somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতুলনীয় বেদান্ত দর্শন...পৃথিবীর প্রাচীনতম কিন্তু আজো একইরকম প্রাসঙ্গিক একটি সম্পূর্ন জীবন দর্শন। জানতে চান?? পরেই ফেলুন না !!

২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

​দেবশ্রী চক্রবর্তীর বয়ানে ...
.
বেদান্ত পর্ব ১
বেদান্ত সম্পর্কে লিখতে বসে আমার এই মূহুর্তে এক আচার্যের কথা খুব মনে পড়ছে । তিনি বেদান্ত দর্শনের একজন মহান পন্ডিত ছিলেন । একবার তাকে কিছু লোক আমন্ত্রন জানান বেদান্ত শিক্ষা দানের জন্য । তিনি সভায় উপস্থিত হয়ে বলেন, আমি এখানে কি বলতে এসেছি আপনারা জানেন ? তখন জনতা বলল না, আমরা জানি না । তিনি বললেন আমি তাহলে কিছু বলবো না কারন যে বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছি সে বিষয়ে কারুর কোন ধারনা নেই । এই বলে তিনি সেখান থেকে চলে গেলেন । পরের দিন আবার তাকে আমন্ত্রন জানানো হল, তার আসার আগে কতৃপক্ষ জনতাকে বললেন , আচার্য যদি প্রশ্ন করেন তাহলে বলবেন, হ্যা । আচার্য সভায় এসে যথারীতি প্রশ্ন করলেন এবং জনতা বললেন হ্যা । এই উত্তর শুনে আচার্য বললেন, আপনারা যখন সব জানেন, তাহলে আমি কিছু বলবো না । এই বলে তিনি চলে গেলেন । আবার আচার্য্য এক দিন সভায় এলেন, এবং এক প্রশ্ন আবার করতেই জনতার এক ভাগ বললেন হ্যা, আরেক ভাগ বললেন না । তখন আচার্য বললেন যারা না বললেন তারা যারা হ্যা বলেছেন তাদের কাছ থেকে শিখে নিন । এই বলে তিনি আবার চলে গেলেন । সবাই হততম্ব হয়ে গেলেন এবং কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না । এরপর কতৃপক্ষের বারংবার অনুরোধে তিনি আবার এলেন এবং দেখলেন জনতা এবার চুপ আছেন । তখন তিনি বুঝলেন যে এবার বেদান্ত শিক্ষার প্রকৃত সময় হয়েছে ।
বর্তমান যুগে মানুষ সহজেই সব কিছু শিখে নিতে চান । কিন্তু বেদান্ত শিক্ষা সহজে শেখার না । কারন দীর্ঘ পাচ হাজার বছর ধরে ক্রমাগত সঞ্চিত হয়ে এই জ্ঞান আমাদের কাছে এসেছে । আমি জানি আমার এই সংক্ষিপ্ত বিবরনে বেদান্তের সঠিক মর্যাদা হয় তো দিতে পারবো না, কিন্তু বেদান্ত কি ? তার উত্তর আমি দেবার চেষ্টা করবো ।
বেদান্ত- জ্ঞানের পরাকাষ্ঠা, প্রাচীন ঋষিদের শুদ্ধ প্রজ্ঞা ও অতীন্দ্রিয় অনুভূতি। ইহা বেদের সার বা সিদ্ধান্ত । উপনিষ বেদের অন্তে আছে বলে বেদান্ত । বেদের আক্ক্রিক অর্থ জ্ঞান । প্রসঙ্গত বলে রাখি । এই জ্ঞান এই প্রকৃতির মধ্যেই ছড়িয়ে ছিল , যা ঋষিরা ধ্যান যোগের মাধ্যমে অনুভব করেছিলেন । মাধ্যাকর্ষন শক্তি কিংবা ব্ল্যাক হো তত্ত্ব, সবই আবিষ্কারের আগে এই প্রকৃতিতেই ছিল । সবার পক্ষে তা অনুভব করা সম্ভব হয় নি । যারা অনুভব করেছেন তারাই এইসব তত্ত্বের আবিষ্কর্তা হয়ে পরিচিত হয়েছেন ।
এবার আলোচনা করবো, বেদান্তের প্রধান তত্ত্বগুলি কি ?
