর প্রচার করেছেন। ভারত, চীন, জাপান ইত্যাদি দেশের উপজাতিয় অঞ্চল বাদ দিয়ে সারা বিশ্বে এই মতবাদের আধিপত্য। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে যে তিনটি ধর্মগত শ্রেণীবিন্যাস পাওয়া যায়, এদের মধ্যে ইব্রাহিমীয় ধর্ম একটি শ্রেণী; অপর দুটি শ্রেণী হচ্ছে ভারতীয় ধর্ম (উদাহরণ- হিন্দু ধর্ম) এবং পূর্ব এশীয় ধর্ম।

ইসলাম
সৌদি আরবের মক্কার কাবা শরীফ; যেখানে সারা বিশ্বের লাখো মুসলিম একতার মাধ্যমে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যতার সাথে প্রার্থনা করে থাকেন।

ইসলাম (আরবি ভাষায়: الإسلام আল্‌-ইসলাম্‌) একটি একেশ্বরবাদী এবং আব্রাহামিক ধর্ম । কুরআন দ্বারা পরিচালিত; যা এমন এক কিতাব যাকে এর অনুসারীরা হুবহু আল্লাহ'র( আরবি : الله আল্লাহ ) বানী বলে মনে করে এবং ইসলামের প্রধান নবী মুহাম্মাদ (সঃ) এর প্রদত্ত শিক্ষা পদ্ধতি,জীবনাদর্শও (বলা হয় সুন্নাহ এবং হাদিস নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে ) এর ভিত্তি । ইসলামের অনুসারীরা মুহাম্মদকে শেষ নবী বলে মনে করে। "ইসলাম" শব্দের অর্থ "আত্মসমর্পণ", বা একক স্রষ্টার নিকট নিজেকে সমর্পন। অনেকের ধারণা যে মুহাম্মদ হলেন এই ধর্মের প্রবর্তক। তবে মুসলমানদের মতে, তিনি এই ধর্মের প্রবর্তক নন বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্বশেষ ও চূড়ান্ত রাসূল (পয়গম্বর)। খ্রিস্টিয় সপ্তম শতকে তিনি এই ধর্ম পুনঃপ্রচার করেন। কুরআন ইসলামের মূল ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মে বিশ্বাসীদের মুসলমান বা মুসলিম বলা হয়। কুরআন আল্লাহর বাণী এবং তার কর্তৃক মুহাম্মদ (সঃ) এর নিকট প্রেরিত বলে মুসলমানরা বিশ্বাস করেন। তাদের বিশ্বাস অনুসারে মুহাম্মদ শেষ নবী। হাদিসে প্রাপ্ত তাঁর নির্দেশিত কাজ ও শিক্ষার ভিত্তিতে কুরআনকে ব্যাখ্যা করা হয়।

ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মও আব্রাহামীয়। মুসলমানের সংখ্যা আনুমানিক ১৪০ কোটি ও তারা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠী। মুহাম্মদ ও তার উত্তরসূরীদের প্রচার ও যুদ্ধ জয়ের ফলশ্রুতিতে ইসলাম দ্রুত বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে সমগ্র বিশ্ব জুড়ে, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, পশ্চিম আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব ইউরোপে মুসলমানরা বাস করেন। আরবে এ ধর্মের গোড়াপত্তন হলেও অধিকাংশ মুসলমান আন্যাংশ এবং আরব দেশের মুসলমানরা মোট মুসলমান সংখ্যার শতকরা মাত্র ২০ বিশ ভাগ। যুক্তরাজ্যসহ বেশ কিছু বলকান অঞ্চল দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম ইসলাম।

