বন্ধুত্ব দিবস নিয়ে যে ব্লগ টা লিখছি সেটা আসলে ঠিক বন্ধুত্ব দিবসের ব্লগ না। এই কথা গুলি অন্তত আমার কাছে বাস্তব।আজকাল নিজেকে পাগল লাগে।
.
এর কারণ টা একটু খুলে বলি। কাজের শেষে বন্ধুদের সবাই কে বিদায় দেওয়ার সময় হ্যান্ডশেক করবার জন্য সবার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম। সবাই হাসি হাসি মুখে হ্যান্ডশেক করলো, একজন করলো না। অপমানিত হলাম। নিজেকে সরকারী ভাবে পাগল ঘোষনা করবো কিনা ভাবছি, ঠিক তখনই সে আবার নিজে থেকেই হাত বাড়িয়ে দিল। আমি হাসলাম। এরপর কিছু সময় আমার এটা ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো যে, সেই যখন হ্যান্ডশেক করলো তাহলে প্রথমে কেন করলো না.?
.
আমি জানি এর উত্তর আমি সারা জীবনেও পাবোনা। পাবোনা এর কারণ সম্ভবত কিছু কিছু মানুষ নিজেকে লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসে। কোন মানুষের কাছেই সে সহজে ধরা দিতে চায়না। সহজে যারা ধরা দেয় তারা হয় আমাদের বন্ধু। বন্ধুরা এমন রহস্য করলে তাকে খিস্তি দেওয়া যায়। কানের গোঢ়ায় ঠাঁটিয়ে একটা চর মেরে মুখ গোমড়া করে বসে থাকা যায়। যারা বলে তাকে খিস্তি মারা যাবেনা, কোন কারণে ভীষন আনন্দ হলে কোন কারণ ছাড়াই তার বুকে ঝাঁপিয়ে পরে মাথার চুল ধরে টানাটানি করা যাবেনা তারা কখনই আমাদের বন্ধু হতে পারেনা। বন্ধু হলে গালাগালি খেতে আপনি বাধ্য। বন্ধুত্বে গালাগালি দরকার আছে। যে বন্ধুত্বে গালাগালি নেই সেই বন্ধুত্ব আসলে বন্ধুত্ব না। সেটা কোন সুগার হয়নি মানুষের কাছে চিনি ছাড়া লিকার চায়ের মত, খাওয়ার পর বোঝা যায়না চা খেলাম না তিতো।
.
তবে বান্ধবীরা কখনো গালাগালি দিতে পারেনা। তাদের গালাগালি বড় জোড় কুত্তা জানোয়ায় এবং খুব ক্ষেপে গেলে বালটা। একজন ছেলে বন্ধুই শুধু জানে একজন মেয়ে বন্ধুর মুখ থেকে এই 'বাল' কথাটা শুনতে তার কত ভালো লাগে। আমি এমন কয়েক জনকে চিনি। যারা আক্ষরিক অর্থেই আমার ভালো বন্ধু। আজকের সকালটাও আমার শুরু হয়েছে তাদের ভেতরই একজনের মুখে এমন 'বাল' শব্দটা শুনে। আমি এখনো তার মেসেজটা সিন করিনি। সিন করিনি কারণ সিন করলেই তাকে উত্তর করতে হবে। উত্তরের বদলে উত্তর এই করতে করতে একসময় হারিয়ে যাবে সেই মেসেজ। সাথে তার মুখ থেকে গালাগালি শোনার পর আমার মনের এই ভালোলাগা। আমি এত সহজে এই ভালোলাগাটা হারিয়ে যেতে দিতে চাইনা। কারণ আমি এটা ভালো রকম জানি যে মেয়েরা সহজে কোন মানুষকে গালাগালি করেনা। তারা যাদের কে গালাগালি করে বেশিরভাগ সময়ই সেই মানুষ গুলো তাদের প্রিয় হয়। সুতারং বান্ধবীর মুখে গালাগালি শুনে রাগ করবার কোন কারণ নেই।
.
