somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রেম বিষয়ক প্রতিপাদ্য - ১

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত দশদিন হতে রফিক প্রেম আর বিষাক্ত চেতনাগত অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে একটা চিন্তার আকৃতি খোজার চেষ্টা করছে। চায়ের কাপে হাজার হাজার আন্দোলনের পরেও সেগুলো কেন যেন আকৃতি শুন্য থেকে যাচ্ছে। মুনিম নতুন সেল ফোন কিনে যখন অতিরিক্ত আনন্দে ক্যাম্পাসে আক্ষরিক অর্থেই হাটা শুরু করেছিল সেদিন রফিক এইসব তদর্থক চিন্তাকে বড়ই ফালতু বলে উড়িয়ে দিয়েছিল।

ভোগবাদ শব্দটি রফিকের সমালোচনার মূল অস্র হলেও সেদিন সে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল ভোগবাদী চিন্তা খুব ফান্ডামেন্টাল। তাকে এই শতকের প্রগতি, সমাজতান্ত্রিক জ্বালাময়ী কবিতা দ্বারা ধামাচাপা দেয়া যায় না। কারন বেশ দামে কেনা সেল ফোন টি রফিককে কোন কারন ছাড়াই আকরষন করেছিল। যা কট্টর প্রগতিবাদী রফিকের জন্যে বেমানান।

প্রেম নিয়ে এইসব উথলানো চিন্তাভাবনার কোন বস্তুগত ব্যাখ্যা দাড় করাতে না পেরে এইসব চিন্তভাবনা কে মিডিয়া,বা পতিত সাংস্ক্বৃতিক অবক্ষয়ের প্যারাসাইট হিসেবে ঊড়িয়ে দিল। সোজা বাংলায় আজাইড়া।

গলি দিয়ে হাটতে হাটতে রফিক এই চিন্তা ভাবনা গুলোকে দূরে নিক্ষেপের চেষ্টা করল। ময়লা রং এর সাড়ি সাড়ি অবিন্যাস্ত বাড়ি। বিভিন্ন উচ্চতার আর বিভিন্নমাত্রার ক্ষত যুক্ত। পলেস্তরা খসে খসে যায়গায় যায়গায় তৈরী হয়েছে রোমান ঐতিহ্যের দেয়াল স্থাপত্য। রফিক বাজী ধরে বলতে পারবে ১৩১ নম্বর বাড়িটার দেয়ালে তৈরী প্রাক্বতিক যাদৃচ্ছিক চিত্রটি রোমান সম্রাট অগাস্টাসের মত হয়েছে। গলির দুপাশে ঢাকনা হীন ড্রেন। থকথকে ময়লার অলস সান্দ্র প্রবাহ। ভনভন করে জানা অজানা পোকাগুলো উড়ছে। একপাশে একপাল অর্ধনগ্ন শিশু ছালচামড়া হীন একটা ফুটবলে লাথি মেরেই যাচ্ছে। পাশে একটা মধ্যবয়সী ফেড়িওয়ালা ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুন্য চোখে। রফিক তার পাশ দিয়ে যাবার সময় "কুলফি" বলে একটা আনুনাসিক কষ্টচর্চিত শব্দ বের হল তার মুখ দিয়ে। ভীশন অস্বাস্থ্যকর দুই টাকার কুলফি খাবার জন্য রফিকের প্রাণ পুড়ে যাচ্ছিল না। তারপরেও কি মনে করে কুলফি নিল সে।

বাসায় ঢোকার আগে পকেট থেকে বিবর্ণ সেলফোন টা বের করল। বেলা বেশ পড়ে গেছে। সূর্যটা সারাদিন আলো বিইয়ে এখন বুড়োথুত্থুড়ে জটাধারী জ্ঞান তাপসের মত পশ্চিমকাশে রক্ত রঙ ছড়াচ্ছে।

বাসার ভেতরে কলিং বেল টেপার সাথে সাথেই সে শুনল ভেতর থেকে গর্জন শোনা যাচ্ছে। তার মানে উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। রণতড়ী থেকে একের পর এক নেমে আসছে এফ সিক্সটিন। বিস্ফোরনে উড়ে যাচ্ছে শান্তি। রফিক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার শৈশব কৈশর গেছে পারিবারিক চিরন্তন মহাযুদ্ধের মাঝে শ্র্যাপ্নেলে বিদ্ধ হতে হতে। অর্থনৈতিক ঘাটতি নাকি জীবনের একান্ত নিরর্থকতাকে বুড়ো আংগুল দেখানোর উদ্দেশ্যে এই প্রাথ্যহিক থিয়েটারে তার বাবা মা অংশ নেয় রফিক বুজে উঠতে পারে না।

বাসায় রফিকের চলাফেরা অনেকটাই অনুপ্রবেশ কারীর মত। নিজের উপস্তথিতি এই পারিবারিক হিংসা আর গোলাবারুদের অপার সৌরভের গ্যাস চেম্বারে অনেকটাই রফিককে মানসিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায়। তাই সর্পচলনে অভ্যস্ত হয়াটাকেই রফিক সর্বোত্তম ডিফেন্স মেকানিজম মনে করে। রিশাদ প্রায়ই বলে বুদ্ধিস্ট ফিলোসফির কন্টেম্পোরারি ভার্সন নির্বান লাভের উপযুক্ত উপায়,"keeping low profile"

রফিকের রুমের সিলিং ফ্যানটা ঘুরছেই, হাল্কা ঘট ঘট শব্দ। বাতাস উতপাদনের হার অত্যন্ত সীমিত। সুতরাং সিলিং ফ্যান্টার অস্তিত্ব কেমন যেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মত অর্থহীন। রফিকের চিন্তা আবার গ্রেনেডে মরা ভিয়েতনামিজ বিপ্লবীর বিচ্ছিন্ন লাশের মত ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে লাগল। প্রেম কি জানা হঠাত এত জরুরী হয়ে গেল কেন? প্রাকৃতিক নির্বাচন আর মিউটেশন জনিত তত্বের মাঝে এইসব অসংজ্ঞায়িত মানসিক অভিক্রীয়া রফিককে খুব জ্বালাতন করতে লাগল। যাকে ডিফাইন করা যায় না তাকে কিভাবে বোঝা সম্ভব? বুড়ো দাদু ডারউইন কি যথেষ্ঠ ছিল না? প্লেটোনিক তত্বের পুর্জাগরন কেন দরকার। রফিকের মাথার চারপাশে এলিয়টের কবিতার ফাকে ফাকে ফ্রয়েড আর হ্যাভল্ক এলিস রা ঘোরাঘুরি করতে লাগল। ভীষন বিতৃষ্ণা নিয়ে কখন যেন রফিকের স্নায়ু অবশ হয়ে আসল, এবং উপরের ফ্যান্টা পারিবারিক মহাযুদ্ধের আবহ সংগীত তৈরী করতে লাগল।

২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×