খ্রিস্ট ধর্ম

'খ্রিস্ট ধর্ম (প্রাচীন গ্রিক: Χριστός খ্রিস্তোস) হচ্ছে একেশ্বরবাদী ধর্ম। নাজারাথের যীশুর জীবন ও শিক্ষাকে কেন্দ্র করে এই ধর্ম বিকশিত হয়েছে। খ্রিস্টানরা মনে করেন যীশুই মসীহ এবং তাঁকে যীশু খ্রীস্ট বলে ডাকেন। খ্রিস্ট ধর্মের শিক্ষা নতুন টেস্টামেন্ট বা নতুন বাইবেলে এ গ্রন্থিত হয়েছে। এই ধর্মাবলম্বীরা খ্রিস্টান পরিচিত। তারা বিশ্বাস করে যে যীশু খ্রীস্ট হচ্ছেন ঈশ্বরের পুত্র।
২০০১ সালের তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে ২.১ বিলিয়ন খ্রীস্ট ধর্মের অনুসারী আছে। সে হিসেবে বর্তমানে এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ধর্ম। ইউরোপ, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা, সাব-সাহারান আফ্রিকা, ফিলিপিন্স দ্বীপপুঞ্জ ও ওশেনিয়া অঞ্চলে খ্রীস্ট ধর্ম প্রধান ধর্ম হিসেবে পালিত হয়।
প্রথম শতাব্দীতে একটি ইহুদি ফেরকা হিসেবে এই ধর্মের আবির্ভাব। সঙ্গত কারণে ইহুদি ধর্মের অনেক ধর্মীয় পুস্তক ও ইতিহাসকে এই ধর্মে গ্রহণ করা হয়েছে। ইহুদিদের ধর্মগ্রন্থ তানাখ বা হিব্রু বাইবেলকে খ্রিস্টানরা পুরাতন বাইবেল বলে থাকে। ইহুদি ও ইসলাম ধর্মের ন্যায় খ্রিস্ট ধর্মও আব্রাহামীয়।

ইহুদি ধর্ম:
ইহুদি ধর্ম (হিব্রু:יְהוּדִים ইয়াহুদীম) অত্যন্ত প্রাচীন, একেশ্বরবাদী ধর্ম। ধারণাগত মিল থেকে ধর্মতাত্ত্বিকগণ ধারণা করেন যে, ইহুদি ধর্মের ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠেছে খ্রিস্ট ধর্ম, ইসলাম ধর্ম ইত্যাদি ইব্রাহিমীয় ধর্ম। এই ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ওল্ড টেস্টামেন্টের প্রথম পাঁচটি বইকে গণ্য করা হয়: জেনেসিস, এক্সোডাস, লেভিটিকাস, নাম্বারস, এবং ডিউটেরোনমি। এই পাঁচটি বইকে একত্রে "তোরাহ"ও (Torah) বলা হয়ে থাকে। মুসলমানগণ মোজেসকে মূসা নবী হিসেবে মানেন। এবং মুসা নবীর উপর নাজিলকৃত ধর্মগ্রন্থকে তাওরাত নামে অভিহিত করেন। ইহুদি ধর্মবিশ্বাসমতে, ঈশ্বর এক, আর তাঁকে জেহোবা (Jehovah, YHWH) নামে আখ্যায়িত করা হয়। মোসেয হলেন ঈশ্বরের একজন বাণীবাহক। ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের মতোই ইহুদিগণ পূর্বতন সকল বাণীবাহককে বিশ্বাস করেন, এবং মনে করেন মোজেসই সর্বশেষ বাণীবাহক। ইহুদিগণ যিশুকে ঈশ্বরের বাণীবাহক হিসেবে অস্বীকার করলেও, খ্রিস্টানগণ ইহুদিদের সবগুলো ধর্মগ্রন্থ (ওল্ড টেস্টামেন্ট)কে নিজেদের ধর্মগ্রন্থ হিসেবে মান্য করে থাকেন। ইহুদি ধর্ম সেমেটিক ধর্ম হিসেবেও অভিহিত। ২০১২ সালের তথ্যমতে পৃথিবীতে ইহুদির সংখ্যা ১৪০ লক্ষ যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ০.২ শতাংশ।

দ্রুজ ধর্ম:
দ্রুজ ( আরবী-درزي, দারজি অথবা দুরজি, বহুবচন دروز, দুরুজ; হিব্রু: דרוזים, "দ্রুজিম") একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম এবং সামাজিক সম্প্রদায়। দ্রুজদের আবাসভূমি সিরিয়া, লেবানন। ইসরাইল, এবং জর্ডানে। দ্রুজ ধর্মকে আলাদা ধর্ম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় না। কারণ এই ধর্মের ভিত্তিমূল ইসলাম। দ্রুজ ধর্ম মূলত শিয়া ইসলামের একটি শাখা। দ্রুজদের ধর্ম বিধানে ইব্রাহিমীর ধর্মসমূহের পাশাপাশি নিওপ্লাতিনিক এবং পিথাগোরীয় মতবাদের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। দ্রুজগণ নিজেদেরকে “আহলে তাওহীদ” (একেশ্ববাদী মানুষ বা একতাবদ্ধ মানুষ) অথবা “আল মুয়াহিদুন” বলে পরিচয় দেয়। লেভান্ত বিশেষ করে লেবাননের ইতিহাস গঠনে দ্রুজদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। দ্রুজদের সামাজিক রীতিনীতি মুসলমান এবং খ্রিস্টানদের থেকে ভিন্ন।

