somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অবৈধ প্রেম ... এবং মার্ক্সবাদ এর জন্ম !! কৌতুহলী রা একবার পড়েই দেখুন !!!

০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"কার্ল... তোমার হাতটা কি গরম কার্ল.. আমাকে ছুঁয়ে থাকবে প্লিজ?"
"ফ্রেড, ও ফ্রেড, শোনো, এভাবে নয়, এখন নয় আর। আমি... আমি স্থির হতে পারছি না ফ্রেড.. আমি... আমি আসলে বঞ্চিত.."
বন্ধুর হঠাৎ এই আবেগ তথা উত্তেজনা মেশানো কথায় বিছানায় কিছুটা উঠে বসলেন ফ্রেডরিক। বহু বহুদিন বাদে কাল রাতে তিনি পেয়েছেন এক অক্লান্ত অবসর। তৃপ্তি কি একেই বলে? রক্ষণশীল ইয়োরোপের বজ্রকঠিন সামাজিক কানুন, বাইবেলের কারাগারে বন্দী সমাজে দাঁড়িয়ে এই ছোট্ট ছোট্ট মুক্তিপথগুলি খুঁজে নেবার জন্যই তো মানুষ বাঁচে। এই অকাল ভবঘুরের সাথে আলাপও তো কাফে ডি লা গ্র‍্যান্ডিতে... তারপর একযুগ কথা যেন দিয়েছিলেন একে অপরকে। অবশেষে এই রাত....
"কার্ল তুমি বৃথা ভাবছ... আমি তো আছি। আমি..."
"চুপ করো ফ্রেড। মিথ্যা স্তোক দিও না। তুমি... তুমি নিজে বলতে পারো তোমার কি ক্ষমতা? বঞ্চিত কি তুমিও নও? তোমার টাকা আছে। বড়লোক তুমি। তারপরেও একটুখানি সুখের খোঁজ তোমাকে লুকিয়ে করতে হয়। কি পার্থক্য ফ্রেড? বলো আমাকে? হয়তো আমার শিকলটা কমদামি লোহার, তোমারটা বেশী দামী সোনার, কিন্তু আসলে তো দুটোই বঞ্চিতের মুক্তিপথকে রূদ্ধ করে। তাই না?"
"হ্যাঁ, কার্ল। বুঝতে পারছি। অবশ্যই তোমার কথা সঠিক। কিন্তু..."
"কোন কিন্তু নয় ফ্রেড। ভাঙতে হবে। বাইবেলের এই কারাগার ভাঙতে হবে। ভাবো ফ্রেড, ভাবো, সেই আদিম সাম্যবাদী সমাজে কি তোমাকে এত লুকিয়ে আমার কাছে আসতে হত? জঙ্গলের কোন একটা নির্জন কোন কি পেতাম না? সেখানে সবুজ বড় বড় পাতা আড়াল করে রাখত আমাদের শরীর দুটোকে, আর আমরা ধীরে ধীরে ডুবে যেতাম একে অপরের মধ্যে...."
"কার্ল, ওহ্ প্রিয় কার্ল... অসম্ভব সুন্দর ফ্যান্টাসি। দাঁড়াও জাহাজ বুক করি। এরকম একটা কোথাও যেতেই হবে। বেয়ারা... বেয়ারা.."
"চুপ করো ফ্রেড। এখন বেয়ারাকে ডাকলে কি হবে সেটা বুঝতে আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখো আগে। আর বলো ওয়ার্ডরোব কোনদিকে?"
ফ্রেড লজ্জিত হল। তাড়াতাড়ি পিঠের তলা থেকে ড্রেসিং গাউন দুটো বার করে একটা নিজে জড়িয়ে আরেকটা বন্ধুকে দিল। ফ্রেড বন্ধুকে হারাতে চায় না। ফ্রেড এই একটা মাত্র মুক্তির মশালকে হাতছাড়া করতে চায় না।
"কার্ল, শোনো, তুমি হেলেনের সমস্যাটা নিয়ে ভেবো না। আমার উপর ভরসা রাখো। আমি ওটা এমনভাবে ব্যবস্থা করে দেব যাতে যে যাই বলুক শাস্তি তোমায় না পেতে হয়। উপরমহলে আমার চেনাশোনা তো আছেই, তাছাড়া এসব ব্যাপারে টাকা কথা বলে।" শান্তগলায় কথাগুলো বুঝাতে বুঝাতে হঠাৎ থেমে গেলেন ফ্রেডরিক। কার্লের চোখে জল।
জলভরা চোখে কার্ল বলল, "কিন্তু কেন এমন হবে ফ্রেড? কেন লোকে জীবনের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে? কেন রাস্ট্র তার দাঁত নখ বার করে হরিণ ও বাঘের মাঝে এসে বাঘকে সন্ত্রস্ত করবে, বঞ্চিত করবে? হেলেন আর আমার যা হয়েছে তা তো সেই আদিম সাম্যবাদী জঙ্গলের যুগ থেকে হয়ে আসছে, তাই না ফ্রেড? তবে সভ্যতার কারাগারে, বাইবেলের কারাগারে বন্দী থেকে সব জৈবিক, মানসিক সুখ হারিয়ে স‍র্বহারা হয়ে থাকতে হবে? কেন ফ্রেড কেন? সেই আদিম সাম্যবাদী সমাজে তো এমন ছিল না ফ্রেড। জঙ্গল ছিল। যে যেভাবে পারত, যেখানে পারত, প্রবেশ করত। হেলেনদের এত আস্পর্ধা ছিল না। জলের গ্লাসের মতই ছিল তারা। আহ্ ফ্রেড, দেখো জলের গ্লাস কেন ব্যক্তিগত সম্পদ হবে? তা কি সমাজের সম্পদ নয়? তাই কি ছিল না সেই জঙ্গলের যুগে? তারপর ক্রমাগত সভ্যতার এক্সপ্লয়টেশন, ধর্মীয় মরালিটি চাপিয়ে রূদ্ধ করতে চাওয়া হয়েছে মানবের চাওয়া পাওয়ার মুক্ত প্রাকৃতিক পথ। ভাববাদের মোড়ক পরিয়ে রাস্ট্রগতভাবে গুলিয়ে দেওয়া হয়েছে বৈশ্বিক বস্তুবাদী জঙ্গলের কানুন। কেন এসব মানব ফ্রেড?"
