পলাতক যুদ্ধাপরধী বাচ্চু রাজাকরের ফাঁসি হয়েছে। কিন্তু একি অপরাধে কাদের মোল্লার হল যাবজ্জীবন। সত্যি সেলুকাস ! বিচিত্র আওয়ামী দুনিয়া !
যুদ্ধাপরাধী বিচার নামক লাটিম খেলায় নৈতিক পরাজয় ঘটেছে আওয়ামিলীগের। সেই সাথে উন্মোচিত হয়েছে আওয়ামী ভন্ডামীর মুখোশ।
যে আোয়ামীলিগ স্বাধীনতার চেতনার ফেরী করে বেড়ায় সেই আওয়ামিলীগই বারবার স্বাধীনতার সত্যিকার চেতনা কে ভূলন্ঠিত করে আওয়ামী চেতনার উৎকর্ষ সাধন করেছে। সেই ৭২ থেকে শুরু। বাকশাল কায়েম করে আওয়ামীলিগ গনতন্ত্রের টুটি চেপে ধরেছিল। আওয়ামিলীগের চেলা চামুন্ডা থেকে শুরু করে নেতা পাতি নেতা এবং কি বঙ্গবন্ধু তনয় শেখ কামাল গং রাহাজানি আর লুটতরাজ করে একটি স্বনির্ভর সাম্যবাদি অর্থনীতির স্বপ্ন কে হত্যা করেছিল। জাতি উপহার পেয়েছিল দূর্ভিক্ষের দুসঃহ দিন। ঐসব কি স্বাধীনতার চেতনা পরিপন্থি ছিলনা?
আওয়ামিলীগই ১৯৫ জন পাক যুদ্ধাপারধী কে ছেড়ে দিয়েছিল সিমলা চুক্তির আওতায়। যে চুক্তি করে লাভবান হয়েছিল বাংলাদেশ নয় ভারত। এটা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধ ছিলনা?
আওয়ামিলীগই পরাজিত শক্তি জামাত শিবির কে রাজনীতিতে শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। ১৯৯৬ সালের আওয়ামিলীগের নেতৃত্বে যে সহিংস আন্দোলন হয়েছিল তার নৈপথ্য কুশিলব ছিল জামাত শিবির ক্যাডারারা। সেদিন শিবির- ছাত্রলীগ ছিল এক বৃন্তের দুটি ফুল। সেদিন হাসিনা- নিজামী একসাথে বসে নৈরাজ্যের নীল নকশা তৈরি করেছিলেন। সেদিন রাস্তায় মানুষ মরেছে। গাড়ি পুড়েছে ! রাস্তায় দিগম্বর করা হয়েছে অফিসগামী প্রজাতন্ত্রের অসহায় চাকর কে। সেদিন কি স্বাধীনতার চেতনা ভূলন্ঠিত হয়নি?
সেদিন ছাত্রদলের ক্ষমতা ছিল ছাত্রলীগ কে প্রতিহত করার। কিন্তু জামাত- লীগের যৌথ প্রযোজনায় সৃষ্ট সহিংসতায় নতি স্বীকার করে বিএনপি সরকার। পরবর্তিতে বিএনপি বুঝতে পারে জামাতের ক্যারিশমেটিক ক্ষমতার কথা। আর তাই ২০০১ সালে এসে ক্ষমতার ইঁদুর দৌঁড়ে আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে জামাতের সাথে জোট গড়ে তুলে বিএনপি। সফলও হয় বিএনপি।
আর তখনই শুরু হয় আওয়ামিলীগের যুদ্ধাপরাধী নামক লাটিম খেলা। যুদ্ধাপরাধীর বিচার নামক লাটিম ঘুরিয়ে তারা জনগন কে বিভ্রান্ত করতে থাকে। গত চার বছরে আওয়ামি রাজনীতির শত ব্যার্থতার ইতিহাসের সামান্তরালে প্রবাহিত হয়েছে যুদ্ধাপরাধী বিচার নামক চর্বিত চর্বনের ইতিহাস। আওয়ামী ব্যার্থতা ও দুঃশাসনের সকল প্রতিবাদ কে তারা যুদ্ধাপরাধীর বিচার নামক লাটিমের ঘূর্ণায়মান পৃষ্ঠে টেনে এনে জাতিকে বিভ্রান্ত করেছে।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার এদেশের গনমানুষের দাবি। অথচ সেই দাবি নিয়ে চরম রাজনীতির নগ্ন খেলা খেলেছে আওয়ামিলীগ। আজ আওয়ামীলিগের সেই ভন্ডামীর মুখোশ অনেকটাই উন্মোচিত। জামাতের প্রথম আশ্রয় আওয়ামিলীগ কোনদিনই নৈতিক বা চেতনার জায়গা থেকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার চায়নি। অবশ্য সেটুকু চাওয়ার নৈতিক ভিত্তিও তাদের নেই। খোদ আওয়ামী রাজনীতির তল্পি বাহক এখনো অনেক চিহ্নিত রাজাকার। রাজাকারের ঔরষে আত্মীয়তার সম্পর্ক পেতেছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। আওয়ামীলিগের সাধারণ সম্পাদক এখনো ঘুরে বেড়ান রাজাকার এপিএস কে সাথে নিয়ে।