হিন্দু ধর্ম:
হিন্দুধর্ম ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম ধর্মবিশ্বাস। হিন্দু ধর্মাবলম্বীগণ স্বীয় ধর্মমতকে সনাতন ধর্ম (सनातन धर्म) নামেও অভিহিত করেন। হিন্দুধর্মের সাধারণ "ধরনগুলির" মধ্যে লৌকিক হিন্দুধর্ম ও বৈদিক হিন্দুধর্ম থেকে বৈষ্ণবধর্মের অনুরূপ ভক্তিবাদী ধারার মতো একাধিক জটিল মতবাদগুলির সমন্বয়ের এক প্রচেষ্টা লক্ষিত হয়। যোগ, কর্মযোগ ধারণা, ও হিন্দু বিবাহের মতো বিষয়গুলিও হিন্দুধর্মের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।

হিন্দুধর্ম একাধিক ধর্মীয় ঐতিহ্যের সমন্বয়ে গঠিত। এই ধর্মের কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই। লৌহযুগীয় ভারতের ঐতিহাসিক বৈদিক ধর্মে এই ধর্মের শিকড় নিবদ্ধ। হিন্দুধর্মকে বিশ্বের "প্রাচীনতম জীবিত ধর্মবিশ্বাস" বা "প্রাচীনতম জীবিত প্রধান মতবাদ"২৬২৭২৮২৯ আখ্যা দেওয়া হয়।

জনসংখ্যার বিচারে হিন্দুধর্ম খ্রিষ্টধর্ম ও ইসলামের পরেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্মমত। এই ধর্মের অনুগামীদের সংখ্যা ১০০ কোটিরও বেশি। এদের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি হিন্দু বাস করেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রে। এছাড়া নেপাল (২৩,০০০,০০০), বাংলাদেশ (১৪,০০০,০০০) ও ইন্দোনেশীয় দ্বীপ বালিতে (৩,৩০০,০০০) উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় হিন্দুরা বাস করেন।

হিন্দুধর্মের শাস্ত্রগ্রন্থের সংখ্যা প্রচুর। হিন্দুশাস্ত্র শ্রুতি ও স্মৃতি নামে দুই ভাগে বিভক্ত। এই গ্রন্থগুলিতে ধর্মতত্ত্ব, দর্শন ও পুরাণ আলোচিত হয়েছে এবং ধর্মানুশীলন সংক্রান্ত নানা তথ্য বিবৃত হয়েছে। এই গ্রন্থগুলির মধ্যে বেদ সর্বপ্রাচীন, সর্বপ্রধান ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য প্রধান ধর্মগ্রন্থগুলি হল উপনিষদ্‌, পুরাণ, ও ভারতীয় মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারত। ভগবদ্গীতা নামে পরিচিত মহাভারতের কৃষ্ণ-কথিত একটি অংশ বিশেষ গুরুত্বসম্পন্ন ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা পেয়ে থাকে।


বৌদ্ধ ধর্ম:
বৌদ্ধ ধর্ম বা ধর্ম (পালি ভাষায় ধম্ম) গৌতম বুদ্ধ কর্তৃক প্রচারিত একটি ধর্ম বিশ্বাস এবং জীবন দর্শন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দিতে গৌতম বুদ্ধের জন্ম। বুদ্বের পরিনির্বাণের পরে ভারতীয় উপমহাদেশ সহ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রসার হয়। বর্তমানে বৌদ্ধ ধর্ম দুটি প্রধান মতবাদে বিভক্ত। প্রধান অংশটি হচ্ছে হীনযান বা থেরবাদ (সংস্কৃত: স্থবিরবাদ)। দ্বিতীয়টি মহাযান নামে পরিচিত। বজ্রযান বা তান্ত্রিক মতবাদটি মহাযানের একটি অংশ। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, মায়ানমার, চীন, জাপান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ও কোরিয়াসহ পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে এই ধর্মবিশ্বাসের অনুসারী রয়েছে। সবচেয়ে বেশি বৌদ্ধধর্মাবলম্বী বাস করেন চীনে। আক্ষরিক অর্থে "বুদ্ধ" বলতে একজন জ্ঞানপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত, জ্ঞানী, জাগরিত মানুষকে বোঝায়। উপাসনার মাধ্যমে উদ্ভাসিত আধ্যাত্মিক উপলব্ধি এবং পরম জ্ঞানকে বোধি বলা হয় (যে অশ্বত্থ গাছের নীচে তপস্যা করতে করতে বুদ্ধদেব বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন তার নাম এখন বোধি বৃক্ষ)। সেই অর্থে যে কোনও মানুষই বোধপ্রাপ্ত, উদ্বোধিত এবং জাগরিত হতে পারে। সিদ্ধার্থ গৌতম এইকালের এমনই একজন "বুদ্ধ"। আর যে ব্যক্তি এই বোধি জ্ঞান লাভ বা ধারন করেন তাকে বলা হয় বোধিসত্ত্ব। বোধিসত্ত্ব জন্মের সর্বশেষ জন্ম হল বুদ্ধত্ব লাভের জন্য জন্ম। জাতকে, বুদ্ধ বোধিসত্ত্ব হিসেবে ৫৪৮ (মতান্তরে ৫৪৯) বার বিভিন্ন কূলে (বংশে) জন্ম নেবার আগে উল্লেখ আছে। তিনি তার আগের জন্মগুলোতে প্রচুর ভালো বা পুণ্যের কাজ করেছিলেন বিধায় সর্বশেষ জন্মে বুদ্ধ হবার জন্য জন্ম গ্রহণ করেন। বুদ্ধত্ব লাভের ফলে তিনি এই দুঃখময় পৃথিবীতে আর জন্ম নেবেন না, এটাই ছিলো তাঁর শেষ জন্ম। পরবর্তী বুদ্ধ জন্ম না নেওয়া পর্যন্ত পৃথিবীতে তাঁর শাসন চলবে।

