somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইমেলার বই নিয়ে গেমুর একান্তালাপঃ বসন্তদিন (পর্ব-১)

১১ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বসন্তদিনে একটি চিঠি সংগ্রহ বলা যায়। খুব সহজে চিঠি সংগ্রহ বললেই যে পুরো ব্যাপারটা হজম করে ফেলেছেন এমনটি ভাববেন না।
এই চিঠিগুলো বহন করে চলেছে প্রণয়ে জড়িয়ে পড়া অপরিণত হৃদয় জোড়ার ভেতরের প্রকৃত অবস্থা। প্রেমের রোগে আক্রান্ত হবার পর মানুষের যে জটিল ও হতবুদ্ধিকর অবস্থা হয় সেটা জানা হয়ে যাবে আপনার এই বইটি পড়লে। তাছাড়া তখনকার জটিল কমিউনিকেশন সিস্টেম ইন্টারনেটের অপব্যবহার(!) কিভাবে তখন হতো আর আজকালও যেটা ফেসবুকে হচ্ছে।
মডেম দিয়ে আমিও ইন্টারনেট চালিয়েছি, লাইন চলে যাবার পরের হা-হুতাশ আমিও করেছি। কিন্তু এই দুইজন!

ইশশ!!
কিভাবে যে আঁতিপাঁতি করে মনের মানুষটিকে পাবার আশায় মনিটরের দিকে তাকিয়ে তাকয়ে সারাটা রাত পার করে দিয়েছে..!!!!!!!!!
থাক সেটা আর বলছি না। আসুন ব্যাপারটা নিয়ে আরেকটু জানি।

সে অনেক দিন আগের কথা(সে যুগে আমার জন্মই হয়নি বলা চলে। ;) ), বরুণা ও প্রতিফলন নামে দুজন ছিলেন এই সামু ব্লগের অন্যতম আলোচিত চরিত্র।
শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক ভিন্নতার কারণে দুটি অবুঝ হৃদয়ের চাওয়া পাওয়াকে পূর্ণতা দিতে রাজি হচ্ছিলেন না উভয় পরিবার। ব্লগের অনেকেই এ ব্যাপারে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন যেমন, তেমনি সেই ব্যাপারটিকে ফালতু বলে উড়িয়ে দেবার লোকেরও ঘাটতি ছিল না। অনেকেই ব্যাপারটিকে বাঁকা চোখে দেখেছেন, উল্টাপাল্টা কথা বলেছেন।
যাইহোক, টিনএজ সময়ের ছেলে মেয়েদের মানসিকতা সম্পর্কে জানতে বরুণা ও প্রতিফলনের প্রেমালাপ আপনাকে ভাল ধারণা দিবে। সত্যি কথা বললে আমিও ঠিক বুঝি না, মেয়েরা কেন এত রহস্যময় হয়! নিজেকে আঁধারের আঁচলে রেখে তারা ছেলেদের দেখতে খুব পছন্দ করে। বরুণা প্রথমদিনের আলাপে মেসেঞ্জারে বলেছিল এটাই শেষ আলাপ, আর নয়। আমাদের আর আলাপ হবে না কোনদিন।

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি, প্রতিজ্ঞাভঙ্গের পাপ মানুষ তখনই করে যখন প্রেমের মতো সর্বাধিক শক্তিশালী কোন শক্তি তাকে মোহিত করে ফেলে। আপনি যদি প্রণয়ের ধারে কাছে এসে পড়েন তবেই হয়েছে, ভবিষ্যৎ সংকটের কথা ভেবে বা যেকোন কারণের কথা চিন্তা করে বের হয়ে আসতে চাইবেন তারপরও আপনাকে বেহায়ার মতো জাংক মেইল চেক করতে হবে, ইনবক্স খুলে একটি নামকে খুঁজতেই হবে, নয়া কোন মেসেজ এসেছে কি-না সেটা ফলো করতেই হবে। চাতক পাখির মতো সে অনলাইনে আসার সবুজ চিহ্ণটির দিকে ক্ষীন নজর থাকতেই হবে।

বুঝতেই পারছেন, তারা কিন্তু কথা বলেছিল। না বলে কি পারবে? সর্বনাশা প্রেমের ছোবলে দুজনেই যে বিষাক্রান্ত হয়ে গিয়েছিল! তারা একে অপরের মাঝে বিলীন হয়ে গিয়েছিল। আত্মার খাঁপে খাঁপে একে অপরকে খুঁজে পেয়ে যাচ্ছিল বারবার। ট্যাঙলড এনাইম মুভির রাজকন্যা রাপুনজেলের কথাই বারবার মনে হচ্ছিল আমার।