এবং এটাও ভাববার কারণ নেই যে- মেয়েরা বন্ধু হতে পারে না। এ কথা ঠিক যে, মেয়েরা কখনো ছেলে বন্ধুর মত বন্ধু হতে পারবেনা। মেয়ে বন্ধু মানে মেয়ে বন্ধু। মেয়ে বন্ধু মানে গার্লফ্রেন্ড নয়, প্রেমিকাও নয়। মেয়ে বন্ধু মানে বান্ধবী।
.
এ পৃথিবীতে অনেকে ছেলেদেরই গার্লফ্রেন্ড থাকে প্রেমিকা থাকে কিন্তু একটা বান্ধবী থাকে না। একটা বান্ধবী মানে বাইরের- ভেতরের, মনের- প্রানের অনেক ব্যাপার, একটা বান্ধবী মানে আমার মন ভালো নেই- আমি কিছু জানিনা, তুই যে করে পারিস আমার মন ঠিক কর।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা বহু সময় এমন বন্ধু পেলেও হারিয়ে ফেলি। কোন মেয়ে দু-এক দিন আমাদের সাথে খুব ভালো ভাবে কথা বলে আমাদের বন্ধু হতে চাইলে আমাদের কে বুঝতে চাইলে তাকে প্রেম প্রস্তাব দিয়ে বসি। আমি একবারও বলছি না বন্ধু কখনো প্রেমিক অথবা প্রেমিকা হতে পারেনা। আমি বলছি বন্ধুত্ব আর প্রেম জিনিসটাকে গুলিয়ে ফেলা ঠিক না। এগুলো গুলিয়ে ফেললে হয়ত তেমন কোন ক্ষতি হয়না। তবে মন থেকে একটা প্রার্থনা চলে যায়। যে প্রার্থনায় কোন বন্ধু অথবা বান্ধবীর গলা জড়িয়ে নিষ্পাপ ভাবে বলা যায়, দিনশেষে এই পৃথিবীটা প্রেমের হোক। বন্ধুত্ব গড়ে তুলুক তার নতুন একটা সভ্যতা।
.
তবুও দিনশেষে আমরা সবাই বড় হয়ে যাই। হারিয়ে ফেলি ছেলেবেলা। হারিয়ে ফেলি বহু সম্পর্ক। এবং জীবনের এক পর্যায়ে এসে আবিষ্কার করি এই জীবনে সব সম্পর্কই খুব সহজ, শুধু একটা বন্ধু পাওয়াই টাফ। এমন এক বন্ধু যার প্রেমিকারে আমি ভাগিয়ে নিয়া গেলেও সে আমাকে পেটাতে আসবে না। বরং বুকে মাথা রেখে বলবে, মেয়েটা বড্ড ভালো রে, ওকে একটু দেখে শুনে রাখিস। আর শোন, এর জন্যে যেন আমাদের সম্পর্কে কোন আঁচ না পরে। তাহলে কিন্তু তোর খবর আছে। সেই প্রেমিকা থাক বা না থাক। বুকে মাথা রাখার জন্য সেই বন্ধুটাকে আমাদের প্রত্যেকেরই খুব দরকার।
.
দরকার এমন একজন বন্ধুকে জীবনের পথে চলতে চলতে কোন এক রাস্তার মোড়ে দুটো পথ আলাদা হয়ে গেলেও বহুদিন পর দেখা হলে মনে হবে আমরা আলাদা কখনই হইনি। এমন এক বন্ধু, এমন এক আবাল পাওয়া আসলেই খুব টাফ ব্যাপার। সবাই এমন মানুষ পায়না। যারা পায় তারা আগলে রাখুক। আর যারা পায়না তাদের ও চিন্তা করবার কারণ নেই।
.
আমি এমন একজনকে চিনি। আয়নার সামনে দাঁড়ালে রোজ দেখতে পাই তাকে। শুধু সমস্যা হচ্ছে আয়নার ভেতর ঢুকে ওই মানুষটাকে তো আর বুকে জড়িয়ে নেওয়া যায় না..! শুভ বন্ধুত্ব দিবস সবাই কে..!!
.
কৃতজ্ঞতা বন্ধু শেখর ভারতী ।