জৈন ধর্ম:
জৈনধর্ম (সংস্কৃত: जैन धर्म) প্রাচীন ভারতে প্রবর্তিত একটি ধর্মমত। বর্তমানে বিশ্বের নানা দেশে এই ধর্মমতাবলম্বীদের দেখা যায়। জৈনধর্মের মূল বক্তব্য হল সকল জীবের প্রতি শান্তি ও অহিংসার পথ গ্রহণ। জৈন দর্শন ও ধর্মানুশীলনের মূল কথা হল দৈব চৈতন্যের আধ্যাত্মিক সোপানে স্বচেষ্টায় আত্মার উন্নতি। যে ব্যক্তি বা আত্মা অন্তরের শত্রুকে জয় করে সর্বোচ্চ অবস্থা প্রাপ্ত হন তাঁকে জিন (জিতেন্দ্রিয়) আখ্যা দেওয়া হয়। প্রাচীন ধর্মগ্রন্থগুলিতে জৈনধর্মকে শ্রমণ ধর্ম বা নির্গ্রন্থদের ধর্মও বলা হয়েছে। কথিত আছে, তীর্থঙ্কর নামে চব্বিশ জন মহাজ্ঞানী কৃচ্ছ্বসাধকের একটি ধারা পর্যায়ক্রমে জৈনধর্মকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন। এঁদের মধ্যে ত্রাবিংশ তীর্থঙ্কর ছিলেন পার্শ্বনাথ (খ্রিষ্টপূর্ব নবম শতাব্দী) ও সর্বশেষ তীর্থঙ্কর ছিলেন মহাবীর (খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দী)। আধুনিক বিশ্বে জৈনধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম হলেও এই ধর্ম বেশ প্রভাবশালী। ভারতে জৈন ধর্মবলম্বীদের সংখ্যা প্রায় ১০,২০০,০০০। এছাড়া উত্তর আমেরিকা, পশ্চিম ইউরোপ, দূরপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া ও বিশ্বের অন্যত্রও অভিবাসী জৈনদের দেখা মেলে।

জৈনরা প্রাচীন শ্রমণ অর্থাৎ, কৃচ্ছ্বসাধনার ধর্মকে আজও বহন করে নিয়ে চলেছেন। ভারতের অপরাপর ধর্মমত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাঁর প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষিত হয়। শিক্ষাক্ষেত্রে বৃত্তিদানের একটি প্রাচীন প্রথা জৈনদের মধ্যে আজও বিদ্যমান; এবং ভারতে এই সম্প্রদায়ের সাক্ষরতার হার অত্যন্ত উচ্চ। শুধু তাই নয়, জৈন গ্রন্থাগারগুলি দেশের প্রাচীনতম গ্রন্থাগারও বটে।

শিখ ধর্ম:
শিখধর্ম একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে পাঞ্জাব অঞ্চলে এই ধর্ম প্রবর্তিত হয়। এই ধর্মের মূল ভিত্তি গুরু নানক দেব ও তাঁর উত্তরসূরি দশ জন শিখ গুরুর (পবিত্র ধর্মগ্রন্থ গুরু গ্রন্থ সাহিব এঁদের মধ্যে দশম জন বলে বিবেচিত হন) ধর্মোপদেশ। শিখধর্ম বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম ধর্মীয় গোষ্ঠী।৪৭ শিখ ধর্মমত ও দর্শন গুরমত (অর্থাৎ, গুরুর উপদেশ) নামেও পরিচিত। শিখধর্ম কথাটির উৎস নিহিত রয়েছে শিখ শব্দটির মধ্যে; যেটি সংস্কৃত মূলশব্দ শিষ্য বা শিক্ষা থেকে আগত।

