somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেবা প্রকাশনী ও কিছু কথা

০৩ রা মে, ২০১২ রাত ৯:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছর তিন চার আগের বইমেলার কথা। সেবা প্রকাশনীর স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। প্রচন্ড ভীড়, বেশিরভাগই স্কুল কলেজের ছেলেমেয়ে। সামনে এগুতে না পেরে এক কোনায় দাড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ কানে ভেসে এল এক তরুণীর মন্তব্য – “ভাবতে অবাক লাগে একসময় এই বই গুলো কিভাবে যে পড়েছি! এখন বুঝি এগুলো আসলে কোনো লেখাই না।“ তারপর কয়েকজন ভারতীয় লেখকের প্রশংসা করে তিনি বললেন যে এগুলোই আসল সাহিত্য। তাকিয়ে দেখলাম আমাদের সমবয়সী এক তরুণী তার বান্ধবীর সাথে কথা বলছে।

আমার বলতে ইচ্ছা হলো – “একজন পাঠক পড়তে পড়তেই পাঠক হয়ে উঠে। সবকিছুই সবাই পড়ে না,যেটা তার ভালোলাগে সেটাই সে পড়ে। সেবার সবচেয়ে বড় অবদান এটাই যে, কিশোর কিশোরীদের ভালোলাগার মতো বই তারা প্রকাশ করেছে। সে বইগুলো সাহিত্যের মাঝে পড়ুক আর নাই পড়ুক, পড়ে তারা মজা পেয়েছে এবং ধীরে ধীরে তারা অন্য বইও পড়তে শিখেছে। আপনার এখন যে পাঠক মন তৈরি হয়েছে, তার ভিত্তি কিন্তু তৈরি হয়েছে এসব ‘বস্তাপচা’ বইগুলো পড়েই।“

বললাম না। কারণ বক্তা একজন তরুণী, তায় আবার সুন্দরী। বলামাত্র ঝগড়া লেগে যেতে পারে এবং নিশ্চিতভাবেই সে আশেপাশের মানুষের সমর্থন পাবে। আমি একটু গুতাগুতি করে সামনে গিয়ে কয়েকটা বই কিনে সরে আসলাম।

ক্লাস ফাইভ বা সিক্স এ থাকার সময় পরিচয় হয় সেবার সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং উপভোগ্য সিরিজের সাথে। মাসুদ রানা। বইয়ের শুরুতে রানার পরিচিতি পড়ার পর বইটা না পড়ে থাকা খুব কঠিন। “সীমিত গন্ডীবদ্ধ জীবনের সীমানা ছাড়িয়ে আপনাকে নিয়ে যাবে স্বপ্নের এক মায়াবী জগতে। আপনি আমন্ত্রিত।“ সেই আমন্ত্রন অগ্রাহ্য না করে পড়া শুরু করলাম মাসুদ রানা। প্রথম পড়েছিলাম “বিদেশী গুপ্তচর-১”। দ্বিতীয় পর্বটা আঙ্কেলের আলমারিতে ছিলো না। সেটা পড়ার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে অনেক কটি বছর। পূর্ণাঙ্গ বই পড়েছিলাম “আমিই রানা” তারপর একে একে পড়া হয়েছে “ধ্বংস পাহাড়”, “ভরতনাট্যম”, “সতর্ক শয়তান” সহ অসংখ্য বই। তবে সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে “অগ্নিপুরুষ” বইটি। কেউ যদি হুমায়ুন আহমেদের অমানুষ বইটি পড়ে মুগ্ধ হয়ে থাকেন, তাহলে অনুরোধ করব “অগ্নিপুরুষ” পড়ে দেখার । পড়ার পর অমানুষকে মনে হবে দুধের স্বাদ ঘোল দিয়ে মেটানো হয়েছে। অবশ্য “অমানুষ” ও প্রথম রহস্য পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে ছাপা হয়েছিলো। দুটোই “ম্যান অন ফায়ার” বইয়ের অবলম্বনে লেখা। কিন্তু যে আবেগ নিয়ে “অগ্নিপুরুষ” লেখা হয়েছে, “অমানুষ’ এ তা নেই। এখনো “অগ্নিপুরুষ” পড়লে আমি শিহরিত হই।

সেবার আসল রত্ন যেটাকে আমি মনে করি, তা হচ্ছে এর অনুবাদ। বাংলাদেশ এবং ভারতের অনেক ভালো লেখকেরা অনেকে অনুবাদ করেছেন, কিন্তু আমি এ কথা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, সেবার অনুবাদ এর চেয়ে অনেক অনেক ভালো।

অনুবাদ মানেই প্রতিটি লাইন বা প্যারার বাংলা অনুবাদ নয়। এমনকি মূল কাহিনীর পুরোটা অনুবাদ করতে হবে এমন কোন বাঁধাধরা নিয়মও নেই। মূল কাহিনীর মজাটা পাওয়া যায়, এমনভাবে উপস্থাপনা করলেই সেটাকে ভাল অনুবাদের কাতারে ফেলা যায়। আর সেবার অনুবাদ এগুলো অনুসরন করে বলেই সে অনুবাদগুলো হয়ে উঠে অসাধারণ।

সেবাকে নিয়ে যে যাই বলুক, আমি একটা কথা বলতে কখনোই কুন্ঠাবোধ করবো না – আমার যে পাঠকসত্বা আছে, তার জন্য আমি সেবা প্রকাশনীর কাছে ঋণী। কৈশোরের সেই অলস দুপুরগুলো রাঙিয়ে দিয়েছিলো যে বইগুলো, সেগুলোকে আমি কি করে ভুলি?
৪৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×