"মানব না।" দৃঢ় গলায় বলল ফ্রেডরিক, "লেখো তুমি, কার্ল। তুমি লেখো। আমাদের এই বঞ্চনার ইতিহাসের সঠিক বর্ণনা যদি কেউ পারে তো তা তুমিই পারবে।"
কার্ল চুপ করে রইল মাথা নীচু করে বেশ কিছুক্ষণ। তারপর বলল, "যদি লিখি তো ওরা মেরে ফেলবে ফ্রেড। ওরা চলমান চিন্তার স্রোতের বাইরে যেতে পারে না। ওদেরও অনেক না পাওয়া আছে। সেই না পাওয়াগুলোই সামাজিক কানুনের কারাগারের গরাদে ওদের দীর্ঘশ্বাস হয়ে জমে থাকে। তারপর ধীরে ধীরে অভ্যাস হয়ে যায়। ঐ কারাগারই হয়ে যায় তাদের জগৎ। বাইরেটা দেখতে ভয় পেতে থাকে তারা। তারা ভুলে যায়, যেমন আমরা গেছি যে আমাদের শিকল ছাড়া সত্যিই কিছু ভাঙার নেই মুক্তি পেতে গেলে। তাই আমার লেখার আঘাতে তারা রেগে উঠবে। যে যত ভয় পায়, সে তত রাগ দেখায়। চুপ করাতে চায়। আমি যদি লিখি, তবে সেই বঞ্চনাগত অবস্থান থেকেই আমাকে তারা চুপ করাতে চাইবে প্রিয় ফ্রেড।"
"বেশ। ঘুরিয়ে লেখো। আমি মালিক। তুমি শ্রমিক। এভাবে ভাবো। আর আমাদের এই বঞ্চনার পুরো আবেগটাকে ঢেলে দাও এই ব্যাপারটার মধ্যে। উঠে আসুক মুক্তির বার্তা। সন্ধাভাষায় লেখো কার্ল..."
"বেশ, এটা ভালো পরিকল্পনা আমি স্বীকার করতে বাধ্য। কিন্তু... কার্ল, যদি কখনো ভিতরের বক্তব্য না বুঝে উপরের বক্তব্য ধরে তোমার শ্রমিকরাই তোমার মালিকানা কেড়ে নেয়? তোমাকে নিঃস্ব করে? মনে রেখো ঐ সন্ধাভাষায় বহিরঙ্গের অর্থে তোমার শ্রেণীটা কিন্তু কিন্তু অন্তরঙ্গের সামাজিক কারাগারের প্রধান। শ্রমিকরা যদি ভেবে বসে ওটা তাদের জন্যই লেখা? তোমার কি হবে তখন?"
"কার্ল.." ঘন গভীর স্বরে বললেন ফ্রেডরিক, "সেদিন কি তুমিও আমায় ছেড়ে যাবে?"
"জীবন থাকতে নয়, ফ্রেড।"
"লাভলি কার্ল। তাহলে লেখো তুমি। তোমার জন্য নিঃস্ব কেন, নরকের সবচেয়ে উত্তপ্ত কোণে যেতেও আমার বাঁধবে না।"
.
তারপর একদিন কার্লের আশঙ্কা সত্যি হয়েছিল। মানুষ তত্ত্বের অন্তরঙ্গে যেতে পারেনি। যে ব্যাথা বাল্মীকিকে দিয়ে একদিন রচনা করিয়ে নিয়েছিল অমর কাব্য, সেই রকম ব্যাথাই হয়তো কার্লকেও উদ্বুদ্ধ করেছিল তার উপন্যাস শেষ করতে... আর মানুষ সেই অসাধারণ উপন্যাসকে উপন্যাস হিসাবে নিতে পারেনি। তাদের সহজ বুদ্ধিতে ধর্মতত্ত্ব হিসাবেই নিয়েছিল। তৈরী হয়েছিল বঞ্চিত সর্বহারার শ্রমিকের এক অভূতপূর্ব শাশ্বত ধর্ম।
যা দেখে কার্ল বলেছিলেন, "ভাগ্যিস আমি সে দলে নেই।"
.
কিন্তু রোমিও জুলিয়েটের বন্ধুত্বের পর ইয়োরোপের মানুষ পেয়েছিল ফ্রেড আর কার্লের মত বন্ধুত্ব.... যা আর কখনো হবে কিনা কেউ জানে না...
....ফুটনোট ---- কার্ল মার্ক্স ও ফ্রেডারিক এঙ্গেলস ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন । এঙ্গেলসের কাজের মেয়ের সাথেও মার্ক্স এর অবৈধ সম্পর্ক ছিল । তাদের একটি অবৈধ সন্তান হয় , যার দায়ীত্ব এঙ্গেলস নিয়েছিলেন বন্ধুকে বাঁচাতে ।
....গল্প হলেও সত্যি নয় !!!(লেখকের কল্পনা মাত্র)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১৬
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×