শিখধর্মের প্রধান বক্তব্য হল ওয়াহেগুরু অর্থাৎ সর্বব্যাপী ঈশ্বরের প্রতীক এক ওঙ্কার-এর প্রতিভূ ওয়াহেগুরু-তে বিশ্বাস। এই ধর্ম ঈশ্বরের নাম ও বাণীর নিয়মবদ্ধ ও ব্যক্তিগত ধ্যানের মাধ্যমে মোক্ষলাভের কথা বলে। শিখধর্মের একটি বিশিষ্টতা হল এই যে, এই ধর্মে ঈশ্বরের অবতারতত্ত্ব স্বীকৃত নয়। বরং শিখেরা মনে করেন ঈশ্বরই এই ব্রহ্মাণ্ডের স্বরূপ। শিখেরা দশ জন শিখ গুরুর উপদেশ ও গুরু গ্রন্থ সাহিব নামক পবিত্র ধর্মগ্রন্থের অনুশাসন মেনে চলেন। উক্ত ধর্মগ্রন্থে দশ শিখ গুরুর ছয় জনের বাণী এবং নানান আর্থ-সামাজিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের বক্তব্য লিপিবদ্ধ রয়েছে। গুরু গোবিন্দ সিংহ এই গ্রন্থটিকে দশম গুরু বা খালসা পন্থের সর্বশেষ গুরু বলে ঘোষণা করে যান। পাঞ্জাবের ইতিহাস, সমাজ ও সংস্কৃতির সঙ্গে শিখধর্মের ঐতিহ্য ও শিক্ষা ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। শিখধর্মের অনুগামীরা শিখ (অর্থাৎ, শিষ্য) নামে পরিচিত। সারা বিশ্বে শিখেদের সংখ্যা ২ কোটি ৬০ লক্ষের কাছাকাছি। শিখরা মূলত পাঞ্জাব ও ভারতের অন্যান্য রাজ্যে বাস করেন। অধুনা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশেও ভারত বিভাগের পূর্বে লক্ষাধিক শিখ বসবাস করতেন।

শাক্ত ধর্ম
শাক্তধর্ম (সংস্কৃত: शाक्तं, Śāktaṃ; আক্ষরিক অর্থে শক্তিবাদ) হিন্দুধর্মের একটি শাখাসম্প্রদায়। হিন্দু দিব্য মাতৃকা শক্তি বা দেবী পরম ও সর্বোচ্চ ঈশ্বর – এই মতবাদের উপর ভিত্তি করেই শাক্তধর্মের উদ্ভব। এই ধর্মমতাবলম্বীদের শাক্ত (সংস্কৃত: शक्त, Śakta) নামে অভিহিত করা হয়। হিন্দুধর্মের প্রধান তিনটি বিভাগের অন্যতম শাক্তধর্ম। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অন্য দুটি বিভাগ হল বৈষ্ণবধর্ম ও শৈবধর্ম।
শাক্তধর্মমতে, দেবী হলেন পরব্রহ্ম। তিনি এক এবং অদ্বিতীয়। অন্য সকল দেব ও দেবী তাঁর রূপভেদমাত্র। দর্শন ও ধর্মানুশীলনের ক্ষেত্রে শাক্তধর্মের সঙ্গে শৈবধর্মের সাদৃশ্য লক্ষিত হয়। যদিও শাক্তরা কেবলমাত্র ব্রহ্মের শক্তিস্বরূপিণী নারীমূর্তিরই পূজা করে থাকেন। এই ধর্মে ব্রহ্মের পুরুষ রূপটি হল শিব। তবে তাঁর স্থান শক্তির পরে এবং তাঁর পূজা সাধারণত সহায়ক অনুষ্ঠান রূপে পালিত হয়ে থাকে।
প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই ভারতে শক্তিপূজা প্রচলিত। ২২,০০০ বছরেরও আগে ভারতের প্যালিওলিথিক জনবসতিতে প্রথম দেবীপূজার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরবর্তীকালে সিন্ধু সভ্যতার যুগে এই সংস্কৃতি আরও উন্নত রূপে দেখা দেয়। বৈদিক যুগে শক্তিবাদ পূর্বমর্যাদা হারালেও পুনরায় ধ্রুপদী সংস্কৃত যুগে তার পুনরুজ্জীবন ও বিস্তার ঘটে। তাই মনে করা হয়, অনেক ক্ষেত্রেই "হিন্দু ঐতিহ্যের ইতিহাস নারী পুনর্জাগরণের ইতিহাস রূপে লক্ষিত হয়"।

