প্রেম বিষয়ক প্রতিপাদ্য - ২ প্রেম বিষয়ক প্রতিপাদ্য - ১
ঝরঝর করে বৃষ্টি পরছে। আকাশটা এত ঘোলাটে রহস্যময় হয়ে আছে যে ঘন্টাখানেক আগেও তার আগ্নেয় নীলাভতার কথা সম্পূর্ন অস্বীকার করা যায়। ঝমঝম শব্দে ট্রাম্পেট বাজিয়ে স্নান করাচ্ছে এই ময়লা, আস্তাকূড় আকৃতির বিশাল পৃথিবীটাকে। রফিক বৃষ্টির মাঝে কম আলোয় ঘোলাটে সবুজ দেখতে দেখতে ভাবল, বৃষ্টি পরের ভেজা সবুজের কথা, তার জ্বলজ্বলে যৌবনের কথা, বৃষ্টির সময় যে সবুজ গুটিয়ে লুকিয়ে থাকে তার কথা। আর বৃষ্টির পরের রৌদ্রে খাপখোলা তলোয়ারের মত , উন্নত স্তনের সপ্তদশীর মত, আগুন ছড়ানো কামনার মত জেগে উঠা সবুজ!! কিভাবে জৈবিক সব চাহিদা আর কামনার চারপাশে ঘুরপাক খায় মানবিক পলকা মুখোশ, আর কিভাবে বৃষ্টির ঘোলাটে সবুজ রোদের মাঝে গিয়ে যৌবনবতী হয়ে পরে, মাথা নেড়ে রফিক ভাবল সবই বিভ্রম। ঘোলাটে সবুজ থেকে আগ্নেয় নারী শরীর।
এই কংক্রীটের সমুদ্রে যান্ত্রিকআবেগুচ্ছ আর আর্টিফিশিয়াল সব সুগন্ধ দুর্গন্ধের মাঝে ভেজা মাটির গন্ধটা রফিকের দ্রোহে ক্রোধে পাথরসম অনুভুতিগুলোকেও দুর্বাঘাসের স্পর্শের মত কোমল করে দিল। কেন যেন সত্যেন দত্তের বস্তাপচা ছড়াজাতীয় কবিতার অপচেষ্টা তার মাঝে ঝিলিক দিয়ে গেল হঠাৎই। ঝর্ণা!!
তবে তিরিশের আধুনিকেরা আবার দলবল নিয়ে তাকে গত শতকীয় রোমান্টিক মেয়েলী শীৎকার থেকে উদ্ধার করল দ্রুতই যখন জনৈক উদাস বালিকা এককোনে আকাশের দিকে তাকিয়ে তার পরনের ছেড়াখোড়া কাপড় আর দারিদ্রের চাবুকের দাগ উপেক্ষার বিফল চেষ্টা করে যেতে লাগল। মনে মনে রফিক বলল "আমি ব্যাপ্টাইজড হলাম এই নরকে!"
একে তো বৃষ্টি তার উপর সমাজতান্ত্রিকদের ধর্মঘট, তাই লোকজন নেই বললেই চলে। ধর্মঘট সুপারভিশনের জন্যে কোন পাতি কমিউনিস্টকে আশে পাশে দেখা গেল না। "দীর্ঘজীবি হোক লেনিন" গলা ফুলিয়ে আবৃত্তি করা মুনিমকে রফিক দেখে এসেছে হলে গোগ্রাসে পুজিবাদী হলিউডী সিনেমা গিলতে।
চপচপে ভিজে একটা নারীমুর্তি যখন ঢুকল ক্যাফেটেরিয়াতে তখন রফিক খুব আগ্রহ সহকারে চায়ের কাপ থেকে একটা পিপড়ে তোলার চেষ্টা করছিল।
"কি করছিস?"
"তিন টাকার চায়ের অর্ধেক যাতে এই পরিশ্রমী পিপড়ের পেটে না যেয়ে অলস রফিকের পেটে যায় সেটা নিশ্চিত করছি"
রফিক মোটামুটি না তাকিয়েই উত্তর দিল।
"তুই সারাদিন এইসব কি আজাইরা জিনিস ভাবিস রে? মুনিম বলল তোর নাকি মেটামরফসিস হয়ে তেলাপোকা হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে "
"কিছুই ভাবি না, চা খাই"
"খাইতে থাক। রিশাদ রে দেখছিস?"
"দুই ফোটা বৃষ্টি পড়লেই রিশাদের খোজ করতে হবে? আরে ধুর তোদের লাইগা তো পৃথিবীর স্বাভাবিক কাজকর্ম থাইমা যাইতে হইব। সবকিছুতেই রোমান্সের অনুষঙ্গ পাস। ফাউল।"
"এইগুলা বলিস না, কথায় কথায় কান্ট ,হেগেল মারলে মানুষ সুপিরিয়র হইয়া যায় না, তবে ছাগলা দাড়ি বড় হইতে পারে"
"হ্যা পৃথিবীতে তো লজিক্যাল সুস্থ মস্তিস্কের কিছু থাকতে পারবে না তগো লাভবার্ড দের দাবড়ানিতে।সবকিছুতেই ফিচ ফিচ কইরা গ্লিসারিন কান্নার সুযোগ খুজবি"
"চ্যাতোস ক্যান এত, প্রেমে পড়ছস নাকি? কেমন যেন ডিফেন্স মেকানিজম টাইপ আচরন মনে হইতেছে"
রফিক চমকে গিয়ে চায়ের কাপ উল্টে নিজের আধময়লা ফতুয়ার মাঝে একটা উত্তরাধুনিক ইম্প্রেশনিজম মার্কা ছবি উৎপাদন করল।
মিলি হাসতে হাসতে উল্টে পাল্টে যেতে লাগল। ওড়না দিয়ে চোখের পানি মুছতে গিয়ে মুখের উপর লেপ্টে থাকা চোখের কাজলকে আরো বিস্তৃত করে দিল। তাতে মিলির বিশেষ মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হল না। ভীষন বিব্রত অবস্থায় রফিক একবার মিলির আড়চোখে কাজল লেপ্টানো মুখের দিকে তাকালো। যদিও সম্পূর্নভাবে নিশ্চিত ভাবে ব্যাপারটা বলতে পারবে না, এবং সেটাকে অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দেয়ার জন্যে সে প্রস্তুত তার পরেও মন্থরীকৃত সময়ের মাঝখানে ত্বরণিত হৃদপিন্ডের অদ্ভুত মিশেল তাকে বাকরুদ্ধ করে দিল।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৩:১৮