আওয়ামিলীগ শুধু চেয়েছে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে আমজনতার যে আবেগ তা নিয়ে ঘৃণিত রাজনীতির পসরা সাজাতে। এবং এতদিন তারা তাতে সফলও হয়েছে। ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামীলিগের বড় ভয় বিএনপি জামাতের জোট। তাই তারা জোট ভাঙ্গনের সকল চেষ্ঠায় রত থেকেছে গত চার বছরের প্রতিটি দিন। আর আওয়ামীলিগের সেই যুদ্ধের বড় হাতিয়ার ছিল " যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে জনগনের আবেগ।
কিন্তু নির্বাচন ঘনিয়ে এসেছে। নিজেদের অধীনে একদলীয় নির্বাচন করতে মরিয়া পায়ের নীচে মাটি হারানো ব্যার্থ আওয়ামীলিগ। কিন্তু কিভাবে? চারদলীয় জোটেতো ভাঙ্গন ধরানো যায়নি। ঐদিকে পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী আঁচল ছেড়ে একক নির্বাচনের দিকে এগুচ্ছে। এই অবস্থায় আওয়ামীলিগের সামনে একটাই পথ পুরনো বন্ধুর কাছে ফিরে যাওয়া। আবার অপরদিকে আমজনতার প্রত্যাশা !
এখানেও রাজনীতি করলো আওয়ামিলীগ। পলাতক যুদ্ধাপরাধী এবং জামাতের রাজনীতিতে ইনএক্টিভ বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসি দিয়ে জনগনের মুখে কুলুপ এটে দিল। তারপর জামাত কে দিয়ে কৌশলে সারা দেশে সহিংস রাজনীতির জন্মদিল। সরকারের নির্দেশে পুলিশ মার খেল। শিবিরের সহিংসতায় জনগন ভীত হল। জনগন বলা শুরু করলো শিবিরই দল। বিএনপি একটা দূর্বল দল। এরা পারেনা আওয়ামী পুলিশের সাথে যুদ্ধ করতে। পারে শিবির। জয়তু শিবির !
পত্রিকায় খবর আসলো পর্দার আড়ালে জামাত- লীগের পুরনো সখ্যতার স্মৃতিচারণের। জামাত-লিগের আঁতাতের খবর ছড়িয়ে পড়ল দেশে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম নিজেই সেই ইঙ্গিত দিলেন। একসময় রাজধানীর রাস্তায় যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তি চেয়ে প্রকাশ্য রাজপথে সভা করার অনুমতি পেল জামাত। ফুল দিয়ে একে অপরকে বরণ করে নিল জামাত আর গোপালগঞ্জের পুলিশ। প্রকাশ্য জনসভায় গৃহযুদ্ধের হুমকি আসলো। বাহ ! বাংলাদেশ বাহ!!
তারপর ! হ্যাঁ তারপর সবকিছুই সরল সমীকরণ! থেমে গেল ঘূর্নায়মান লাটিম। কসাই রাজাকারের ফাঁসি হলনা। লোক দেখানো রায় হল যাবজ্জীবন।বন্ধুত্বের নব দিগন্ত উন্মোচনের দিনে বিজয়ের হাসি হাসলো জামত শিবির। মাঝখানে লাশ হল অসহায় বাস যাত্রীর। জয় হল সহিংস রাজনীতির। আর সেই সাথে উন্মোচিত হল আওয়ামী রাজনীতির ভন্ডামীর মুখোশ।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:০০