শাক্তধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, সংস্কৃত সাহিত্য ও হিন্দু দর্শনের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল শক্তিবাদ। এমনকি আজও জনপ্রিয় হিন্দুধর্মের উপর এই মতবাদের প্রভাব অপরিসীম। ভারতীয় উপমহাদেশ ও তার বাইরেও বহু অঞ্চলে তান্ত্রিক ও অতান্ত্রিক পদ্ধতি সহ একাধিক পন্থায় শাক্ত ধর্মানুশীলন চলে। যদিও এই ধর্মের বৃহত্তম ও সর্বাধিক প্রচলিত উপসম্প্রদায় হল দক্ষিণ ভারতের শ্রীকুল (ত্রিপুরসুন্দরী বা শ্রী আরাধক সম্প্রদায়) এবং উত্তর ও পূর্ব ভারতের, বিশেষত বঙ্গদেশের কালীকুল (কালী আরাধক সম্প্রদায়)।

জরথুস্ত্র
জোরোয়াষ্টার (গ্রিক Ζωροάστρης, Zōroastrēs) বা জরথ্রুস্ট্রা (এভেস্টান: Zaraθuštra), অথবা জরথ্রুস্ট (ফার্সি ভাষায়: زرتشت ​), ছিলেন একজন প্রাচীন পারস্যীয় ধর্ম প্রচারক এবং জরথ্রুস্ট ধর্ম মতের প্রবর্তক। জরথ্রুস্ট এমন একটি ধর্ম, যা ছিল প্রাচীন ইরানের আকামেনিদ, পার্থিয়ান এবং সাসানিয়ান সাম্রাজ্যের৫৩ জাতীয় ধর্ম; যা মূলত বর্তমানে আধুনিক ইরানের জরথ্রুস্ট সম্প্রদায় এবং ভারতের পার্সী সম্প্রদায় কর্তৃক পালিত হয়।

জরথুস্ত্র ধর্ম প্রাচীন আকামেনিদ সাম্রাজ্যের পূর্ব অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করে। ধর্ম দার্শনিক জেরোয়াষ্টার প্রাচীন ইরানী ঈশ্বর তত্ব সরল ভাবে ব্যাখ্যা করা শুরু করেন। তিনি ঈশ্বরের দুটি রূপের কথা বর্ণনা করে। ধর্ম প্রচারক জরথ্রুস্ট সাধারনভাবে স্বীকৃত একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব, কিন্তু তার সমসাময়িক কাল সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে তেমন কিছুই জানা যায়না। অনেক পন্ডিতের মতানুসারে তিনি আনুমানিক ১২০০ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ সময়ের একজন মানুষ, যিনি প্রাচীন ধর্মমত প্রবর্তকদের অন্যতম, যদিও অন্য অনেকের মতে তিনি ১৮০০ খ্রীস্ট পুর্বাব্দ হতে ৬ষ্ঠ খ্রীস্ট পূর্বাব্দ মধ্যবর্তী সময়ের একজন ধর্ম প্রচারক ছিলেন।

বাহাই ধর্ম:
বাহাই ধর্ম বা বাহাই বিশ্বাস হচ্ছে বাহাউল্লাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একেশ্বরবাদী একটি ধর্ম বা বিশ্বাস। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পারস্যে (বর্তমানে ইরান) এই ধর্মের উৎপত্তি। মূলত মানবজাতির আত্মিক ঐক্য হচ্ছে এই ধর্মের মূল ভিত্তি। বিশ্বে বর্তমানে ২০০-এর বেশি দেশ ও অঞ্চলে এই ধর্মের আনুমানিক প্রায় ৬০ লক্ষ অনুসারী রয়েছে।