১) ব্রহ্ম পরম সত্য, অদ্বিতীয় , সৎ – চিৎ- আনন্দ । ইহার কোন নাম নেই, গুন নেই, ইহা অনাদি, অনন্ত , অব্যয় , অপরিবর্তনশীল এবং দেশ কাল কারনাতীত । এই বিরাট অনন্ত ব্রহ্ম নিজের মায়াশক্তির দ্বারা জগতে জীবরূপে নিজেকে প্রকাশ করেন । এই ভাবে তিনি এক হয়েও বহু হন । যখন ব্রহ্ম মায়াবিশিষ্ট হন তখন তাকে ঈশ্বর বলা হয় । এর অর্থ আমি তুমি বলে কিছু হয় না । আমরা সবাই এক এবং সেই পরম ব্রহ্ম । যার খেলায় আমরা ভিন্ন রূপে প্রকাশিত । তাই আমি যা কর্ম করছি, তুমি যা কর্ম করছ, সে যা কর্ম করছে সব কিছু এক জনই করছেন । তাই মন থেকে হিংসা দূর করো । আমি যা করতে পারছি না, তা সে তো করছে, তা হলেই হবে। কারন আমরা সবাই এক ।
২) এই বিশ্ব সংসার মরীচিকার জলের মতন প্রতীয়মান । যা সব সময় পরিবর্তনশীল । আমারা দেশ, কাল ও কারনত্বের মাধ্যমে জগতকে প্রত্যক্ষ করি । যখন জীব দেহ ধারন করে তখন থেকে দেশ আরম্ভ হয় , যখন চিন্তায় প্রবৃত্ত হয় তখন কাল আরম্ভ হয় আর সীমাবদ্ধ হলে কারনত্ব আরম্ভ হয় । মানুষ যখন সমাধি অবস্থায় থাকে, তখন এই সংসার বিলুপ্ত হয়ে যায় , সে তখন নিজের স্বরূপ বুঝে সেই অসিমে বিরাজ করে । আবার জাগ্রত অবস্থায় জগতে সংসারকে সে অনুভব করে । এর অর্থ আমরা যা দেখি, তার চিরস্থায়ী কোন অস্তিত্ব নেই । যা সর্বদা পরিবর্তনশীল । আজ আমি ব্রাহ্মন সন্তান হয়ে জন্মেছি, পরের জন্মে শুদ্র বংশে আমার জন্ম হতেই পারে । কারন আমার নিজেস্ব কোন পরিচয় তো নেই, আমি যখন দেহ ধারন করছি, আমার একটা পরিচয় হচ্ছে , সেটা আমার দেহের মরিচয় । তাই অর্থ, জাত, ধর্ম নিয়ে অহঙ্কার করো না । আজ আমি হিন্দুর হিন্দুর সন্তান, কিন্তু পরের জন্মে খ্রিস্টান হতেই পারি । এই দেশ ভারতবর্ষ আমার দেশ । আমার বলে কিছু হয় না , কারন আমি আত্মা, এই দেহের জাজ শেষ হলে পরের জন্মে পাকিস্তান কিংবা সিরিয়াতেও জন্মাতে পারি । সোন চিন্তা , কোন অনুভূতি চিরস্থ্যী না, স্থান, কাল, পাত্র বুঝে তা পরিবর্তনশীল । আত্মা যখন দেহ ধারন করে তখন সে সব কিছুর কারন খোজে, নিজেকে সংকীর্ন গন্ডিতে সে আবদ্ধ করে ফেলে । তাই উপনিষদ ধ্যান করতে বলছে, এর মধ্যে দিয়েই তুমি নিজেকে অর্থাত পরব ব্রহ্মকে অনুভব করবে ।
৩) মানুষের প্রকৃত পরিচয় সে পরম ব্রহ্ম , তাই সে কোন দিনো কোন পাপ করতেই পারে না । তারা যে ভুল করে তা অজ্ঞানতার জন্য করে । সূর্যোদয় হলে যেমন অন্ধকার কেটে যায় , মানুষের জ্ঞানদয় হলে সব অজ্ঞতা দূর যয়ে যায় । এবার পাঠক প্রশ করতেই পারেন, মানুষ যদি পরম ব্রহ্মের অংশ হয়, তাহলে সে কি করে ভুল করে ? আমি বলবো আত্ম শরীর ধারন করার পর সংসারের মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে সে কারনত্বে নিমগ্ন হয় । সব কিছুর কারন খোজে । ও আমাকে থাপ্পড় মেরেছে, আমি ওকে দশটা থাপ্পড় মারবো । এটা মায়ার জন্য হয় । ধ্যানের