বরুণা+প্রতিফলনঃ
মোটেই বাড়িয়ে বলছি না, তারা মিশে গিয়েছিলো একে অপরের সত্তার মাঝে। এই মিশে যেতে গিয়ে সাধারণ বুদ্ধিটুকুও হারিয়ে ফেলেছিল তারা। শুনেছি প্রেমে পড়লে মানুষ বোকা হয়ে যায়। তারা দুইজনই আসলে বুদ্ধিসুদ্ধি হারিয়ে কি-সব কান্ড কারখানা বাঁধিয়ে বসেছিল।
বইটা পড়ার সময় বারবার আমার আফসোস হচ্ছিল। বুকের মাঝে খপ করে ওঠেছে মাঝে মাঝে। কারণ আমার সাথেও কারো এইরকম কিছু হয়েছিল।

একবার। কফি খেতে বসে বন্ধুদের সাথে চ্যালেঞ্জপুর্বক আমি দুস্টুমি করে আফরি(ছদ্মনাম, আসল নাম বললে তো চিনে ফেলতে পারেন ;) )কে নাকু নাকু করেছিলাম। সবকিছু প্লান মোতাবেকই হচ্ছিল, হঠাৎ এসে উপস্থিত হলো ওর এক কাজিন। আমি তো চিনি না বেটিকে, আর ও লজ্জায় লাল হচ্ছিল, ব্যাপারটা মোটেও পাত্তা দিচ্ছিলাম না। আমার উৎপাতে ঐ কাজিনকে নিজেই চলে যেতে হয়েছিল।
এপর বেরিয়ে যখন আফরি আমাকে বলল ওটা ওর কাজিন ছিল তখন আমি শুকনো টন-টন পিচের ওপর ধপাস করে পড়ে গিয়েছিলাম! বেচারা কুল ব্রেইন আর কাজ করছিল না।
এই টাইপ সিলি ব্যাপার স্যাপার অন্য বরুণার জীবনে আছে। প্রেমের রোগে আক্রান্ত রোগীর অবস্থা আরো চমৎকারভাবে জানতে চান? তাহলে দেখুন, লেখকের কলমেই সেটা উঠে এসেছে। এই যে-

তারপরও বলে থাকি....।
যখন তোমার সাথে থাকি।
তারপরও ভালো থাকি, যখন কথা বলি;
কিংবা কথা না বলি,
শুধু থাকা; তারপরও...।
ভালো থাকি যখন অপেক্ষায় থাকি; যদি তুমি আসো।
কখনো অল্পক্ষণ কখনো অনেকক্ষণ,
......
আমি ঘিরে থাকি তোমাকেই;
কিংবা হয়তো কিছুই মনে করা হয় না, তারপরেও ভালো থাকা হয়।
কখনো কখনো অপমানের কীট দংশন করতে চায়;
অভিমানের ঝড় দুলিয়ে দিতে চায়;
অসহায়তায় পেয়ে বসে, অস্তিত্বের প্রতিটি বিন্দুকে;
তবুও এই আমার ভাল থাকা।

খুব আপন আমার এই ভাল থাকা;
তোমার কথা বলা, কথা না বলা;
তোমার ব্যঙ্গ করে বলা শব্দের তীক্ষতা।
তোমার কষ্টের নীল রঙগুলি,
আমাকে আগের মতো করেই কাঁদায়, হাসায়, ভাবায়.....।
কিংবা হয়তো কিছুই না!
তারপরও ভালো থাকি;
...যখন তোমার ভাবনায় থাকি!


