somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টুকরো গল্প: দুর্গাপূজা

২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পটভূমি :: কলকাতা ।
কসবার ঝাঁ চকচকে শপিং মল থেকে বেড়িয়ে এল স্বামী স্ত্রী। হাতে কয়েকটি প্যাকেট। জমিয়ে কেনাকাটা হয়েছে, বোঝাই যাচ্ছে।
'অ্যাই, খুব ক্ষিদে পেয়েছে, কিছু খাওয়াও না প্লিজ।'
নতুন বৌ এর আবদার শুনে তাকাল স্বামী। 'বিরিয়ানি খাবে বললে যে? খিদিরপুরে গিয়ে?'
'না, আমার ঘুগনি খেতে ইচ্ছে করছে, ওই দাদুর কাছে থেকে। তুমিও খাও প্লিজ। আর হ্যাঁ বাড়িতেও নিয়ে যাব কিন্তু।'
'বেশ তো, চলো!'

ঘোলাটে চশমার মধ্যে দিয়ে বৌ টি কে দেখে হাসেন দাদু। একনজরেই বেটি বুঝে গেছে বিক্রি হয়নি তেমন। ফোকলা মুখে হাসি ফুটে ওঠে এক ডেকচি ঘুগনি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দাদুর।

...........................................

রনপা পড়ে ব্যস্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে সারাদিন ধরে লিফলেট বিলি করার পর রাত্তিরে মোড়ের ওষুধের দোকানে গেল অতীশ। বাবার জন্য একটা ইনহেলার কিনতেই হবে আজ। বড্ড কষ্ট পাচ্ছেন বাবা।
'এই যে আপনি ওই উঁচু লাঠির ওপর দাঁড়িয়ে লিফলেট দিচ্ছিলেন না?' জিজ্ঞেস করেন বয়স্ক দোকানি
'হ্যাঁ কাকু। আমার একটা ইনহেলার লাগবে...'
টাকা মিটিয়ে দোকান থেকে বেরোতে গিয়ে দেখে প্যাকেটে আরো একটি ওষুধ। ব্যথায় মালিশ করার। অবাক হয়ে তাকায় অতীশ, সদ্য পাতানো 'কাকু'র দিকে ।
'নিয়ে যাও। স্যাম্পল ওটা। সারাদিন ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকো, পায়ে ব্যথা হয় নিশ্চয়। '
ঝাপসা লাগছে চারদিকটা। চোখ টা মাঝে মাঝে বড্ড বেয়াক্কেলে হয়ে যায়!

.........................................

পুজো শুরু হয়ে গেছে। বাবার সাথে কলকাতায় এসেছে রাজু। এই প্রথম। বাবা ঢাক বাজাবেন, ও কাঁসর বাজাবে। ওর খুব মজাও হচ্ছে, কিন্তু মন ও খারাপ লাগছে। ওর বন্ধুরা সবাই গ্রামে। কত মজা করবে সবাই। আর ও বাবার পাশ থেকে মোটেও নড়তে পারবে না। ওরা একটা আবাসনের পুজোয় ঢাক বাজাবে। হঠাৎ পেছনে একটা খোঁচা খেয়ে তাকায় রাজু। ধোপদুরস্ত জামা পরা একটা বাচ্চা। বাবুদের বাড়ির ছেলে। নিশ্চয় এখানেই থাকে।
'এই নাও ভাই ক্যাপ বন্দুক। ফট ফট ফটাস।' মুখ দিয়ে আওয়াজ করতে করতে চলে যায় ছেলেটি। হাসিমুখে দাঁড়িয়ে থাকে রাজু। মন খারাপ টা কাটছে একটু একটু করে। ফট ফট ফটাস করে!

...............................................

নতুন টিউশনি শুরু করেছে অদিতি। মাকে লুকিয়ে। মা কে পুজোয় একটা ভাল শাড়ি কিনে দেবে বলে। তা, টাকাটা পেয়েই আজ সোওওজা হাতিবাগান। আহ, মা যে কি খুশি হবেন!
দোকানে ঢোকার মুখে দেখে এক পাগলিনী বসে আছে। একটা ছেঁড়া ফ্রক পরা। কি ভেবে একটু এগিয়ে যায় ও। মাকে নাহয় একটু কম দামি শাড়ি কিনে দেবে। কিন্তু এনাকে একটা নাইটি কিনে দেওয়া বড্ড দরকার।
নতুন নাইটি হাতে হতভম্ব হয়ে বসে থাকে 'গীতু পাগলি'। এই প্রথম কেউ ঢিল না মেরে হাতে নতুন কিছু দিল।

........................................

এই সময় টা এলে বড্ড মন খারাপ হয়ে যায় কমলা দেবীর। উনি চলে যাবার পর থেকেই খুব একা হয়ে গেছেন। ছেলেটা বহুবছর প্রবাসে। মালতি সকালে এসে কাজ টাজ করে চলে যায়, তারপর থেকেই উনি একা। চারদিকে হাসিমুখের ভিড় বারান্দায় বসে দেখেন।
হঠাৎ কলিংবেল। মালতি আর ওর ছেলে।
'ঠাম্মা, আপনি রেডি হয়ে নিন। আপনাকে একটু মায়ের মুখ দেখিয়ে আনি।' বলল মালতি।
মায়ের মুখ! ফিক করে হেসে ফেললেন উনি। সত্যি দেখা হবে মায়ের সাথে ।
.
শুভ বিজয়া জানাই সবাইকে । আপনারা সবাই ভালো থাকুন ।
.
(কোনো এক অজানা কারনে সামু আমাকে দীর্ঘদিন ব্লক করে রেখেছিল । কোনো ব্লগ লিখার অধিকার দেয় নাই । আমাকে ভালবাসার মানুষদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ । আপনাদের ভালবাসা পেয়েই আমি আজ আবার ব্লগ লিখতে পারছি । আপনাদের সবাইকে আমি হৃদয় থেকে ধন্যবাদ জানাই। )
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১:৪৬
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×