প্রেম বিষয়ক প্রতিপাদ্য - ১
"তোর মেটামরফসিস হচ্ছে"
চিন্তাযুক্ত একটা ঢং এর পশ্চাদপটে বিস্ফোরক হাসির উতস লুকিয়ে রেখে বলল রিশাদ। মুখের পেশীগুলো ব্যাপক বিনোদনের সাথে টানছে তার কনফুসিয়স মার্কা চেহারাটাকে পাল্টে টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনের মডেল বানিয়ে দিতে।
রফিক বিরক্ত হয়ে জানতে চাইল
"কেন বলতেছিস?"
"তুই সাধারনত দীর্ঘসময় দার্শনিক থাকিস না, দার্শনিকতা হুট করে তোর মাঝে আসে আর চলে যায়। এবার মনে হয় ভীষনতর কিছুতে পেয়েছে তোকে। তোর চেহারাও সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মত হয়ে যাচ্ছে।"
রফিক সিগমুন্ড ফ্রয়েড শব্দটাতে রিশাদের অনাবশ্যক জোড় দেয়াতে ক্ষীপ্রতার সাথে তার চোখ গুলো হেটে যাওয়া একজন আবেদনময়ীর গজেন্দ্রগমন থেকে সরিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল
"বালের কথা বলবি না। এমনেতেই ভাল্লাগতেছে না, তার উপর আইছস কাটাছেড়া করতে। আর প্রমথ চৌধুরীর ভাষা ফলাইতেছস ক্যান, মাটির মানুষ ,ময়লার মত কথা বলবি"
বলতে বলতে আড় চোখে গজগামিনীকে আরেকবার দেখে নিল রফিক। সর্বজনীন পেন্ডুলামের মত দুলছে সুডৌল নিতম্ব, শতাব্দীজুড়ে জমা জ্ঞান, বিজ্ঞান সব কি নিদারুন অর্থহীন এই দৃশ্যের কাছে। মানব সমাজের মুখোশ আর আধ্যাত্নিক গালগল্পের বাগাড়ম্বরের এনসাইক্লোপিডিয়ার কথা ভেবে হেসে ফেলল রফিক।
পাশে তাকিয়ে দেখল রিশাদ কখন যেন উঠে গেছে। ক্যাফের পাশে সবুজ ঘাসে মিলির সাথে বসে আছে।
"ধুর"
মুখটা তেতো বানিয়ে ভাবতে লাগল এই পৃথিবীর অগ্রগতি কিভাবে মেয়েমানুষের আচলের ভাজে যুগের যুগ আটকে গেছে। মানুষ কিভাবে আটকে গেছে এই অসংজ্ঞায়িত অনুভুতির অচেনা চোরাবালিতে। এককালে রিশাদ গলার রগ ফুলিয়ে রিসেশনের বিশ্লেষন করত, বাজারের ক্ষুধা আর কর্পোরেট ফটকাবাজির যাত্রাপালায় নি:স্ব মানুষের কথা বলতে বলতে ওর চোখে জমা হত আজন্ম ক্রোধ। পুজিবাজারের দানব এর উতপত্তি এবং বিকাশের কথা বলতে বলতে বৃষ্টির মত থুতু ছেটাত, রফিক কখোনো বিরক্ত হয় নি এই মেঘহীন মানব উপলব্ধির বৃষ্টিতে। এখন নিশ্চয়ই রিশাদ সাবধানে কথা বলে, গলার রগটা কখোনোই দৃশ্যমান হয় না, তার উতসাহী উপলব্ধী মেকি সামাজিক সৌজন্যকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তীব্র বেগে ওভারটেকে করে না।
আর এই অকাল মনুষ্যচেতনাগ্নির মৃত্যু ছোটখাট নীল জামা পরা প্রসাধন হীন শ্যামলা এই মেয়েটার জন্যে?মসৃন মেঘের পাশে উকি দেয়া গ্রহন আক্রান্ত সুর্যের মত চোখের অধিকারীনির জন্যে? পাতার মত কোমল শিরা বয়ে যাওয়া সমতলের হাতের জন্যে? লাজুক লুকিয়ে থাকা জলপ্রপাতের অসাবধানে বেড়িয়ে আসা একরাশ ঢেউ এর মত চুলের জন্যে? অসংখ্য প্রাকৃতিক শৈবালের মত সবুজাভ আবেশের একটি ঠোটের জন্যে?সবুজ ঘাসের উপর বসে থাকা এই কোমল দেবীর জন্যে?
রফিক বিদ্যুতস্পৃষ্টের মত ঝাকি দিয়ে উঠল। কি ভাবছে সে এসব? এসব কোথা থেকে আসল? এগুলো তো চেনে না, নিজেকে শারারীক তৃপ্তি দেবোর সময় যেমন অনুভুত হয় এই অনুভুতি গুলো খুব আলাদা। সেগুলো খুব ঝকঝকে খোলা তলোয়ারের মত তীক্ষ্ন হতে পারে কিন্তু এই গুলো অতলান্তের মত গভীর।
স্বর্গীয় বা নারকীয় যাই হোক না কেন, ফ্রয়েড হ্যাভলক এলিস যেন কোচকানো ব্যাঙ্গাত্নক আকৃতি নিয়ে রফিকের চারপাশের একসময়কার প্রেডিক্টেবল বাতাসকে হাইজেনবার্গীয় অনিশ্চয়তা দিয়ে ঢেকে ফেলল।
রফিক সবুজ প্রেক্ষাপটে সবুজ মিলির কাব্যিক দৃশ্যটাকে একটা খটমটে দার্শনিক চিন্তা দিয়ে ঢেকে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে হাটতে লাগল।