এই পংক্তিগুলো লেখকের লেখা প্রথম কবিতার অংশ। আপনি যদি উনার লেখা ইচ্ছেগুলো উড়িয়ে দিলাম প্রজাপতির পাখায় পড়ে থাকেন, তারা নিশ্চয়ই জানেন এই কবির কাব্য-শক্তি কেমন। পাঠককে বন্দী করে কবিতার মহাকাশে অনায়েসে নিয়ে আসার কঠিন কাজটি তাঁর দ্বারা এত সহজ যে আমি বুঝতেই পারি না।
প্রতিফলনও কি কম যান! এই পড়েই দেখুন না উনার কলমে কি নিঁখুতভাবেই উঠে এসেছে তাদের প্রাণের কথা!!
"আচ্ছা তোমার কি মনে পড়ে ঐ দিনটার কথা? খুব সকাল থেকে কথা শুরু করলাম ফোনে। তুমি হেটে হেটে যাচ্ছিলে; কৃষ্ণচুড়া ছায়াঘেরা রাস্তাটা দিয়ে? মাঝে মাঝে গতি হারানো রিকশাগুলি টুংটাং করে অলস বেল বাজিয়ে যাচ্ছিল দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। বিশুদ্ধ বাতাসের লোভে বেরিয়ে পড়া প্রাতঃ ভ্রমণকারীরা আড়চোখে তাকালেও প্রাইভেসির দুরত্বটুকু ঠিকঠাক বজায় ছিল। যেখানে আমি সবসময় আসি; সেখানটাতেই অনেকক্ষণ থাকলে তুমি। কথা কি ফুরোতে চায়? তবুও যেতে হয়! যাবার সময় ঠিক ঠিক একটা ছেলেমানুষি!
বেঞ্চে পেন্সিল দিয়ে লিখে রাখলে আমাদের নাম!
অঝর বর্ষার দিন তখন! তারপরেও কদিন পরে গিয়ে ঠিক খুঁজে বের করেছিলাম সেই নাম দুটি! হয়তো এখনো আছে ওখানে। আর যদি নাও থাকে; কী এসে যায়! লিখেছ ধূসর কংক্রিটের বুকে; আর সেটা চিরস্থায়ী হয়ে গেল কিনা আমার হৃদয়ে! কী করি বলো তো?"


আমার কথা বলি, ভালবাসা হলো খুব খুব খুব শক্তিশালী এক বন্ধন, ছায়া হয়ে লেগে থাকতে চায় সারাক্ষণ, ভাললাগার খুনসুটি দিয়ে শুরু হয়ে বিচ্ছেদের নিদারুণ যন্ত্রণার প্রহর পেরিয়ে যেতে হয়। এরপরই না সফলতার চুড়ান্ত সিঁড়িতে পা রাখা! চিরস্থায়িত্বের সীল নিজেদের ললাটে এঁকে নেবার পথ বের করতে হয় ভালবাসায় পতিত পথিককেই। তবেই সেটা সফলতা!! বরুণা ও প্রতিফলনের এই ভালবাসা নিঁখাদ হয়ে থাকলে পুর্ণতার সিঁড়িতে পা রাখারই কথা। আর আমি বলি কি- এমনও তো হতে পারে, আমাদের চেনাজানা ভালবাসা পুরোটাই একটি সুখের স্বপ্ন, এরপর একটি কালো পর্দা, তখনই সেটা হয়ে যায় সাপে গিজগিজ করা দুঃস্বপ্ন! প্রতিফলন কি পারে বরুণাকে নিয়ে স্বপ্নের সেই সুখের ভালবাসার কুঁড়েঘর নির্মাণ করতে?
জানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে, পড়তে হলে...। ;)



বইঃ বসন্তদিন
লেখকঃ শায়মা হক
প্রচ্ছদঃ শায়মা হক
মুল্যঃ ১৭৫ টাকা
সেলঃ +880 18 18772009
মেইলঃ [email protected]

পরিবেশকঃ এক রঙা এক ঘুড়ি প্রকাশনী
৩২/২, শুকরাবাদ, ঢাকা।
সেলঃ +880 18 14874701



শায়মা হক, যিনি এই ব্লগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ বললে অত্যুক্তি হবে না। সেই শায়মা বরুণা হয়ে কোন এক বিচিত্র খেয়ালে অন্য একজন বন্ধুর(বন্ধু বলব নাকি প্রেমিক বলব সেটা ভেবে কূল পাচ্ছি না) সাথে মিলে এই অসাধারণ প্রেমের নিদর্শন আমাদের জন্য রেখে দিলেন।
এবারের একুশে বইমেলার কিছু বই পড়ে আমার অনুভূতি শেয়ার করতে এই আয়োজন। আগামি পর্বে হাসান মাহবুব আই মিন হামা ভাইয়ের নরকের রাজপুত্র নিয়ে আসবার ইচ্ছে আছে। :)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:০২
২৮টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×