মাধ্যমে সে যখন উপলব্ধি করবে যে আমাকে মেরেছে সেও আসলে আমি নিজেই, তখন আর সে প্রতিশোধ নেবার কথা ভাববে না । বন্ধন ও মূক্তি মনে । দূর্বল আর বন্ধের কথা ভেবে মানুষ দূর্বল হয়, আর শক্তি আর মূক্তির কথা ভেবে সে শক্তিশালী হয় । কোন মানুষ দাসত্ব চায় না । কারন আত্মার স্বরূপ মূক্তি । মূক্তিতেই আনন্দ এবং মূক্তভাবই বেদান্ত মতে সমস্ত জীবের সহজাত প্রবৃত্তি । নিজের ভেতরে যে দেবত্ব আছে তার প্রকাশ করা বেদান্তের উদ্দেশ্য ।
৪) কিভাবে মানুষ তার অন্তর্নিহিত দেবত্বের প্রকাশ করতে পারে ? বেদান্ত চারটি যোগের নির্দেশ দিয়েছে । ক) কর্ম যোগ । কর্ম করে যাও , ফল কি পাবে তার প্রত্যাশা কখনো করবে না । খ) জ্ঞান যোগ । জ্ঞান আরোহন করো । জ্ঞান ছাড়া মূক্তি নেই । এই দেহ পরিত্যাগের সময় শুধু জ্ঞানটুকু নিয়ে যাবো যা পরবর্তী জীবনে আমাকে আরো সমৃদ্ধ করবে । গ) ভক্তিযোগ । যোগের অর্থ নিজের স্বরূপ উপলব্ধি করা এবং এই পথেই আমি মরীচিকা থেকে মূক্ত হয়ে পরম ব্রহ্মের সাথে নিজেকে মেলাতে পারবো । তার অর্থ রাজ যোগ ।
৫) উপনিষদের জ্ঞান এক মহা সমুদ্রের মতন, যা এই প্রকৃতির মধ্যেই মিলিয়ে ছিল, তাকে কোন দেশ, কাল, পরিস্থিতি কিংবা কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের মধ্যে আটকে রাখা যায় না । যেমন সূর্য কারোর একার সম্পত্যি না , তেমনি উপনিষদের জ্ঞান বিশেষ কোন ধর্মে সীমাবন্ধ রাখা যায় না । বেদান্ত সর্ব ধর্মের ঐকতানকে স্বিকার করে । কারন সব নদী এতেই এসে মিশেছে । যেমন সব নদী আলাদা আলাদা জায়গা থেকে জন্মে ধীরে ধীরে নিজের রূপ বদলে সেই সমুদ্রেই মিলিত হয় এও তাই । সব পথ মানুষকে সেই পরম ব্রহ্ম দর্শন করায় আর তা হচ্ছে সেই অনাদি, অনন্ত জ্ঞান , পরম ব্ররহ্ম জ্ঞান ।
বেদান্ত কোন বিশেষ বই পড়ে যানা সম্ভব না ।গত পাচ হাজার বছর ধরে এই জ্ঞান ক্রম বিকশিত হয়েছে । বেদান্তের তিনটি মূল শাস্ত্র ঃ উপনিষদ, ব্রহ্মসূত্র এবং গীতা ।
.
ক্রমশ:
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:০৮
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটা গাছ কাঠ হলো, কার কী তাতে আসে গেলো!

লিখেছেন নয়ন বড়ুয়া, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৬



ছবিঃ একটি ফেসবুক পেইজ থেকে

একটা গাছ আমাকে যতটা আগলে রাখতে চাই, ভালো রাখতে চাই, আমি ততটা সেই গাছের জন্য কিছুই করতে পারিনা...
তাকে কেউ হত্যা করতে চাইলে বাঁধাও দিতে পারিনা...
অথচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। কালবৈশাখী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৪



গত পরশু এমনটি ঘটেছিল , আজও ঘটলো । ৩৮ / ৩৯ সে, গরমে পুড়ে বিকেলে হটাৎ কালবৈশাখী রুদ্র বেশে হানা দিল । খুশি হলাম বেদম । রূপনগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×