বাহাই বিশ্বাস অনুসারে ধর্মীয় ইতিহাস স্বর্গীয় দূতদের ধারাবাহিক আগমণের মাধ্যমে ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়েছে। এইসব দূতদের প্রত্যেকে তাঁদের সময়কার মানুষদের সামর্থ্য ও সময় অনুসারে একটি ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই সকল স্বর্গীয় দূতদের মাঝে আছেন ইব্রাহিম, গৌতম বুদ্ধ, যীশু, মুহাম্মাদ ও অন্যান্যরা। সেই সাথে খুব সাম্প্রতিককালে বাব ও বাহাউল্লাহ। বাহাই ধর্ম মতে এসকল দূতগণ প্রত্যেকেই তাঁদের পরবর্তী দূত আসার ব্যাপারে, ও তাঁদেরকে অনুসরণ করতে বলে গেছেন। এবং বাহাউল্লার জীবন ও শিক্ষার মাধ্যমে দূতগণের এই ধারা ও পূববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলোর অঙ্গীকার সম্পূর্ণ হয়েছে। মানবতা সমষ্টিগত বিবর্তনের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে ধরা হয়েছে, এবং বৈশ্বিক মাপকাঠিতে সার্বিকভাবে শান্তি, সুবিচার ও ঐক্য প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে বর্তমান সময়ের প্রয়োজনীয়তা।
‘বাহাই’ (উচ্চারণ: bəˈhaɪ) শব্দটি একটি বিশেষণ হিসেবে বাহাই বিশ্বাস বা ধর্মকে নির্দেশ করতে বা বাহাউল্লার অনুসারীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। এটি উদ্ভূত হয়েছে আরবি বাহা’ থেকে, যার অর্থ ‘মহিমা’ বা ‘উজ্জলদীপ্তি’। ধর্মটিকে নির্দেশ করতে পূর্বে বাহাইজম বা বাহাইবাদ পরিভাষাটি ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে ধর্মটির সঠিক নাম বাহাই বিশ্বাস।

কনফুসীয় ধর্ম:
কনফুসীয় ধর্ম (সরলীকৃত চীনা: 儒学; ঐতিহ্যবাহী চীনা: 儒學; পিনয়িন: Rúxué এই শব্দ সম্পর্কে Listen ) চীনের একটি নৈতিক ও দার্শনিক বিশ্বাস ও ব্যবস্থা যা বিখ্যাত চৈনিক সাধু কনফুসিয়াসের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ কনফুসিয়াস হলেন কনফুসীয় ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। এটি মূলত নৈতিকতা, সমাজ, রাজনীতি, দর্শন এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও চিন্তাধারাসমূহের সম্মিলনে সৃষ্ট একটি জটিল ব্যবস্থা যা একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতি ও ইতিহাসে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। অনেকের মতে এটি পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত হতে পারে। কারণ এই দেশগুলোতে এখন কনফুসীয় আদর্শের বাস্তবায়নের উপর বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে। কনফুসিয় মতবাদ একটি নৈতিক বিশ্বাস এবং দর্শন। এটাকে ধর্ম বলা হবে কিনা এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে মতভেদ আছে। অনেক শিক্ষাবিদ কনফুসিয় মতবাদকে ধর্ম নয় বরং দর্শন হিসেবে মেনে নিয়েছেন। কনফুসিয় ধর্মের মূলকথা হচ্ছে মানবতাবাদ।

শিন্তো ধর্ম
শিন্তো ধর্ম জাপান ভূমিতে প্রচলিত একটি ধর্ম। এটাকে আচার ধর্ম বলা হয়। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রথা এবং আচারের মাধ্যমে এই ধর্ম পালিত হয় যা বর্তমান এবং অতীতের মাঝে যোগসূত্র স্থাপন করেছে। জাপানী পুরাণ খ্রিস্টের জন্মের ৬৬০ বছর পূর্বে শিন্তো ধর্ম উৎপত্তি লাভ করে৭৫ খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতকে কোজিকি এবং নিহন শকি'র ঐতিহাসিক দলিলে শিন্তো আচারের কথা লিপিবদ্ধ আছে।
শিন্তো শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দেবতার পথ। শিন্তো শব্দটি শিন্দো শব্দ থেকে এসেছে। শিন্ডো শব্দটির মূল খুঁজে পাওয়া যায় চীনা শব্দ শেন্ডো থেকে। শিন্তো শব্দটি দুটি শব্দ নিয়ে গঠিত। শিন অর্থ ইংরেজী স্পিরিট বা আধ্যাত্বিক শক্তি এবং তো অর্থ পথ।

শিন্তো জাপানের প্রধান ধর্ম। দেশটির ৮০% মানুষ বিভিন্ন ভাবে শিন্তো রীতিনীতি পালন করে কিন্তু জরীপে খুব অল্প সংখ্যক লোক নিজেদেরকে শিন্তো ধর্মানুসারী বলে পরিচয় দেয়।

তাওবাদ
তাওবাদ বা দাওবাদ চীনের একটি প্রাচীন ধর্মমত। প্রাচীন দার্শনিক কনফুসিয়াসের সমসাময়িক লাও জে এই তাও মতবাদ প্রচার করেন। তাঁর মতবাদ কনফুসিয়াসের মতো জীবনবাদী ছিল না। তাঁকে আধ্যাত্মবাদী বা প্রকৃতিবাদী বলা চলে। চীনা জীবনধারায় এই মতবাদ এখনও বৌদ্ধ ও কনফুসীয়বাদের সঙ্গে মিশ্রিত হয়ে আছে। তাও শব্দের অর্থ পথ।

ক্যাও দাই
'ক্যাওদাই বা ক্যাও দাই মতবাদ (ভিয়েত্নামিজ: Đạo Cao Đài 道高臺, "মহা শক্তির পথ"; চীনা: 高台教; পিনয়িন: Gāotáijiào) হচ্ছে একটি একেশ্বরবাদী ধর্ম। ১৯২৬ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনামের তায় নিনহ শহরে এই ধর্মের আবির্ভাব হয়। এই ধর্মের পুরো নাম হচ্ছে দাই দাও তাম কাই ফো দো("The Great Faith for the Third Universal Redemption") ক্যাও দাই, আক্ষরিক অর্থে সর্বোচ্চ শাসক অথবা সর্বোচ্চ শক্তি হচ্ছেন উপাস্য দেবতা, যিনি এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, যাকে ক্যাও দাই অনুসারীরা উপাসনা করে। ক্যাও দাই অনুসারীরা পৃথিবী স্রষ্টাকে সংক্ষেপে দুক ক্যাও দাই বলে যার পুরো নাম ক্যাও দাই তিয়েন অং দাই বো তাত মা হা তাত। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত ক্যাও দাই উপাসনালয়গুলো দেখতে একই রকম। আকৃতি এবং রঙের সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রাচীন মিশরীয় ধর্ম:
প্রাচীন মিশরের ধর্মীয় বিশ্বাস মিশরীয় পুরাণে প্রতিফলিত হয়েছে। তিন হাজার বছরেরও কিছু বেশি সময় ধরে মিশরে পৌরানিক ধর্মীয় বিশ্বাস প্রচলিত ছিল। খ্রীষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে মিশর গ্রিক শাসকদের পদানত হলেও মিশরের পৌরানিক ধর্ম টিকে থাকে। পরবর্তীতে গ্রিক শাসকদের স্থানে রোমান শাসকগন এসে মিশর অধিকার করে নেন এবং সপ্তম শতক পর্যন্ত রোমানরাই মিশর শাসন করেন, এসময়ও পৌরানিক বিশ্বাস টিকে ছিল তবে গ্রিকো-রোমান ধর্মীয় বিশ্বাসের সংস্পর্ষে এসে কিছু পরিবর্তন সাধিত হয়। অবশেষে ৬৪৬ সালে আরব মুসলমানদের হাতেমিশরের শাসনভার চলে গেলে পৌরানিক ধর্ম বিলুপ্তির পথ ধরে।

প্রাচীন মিশরের ইতিহাস সাধারণত প্রাচীন সাম্রাজ্য, মধ্য সাম্রাজ্য এবং নতুন সাম্রাজ্য - এই তিনটি কালে বিভক্ত করে আলোচনা করা হয়। মিশরীয় সভ্যতার তিনটি স্বর্ণযুগকে এই তিনটি কালের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। মিশরের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পাশাপাশি তার পুরাণও বিবর্তিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই পৌরানিক চরিত্রগুলোকে যুগ ভেদে বিভিন্ন ভূমিকায় দেখা যায়।
প্রাচীন সাম্রাজ্যে মিশরীয় পুরাণের দেব-দেবীগন ছিলেন অনেকটা আঞ্চলিক, অঞ্চল ভেদে বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা চলত। সেই হিসেবে প্রাচীন সাম্রাজ্যের দেবকূলকে পাঁচটি প্রধান দলে ভাগ করা যায় ।
হেলিওপোলিসের নয়জন দেব-দেবী - আতুম, গেব, আইসিস, নুট, ওসাইরিস, নেপথিস, সেত, শু এবং তেফনুত ।

হার্মোপোলিসের আটজন দেব-দেবী - নুনেত ও নু, আমুনেত ও আমুন, কুকেত ও কুক, হুহেত ও হুহ
এলিফ্যান্টাইনের খুম-সাতেত-আনুকেত ত্রয়ী
থিবিসের আমুন-মাত-খেনসু ত্রয়ী
মেম্ফিসের প'তাহ-সেকমেত-নেফেরতেম ত্রয়ী

এখনো লিখছি। ভালো লাগলে জানাবেন। বাকি অংশ শেয়ার করবো এখানে। চাইলে উইকিপিডিয়ায় গিয়ে পড়তে পারেন।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:২১
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×